বান্দরবানে পাথরের এক রাজ্য, আছে তার রাজাও

বান্দরবানের থানচি উপজেলার তিন্দুর পাথরের রাজ্য। সম্প্রতি তোলাপ্রথম আলো

রাজ্যের বাসিন্দাদের নড়াচড়ার ক্ষমতা নেই। তারা সবাই পাথর। কোনোটি বড়, কোনোটি ছোট। কোনোটিতে আছে নানা ধরনের নকশা আর খাঁজ। এমন পাথরের রাজ্যে আছে একজন রাজাও। নাম বংডহ। কাল্পনিক নয়, বাস্তবেই রয়েছে এমন পাথরের রাজ্য।

বান্দরবানের থানচি উপজেলার ১২ কিলোমিটার দূরে তিন্দু গেলে দেখা মিলবে এই পাথরের রাজ্যের। সাঙ্গু নদের স্রোতে পাথুরে পাহাড় ভেঙে জন্ম নিয়েছে এখানকার পাথরগুলো। সেখানে পাথরের সন্তানদের নিয়ে মুকুট পরে বসে রয়েছে পাথরের রাজা বংডহ।

সাঙ্গু নদের উজানের এই এলাকা পর্যটকদের কাছে ‘তিন্দু রাজা পাথর’ হিসেবে পরিচিত। প্রকৃতির অপূর্ব সৃষ্টি দেখে বিমোহিত হন পর্যটকেরা। সেখানে পাথরের ভাঁজে ভাঁজে সাঙ্গু নদের স্ফটিক স্বচ্ছ জলধারা প্রবল স্রোতে কলকল ধ্বনিতে বয়ে চলে। জলধারায় ছোট-বড় অসংখ্য পাথরের দেখা মেলে। পাথরের মেলার মধ্যমণি রাজা পাথর বা বংডহ। মুকুটের মতো খাঁজ রয়েছে বংডহ এর মাথায়। নদের দুই তীরের সুউচ্চ পাথরের প্রাচীর যেন যেন এই রাজ্যের সীমানা।

পাথরের রাজ্যের রাজা বা বংডহ। সম্প্রতি তোলা
প্রথম আলো

রাজা পাথর নিয়ে মারমা জনগোষ্ঠীর অনেক কিংবদন্তি রয়েছে। মারমা ভাষার লেখক ও গবেষক মঙক্যশোয়েনু নেভী বলেছেন, মারমা ভাষা গবং থেকে বংডহ শব্দের উৎপত্তি। যার অর্থ মুকুটধারী বড় পাথর বা রাজা পাথর। কিংবদন্তি মতে, এক জ্ঞানী সাধক দিব্যজ্ঞানে জানতে পারেন ‘রিগ্রিখ্যং নদে’ (সাঙ্গু নদের মারমা নাম) গুপ্তধন রয়েছে। সাধক গুপ্তধনের সন্ধানে কালাডাইন (আরাকানের একটি নদী) অতিক্রম করে রিগ্রিখ্যংয়ে এসে বিশাল এক পাথরের চূড়ায় অবস্থান নেন। এরপর গুপ্তধন সন্ধান শেষে ফিরে যাওয়ার সময় সাধক ভুলে তাঁর গবং বা পাগড়ি ওই পাথরের ওপর ফেলে যান। মারমাদের বিশ্বাস ওই পাগড়ি বা মুকুটই পরে বড় পাথরের মাথায় এঁটে বসেছে। আর এ কারণে ওই পাথরের নাম হয়েছে বংডহ বা পাথরের রাজা।

তিন্দু ইউনিয়নে অবস্থিত পাথরের রাজ্য এখন পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় স্থান। প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক বান্দরবান-চিম্বুক-থানচি সড়কের চিম্বুক, নীলগিরি ও থানচি হয়ে রাজা পাথর দেখার জন্য তিন্দু ভ্রমণে যান। অনেকে রাজা পাথর দেখে রেমাক্রী ও নাফাখুম পর্যন্ত ঘুরে আসেন। স্থানীয় অনেকের কাছে বংডহ পবিত্র দেবতা। তাঁরা রাজাকে দেখার জন্য যান এবং রাজমুকুটে মোমবাতি জ্বালিয়ে পূজা করেন। তবে বর্তমানে থানচিতে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা থাকায় বংডহ ভ্রমণে কোনো পর্যটক যেতে পারছেন না।

বর্ষা মৌসুমে খরস্রোতা সাঙ্গু নদ যখন রুদ্রমূর্তি ধারণ করে সবচেয়ে ভয়ংকর হয়ে বংডহ বা রাজা পাথরের এলাকাটি। তিন্দু ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য ক্রানী অং মারমা জানিয়েছেন, বর্ষায় বংডহ এলাকায় বহু নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছে। ভয়ংকর হওয়ায় স্থানীয়রাও বর্ষায় বংডহয়ে যান না। এ জন্য উপজেলা প্রশাসন থেকে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বংডহ, তিন্দুসহ সাঙ্গু নদের উজানের ভ্রমণে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়ে থাকে।