মন্ত্রণালয়ের মতামত না আসায় আইনি বাধ্যবাধকতায় ইশরাকের গেজেট: ইসি
Published: 30th, April 2025 GMT
নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছেন, ‘‘নির্ধারিত সময়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত না আসায় নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের আদেশ বাস্তবায়ন করতেই ইশরাক হোসেনের নামে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে।’’
‘‘রবিবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিল ইসি,’’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘এরপর কমিশন বৈঠক করে নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের আদেশ বাস্তবায়নে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে।’’
বুধবার (৩০ এপ্রিল) নির্বাচন ভবনে ‘চতুর্থ কমিশন সভা’ শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। কমিশন সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন, চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিব উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাচন কমিশনার বলেন, “আদালতের আদেশের যেন ব্যত্যয় না ঘটে সেটা (গেজেট প্রকাশ) বাস্তবায়ন করা হয়েছে।”
বুধবার আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত পাওয়ার আগেই গেজেট প্রকাশের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো.
নির্বাচন কমিশন সংক্ষুব্ধ ‘পার্টি’ না হওয়ায় আপিলেও যায়নি বলে মন্তব্য করেন নির্বাচন কমিশনার।
গত ২৭ মার্চ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০২০ সালের নির্বাচনে ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণার ফল বাতিল করে বিএনপি নেতা ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম।
ট্রাইব্যুনালের রায়ের কপি পেয়ে ২২ এপ্রিল গেজেট প্রকাশের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ চায় সাংবিধানিক সংস্থাটি।
এরপর ২৭ এপ্রিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নতুন মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। পরদিন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল দাবি করেন, মন্ত্রণালয়ের মতামত দেওয়ার আগেই ইসি বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের নামে গেজেট প্রকাশ করেছে।
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের প্রয়োজন না হলেও এক্ষেত্রে ইসি মতামত চেয়েছিল।
আইন উপদেষ্টা বলেছিলেন, “আমরা জানতে পেরেছিলাম, নির্বাচনী মামলায় প্লেইন্ট (আরজি) পরিবর্তন করা যায় না। কারণ এটা কোয়াশি সিভিল মেটার। ইশরাক সাহেব বোধহয় পরে প্লেইন্ট পরিবর্তন করেছিলেন। সেজন্য আমরা একটু দ্বিধান্বিত ছিলাম যে এটা গেজেট হবে, নাকি আপিল করতে হবে। নির্বাচন কমিশন আমাদের মতামতের অপেক্ষা করে নাই। উনারা নিজেরা গেজেট নোটিফিকেশন করেছেন।’’
ইশরাকের গেজেট প্রকাশ হওয়ায় মেয়র হিসেবে শপথ আয়োজনের বিষয়টি দেখভাল করবে স্থানীয় সরকার বিভাগ। সেক্ষেত্রে ক’মাসের জন্য তিনি দায়িত্ব পাচ্ছেন এ জন্য অপেক্ষা করতে হবে শপথ পর্যন্ত।
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটির নির্বাচন হয়। বিএনপির ইশরাক হোসেনকে পৌনে দুই লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়র হন।
দেশে কোভিড মহামারি শুরুর পর ১৬ মে দায়িত্ব নেন তাপস। আর জুনের প্রথম সপ্তাহে প্রথম সভা হয়। সে হিসেবে এ সিটি করপোরেশনের ৫ বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা চলতি বছরের জুন মাসে।
হাসান/তারা
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইশর ক হ স ন ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
সিকৃবির ক্যাফেটেরিয়া: খাবারের দাম বেশি, মান খারাপ
