ভালোবাসার বসন্তে মানুষ বেশি, পাঠক কম

অমর একুশে বইমেলায় বসন্ত-ভালোবাসার দিনে পাঠকেরা বিভিন্ন স্টলে বই দেখছেনছবি: প্রথম আলো

এজাজুল ইসলাম নিজের বইয়ে অটোগ্রাফ দিতে দিতে বললেন ‘আমার খেজুর গুড় আর মধু কোথায় রাখব?’ শ্রাবণ মেঘের দিন–এর সেই ‘ঢুলি’ চরিত্রের তুমুল জনপ্রিয় অভিনেতা ডাক্তার এজাজুল ইসলামের জন্য এক পাঠক গতকাল শুক্রবার মেলায় এসব বয়ে এনেছিলেন। হুমায়ূন আহমেদের হাত ধরে উঠে আসা রসিক চরিত্রের গুণী অভিনেতার এবার দুটি বই এসেছে সময় প্রকাশন থেকে। হুমায়ূন স্যারের চোখের জল এবং হুমায়ূন স্যারের শুটিং ও আমি। এজাজুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার জন্য এক বাচ্চা তার গাছের প্রথম পেয়ারাও নিয়ে এসেছিল। এসব ভালোবাসা মাপা যায় না কিছু দিয়ে।’ ছুটির দিন, পয়লা ফাল্গুন আর ভালোবাসা দিবস মিলিয়ে শুক্রবারের বইমেলার ভিড় খারাপ ছিল না। এমন অসংখ্য টুকরা টুকরা ঘটনা ঘটছিল মেলার বইয়ের দোকানের ভেতরে।

তবে ভালোবাসা দিবসের এই ভিড়ের অধিকাংশ মানুষের হাতে বইয়ের ব্যাগ তেমন দেখা গেল না। কেউ কেউ বই হাতে ধরে ছবি তুলে আবার টেবিলে নামিয়ে রেখে হেঁটে চলে গেল অনুতাপহীন মুখ করে।

হাওরের জলস্রোত সেলিনা হোসেন প্রথমা প্রকাশন

সময় প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘এই মেলা এক দিনে তৈরি হয়নি। এর ঐতিহ্যগত ধারাবাহিকতা আছে। বই ভালোবাসা সেই মানুষদের অনেকেই এবার মেলায় অনুপস্থিত। কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা মেলায় এলে আকর্ষণ বাড়ে, মেলা সুন্দর হয়। তাঁরা নেই এবারের মেলায়।’

ফরিদ আহমেদের কথার রেশ ধরেই যেন লেখক দীপু মাহমুদও একই কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘মেলায় অনেক নতুন মুখ দেখছি, এটা ভালো। তবে পুরোনো মুখের অনুপস্থিতিতে আশঙ্কা করছি, বইপ্রিয় মানুষগুলো এবার মেলায় কম।’ এখনকার নতুন লেখকেরা ক্রেজ তৈরি করছেন; কিন্তু বাংলা সাহিত্যের পাঠক কি তৈরি করতে পারছেন? প্রশ্ন করলেন তিনি। সাহিত্যের নতুন পাঠক তৈরি না হলেও মেলায় ওজনদার বইয়ের কিছু নির্দিষ্ট পাঠক সব সময়ই থাকে। যেমন এবারের বইমেলাতেও মাওলা ব্রাদার্স থেকে এসেছে অধ্যাপক সনৎ কুমার সাহার বই, বাস্তবতার মাত্রাবিচার: সাহিত্যবিষয়ক কয়েকটি প্রবন্ধ এবং প্রকৃতিপুত্র দ্বিজেন শর্মার বই কুসুমে কুসুমে চরণচিহ্ন: প্রকৃতি ও পরিবেশ কথা।

কেউ তাকে খুন করেছে জাহিদ হায়দার পাঞ্জেরী

তবে লেখকদের উপস্থিতিও যে মেলায় প্রভাব রাখে, এর একটি দৃশ্য দেখা গেল অন্যপ্রকাশের স্টলের সামনে। সেখানে নিজের বইয়ে স্বাক্ষর করছিলেন লেখক সাদাত হোসাইন। তাঁর ইউরোপের নয়টি দেশের ভ্রমণ নিয়ে লেখা যেতে যেতে তোমাকে কুড়াই কিনতে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন তখন পাঠক। সাদাত হোসাইন বলেন, ‘এই নিয়ে পাঁচ দিন এলাম। প্রতিদিনই দীর্ঘ সময় অটোগ্রাফ দিয়ে ফিরে চলে যেতে হয়েছে। তেমন পার্থক্য দেখছি না অন্যবারের সঙ্গে মেলার।’

তবে কিছু পার্থক্য তো নিশ্চয়ই ঘটেছে। যেমন শিশুপ্রহরের বিশেষ আকর্ষণ ছিল শিখু, হালুম, টুকটুকিরা। শিশুদের কাছে জনপ্রিয় সেই সিসিমপুরের অনুপস্থিতি প্রভাব ফেলেছে খুদে পাঠকের মনে। তবে শিশুদের জন্য পাপেট শো, চিত্রাঙ্কন ও আবৃত্তির আয়োজন করেছিল বাংলা একাডেমি। বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত ছিল শিশুপ্রহর। অমর একুশে বইমেলা ২০২৫–এর ১৪তম দিনে মেলা শুরু হয় বেলা ১১টায়। চলে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত।

আজ ১৫ ফেব্রুয়ারি বইমেলার ১৫তম দিন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার জন্য অমর একুশে বইমেলা শুরু হবে বেলা ১১টার পরিবর্তে ২টায়। চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। মেলায় থাকবে না পূর্বঘোষিত শিশুপ্রহর।