Samakal:
2025-04-30@16:52:44 GMT

বজ্রপাতে ঝরে যাওয়া জীবন

Published: 30th, April 2025 GMT

বজ্রপাতে ঝরে যাওয়া জীবন

দেশে সোমবার এক দিনে বজ্রপাতে ১৮ জনের মৃত্যুর খবর বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতোই। এক দিনে একক কারণে এত মৃত্যু নিশ্চয়ই উদ্বেগজনক। বজ্রপাতের এই বিপদ অবশ্য অনেক আগে থেকেই আমরা দেখে আসছি। প্রতিবছর বজ্রপাতে প্রায় ৩০০ মানুষের প্রাণহানি ঘটে। বজ্রপাতে এত প্রাণহানির পরও মানুষ এখনও কেন সচেতন হচ্ছে না, সে এক বিস্ময়। বজ্রপাতে হঠাৎ মৃত্যু হয়ে যেতে পারে বটে, তবে এ সময় কিছু পদক্ষেপ ব্যক্তির সুরক্ষায় কাজ করতে পারে। পাশাপাশি মৃত্যুর হার কমাতে সরকারি পদক্ষেপও জরুরি। বজ্রপাতে যখন মৃত্যুর সংখ্যা কমছে না, তখন স্বাভাবিকভাবেই এই দুই বিষয় নিয়েই প্রশ্ন তোলার অবকাশ থেকে যায়।  


মঙ্গলবার সমকালের প্রিন্ট সংস্করণে প্রকাশিত একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন ছিল– বজ্রপাতে ঝরে গেল ১৮ প্রাণ। সেখানে দেখানো হয়েছে– বজ্রপাতে মৃত্যু কমাতে সরকারি নানা উদ্যোগ আছে। একে দুর্যোগও ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু সরকার এ লক্ষ্যে কিছু ভুল প্রকল্প নিয়েছে। অন্যদিকে বড় গাছ কাটা বন্ধ না হওয়া এবং প্রয়োজনীয় সচেতনতা তৈরির চেষ্টা না থাকায় মৃত্যু রোধ হচ্ছে না। বজ্রসহ ঝড়বৃষ্টির পেছনে নদী শুকিয়ে যাওয়া, বায়ুদূষণ, জলাভূমি ভরাট হওয়া আর গাছ ধ্বংস হওয়ার প্রভাবও অনস্বীকার্য। 


বিভিন্ন তথ্যে এটা স্পষ্ট, সারাবিশ্বে বজ্রপাতে যে সংখ্যায় মানুষ মারা যায়, তার এক-চতুর্থাংশই বাংলাদেশে।  বজ্রপাতে প্রাণহানির শিকার অধিকাংশই মাঠে থাকা কৃষক। অনেকে বাড়ি ফেরার পথে এবং বাইরে গোসল করা কিংবা মাছ শিকারের সময়ও বজ্রপাতে মারা যান। তবে শহরের ভবনগুলোতে বজ্রপাত প্রতিরোধক দণ্ড থাকায় হতাহতের সংখ্যা কম। 


বেসরকারি সংগঠন ডিজাস্টার ফোরামের হিসাবে, ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বজ্রপাতে প্রাণ গেছে ৩ হাজার ৮৭০ জনের। এত প্রাণহানি দেখেই হয়তো সরকার বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। কিন্তু তার অধিকাংশই সে অর্থে কাজে আসেনি। ২০২৩ সালে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে সমকালের একটি প্রতিবেদন ছিল– মৃত্যু ঠেকানোর উদ্যোগ প্রকল্পেই ঘুরপাক। সরকার ২০১৬ সালে বজ্রপাতকে জাতীয় দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা দেয় এবং ওই বছরই বজ্রপাতে মৃত্যু প্রতিরোধে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সারাদেশে ১০ লাখ তালগাছের চারা এবং ৩৫ লাখ তালের আঁটি রোপণের উদ্যোগ গ্রহণ করে।

কিন্তু সম্পূর্ণ অপরিকল্পিত প্রকল্পটির অধীনে প্রায় শতকোটি টাকা গচ্চা যায়। দায়িত্বশীলরা একটা সময় পর এসে বলেছিলেন, তালগাছ বড় হতে ৩০-৪০ বছর সময় লাগে। সেজন্য প্রকল্পটি তাদের নিকট গ্রহণযোগ্য সমাধান নয়। এরপরও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে হাওরাঞ্চলের বজ্রপাতপ্রবণ ২৩ জেলায় বজ্রনিরোধক দণ্ডসহ বজ্রপাত-নিরোধক কংক্রিটের ছাউনি নির্মাণ করে কোনো প্রকার সমীক্ষা বা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই। এমনকি ২০১৭ সালে বজ্রপাতের পূর্বাভাসের জন্য ৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের আট স্থানে স্থাপন করা হয় লাইটনিং ডিটেকটিভ সেন্সর- এলডিএস; যার মাধ্যমে ১৫ মিনিট আগেই সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষকে বজ্রপাতের তথ্য জানার কথা থাকলেও বাস্তবে তা কাজ করেনি। এরপর ২০২৩ সালে সরকার ‘হাই ইমপ্যাক্ট ওয়েদার অ্যাসেসমেন্ট’ একটি প্রযুক্তি চালু করার সময়ই এর কার্যকারিতা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলেছিলেন। সোমবারের ১৮ জনের মৃত্যু প্রমাণ করছে সরকারের প্রকল্পগুলো ‘সকলি গরল ভেল’।


