বিদ্যুৎ–সাশ্রয়ী এসি বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে কী কী প্রযুক্তিগত বিষয় মাথায় রাখা উচিত?
সারোয়ার জাহান চৌধুরী: বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে ও খরচ কমাতে এসি কেনার ক্ষেত্রে প্রথমেই যে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে, তা হচ্ছে ইনভার্টার টেকনোলজিসম্পন্ন কি না। কারণ, ইনভার্টার এসিতে নন–ইনভার্টার এসির তুলনায় প্রায় ৭০ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা যায়। বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে গুরুত্বপূর্ণ আরও কিছু বিষয় আছে, যেমন নির্দিষ্ট দূরত্বে এসি ইনস্টলেশন করা এবং রুমের আকার অনুযায়ী এসির ক্ষমতা নির্ধারণ করা। ভুল ক্ষমতার এসি কিনলে শুধু বিদ্যুৎ বিলই বাড়বে না, এসির কার্যক্ষমতাও কমে যাবে।
ইনভার্টার ও নন–ইনভার্টার এসির মূল পার্থক্য কী? কোন ধরনের এসি বেশি বিদ্যুৎ–সাশ্রয়ী?
সারোয়ার জাহান চৌধুরী: ইনভার্টার এসির ক্ষেত্রে কমপ্রেসর বারবার চালু হয় না, তাই নন–ইনভার্টার এসির তুলনায় এই এসিতে বিদ্যুৎ খরচ তুলনামূলক কম হয়। বিদ্যুৎ খরচের পার্থক্যের পাশাপাশি ইনভার্টার এসি তুলনামূলক বেশি পরিবেশবান্ধবও। নন–ইনভার্টার এসির কমপ্রেসর বারবার অন–অফ হওয়ায় এটি ইনভার্টার এসির তুলনায় বেশি শব্দ করে। প্রতিবার কমপ্রেসর চালু হওয়ার সময় বেশ শব্দ করে। ইনভার্টার এসির ক্ষেত্রে এই সমস্যা দেখা যায় না। এ ছাড়া ইনভার্টার এসি সাধারণত দ্রুত সময়ে ঘর ঠান্ডা করতে পারে। এটি শুরুতেই বেশি শক্তি ব্যবহার করে চালু হয় এবং পরে কমপ্রেসর পুরোপুরি বন্ধ না হয়ে শুধু মোটরের কাজের গতির পরিবর্তন হয়।
বিদ্যুৎ বিল কমাতে এসির ইকো মোড বা স্মার্ট সেন্সরের ভূমিকা কেমন?
সারোয়ার জাহান চৌধুরী: ইকো মোড বা স্মার্ট সেন্সরের ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। অত্যাধুনিক এই টেকনোলজি এসির কমপ্রেসরকে খুবই ধীরগতিতে পরিচালন করে এবং কনডেনসারের ওপর চাপ কমায়। এর মানে হলো, এই মোডে ফুল সিস্টেমকে চালানোর জন্য কমপ্রেসরের মোটর কম শক্তি ব্যবহারে সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ বিল নিশ্চিত করে।
ব্যবহারের ওপর এসির বিদ্যুৎ বিল কম বা বেশি হয়। এ বিষয়ে ক্রেতাদের উদ্দেশে আপনার কী পরামর্শ থাকবে?
সারোয়ার জাহান চৌধুরী: প্রথমত এসির তাপমাত্রা একটি নির্ধারিত মাত্রায় রাখুন। এতে কমপ্রেসর স্বাভাবিকভাবে কাজ করে এবং বিদ্যুৎ খরচ কম হয়। আমরা সাধারণত ‘তাপমাত্রা–২৪’–এ নির্ধারিত করে রাখতে বলি।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, ব্যবহৃত রুমের মেইনটেন্যান্স স্ট্রাকচার ও কাঠামো উন্নতকরণ। রুমে যদি দুর্বল ও লিকযুক্ত দরজা এবং জানালার কাঠামোতে বড় ফাঁক থাকে, তাহলে রুমের ভেতরে ঠান্ডা বাতাস হ্রাস পাবে। তাই সম্ভাব্য লিকেজগুলো বন্ধ করতে হবে। এতে নিয়মিত বিদ্যুৎ খরচ কমাবে ২০ শতাংশের বেশি। সাধারণত দিনের বেলায় সূর্যের তাপের কারণে এমনি গরম থাকে। এর মধ্যে রান্না ও ইস্তিরি করার মতো কাজগুলো যদি তখন করা হয়, তাহলে এসির ওপর অনেক চাপ পড়ে। বিলও তখন বেশি আসে। সন্ধ্যার পর আবহাওয়া কিছুটা ঠান্ডা থাকে, তখন ওভেন, ইস্তিরি বা চুলা জ্বালিয়ে কাজ করলেও ঘর ঠান্ডা করতে এসির বেশি বিদ্যুৎ খরচ করতে হয় না।
কম বিদ্যুৎ খরচ নিশ্চিত করতে ইনস্টলেশনের ক্ষেত্রে কী কী বিষয় খেয়াল রাখা দরকার?
