মাহে রমজানের পাঁচটি বৈশিষ্ট্য ও ইফতারের মাসয়ালা
মুফতি আতাউর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

রমজান আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা লাভের মাস। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন রমজান মাস আগমন করে, তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে রাখা হয়। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৮৯৯) হাদিসবিশারদরা বলেন, রমজান মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় অধিক পরিমাণে নেক আমল করার জন্য এবং আমলকারীদের উৎসাহ প্রদানের জন্য। আর জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় ঈমানদারদের গুনাহ কম অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে। শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়, যাতে সে অন্য মাসের মতো রমজান মাসেও মানুষকে পথভ্রষ্ট করতে না পারে।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত অপর হাদিস থেকে মাহে রমজানের অনন্য মর্যাদা প্রমাণিত হয়। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমার উম্মতকে রমজানে এমন পাঁচটি বৈশিষ্ট্য দেওয়া হয়েছে, যা পূর্ববর্তী কোনো উম্মতকে দেওয়া হয়নি:
ক. রোজা পালনকারীর মুখের (অনাহারজনিত) গন্ধ আল্লাহর কাছে মিসকের সুঘ্রাণ থেকেও উত্তম।
খ. ইফতারের পূর্ব পর্যন্ত ফেরেশতারা সিয়াম পালনকারীর জন্য ক্ষমার দোয়া করতে থাকে।
গ. আল্লাহ তাআলা প্রতিদিন তাঁর জান্নাতকে সুসজ্জিত করে বলেন, আমার নেককার বান্দারা কষ্ট স্বীকার করে অতিশীঘ্রই তোমাদের কাছে আসছে।
ঘ. দুষ্ট প্রকৃতির শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়, ফলে তারা অন্য মাসের মতো এ মাসে মানুষকে পথভ্রষ্ট করতে পারে না।
ঙ. রমজানের শেষ রাতে রোজা পালনকারীদের ক্ষমা করে দেওয়া হয়। বলা হলো হে আল্লাহর রাসুল! এ ক্ষমা কি কদরের রাতে করা হয়? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, না, বরং কোনো শ্রমিককে তার পারিশ্রমিক তখনই দেওয়া হয়, যখন সে কাজ শেষ করে। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৭৯১৭)।
কোনো সন্দেহ নেই, উল্লিখিত পাঁচটি বৈশিষ্ট্য যেমন রমজানের মর্যাদা প্রমাণ করে, তেমন উম্মতে মুহাম্মদির প্রতি আল্লাহর বিশেষ দয়া ও অনুগ্রহ এবং এই উম্মতের শ্রেষ্ঠত্ব সাক্ষ্য দেয়। যে শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা আল্লাহ অন্য আয়াতে স্পষ্টভাবে দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত। মানুষের কল্যাণের জন্যই তোমাদের বের করা হয়েছে। তোমরা সৎকাজের আদেশ করবে এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখবে। আর আল্লাহর প্রতি দৃঢ় ঈমান রাখবে। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১১০)
সর্বোপরী রমজান হলো রমজান জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাস। রাসুলুল্লাহ (সা.) এ সম্পর্কে বলেন, ‘আল্লাহ প্রতিদিন ইফতারের সময় কতিপয় বান্দাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন এবং তা প্রতি রাতেই হয়ে থাকে। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৬৪৩)
ইফতার সংক্রান্ত মাসয়ালা:
১. ইফতারের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা উত্তম। হাদিসে কুদসিতে আছে, আল্লাহ তাআলা বলেন, আমার নিকট সর্বাধিক প্রিয় বান্দা তারাই যারা বিলম্ব না করে ইফতার করে।
২. মাগরিব নামাজের আগেই ইফতার করা মুস্তাহাব।
৩. ইফতারের সময় এই দোয়া পড়া সুন্নত : ‘আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওয়া আলা রিজকিকা আফতারতু’ (হে আল্লাহ! আপনার জন্য আমি রোজা রেখেছি এবং আপনার রিরিকের দ্বারা ইফতার করছি।
৪. সূর্য অস্ত যাওয়ার ব্যাপারে পূর্ণভাবে নিশ্চিত হওয়ার পর ইফতার গ্রহণে বিলম্ব করা মাকরুহ।
৫. আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে কিছু বিলম্বে ইফতার করবে। সূর্য অস্ত যাওয়ার ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার পর ইফতার করবে।
৬. খেজুর দ্বারা ইফতার করা উত্তম। তা না থাকলে কোন মিষ্টি জিনিস দ্বারা ইফতার করবে। তাও না থাকলে পানি বা অন্য কিছু দিয়ে ইফতার করবে।
৭. অনেকে আজান শেষ হওয়া পর্যন্ত ইফতার গ্রহণ থেকে বিরত থাকে। এটা অপ্রয়োজনীয়। আল্লাহ বান্দার প্রতি সহজতাই চান।
৮. ইফতারের জন্য বেশি সময় ব্যয় করা, নামাজ আদায়ে দেরি করা, জামাতে অংশগ্রহণ না করা নিন্দনীয়। সহিহ মুসলিমে ইবনে আতিয়্যা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী রাসুল (সা.) সামান্য ইফতার গ্রহণ করে দ্রুত নামাজ আদায় করে নিতেন।
(হিদায়া সিয়াম অধ্যায়, আল বাহরুক রায়িক সিয়াম অধ্যায়)
আল্লাহ তাআলা সবাইকে ত্রুটিমুক্ত অবস্থায় রোজা পালনের তাওফিক দিন। আমিন।
লেখক : মুহাদ্দিস, সাঈদিয়া উম্মেহানী মহিলা মাদরাসা, ভাটারা, ঢাকা।
শাহেদ//