বাকি রইল মানুষের সচেতনতা। বস্তুত বজ্রপাত থেকে সুরক্ষায় এটাই সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্র। আকাশে যখন কালো মেঘ জমে মাঠে বা বাড়ির বাইরে থাকা মানুষের তখনই বাড়িতে বা নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়া উচিত। এপ্রিল থেকে মে মাসের মধ্যে বজ্রপাত বেশি হয়। এ সময়ে কেউ কৃষি কাজের জন্যও বাড়ির বাইরে গেলে জুতা পরে যাওয়া উচিত। জুতা না থাকলে ভূপৃষ্ঠ দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হওয়ার সময় তা শরীরে সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে। সেজন্য এ সময় জুতা ছাড়া যাওয়া যাবে না। বজ্রপাতের সময় উঁচু স্থান ও উঁচু গাছের নিচে আশ্রয় নেওয়া যাবে না। খোলা জায়গায় বা মাঠে থাকলে মাটির সঙ্গে যেন স্পর্শ কম হয়, এমনভাবে দুই হাত দিয়ে কান চেপে ধরে রাখতে হবে। এ সময় পানিতে থাকলে দ্রুত উঠে যেতে হবে।


বজ্রপাতে মৃত্যুর মিছিল থামাতে এই সচেতনতার কাজটাই আগে করা জরুরি। তাছাড়া প্রকৃতিবিনাশী সব কর্মকাণ্ড থামাতে হবে। আমাদের পরিবেশবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিশোধ শেষ বিচারে যে কতভাবে হতে পারে, বজ্রপাতে মৃত্যু তার অন্যতম উদাহরণ।


মাহফুজুর রহমান মানিক: জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদ, সমকাল
mahfuz.

manik@gmail.com 


 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রকল প র সময় সরক র এ সময়

এছাড়াও পড়ুন:

নোয়াখালীর মাদরাসায় শিক্ষার্থীর মৃত্যু, পরিবারের দাবি হত্যা 

নোয়াখালীর সদর উপজেলার একটি মাদরাসায় জোবায়ের ইবনে জিদান (১২) নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। বুধবার (৩০ এপ্রিল) বিকেল ৫টার দিকে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

মাদরাসা কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই শিক্ষার্থী মাদরাসার শৌচাগারে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। জিদানের মা সাবরিনা খাতুনের অভিযোগ, নির্যাতন করে তার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে।  

মারা যাওয়া জিদান উপজেলার নোয়াখালী পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মহব্বতপুর কাঞ্চন মেম্বারের পোল সংলগ্ন তানজিরুল কোরআন সোবহানিয়া মাদরাসার হিফজ বিভাগের শিক্ষার্থী ছিল। সে নোয়াখালী ইউনিয়নের মধ্য চর উরিয়া গ্রামের ফজল মিস্ত্রি বাড়ির ওমান প্রবাসী আমিরুল ইসলাম সোহেলের ছেলে।

আরো পড়ুন:

সাভারে পোশাক শ্রমিককে পুড়িয়ে হত্যা, স্বামী গ্রেপ্তার

শামীম ওসমানের ছেলে অয়নের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

মারা যাওয়া জিদানের মা সাবরিনা খাতুন বলেন, “আমার এক ছেলে এক মেয়ে। বড় ছেলে জিদান তানজিরুল কোরআন সোবহানিয়া মাদরাসার হিফজ বিভাগে আবাসিকে থেকে পড়ালেখা করত। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) বিকেলের দিকে নাতিকে দেখতে মাদরাসায় যান ওর দাদা মো. নুরুল হক বাবুল। তিনি দেখেন, তার নাতি বমি করছে। তখন মাদরাসার মুতামিম আফজাল হোসাইন জিদানের দাদাকে জানান, আপনার নাতি পড়েলেখা পারে না। এজন্য শাস্তি দিয়েছি, দেখেন।”

তিনি বলেন, ‍“আজ বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে মাদরাসার মুতামিম ফোন করে আমাকে জানান, আপনারা দ্রুত ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে যান। আপনার ছেলে মাদরাসায় গলায় ফাঁস দিয়েছে।” 

সাবরিনা খাতুনের অভিযোগ, “মাদরাসার শিক্ষকরা আমার ছেলেকে হত্যা করে। এরপর ফাঁসির নাটক সাজায়। তারা আমার ছেলেকে এর আগেও শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছে।”  

তানজিরুল কোরআন সোবহানিয়া মাদরাসার মুতামিম আফজাল হোসাইন অভিযোগ নাকচ করে বলেন, “ওই ছাত্র বিকেলের দিকে মাদরাসার শৌচাগারে যায়। এ সময় আরো দুইজন ছাত্র শৌচাগারে যাওয়ার অপেক্ষায় ছিল। সেখানে জিদান পায়জামার সঙ্গে থাকা নেয়ার (রশি) দিয়ে গলায় ফাঁস দেয়। বাইরে থাকা ছাত্ররা শৌচাগারে ঢুকতে দরজা ধাক্কাধাক্কি করে। দরজা খুলে গেলে তারা জিদানের মরদেহ দেখে আমাদের জানায়।”

২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার মো. শাহরিয়ার বলেন, “ফাঁস হলে পিছনের দিকে দাগ থাকার কথা না। ফাঁসের বিষয় হলে পিছনে দাগ থাকত না। আমি প্রাথমিক অবস্থায় জিদানের গলার পিছনের দিকে দাগ দেখতে পেয়েছি। তাই প্রাথমিকভাবে এটিকে আত্মহত্যা মনে হচ্ছে না। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।”  

সুধারাম মডেল থানার ওসি মো.কামরুল ইসলাম বলেন, “পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। মাদরাসায় থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষে পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকা/সুজন/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