ঈদযাত্রায় নিহত ৩৫২, দুর্ঘটনা ও হতাহত গত বছরের তুলনায় কম: যাত্রী কল্যাণ সমিতি
এবার পবিত্র ঈদুল ফিতরের ১৫ দিনে দেশের সড়ক, রেল ও নৌপথে মোট ৩৪০টি দুর্ঘটনায় ৩৫২ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। তারা আরও জানায়, দুর্ঘটনায় ৮৩৫ জন আহত হয়েছেন। তবে গত বছরের সড়ক দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা কম ছিল বলে সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়।
আজ বুধবার ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
লিখিত প্রতিবেদনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার সবচেয়ে বেশি ঘটনা ঘটেছে মোটরসাইকেল ঘিরে। ঈদযাত্রায় সড়ক–মহাসড়কে ১৩৫টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৫১ জন নিহত ও ১৫৫ জন আহত হয়েছেন, যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৪২ শতাংশ।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের প্রতিবেদনে বলা হয়, সড়ক–মহাসড়কে ৩১৫টি দুর্ঘটনায় ৩২২ জন নিহত ও ৮২৬ জন আহত হয়েছেন। রেলপথে ২১টি দুর্ঘটনায় ২০ জন নিহত ও ৮ জন আহত হয়েছেন। নৌপথে ৪টি দুর্ঘটনায় ১০ জন নিহত ও ১ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এসব দুর্ঘটনায় হতাহত ৭০ জন চালক, ৪৭ জন পরিবহনের শ্রমিক, ৫০ জন পথচারী, ৬০ জন নারী, ৪০টি শিশু, ৩৩ জন শিক্ষার্থী, ২০ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ৬ জন শিক্ষক, ৪ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা–কর্মী ও ১ জন সংবাদকর্মীর পরিচয় মিলেছে।
এবারের ঈদযাত্রা আগের চেয়ে স্বস্তিদায়ক ছিল দাবি করে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আন্তরিকতা এবং ভোক্তা অধিকার ও বিআরটিএর তৎপরতায় এবারের ঈদযাত্রা মাফিয়াতন্ত্র মুক্ত ছিল। বিগত ঈদের তুলনায় সড়ক দুর্ঘটনা ২১ দশমিক ০৫ শতাংশ, নিহত ২০ দশমিক ৮৮ শতাংশ, আহত ৪০ দশমিক ৯১ শতাংশ কমেছে।
মোজাম্মেল হক সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘সরকারের বিভিন্ন সংস্থার যাত্রীবান্ধব সিদ্ধান্তের কারণে মানুষ নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পেরেছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে সড়ক–মহাসড়কে মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত রিকশার অবাধ চলাচল, পর্যাপ্ত রোড মার্কিং বা সড়কবাতি না থাকা, সড়ক বিভাজকের অভাব, সড়ক ও যানবাহনের নির্মাণ ত্রুটি, উল্টোপথে যান চলাচল, চালকের অদক্ষতা এবং বেপরোয়া চলাচলকে দায়ী করা হয়।
কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ঈদকে কেন্দ্র করে গণপরিবহনগুলোতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কারণে বাসের ছাদে, ট্রেনের ছাদে, খোলা ট্রাকে, পণ্যবাহী পরিবহনে যাত্রী হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দরিদ্র লোকজনকে ঈদে বাড়ি যেতে হয়েছে।
দুর্ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোট যানবাহনের ৩২ দশমিক ২৭ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ বাস, ১৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা, ১৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান, ৮ দশমিক ০৬ শতাংশ কার-মাইক্রোবাস, ৭ দশমিক ২১ শতাংশ নছিমন-করিমন ও ৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিক্সা এসব দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল।
দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দুর্ঘটনার ৩৮ দশমিক ৪১ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ২১ দশমিক ২৬ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ৩৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়। এ ছাড়া সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৩ দশমিক ৪৯ শতাংশ ঢাকা মহানগরে, শূন্য দশমিক ৬৩ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরে ও ১ দশমিক ৫৮ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে হয়েছে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদনে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত রিকশা আমদানি ও নিবন্ধন বন্ধ, মহাসড়কে পর্যাপ্ত আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা, দক্ষ চালক ও যানবাহনের ডিজিটাল পদ্ধতিতে ফিটনেস প্রদান, গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে সার্ভিস লেনের ব্যবস্থা, চাঁদাবাজি বন্ধ করা, মহাসড়কে ফুটপাত ও পথচারী পারাপারের ব্যবস্থা রাখা, সড়ক পরিবহন আইন যথাযথভাবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রয়োগ, আধুনিক বাস নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা, সড়ক নির্মাণ ও মেরামত, মেয়াদোর্ত্তীর্ণ গণপরিবহন ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল স্ক্র্যাপ করা এবং ঈদের ছুটি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়াসহ মোট ১১টি সুপারিশ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ জকরিয়া, যুগ্ম মহাসচিব তাওহীদুল হক লিটন, অর্থ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান রাসেল, প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন মাসুদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ রফিকা আফরোজ, মোহাম্মদ আরিফ, মনজুর হোসেন ইশা প্রমুখ।