বগুড়ায় বলিহার রাজার কাছারিবাড়ি থেকে ১৭টি গ্রিল চুরি, হাতেনাতে ধরলেন জনতা

বগুড়ার শাজাহানপুরে বলিহার রাজার কাছারিবাড়ির গ্রিল চুরি করার সময় জনতা আটক করে। সোমবার দুপুরে উপজেলার ডেমাজানী গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার ঐতিহাসিক নিদর্শন ‘বলিহার রাজার কাছারিবাড়ি’ থেকে ১৭টি লোহার গ্রিল চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সময় ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অফিস সহায়ক ফেরদৌস আলমকে হাতেনাতে আটক করেছেন স্থানীয় লোকজন। চুরির কাজে স্থানীয় গ্রাম পুলিশ স্বপন কুমার রবিদাস সহায়তা করেন বলে অভিযোগ।

আজ সোমবার বেলা দুইটার দিকে চোরাই মালামালসহ আটক ফেরদৌস আলমকে উপজেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহকারী কমিশনার, ভূমি (এসি ল্যান্ড) জান্নাতুল নাইম এই কর্মচারীকে জিম্মায় নেন। ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের অফিস সহায়কের বিরুদ্ধে মামলাসহ বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান এসি ল্যান্ড।

এর আগে বেলা ১১টার দিকে দুটি ভ্যান ভর্তি করে এসব লোহার গ্রিল চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় জনতা ওই ব্যক্তিকে আটক করেন। পরে উদ্ধার করা মালামাল উপজেলার আমরুল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের (ভারপ্রাপ্ত) জিম্মায় দেওয়া হয়।

উপজেলা ভূমি কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শাজাহানপুর উপজেলার আমরুল ইউনিয়নের ডেমাজানী গ্রামে বলিহার রাজার বাসভবন বা কাছারিবাড়ি কয়েক একর জায়গায় অবস্থিত। চুন-সুরকি ও ইটের গাঁথুনির দ্বিতল বিশিষ্ট স্থাপনাটি কয়েক শ বছরের পুরোনো।

জনশ্রুতি রয়েছে, মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনামলে (১৬৫৮-১৭০৭) নওগাঁর বলিহারের জমিদার নৃসিংহ চক্রবর্তী বগুড়ার শাজাহানপুর এলাকার জায়গির লাভ করেন। জায়গির লাভের পর তিনি শাজাহানপুরের ডেমাজানী বন্দরে রাজবাড়ি গড়ে তোলেন। সেই থেকে এটি বলিহার রাজার কাছারিবাড়ি নামে পরিচিত।

বগুড়ার শাজাহানপুরের ঐতিহাসিক নিদর্শন ‘বলিহার রাজার কাছারিবাড়ি’। উপজেলার আমরুল ইউনিয়নের ডেমাজানী গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

ডেমাজানী এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা মোকছেদুর রহমান বলেন, ভোরের দিকে ভূমি কার্যালয়ের কর্মচারী ফেরদৌস আলম ভবন থেকে ১৭টি লোহার গ্রিল খুলে দুটি ভ্যানে করে নিয়ে যাচ্ছিলেন। স্থানীয় গ্রাম পুলিশ স্বপন কুমার রবিদাস এ কাজে সহায়তা করছিলেন। স্থানীয় লোকজন চ্যালেঞ্জ করলে ফেরদৌস আলম লোহার গ্রিলগুলো উপজেলা পরিষদে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। পরে এসি ল্যান্ডকে ফোন দেওয়ার পর ফাঁস হয়, ফেরদৌস অনুমতি ছাড়াই এসব মালামাল চুরি করে নিয়ে যাচ্ছিলেন। পুলিশকে খবর দেওয়ার পরও ঘটনাস্থলে না আসায় পরে মালামালসহ ফেরদৌসকে আটক করে উপজেলা প্রশাসনের কাছে সোপর্দ করা হয়।

গ্রাম পুলিশ স্বপন কুমার রবিদাস বলেন, ‘খুব ভোরে আমরুল ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অফিস সহায়ক ফেরদৌস আলম কাছারিবাড়িতে আসতে বলেন। সেখানে পৌঁছার পর কাছারিবাড়ি থেকে খুলে নেওয়া ১৭টি লোহার গ্রিল ২টি ভ্যানে করে আড়িয়া ইউনিয়নের কাটাবাড়িয়া দক্ষিণপাড়া (পতিতপাড়া) গ্রামে নিয়ে যান। আমাকে বলা হয়েছিল, উপজেলা পরিষদে নিয়ে যাওয়া হবে।’

ভ্যানচালক দেলোয়ার হোসেন ও ফুল মাহমুদ বলেন, ফেরদৌস আলম মালগুলো কাটাবাড়িয়া পতিতপাড়া গ্রামে নিয়ে যাওয়ার জন্য ভ্যান ভাড়া করেন। পরে স্থানীয় লোকজন ভ্যানসহ মালামাল আটক করার পর তাঁরা জানতে পারেন, এসব চোরাই মালামাল।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আমরুল ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অফিস সহায়ক ফেরদৌস আলম দাবি করেন, ‘বলিহার রাজার কাছারিবাড়ি থেকে মালামাল খোয়া গেছে। এ কারণে গ্রিলগুলো উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই অন্যত্র সংরক্ষণ করতে চেয়েছিলাম।’

শাজাহানপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জান্নাতুল নাইম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বলিহার রাজার কাছারিবাড়ি এখন সরকার দেখভাল করে। ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের কর্মচারী ফেরদৌস আলম অনুমতি ছাড়াই কাছারিবাড়ি থেকে জানালার গ্রিল চুরি করে নিয়ে যাচ্ছিলেন। স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে চোরাই মালামাল উদ্ধার করে আমরুল ইউপি চেয়ারম্যানের জিম্মায় দিয়ে এসেছি। চুরির সঙ্গে জড়িত ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অফিস সহায়কের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুমতি চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। অনুমতি পেলেই তাঁর বিরুদ্ধে মামলাসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জানতে চাইলে আমরুল ইউপি চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) সেলিমুজ্জামান বলেন, ‘লোহার ১৭টি গ্রিল আমার জিম্মায় বুঝে পেয়েছি। গ্রাম পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকলে প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’