ছাত্র আন্দোলনে আহত আশিকুর মাথায় গুলি নিয়েই মারা গেল, অর্থসহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ

আশিকুর রহমানছবি: সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কিশোর আশিকুর রহমান ওরফে হৃদয় (১৭) গতকাল শুক্রবার মারা গেছে। তিনটি গুলির মধ্যে দুটি বের করা সম্ভব হলেও তার মাথায় একটি গুলি থেকে যায়। এ কারণে প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়ছিল সে। গতকাল শুক্রবার বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

আশিকুর উপজেলার পশ্চিম জৌতা গ্রামের অটোরিকশাচালক আনসার হাওলাদারের ছেলে। তার পরিবারের দাবি, আর্থিক অনটনের কারণে যথাযথ চিকিৎসা করাতে পারছিলেন না তাঁরা। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জৌতা অলিপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা ও আশিকুরের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আশিকুর রাজধানী ঢাকায় শ্রমিকের কাজ করত। গত বছরের ১৮ জুলাই যাত্রাবাড়ী এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে গুলিতে গুরুতর আহত হয় সে। ওই সময় তার মাথায় তিনটি গুলি লেগেছিল। প্রথমে তাকে লুকিয়ে চিকিৎসা করায় পরিবার। পরে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। চিকিৎসকেরা তার মাথা থেকে দুটি গুলি বের করতে পারলেও ঝুঁকি বিবেচনায় আরেকটি বের করতে পারেননি। এ কারণে পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেনি আশিকুর। বিভিন্ন সময় জ্বর উঠত, মাথায় তীব্র ব্যথা হতো, অনেক সময় যন্ত্রণায় অচেতন হয়ে পড়ত।

আশিকুর রহমানের জানাজা শেষে অচেতন হয়ে পড়েন তার বাবা আনসার হাওলাদার। আজ সকাল ১০টার দিকে বাউফল উপজেলার জৌতা গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

পরিবার জানায়, গত বুধবার আশিকুর অসুস্থ হয়ে পড়ে। বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেন। অর্থের অভাবে পরীক্ষা না করিয়েই বাড়ি চলে যায় তারা। এমন অবস্থায় গতকাল আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে দুপুর ১২টার দিকে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেল সোয়া তিনটার দিকে তার মৃত্যু হয়।

বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করলে আশিকুরকে বাঁচানো যেত, এমন ভাষ্য তার বাবা আনসার হাওলাদারের। তিনি বলেন, চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন আশিকুর। আর্থিক অনটনের কারণে তার উন্নত চিকিৎসা করাতে পারেননি। নিজের রিকশা ও একটি গরু বিক্রির টাকা দিয়ে যতটুকু পেরেছেন চেষ্টা করেছেন। আশিকুরের বড় ভাই সোহাগ ইসলাম অভিযোগ করেন, কেউ তাঁর ভাইয়ের উন্নত চিকিৎসার জন্য এগিয়ে আসেনি। উন্নত চিকিৎসার অভাবেই তাঁর ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে।

জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য মুজাহিদুল ইসলাম জানান, আশিকুরের পরিবারকে আর্থিক অনুদান পাওয়ার ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের তালিকায় আশিকুরের নাম আছে জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আহত ব্যক্তিদের তালিকায় নাম থাকলেও আর্থিক সহায়তার জন্য কোনো আবেদন করেননি। যেহেতু এখন সে মারা গেছে, সরকারিভাবে ওই পরিবারে সহায়তার ব্যাপারে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হবে।’