কক্সবাজার রেললাইন চালুর এক বছরের বেশি সময় পরে নিয়মিত ট্রেন পেল চট্টগ্রাম। বর্তমানে চলাচলরত বিশেষ ট্রেনটি এখন থেকে নিয়মিত চলবে। ট্রেনের সংখ্যাও এক জোড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রেলপথ মন্ত্রণালয় ট্রেন নিয়মিতকরণ এবং সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়ে রেলওয়ের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে৷ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের এই দুটি ট্রেনেরও নামকরণ করা হয়েছে সৈকত ও প্রবাল এক্সপ্রেস।

নতুন সময়সূচি অনুযায়ী ট্রেন কখন থেকে চলাচল শুরু হবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে জানুয়ারি থেকেই ট্রেনগুলো চলাচল করবে বলে জানিয়েছেন রেল কর্মকর্তারা।

কক্সবাজার রেললাইনে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছিল ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর। প্রথমে ঢাকা থেকে কক্সবাজার এক্সপ্রেস নামে আন্তনগর বিরতিহীন ট্রেন দেওয়া হয়। এরপর গত বছরের জানুয়ারিতে চলাচল শুরু করে পর্যটক এক্সপ্রেস। তা–ও দেওয়া হয় ঢাকা থেকে। চট্টগ্রাম থেকে ট্রেন না দেওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়।

গত বছরের পবিত্র ঈদুল ফিতরের সময় ৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত এক জোড়া বিশেষ ট্রেন চালু করা হয়। দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই ট্রেন। এরপরও একপর্যায়ে ইঞ্জিন-কোচের সংকটের কথা বলে গত বছরের ৩০ মে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের চাপে সে অবস্থান থেকে সরে এসে রেল। পবিত্র ঈদুল আজহার সময় গত বছরের ১২ জুন থেকে আবার চালু করা হয় বিশেষ ট্রেন, যা এখনো চলছে।

এই বিশেষ ট্রেন স্থায়ী না করার কারণে যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কা ছিল। তাই ট্রেনটি স্থায়ী বা নিয়মিত করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পক্ষ থেকে গত বছরের ১১ ডিসেম্বর প্রবাল এক্সপ্রেস ও সৈকত এক্সপ্রেস নামের দুটি আন্তনগর (উভয় পথে) ট্রেন চালাতে রেলভবনকে প্রস্তাব দেওয়া হয়। রেলভবন থেকে গত ৩১ ডিসেম্বর প্রস্তাবটি রেলপথ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। বৃহস্পতিবার রেলপথ মন্ত্রণালয় চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত প্রতিদিন দুই জোড়া ট্রেন চালানোর অনুমোদন দেয়।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব কামরুল হাসান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ রেলওয়ের বিদ্যমান জনবল দিয়ে এই রুটের নতুন দুই জোড়া ট্রেন চালাতে হবে। বাংলাদেশ রেলওয়ের ট্রেনের ক্যাটারিং সার্ভিসে নিয়োগ ও ব্যবস্থাপনা নীতিমালার আলোকে বাংলাদেশ রেলওয়ের মার্কেটিং শাখা কর্তৃক চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটে ক্যাটারিং সেবা দিতে সাময়িক অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ক্যাটারিং সেবা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ট্রেনগুলো দ্রুত সময়ের চালু করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা মো.

শহিদুল ইসলাম বলেন, দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণের পর এই পথে টিকিটের জন্য যাত্রীদের চাহিদা অনেক বেশি। ঢাকা থেকে দুটি সরাসরি ট্রেন থাকলেও চট্টগ্রাম থেকে স্থায়ী কোনো ট্রেন ছিল না। একটি অস্থায়ী বিশেষ ট্রেন থাকায় ট্রেনটিকে প্রতিদিন দুবার করে উভয়মুখে চারবার চালানোর পরিকল্পনা করেছি। পাশাপাশি আন্তনগর ট্রেনে রূপ দেওয়ার মাধ্যমে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের চাহিদা পূরণ হয়েছে।

রেলওয়ের নথিপত্রের তথ্য অনুযায়ী, নতুন অনুমোদিত ট্রেন দুটিতে কোচ থাকবে ১৬টি করে। প্রতিটি ট্রেনে আসন রয়েছে ৭৪৩টি। সোমবার সাপ্তাহিক বন্ধ থাকবে।

