সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের মালিকানাধীন রাজশাহীর বারিন্দ মেডিকেল কলেজে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক এক কেন্দ্রীয় সমন্বয়কসহ চার ছাত্রনেতাকে অবরুদ্ধ করার কারণ জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা।
আজ বুধবার দুপুরে মেডিকেল কলেজে সংবাদ সম্মেলন করে তাঁরা জানান, ঘটনার পেছনে অন্য কোনো বিষয় তাঁদের জানা নেই। শুধু শিক্ষকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করার কারণেই ওই চারজনকে অবরুদ্ধ করেছিলেন শিক্ষার্থীরা।
সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন বারিন্দ মেডিকেল কলেজের ‘বারিন্দ ডক্টর সেবা’–এর সভাপতি চিকিৎসক আবদুস সাদিদ। তাঁর সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক আতিক শাহরিয়ার, সহসাধারণ সম্পাদক রবিন হকসহ বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
সাদিক বলেন, ‘গতকাল (মঙ্গলবার) কিছু ব্যক্তি আমাদের স্যারদের কাছে এসেছিল। তাদের সঙ্গে হয়তো একটু অসৌজন্যমূলক কথাবার্তা হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতেই সাধারণ শিক্ষার্থীরা এগিয়ে আসে। কারা এসেছিল, এটা তাঁরা দেখেননি। যেকোনো মানুষ এসে যদি আমাদের শিক্ষকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে, শিক্ষার্থীদের আচরণ এ রকমই হওয়া উচিত।’
বারিন্দ মেডিকেল কলেজে এখন রাজনৈতিক ‘ট্যাগ’ লাগানোর চেষ্টা চলছে দাবি করে আবদুস সাদিদ বলেন, ‘আমাদের এখানে কোনো ধরনের রাজনীতি হয় না। রাজনৈতিক বিবেচনায় কোনো জনবলও নিয়োগ হয় না। সব নিয়োগ হয় মেধার ভিত্তিতে। কলেজ কর্তৃপক্ষের কেউ কোনো দিন আমাদের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোনো ধরনের রাজনৈতিক আলাপ করেননি।’
সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসক সাদিদ দাবি করেন, জুলাই আন্দোলনের সময় ডক্টর সেবা সংগঠনের ব্যানারে এই প্রতিষ্ঠানে বিনা মূল্যে আহতদের সেবা দেওয়া হয়েছে। এটা এখনো চলমান। প্রতিষ্ঠানটিতে সরকারি নিয়ম মেনে মেধাবীদের বিনা মূল্যে পড়ানো হয়। এই প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ও অলাভজনক।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক জি কে এম মেশকাত চৌধুরী, সংগঠনের জেলা কমিটির মুখ্য সংগঠক সোহাগ সরদার, যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল বারী ও ছাত্রনেতা আল-সাকিব প্রতিষ্ঠানটিতে গিয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁদের উদ্ধার করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে পড়ে, তাঁরা প্রতিষ্ঠানটিতে চাঁদাবাজি করতে গিয়েছিলেন। তবে ছাত্রনেতাদের দাবি, প্রতিষ্ঠানটিতে কিছু তথ্য নিতে গেলে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা ‘মব’ সৃষ্টির চেষ্টা করেছিলেন।
বারিন্দ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মালিক আওয়ামী সরকারের সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। আত্মগোপনের আগে তিনি প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ছিলেন। তাঁর বাবা মো. শামসুদ্দিন প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। বর্তমানে তিনি চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
মেডিকেল কলেজটিতে আটকাপড়া নিয়ে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে মেশকাত চৌধুরী বলেছিলেন, ‘চলমান অপারেশন ডেভিল হান্টে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করতে আমরা সেখানে তথ্য সংগ্রহ করতে যাই। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির সচিব (ভারপ্রাপ্ত) তাজুল ইসলাম রনির সঙ্গে যোগাযোগ করে আমরা প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপাল, চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনায় বসি। আলোচনার একপর্যায়ে সেখানে কর্মরত বেশ কয়েকজন অফিস স্টাফ, যাঁরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ঢুকে পড়েন এবং আমাদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা শুরু করেন। ওই কক্ষ এবং প্রতিষ্ঠানটির বাইরে “মব” তৈরি করে আমাদের আটকে ফেলা হয়। এই পরিস্থিতিতে আমরা পুলিশ, সেনাবাহিনী এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভাইদের সহায়তায় সেখান থেকে বের হই।’