রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সিফাতকে মায়ের কবরের পাশে দাফন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সিফাতুল্লাহের বাড়ির সামনে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। আজ শনিবার বরগুনার বামনা উপজেলার ছোনবুনিয়া গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সিফাতুল্লাহ সিফাতের লাশ দাফন করা হয়েছে। আজ শনিবার বেলা সাড়ে তিনটায় বরগুনার বামনা উপজেলার ছোনবুনিয়া গ্রামের নিজ বাড়ির সামনে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর লাশ দাফন করা হয়। লাশ দাফনের সময় তাঁর বাবাসহ স্বজনেরা আহাজারি করতে থাকেন। গ্রামজুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া।

সিফাতুল্লাহ সিফাত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন মেহেরচণ্ডী এলাকার তুহিন ছাত্রাবাসের একটি কক্ষ থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। তিনি বামনা উপজেলার ছোনবুনিয়া গ্রামের আবদুল মান্নান মিয়ার ছেলে। দুই ভাইবোনের মধ্যে সিফাত ছোট।

আজ বেলা দুইটার দিকে সিফাতের লাশ রাজশাহী থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। এ সময় সেখানে এক হৃদয়বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। ছেলের লাশ দেখে মান্নান মিয়া মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। ছেলের শোকে বারবার মূর্চ্ছা যাচ্ছিলেন। স্বজনেরা তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। সেখানে উপস্থিত এলাকাবাসী এবং সিফাতের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহপাঠীরা বিলাপ করতে থাকেন। সিফাতকে শেষবারের মতো একনজর দেখতে শত শত মানুষ তাঁদের বাড়িতে জড়ো হন। জানাজা শেষে সিফাতের লাশ তাঁর মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়।

ছেলের কথা জানতে চাইলে দীর্ঘশ্বাস ফেলে মন্নান মিয়া বলেন, ‘আমার ছেলেটা অনেক ভালো ছিল। এলাকার মানুষের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক ছিল। খুব শান্ত স্বভাবের ছিল। কীভাবে কী হয়েছে, বুজতে পারছি না। স্বপ্ন ছিল, লেখাপড়া শেষ করে সরকারি চাকরি করবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। ১৫ দিন আগে বাড়িতে আসছিল। তখন বলছিল, ‘‘বাবা, আমি তোমার কাছে বেশ কয়েক দিন থাকব। তোমাকে রান্না করে খাওয়াব।’’ তখন বুঝিনি, এটাই তার সঙ্গে আমার শেষ দেখা।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সিফাতুল্লাহ লাশ গতকাল বাড়িতে পৌঁছানোর পর তাঁর বাবা আবদুল মান্নান মিয়া (প্রথম সারিতে বাঁ থেকে দ্বিতীয়) আহাজারি করতে থাকেন
ছবি: প্রথম আলো

ছোনবুনিয়া গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, সিফাত অত্যন্ত ভালো ছেলে ছিলেন। এলাকায় কোনো মানুষের সঙ্গে তাঁর কোনো দিন কোনো বিবাদ হয়নি। সিফাতের বাবা মন্নান মিয়া অসুস্থ। ছয় মাস আগে সিফাতের মা মারা গেছেন। এরপর বাড়িতে তাঁর বাবাকে দেখার মতো কেউ ছিলেন না। এসব নানা বিষয় নিয়ে সিফাত মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন।

সিফাতের এলাকার সাব্বির নামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘সিফাত সব সময় চুপচাপ থাকত। অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিল। কিছুদিন আগে সিফাত বাড়িতে এসেছিল। তখন সে তার বাবাকে বলেছিল যে সে আরও কিছুদিন বাড়িতে থাকতে চায়। তখন তার পড়াশোনার ক্ষতি হবে বলে তার বাবা তাকে বাড়ি থেকে রাজশাহীতে চলে যেতে বলে। এরপর সে চলে যায়। তবে এ রকম ঘটনা ঘটবে, তা আমরা কখনোই ভাবতে পারিনি।’

সিফাতুল্লাহ সিফাত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিব চৌধুরীর সঙ্গে তুহিন ছাত্রাবাসের একটি কক্ষে থাকতেন। হাসিব বলেন, ‘শুক্রবার বিকেলে আমি সিফাতকে কক্ষে রেখে বাইরে চলে যাই। ২০–২৫ মিনিট পর ফিরে এসে দেখি, কক্ষের দরজা বন্ধ। এরপর অনেক ডাকাডাকি করেও সাড়া না পেয়ে দরজা জোরে ধাক্কা দিয়ে ভেতরে ঢুকে সিফাতের লাশ ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘সিফাত কিছুটা অসুস্থ ছিল। বিষয়টি আমরা তাঁর বাড়ির লোকজনকে জানিয়েছিলাম।’

সিফাতুল্লাহর বাবা আবদুল মান্নান বলেন, ‘আমি এখন কী নিয়ে থাকব, আমার তো সব শেষ হয়ে গেছে। অত্যন্ত ভালো ছেলে ছিল সিফাত। সবাই আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন।’