সৈকত এক্সপ্রেস প্রতিদিন ভোর ৬টা ১৫ মিনিটে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে কক্সবাজার পৌঁছাবে। প্রবাল এক্সপ্রেস ট্রেনটি সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে কক্সবাজার থেকে ছেড়ে বেলা ২টা ১৫ মিনিটে চট্টগ্রাম স্টেশনে পৌঁছাবে। চট্টগ্রামে আসার পর প্রবাল এক্সপ্রেস বেলা ৩টা ১০ মিনিটে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে সন্ধ্যা ৭টায় কক্সবাজারে পৌঁছাবে। সৈকত এক্সপ্রেস ট্রেন সন্ধ্যা ৮টা ১৫ মিনিটে কক্সবাজার থেকে ছেড়ে রাত ১১ টা ৫০ মিনিটে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছাবে।

বর্তমানে বিশেষ ট্রেনটি প্রতিদিন সকাল ৭টায় চট্টগ্রাম রেল স্টেশন থেকে ছেড়ে যায়। কক্সবাজারে পৌঁছে সকাল ১০টা ২০ মিনিটে। আবার কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছাড়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সাতটায়। চট্টগ্রামে পৌঁছায় রাত ১০টায়।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

বুড়িমারী থেকে আন্তনগর ট্রেন চালুর দাবিতে চার দিন ধরে রেলপথ অবরোধ, অন্য ট্রেনও বন্ধ

লালমনিরহাটের বুড়িমারী রেলস্টেশন থেকে সরাসরি আন্তনগর ‘বুড়িমারী এক্সপ্রেস’ ট্রেন চালুর দাবিতে টানা চার দিন ধরে পাটগ্রামে রেলপথ অবরোধ করে নানা কর্মসূচি পালন করছেন এলাকাবাসী। এতে লালমনিরহাট-বুড়িমারী রেলপথে চলাচলকারী আরও চারটি ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

গত সোমবার থেকে লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। এ উপলক্ষে পাটগ্রাম সংগ্রাম উন্নয়ন পরিষদের ব্যানারে বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় পাটগ্রাম রেলস্টেশনে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে বক্তারা বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বুড়িমারী থেকে আন্তনগর বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেন সরাসরি চালুর ব্যাপারে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার পাশাপাশি মহাসড়ক অবরোধ করা হবে।

পাটগ্রাম সংগ্রাম উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি এ টি জে সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যের মধ্যে পাটগ্রাম পৌর বিএনপির সভাপতি মোস্তফা সালাউজ্জামান, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল্লাহ প্রধান, আমিনুল হক, শিক্ষক প্রতিনিধি ওয়ালিউর রহমান, অধ্যক্ষ শওকত হায়াত প্রধান, সমাজকর্মী জাহাঙ্গীর কবির, পাটগ্রাম কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবী পরিষদের সভাপতি আবদুল আকবার বিন আফসার প্রমুখ বক্তব্য দেন।

এর আগে বেশ কয়েকবার রেল ও সড়কপথ অবরোধ করে আন্তনগর বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনটি বুড়িমারী রেলস্টেশন থেকে সরাসরি চালু করার দাবিতে আন্দোলন করেন স্থানীয় লোকজন। এরপর রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ অন্তত পাঁচবার দিন-তারিখ উল্লেখ করে ঢাকাগামী আন্তনগর বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনটি চালুর প্রতিশ্রুতি দেয়। পরে রহস্যজনক কারণে ট্রেনটি চালু না হওয়ায় আবার অবরোধের ডাক দেন এলাকাবাসী।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ১২ মার্চ বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনটি সরাসরি বুড়িমারী থেকে যাত্রা করে। একদিন পর সেটি আবার লালমনিরহাট থেকে চলাচল শুরু করে। এতে বুড়িমারী থেকে চলাচলকারী যাত্রীদের একটি শাটল ট্রেনের মাধ্যমে লালমনিরহাটে গিয়ে বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনে উঠতে হয়। এতে হয়রানির মুখে পড়েন সেখানকার যাত্রীরা।

পাটগ্রাম রেলস্টেশনের মাস্টার নুর আলম বলেন, টানা চার দিন ধরে অবরোধ চলায় এ পথে চলাচলকারী চারটি ট্রেনের চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। আন্তনগর বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেন সরাসরি বুড়িমারী থেকে কবে চালু হবে, এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলতে পারবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বুড়িমারী থেকে আন্তনগর ট্রেন চালুর দাবিতে চার দিন ধরে রেলপথ অবরোধ, অন্য ট্রেনও বন্ধ