বদরগঞ্জে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনিয়ম–দুর্নীতির অভিযোগ

রামনাথপুর ইউপির চেয়ারম্যান শওকত আলী
ছবি: সংগৃহীত

রংপুরের বদরগঞ্জের রামনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনিয়ম–দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ করেছেন ওই ইউপির সাত সদস্য। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার কাছে তাঁরা রোববার ডাকযোগে লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছেন।

ওই লিখিত অভিযোগে সই করা সাত ইউপি সদস্য হলেন আনোয়ার হোসেন, রেহেনা বেগম, মেহেদী হাসান, খালেদ হাসান, জাহাঙ্গীর রহমান, ইউসুফ আলী ও নির্মল চন্দ্র রায়।

লিখিত ওই অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, রামনাথপুর ইউপির চেয়ারম্যান শওকত আলী বদরগঞ্জ উপজেলার একই ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতি। এ কারণে তিনি ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন। শওকত আলী ইউনিয়নের ২০টি ইটভাটার ট্রেড লাইসেন্স বাবদ প্রতিবছর ভাটাপ্রতি ৮০ হাজার করে গত তিন বছরে ৪৮ লাখ টাকা তুলে আত্মসাৎ করেছেন। গত অর্থবছরে ভ্যান ও বাইসাইকেলের লাইসেন্সের বিপরীতে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা, টিসিবির কার্ড প্রদানে অনলাইন খরচের কথা বলে ১ হাজার ৬৪৮ কার্ডের বিপরীতে ৮২ হাজার ৪০০ টাকা তুলে আত্মসাৎ করেন। তিন বছর ধরে ওয়ারিশ সনদপ্রতি ৫০০ টাকা, দোকানের ট্রেড লাইসেন্সপ্রতি ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা তুলে আত্মসাৎ করেছেন।

লিখিত অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, ওই ইউনিয়ন পরিষদের মোকসেদপুর খড়িয়াপাড়া গ্রামের গিয়াস উদ্দিন, মোকসেদপুর বানুয়াপাড়া গ্রামের ছাবেদ আলী, অহিদুল হক, রামকৃষ্ণপুর খিয়ারপাড়া গ্রামের এসকা বেগম, ঘাটাবিল মিরাপাড়া গ্রামের কেরামত আলী, সরকারপাড়া গ্রামের বিধবা ভাতাপ্রাপ্ত ক্ষিরোবালাসহ ৯০ জন ভাতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি এক বছর আগে মারা গেছেন। কিন্তু তাঁদের স্বজনেরা চেয়ারম্যানের সহায়তায় অবৈধভাবে ভাতার টাকা তুলছেন।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ইউনিয়ন পরিষদের আয়ের উৎস থেকে ১২ জন ইউপি সদস্যের প্রত্যেককে প্রতি মাসে ৪ হাজার ৬০০ টাকা ভাতা দেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও তিন বছর ধরে তা দেওয়া হয়নি। ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন আয়ের উৎসের টাকা ওই চেয়ারম্যান তুলে আত্মসাৎ করেছেন।

ইটভাটার ট্রেড লাইসেন্সের টাকাসহ বিভিন্ন খাতের টাকা আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রামনাথপুর ইউপি চেয়ারম্যান শওকত আলী বলেন, ‘ট্রেড লাইসেন্সসহ যেকোনো লাইসেন্সের টাকা ইউনিয়ন পরিষদের তহবিলে ব্যাংকের মাধ্যমে জমা হয়। ওয়ারিশ সনদের টাকাও জমা হয় সেখানে। এসব টাকা পরিষদের উন্নয়নমূলকসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়। এ টাকা তুলে আত্মসাৎ করার অভিযোগ সঠিক নয়। পরিষদের আয়ের উৎস থেকে ইউপি সদস্যদের ভাতা দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু পরিষদের তহবিলে টাকা না থাকায় তা দেওয়া হয়নি। বিভিন্ন ভাতার মৃত উপকারভোগীদের তথ্য হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু করেছি। কেউ বলতে পারবে না কারও কাছ থেকে কখনো টাকা নিয়েছি। পরিষদের সাতজন ইউপি সদস্য শুরু থেকেই আমার বিরোধিতা করছেন।’

এ বিষয়ে বদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘ওই ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পরে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আনসার আলী ও উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা ছাদেকুন্নাহার তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিলে এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’