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ায় খাবারের উচ্চমূল্য এবং মান নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষার্থীরা। প্রতিদিনের খাবারের জন্য অতিরিক্ত টাকা গুণতে হলেও খাবারের স্বাদ, গুণগত মান এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিয়ে অসন্তুষ্ট তারা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ক্যাফেটেরিয়ায় রান্নার জন্য গ্যাস, বিদ্যুৎসহ প্রয়োজনীয় সব সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন খাবারের দাম মাত্রাতিরিক্ত। অথচ ক্যাম্পাসের বাইরের দোকানগুলোত একই দামে ভালো মানের খাবার পাওয়া যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তর থেকে দেওয়া খাবারের মূল্য তালিকায় দেখা গেছে, ভাতের প্যাকেজ মাছ/মুরগি ও সবজিসহ ৫৫ টাকা, সেখানে সবজি হিসেবে সামান্য আলু ছাড়া কিছুই দেওয়া হয় না। এছাড়াও মাছ মাংসের সাইজ যথেষ্ট ছোট। তালিকায় ডিম মামলেটের দাম ধরা হয়েছে ২০ টাকা, যা ডিমের বাজার মূল্যের দ্বিগুণ।
এছাড়াও গরুর মাংসের কথা উল্লেখ থাকলেও কখনো এগুলো রান্না কিংবা পরিবেশন করতে দেখেননি শিক্ষার্থীরা। এমনকি পরোটা, সিঙ্গারা, সমুচা,জিলাপির দাম আকার অনুযায়ী বেশি।
ক্যাফের পরিবেশ নিয়েও রয়েছে শিক্ষার্থীদের বিস্তর অভিযোগ। শিক্ষার্থীরা জানান, আগে থেকে কয়েকবার প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও এখনো কোনো স্থায়ী সমাধান আসেনি। অনেকেই বলছেন, নিয়মিত তদারকি এবং কঠোর ব্যবস্থাপনা ছাড়া এ সমস্যা কাটবে না।
এছাড়া শিক্ষার্থীরা ক্যাফেটেরিয়া নিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে বেশকিছু দাবি তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে, নিরাপদ খাবার পানি এবং পানির গ্লাস পরিষ্কার রাখা, সর্বোচ্চ পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা, খাবারের মাঝে অপ্রত্যাশিত কোনো কিছু যেন না থাকে, খাবারের গুণগত মান বাড়ানো, খাদ্য তালিকায় উল্লেখিত খাবারের পর্যাপ্ততা, গরুর মাংস, রোস্ট, অন্যান্য সবজি, বিভিন্ন ভর্তার ব্যবস্থা করা, ওয়াশরুম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যবস্থা এবং ক্যান্টিনের বেসিনে হ্যান্ডওয়াশের ব্যাবস্থা করা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভেটেরিনারি অনুষদের এক শিক্ষার্থী বলেন, “একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়া হিসেবে আমাদেরটা মানসম্মত নয়। আমাদের ক্যাফেতে বসার পরিবেশ মোটামুটি ঠিক থাকলেও খাবার মান খুবই নিম্নমানের । বিশেষ করে বেকারি থেকে যে খাবারগুলো আনা হয়, সেগুলো ভালোভাবে দেখে আনা হয় না। খাবারে অনেক সময় পিপঁড়া পাওয়া যায়। এছাড়া আমাদের ক্যাফেতে কোনো বহুমাত্রিকতা নাই । সকাল ও বিকেলে খাবারের মেনুতে নুডুলস, চটপটিসহ বহুমাত্রিক চার্ট যুক্ত করা প্রয়োজন।”
শিক্ষার্থী মো. মুরাদ আলম বলেন, “আমার অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের ক্যাফেটেরিয়ার গল্প শুনে মনে হয়েছে, সিকৃবির ক্যাফেটেরিয়া বাইরের অন্য দুই-একটা হোটেলের মত। আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অনুরোধ করব, যেন খাবারের মান ও পরিমাণ বৃদ্ধি করার দিকে নজর দেওয়া হয়।”
অভিযোগের বিষয়ে ক্যাফেটেরিয়া পরিচালক নুরে আলম শাহিন বলেন, “খাবারের মূল্য ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তর থেকে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। আগে মুরগিসহ ভাতের প্যাকেজ ৬০ টাকা ছিল, সেটা কমিয়ে ৫৫ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া খাবারের তালিকায় মুরগির রোস্ট যুক্ত করা হয়েছে। এ দামে ভালো খাবার দেওয়ার চেষ্টা করছি।”
খাবারের মান ও ক্যান্টিনের পরিছন্নতা নিয়ে তিনি বলেন, “আমি নিজেই প্রতিদিন রাতে ক্যাফেটেরিয়া পরিষ্কার করি। আমরা হলের ডাইনিং থেকেও ভালো চাল ব্যাবহার করি। সবজি হিসেবে আলু ভাজা, বেগুন ভাজা দিচ্ছি। অন্যান্য সবজির দাম নাগালের মধ্যে থাকলে সেগুলো দেওয়ার চেষ্টা করব।”
সিকৃবির ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সামিউল আহসান তালুকদার বলেন, “গত সপ্তাহে ক্যাফেটেরিয়া ব্যবস্থাপনা কমিটির সঙ্গে আমরা মিটিং করে খাবারের মূল্যের একটি তালিকা দিয়েছি, যা পূর্বে ছিল না। এখানে যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে তা নির্দিষ্ট না। শিক্ষার্থীদের চাহিদা ও বাজারের মূল্যের ওপর নির্ভর করে এই তালিকা আমরা পরিবর্তন করব।”
ক্যাফেটেরিয়ার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে তিনি বলেন, “আমরা কঠোরভাবে নির্দেশনা দিয়েছি, যেন খাবার পরিবেশনের জায়গাসহ সম্পূর্ণ ক্যাফে পরিষ্কার রাখা হয়। এতে কোনো ব্যত্যয় হলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব।”
ঢাকা/আইনুল/মেহেদী