সারোয়ার জাহান চৌধুরী: এসি ইনস্টলেশনের সময় আউটডোর ইউনিটকে একটু ছাউনিঘেরা জায়গায়, যেখানে সরাসরি সূর্যের তাপ আসে না, সেখানে রাখতে পারলে ভালো। সরাসরি তাপে কনডেনসারের ভেতরের যন্ত্রাংশ গরম হয়ে যায়। এতে রুম ঠান্ডা করতেও বেশি শক্তি খরচ হয় আর বিল বাড়তে থাকে। ইনডোর ইউনিটও বিছানা বা সোফার ওপর লাগানো একদমই উচিত নয়। এসি ইউনিট ও মেঝে বা আসবাবের দূরত্ব কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার হওয়া উচিত। এ ছাড়া ইনডোর ইউনিট ও আউটডোর ইউনিট সংযোগকারী পাইপ যতটা সম্ভব ছোট ও ভাঁজবিহীন যেন হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। এর ফলে স্বাভাবিকভাবে রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস সরবরাহ হবে এবং ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে এবং বিদ্যুৎ খরচও কমবে।
আপনাদের ব্র্যান্ডের এসির প্রযুক্তিগত বিশেষত্ব কী?
সারোয়ার জাহান চৌধুরী: স্মার্ট ব্র্যান্ডের এসিতে ১৮ হাজার বিটিইউ শক্তিশালী কুলিং ক্যাপাসিটি আছে, যা দ্রুত ও কার্যকরভাবে বড় জায়গা ঠান্ডা করতে সক্ষম। শক্তিশালী কুলিং নিশ্চিত করার পাশাপাশি পরিবেশগত ক্ষতি কমিয়ে আনতে পরিবেশবান্ধব রেফ্রিজারেন্ট (R–32) ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতি ঘণ্টায় ১ দশমিক ৮ লিটার আর্দ্রতা শোষণ করে, যা বাতাসকে সতেজ ও আরামদায়ক রাখে। সর্বনিম্ন ৩০–dB(A) শব্দমাত্রা, যা শোবার ঘর, অফিস ও বসার ঘরের জন্য আদর্শ। আমাদের এসিটি চালানোর জন্য ১ হাজার ৭৫৮ ওয়াট বিদ্যুৎ খরচ করে। ক্লাইমেট কন্ডিশন অনুযায়ী এটি নির্ধারিত বিদ্যুৎ খরচ, যেখানে আবহাওয়া তুলনামূলক স্বাভাবিক থাকে। এটি শক্তিসাশ্রয়ী ইনভার্টার প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ খরচ কম রাখে। এ ছাড়া আমাদের এসিতে পাঁচ বছরের কমপ্রেসর ওয়ারেন্টি ও দুই বছরের পার্টস ও সার্ভিস ওয়ারেন্টি তো থাকছেই।
প্রথম আলো ডটকম আয়োজিত এসি মেলায় আপনারা অংশ নিয়েছেন। পাঠক ও আপনাদের গ্রাহকদের উদ্দেশে কী বলার আছে?
সারোয়ার জাহান চৌধুরী: চতুর্থবারের মতো অনলাইন এসি মেলায় আমরা অংশ নিতে পেরে খুবই আনন্দিত। এটি খুবই যুগোপযোগী ও প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এর মাধ্যমে বাংলাদেশি ইলেকট্রনিকস কোম্পানিগুলো নিজেদের পণ্য ও ফিচারগুলো গ্রাহকদের কাছে তুলে ধরতে পারছে। ফলে গ্রাহকেরা কাঙ্ক্ষিত ফিচারসংবলিত এসি সহজেই খুঁজে নিতে পারছেন।
আর গ্রাহকদের বলতে চাই, এসি কেনার আগে যাচাই–বাছাই করে কিনুন। সারা দেশে আমাদের শোরুমগুলোয় আপনারা ভিজিট করতে পারেন। আমরা শুধু এসি বিক্রি করি না, জি–ফাইভ পলিসি মেইনটেইন করি। যেখানে জেনুইন প্রোডাক্ট, জেনুইন প্রাইস, জেনুইন সার্ভিস, জেনুইন প্যাশন ও জেনুইন কেয়ার পাবেন সব গ্রাহক।
আপনাকে ধন্যবাদ।
সারোয়ার জাহান চৌধুরী: আপনাকেও ধন্যবাদ।