বিএনপি ক্ষমতায় না আসা পর্যন্ত ভাত খাবেন না, বলা নিজাম অসুস্থ হয়ে ঢাকায়
Published: 30th, April 2025 GMT
বিএনপি ক্ষমতায় না আসা পর্যন্ত ভাত না খাওয়ার ঘোষণা দেওয়া ঝিনাইদহের নিজাম উদ্দিন মন্ডলকে (৭০) উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে রাজধানীর বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নেওয়া হয়েছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে আজ বুধবার বেলা একটার দিকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নিজামকে দেখতে আসেন বিএনপির প্রতিনিধিদল। চিকিৎসকদের পরামর্শে তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে ঢাকায় নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
দলীয় ও পারিবারিক সূত্র বলছে, ২০১৪ সালের ৩০ মে ঝিনাইদহের মহেশপুরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে কাঙালিভোজের আয়োজন করেন নিজাম। অনুষ্ঠানটি আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের হামলায় পণ্ড হয়ে যায়। হামলাকারীরা রান্না করা খিচুড়ি নষ্ট করে ফেলে দেয়। এরপর নিজাম প্রতিজ্ঞা করেন বিএনপি আবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় না আসা পর্যন্ত তিনি ভাত খাবেন না। এর পর থেকে প্রায় ১১ বছর তিনি ভাত খাননি, শুধু রুটি-কলা খেয়ে আসছিলেন।
আজ দুপুর দেড়টার দিকে ফরিদপুর ছাড়ার আগে নিজাম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি যে প্রতিজ্ঞা করেছি তা ভাঙব না। যত দিন বিএনপি ক্ষমতায় না আসবে, তত দিন ভাত খাব না।’
নিজাম উদ্দিন মন্ডলের বাড়ি ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের বাঁশবাড়িয়া গ্রামে। তিনি তিন ছেলের বাবা। গত ঈদুল ফিতরের পর থেকে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। গত সোমবার বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের ইনচার্জ দেবব্রত জানান, নিজাম উদ্দিনের ফুসফুসে ক্ষত দেখা দিয়েছে। তাঁর উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন।
দলীয় সূত্র জানায়, নিজামের অসুস্থতার কথা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দৃষ্টিগোচর হয়। পরে তাঁর নির্দেশে ফরিদপুর মেডিকেলে যান দলের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম ও ‘আমরা বিএনপি পরিবার’–এর আহ্বায়ক আতিকুর রহমানসহ একটি প্রতিনিধিদল।
রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা এখানকার ডাক্তারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারি তিনি দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁর এমন কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা দরকার, যা পিজি হাসপাতালে রয়েছে।’ তিনি জানান, নিজাম উদ্দিনের চিকিৎসার যাবতীয় খরচ বিএনপি বহন করবে।
হাসপাতালে দেখতে গিয়ে নিজামের হাতে কিছু টাকা তুলে দেন বিএনপির নেতারা। পরে রাজধানীতে নেওয়ার জন্য তাঁকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দেওয়া হয়। এ সময় কেন্দ্রীয় বিএনপির সহতথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক এবং ঝিনাইদহ-৩ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী আমিরুজ্জামানসহ ফরিদপুর জেলা বিএনপির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বিকেল পৌনে চারটার দিকে নিজামুদ্দিনের ছেলে শাহাবুল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে জানান, সাড়ে তিনটার দিকে তাঁর বাবাকে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন ব এনপ ব এনপ র ঝ ন ইদহ রহম ন ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
শেয়ারবাজারে ভালো কোম্পানি আনতে করসুবিধা দেবে সরকার
শেয়ারবাজারের সূচক খুব দ্রুতই ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশার কথা শুনিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী। আশার ভিত্তি হিসেবে তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতি এখন ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। বিদেশি ঋণ পরিশোধসহ অর্থনীতিতে অনেক ইতিবাচক ঘটনা ঘটছে। এসবের প্রভাব শিগগিরই শেয়ারবাজারে পড়বে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নিজ কার্যালয়ে আজ বুধবার শেয়ারবাজার নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথাগুলো বলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী। এ সময় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার ফারজানা লালারুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় নিয়োজিত এই বিশেষ সহকারী বলেন, আগামী ২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেটে শেয়ারবাজারের জন্য বেশ কিছু প্রণোদনা থাকবে। ভালো কোম্পানি শেয়ারবাজারে আনতে করছাড় সুবিধা দেওয়া হবে। তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয়, এমন কোম্পানির ক্ষেত্রে করহারের ব্যবধান বাড়ানো হবে। তবে করহারের ব্যবধান কত বাড়ানো হবে, তা এখনই বলছেন না জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে। বিএসইসির পক্ষ থেকে এ ব্যবধান বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে।
আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘বাজারে আমরা এই মুহূর্তে লোক বদল করে কোনো ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি করতে চাই না। সমস্যার সমাধান না করে শুধু লোক বদল করে বাজারের উন্নয়ন হবে না। এ কারণে আমরা সমস্যা সমাধানে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের পথে রয়েছি। চাইলেও আমরা রাতারাতি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। কারণ, সব সিদ্ধান্তের ভালো-খারাপ দিক থাকে। এ জন্য আমরা সবকিছু যাচাই-বাছাই করে কার্যকর সিদ্ধান্ত নিতে চাই।’
দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন যাতে ব্যাংকের বদলে পুঁজিবাজার থেকে হয়, সে জন্য নতুন বিধান করা যায় কি না, তা–ও বিবেচনা করা হচ্ছে বলে জানান আনিসুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘বহুজাতিক যেসব কোম্পানিতে সরকারের শেয়ার রয়েছে, সেগুলোকে এবং সরকারি-বেসরকারি কিছু ভালো কোম্পানিকে বাজারে আনতে চাই।’
এর আগে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর বিএসইসির কমিশনের সঙ্গে বাজার উন্নয়নে করণীয় নির্ধারণে জরুরি সভা করেন আনিসুজ্জামান চৌধুরী। ওই বৈঠকে বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেকসহ তিন কমিশনার ও অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে শেয়ারবাজারের উন্নয়নে একগুচ্ছ পদক্ষেপ গ্রহণের ঘোষণা দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে বিএসইসির এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সূচকের নিয়মিত পতনের মূল কারণ খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বিএসইসি। সেই সঙ্গে যেসব শেয়ারের অস্বাভাবিক বিক্রির চাপ দেখা যাচ্ছে, সেগুলো বাজার তদারকির মাধ্যমে চিহ্নিত করা হবে।
সভায় সিদ্ধান্ত হয়, বিনিয়োগকারীদের জ্ঞান ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় টক শো ও বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। পাশাপাশি বিআইসিএম ও বিএএসএম পুঁজিবাজারবিষয়ক শিক্ষণীয় ভিডিও তৈরি করবে। ফেসবুক ও ইউটিউবের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে পুঁজিবাজার সম্পর্কে ইতিবাচক বার্তা প্রচার ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সচেতন করা হবে।
আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে মৌল ভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির শেয়ার পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রমালিকানাধীন লাভজনক কোম্পানি, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তিতে উৎসাহিত করা এবং টেক্সটাইল ও ওষুধ খাতের দেশি লাভজনক কোম্পানিগুলোর শেয়ার পুঁজিবাজারে নিয়ে আসা হবে।
যেসব কোম্পানি এখনো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি, তাদের তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত করার জন্য আকর্ষণীয় করছাড় দেওয়ার কথাও জানান আনিসুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে ব্যাংক খাত থেকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের সুযোগ সীমিত রাখা এবং পুঁজিবাজারকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের প্রধান উৎস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়, পুঁজিবাজারের উন্নয়নের স্বার্থে দেশের আর্থিক খাতের অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো হবে। সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা হবে। এ ছাড়া আসন্ন জাতীয় বাজেটে বিনিয়োগকারীদের জন্য করছাড়ের সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করা হবে। এর মধ্যে লভ্যাংশ আয়ের ওপর করছাড় এবং পুঁজিবাজারের বিনিয়োগের ওপর বিশেষ করছাড়ের সুবিধা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।