শিশুকে এই ১০ শব্দ শেখাতে হবে যে কারণে
প্রতিদিনের ছোট ছোট সৌজন্যমূলক শব্দ শিশুর ব্যক্তিত্ব গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। উপযুক্ত শব্দ ব্যবহারের মধ্য দিয়ে শিশুরা দয়া, সহানুভূতি ও শ্রদ্ধা করা শেখে, যা তাদের করে তোলে আন্তরিক ও হৃদয়বান। যেমন ধন্যবাদ, প্লিজ, দুঃখিত, স্বাগত—এ ধরনের শব্দ শিশুকে বিনয়ী হতে সহায়তা করে এবং ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে তুলতে শেখায়। এমন ১০টি শব্দ আছে, যেগুলোর নিয়মিত চর্চা শিশুর সামাজিক ও আবেগগত দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি তার ব্যক্তিত্ব গঠনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
দয়া করে বা প্লিজ
শিশুরা সব সময় অনুকরণপ্রিয়, তাই তাদের দয়া শেখাতে ‘প্লিজ’ বলা শেখাতে হবে। এই অভ্যাসে তারা বিনয়ী ও শ্রদ্ধাশীল হয়ে ওঠে। এটি তাদের অন্যের অনুভূতির প্রতি যত্নশীল হতে শেখায় ও সহমর্মী হতে সাহায্য করে। যেমন কারও কাছ থেকে খেলনা চাইতে হলে তাকে বলতে শেখান, ‘আমাকে বলটা দেবে, প্লিজ!’ এতে শিশুর ভদ্রতা ও দয়ালু মনোভাব তৈরি হয়, যা দৈনন্দিন জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
দুঃখিত বা সরি
শিশুকে ‘সরি’ বলা শেখান। এটা তাকে দায়িত্বশীল হতে সাহায্য করে এবং তার কাজের প্রভাব বুঝতে শেখায়। এটি সহানুভূতি ও আবেগপ্রবণ বুদ্ধিমত্তা বাড়ায়। যেমন যদি শিশু কারও খেলনা ভুল করে ফেলে দেয়, তাকে বলতে শেখান, ‘সরি, আমি ভুল করে ফেলেছি।’ এতে সে নিজের ভুল বুঝতে শিখবে এবং ভবিষ্যতে আরও সচেতন হবে। তাই শিশুকে প্রতিদিন আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশের গুরুত্ব বুঝিয়ে দিন।
এক্সকিউজ মি বা মাফ করো
‘এক্সকিউজ মি’ বলা ধৈর্য ও ব্যক্তিগত অবস্থানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে শেখায়, যা শিশুকে ভদ্রভাবে যোগাযোগ করতে ও জনসমাগমে আচরণ করার সময় অন্যের উপস্থিতির প্রতি সংবেদনশীল হতে সাহায্য করে।
ওয়েলকাম বা স্বাগত
শিশুর মধ্যে শিষ্টাচার গড়ে তুলতে চাইলে প্রতিদিন ‘ওয়েলকাম’ বলা শেখানো জরুরি। এটি তাদের সৌজন্য ও পারস্পরিক সম্মান বাড়াতে সাহায্য করে। নিয়মিত এই অভ্যাস শিশুর মনে উষ্ণতা ও ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তোলে। কেউ বাসায় এলে শিশুকে হাসিমুখে ‘ওয়েলকাম’ বলতে উৎসাহিত করুন। ফলে শিশুরা অন্যদের সম্মান করতে শেখে। ছোট ছোট সৌজন্যমূলক আচরণ শিশুকে ভদ্র ও আত্মবিশ্বাসী করে তোলে।
দয়া
জীবনে দয়া মনোভাবাপন্ন হওয়াটা খুবই দরকারি। এই শব্দের সঙ্গে শিশু পরিচিত হোক। বিষয়টি সম্পর্কে শিশুকে প্রতিদিনই ধারাবাহিকভাবে শেখাতে হবে। এই বিষয়ের ওপর জোর দিলে সব পরিস্থিতিতে অন্যদের প্রতি ভদ্র, যত্নশীল ও চিন্তাশীল হওয়ার প্রতি শিশুরা সচেতন হয়।
হেল্প বা সাহায্য
কাউকে সাহায্য করা এবং কারও কাছ থেকে সাহায্য চাইতে শেখানোটা জরুরি। অভিভাবকদের এ জন্য শিশুকে ‘হেল্প’ বা সাহায্য শব্দটা শেখাতে হবে প্রতিদিন। এই অভ্যাস সহযোগিতা, টিমওয়ার্ক ও বিপদে-আপদে অন্যকে সহায়তা করার মানসিকতা গড়ে তোলে।
শেয়ার করো বা ভাগ করে নাও
শেয়ার করে নেওয়ার অভ্যাস শিশুকে উদার ও সহানুভূতিশীল হতে শেখায়। এটি অন্যের প্রতি সহমর্মী হওয়া এবং বন্ধুত্ব ও পারস্পরিক বিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করে। যখন শিশুরা খেলনা, খাবার বা অভিজ্ঞতা শেয়ার করে নেয়, তখন তারা মিলেমিশে থাকার গুরুত্ব বুঝতে শেখে। এতে তাদের সামাজিক দক্ষতা বাড়ে এবং তারা আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে। শেয়ার করা শুধু আনন্দের নয়, এটি শিশুদের অন্যদের প্রতি যত্নশীল হতে শেখায়। তাই ‘শেয়ার করো’ শব্দটি শিশুকে শেখানো জরুরি।
শ্রদ্ধা
শিশুকে ‘শ্রদ্ধা’ শব্দটির গুরুত্ব বোঝাতে হবে। ফলে তারা অন্যের মতামত, সীমা ও দৃষ্টিভঙ্গিকে সম্মান করতে শিখবে। এটি তাদের মধ্যে সহনশীলতা ও বিনয়ী মনোভাব গড়ে তুলবে। যখন কেউ কথা বলে, শিশুকে শেখান ধৈর্য ধরে শুনতে ও কথার মাঝখানে বাধা না দিতে। এতে করে তারা বুঝবে, অন্যকে শ্রদ্ধা করা মানে তাদের মূল্য দেওয়া। ছোট থেকেই এই অভ্যাস গড়ে উঠলে শিশু ভবিষ্যতে ভালো সম্পর্ক তৈরি করতে পারবে।
ভালোবাসা
‘ভালোবাসা’ শব্দটি নিয়মিত প্রকাশ করলে শিশু নিরাপদ ও আত্মবিশ্বাসী অনুভব করে। এটি তাকে আরও দয়ালু ও আন্তরিক হতে শেখায়। যখন শিশুরা ভালোবাসা পায়, তারাও অন্যদের প্রতি ভালোবাসাপূর্ণ আচরণ করে। তাই প্রতিদিন শিশুকে জড়িয়ে ধরে বলতেই পারেন, ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি।’
ধন্যবাদ
শিশুকে বলুন, ‘ধন্যবাদ’ বলাটা খুবই প্রয়োজন। শব্দটি সারা জীবনের জন্যই শিক্ষা। এটা কৃতজ্ঞতা শেখায়। যখন কেউ তাকে সহায়তা করবে, তখন যেন সে বলে, ‘সাহায্য করার জন্য ধন্যবাদ।’ এটি ইতিবাচক সামাজিক আচরণ গড়ে তোলে। এভাবে শিশুরা অন্যকে সম্মান করা শেখে।
সূত্র: এমএসএন