মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ায় গ্রেপ্তার ম্যারাডোনার সাবেক দেহরক্ষী
আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় মিথ্যা বলা ও তথ্য গোপন করার দায়ে আর্জেন্টিনার প্রয়াত কিংবদন্তি ডিয়েগো ম্যারাডোনার সাবেক দেহরক্ষীকে মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করা হয়। ম্যারাডোনার শেষ দিনগুলোয় তাঁর চিকিৎসায় নিয়োজিত ছিলেন যে আটজন, তাঁদের মধ্যে সাতজনের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগে বিচার চলছে বুয়েনস এইরেসের সান ইসিদরো আদালতে।
কোকেন ও মদ্যপানে আসক্ত ম্যারাডোনা মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারের সপ্তাহ দুয়েক পর ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর না–ফেরার দেশে পাড়ি জমান। বুয়েনস এইরেসের এক অভিজাত এলাকায় ভাড়া করা বাড়িতে জীবনের শেষ দিনগুলো কেটেছে ’৮৬ বিশ্বকাপ কিংবদন্তির।
কৌঁসুলিদের অফিস থেকে মঙ্গলবার অনুরোধের পর সান ইসিদরোর ফৌজদারি আদালত ম্যারাডোনার সাবেক দেহরক্ষী হুলিও সিজার কোরেয়া মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছেন কি না, তা তদন্ত করার নির্দেশ দেন। এরপর তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশি হেফাজতে রাখা হয়েছে।
ম্যারাডোনাকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করেছিলেন যাঁরা, হুলিও সিজার তাঁদের একজন। তাঁর বিরুদ্ধে ম্যারাডোনাকে পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা না দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
গত মঙ্গলবার আদালতে সাক্ষ্যদানের সময় হুলিও সিজার জানান, কক্ষে ঢুকে তিনি দেখেন নার্স গিসেলা মাদ্রিদ ও মনোবিদ অগাস্তিনা কোসাচভ ম্যারাডোনাকে সিপিআর (কৃত্রিম শ্বাস দেওয়ার প্রক্রিয়া) দিচ্ছেন। সিজার আরও জানান, কোসাচভ ম্যারাডোনার মুখে মুখ লাগিয়ে কৃত্রিম শ্বাস দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ মামলায় গিসেলা ও কোসাচভ বিবাদী পক্ষ।
সরকারি পক্ষের কৌঁসুলি প্যাট্রিসিও ফেরারি সতর্ক করেন, প্রত্যক্ষদর্শীর জবানবন্দিতে গরমিল আছে। বিচারকার্য (প্রসিকিউশন) পরিচালনার পক্ষ থেকে হুলিওকে সতর্ক করা হয়, নিউরোসার্জন লিওপোল্ড লুকুর সঙ্গে কথা হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি মিথ্যা বলেছেন। ফেরারি বলেন, ‘লুকু ও কোরেয়ার মধ্যে অনেক কথা হয়েছে। যেখান থেকে আমরা বুঝতে পারি, দুজনের সম্পর্কও বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ, কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শী কথা হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।’
ম্যারাডোনার জীবনে শেষ চার বছর ব্যক্তিগত চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেন লুকু। তাঁর মৃত্যুর কয়েক সপ্তাহ আগে মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জমাট রক্ত অপসারণ করেছিলেন এই চিকিৎসক।
ম্যারাডোনার মেয়ে ২৮ বছর বয়সী জানা গত মঙ্গলবার আদালতে সাক্ষ্য দেন, বাসায় হাসপাতালের সব সরঞ্জামের ব্যবস্থা করে তাঁর বাবাকে ‘হোম হসপিটালাইজেশন’-এ রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন লুকু ও হুলিও সিজার। যদিও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ পরামর্শ দিয়েছিল, ম্যারাডোনাকে হাসপাতালে রাখা হোক।
ম্যারাডোনার চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগে মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন একজন নিউরোসার্জন, একজন মনোরোগবিদ, একজন মনোবিজ্ঞানী, একজন মেডিকেল কো-অর্ডিনেটর, একজন নার্স কো-অর্ডিনেটর, একজন চিকিৎসক এবং রাতের পালার নার্স। দিনের বেলায় ম্যারাডোনাকে দেখভাল করতেন যে নার্স, তাঁর বিচার করা হবে আলাদাভাবে। দোষী সাব্যস্ত হলে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ৮ থেকে ২৫ বছরের জেল হতে পারে। এ মামলায় প্রায় ১২০ জনের সাক্ষ্যদানের কথা রয়েছে, যা চলতে পারে আগামী জুলাই পর্যন্ত।