বাবার বিরুদ্ধে চুরির অপবাদের প্রতিবাদ করায় কিশোরীকে গাছে বেঁধে নির্যাতন

কুড়িগ্রামের রাজারহাটে বাবার বিরুদ্ধে গরু চুরির অপবাদের প্রতিবাদ করায় এই কিশোরী শিক্ষার্থীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করা হয়।
ছবি: সংগৃহীত

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নে বাবার বিরুদ্ধে করা চুরির অপবাদের প্রতিবাদ করায় ১৫ বছরের এক কিশোরীকে টানা ছয় ঘণ্টা গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। আজ মঙ্গলবার কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের একটি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী ওই কিশোরী উপজেলার একটি বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বেলা তিনটার দিকে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে রাজারহাট থানা–পুলিশ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগী ওই কিশোরীর ছোট বোন (৯) কিছুদিন ধরে হৃদ্‌রোগে ভুগছিল। তার দাদি নাতনির চিকিৎসার খরচের জন্য ওই কিশোরীর বাবাকে একটি গরু দেন। পরে ওই কিশোরীর দূরসম্পর্কের দাদা আবদুল কাদের (সাবেক ইউপি সদস্য) ওই কিশোরীর বাবার বিরুদ্ধে গরু চুরির অভিযোগ আনেন এবং চৌকিদার পাঠিয়ে হুমকি দেন। বাবাকে দেওয়া অপবাদের প্রতিবাদ করলে আবদুল কাদেরের উঠানেই নবম শ্রেণির ওই কিশোরীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে নির্যাতন করা হয়।
ঘটনাস্থল থেকে স্থানীয় সংবাদকর্মী খন্দকার আরিফ জানান, তিনি দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই কিশোরীকে গাছের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বাঁধা থাকতে দেখেছেন।

খন্দকার আরিফের নেওয়া একটি সাক্ষাৎকার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। কিশোরীকে একটি ভিডিওতে বলতে শোনা যায়, অপবাদের প্রতিবাদ করায় এবং দাদির সঙ্গে দেখা করতে চাইলে তাঁর দাদা আবদুল কাদের কয়েকজন নারীর সহায়তায় সকাল ৯টার দিকে তাকে বেঁধে রাখেন। তার গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাস রোধ করার চেষ্টা এবং মারধর করে হাঁটু, গলায় ও পিঠে জখম করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের নামও জানিয়েছে ওই কিশোরী।

পরে খবর পেয়ে বেলা তিনটায় পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই কিশোরীকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। স্থানীয় ইউপি সদস্য মামুনুর রশিদ বলেন, কিশোরীর বোনের চিকিৎসার জন্য ওই শিক্ষার্থীর বাবা জোর করে তাঁর মায়ের একটি গরু নিয়ে বাসায় বেঁধে রাখেন। পরে ওই গরু নিয়ে আসতে গেলে কিশোরী তাঁর দাদিকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। এতে ওই দাদি অসুস্থ হলে এলাকার অন্য নারীরা তাকে বেঁধে রাখেন। তিনি বলেন, ‘আমি ঘটনা শুনে সেখানে গেলে পুলিশ আমার উপস্থিতিতে ওই শিক্ষার্থী ও তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিত এক নারীকে থানায় নিয়ে গেছে।’

রাজারহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তছলিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাস্থল থেকে কিশোরীকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। ভুক্তভোগী ওই কিশোরীর মৌখিক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মায়া বেগম নামের একজনকে থানায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসা হয়েছে। এ বিষয়ে কিশোরী লিখিত অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।