‘বাজপাখি’ মার্তিনেজের বাজে ফর্ম, আর্জেন্টিনার জন্য কতটা দুশ্চিন্তার
Published: 30th, April 2025 GMT
২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপ থেকে ‘বাজপাখি’ বিশেষণটা নিজের নামের সঙ্গে জুড়ে নিয়েছেন এমিলিয়ানো মার্তিনেজ। গোলপোস্টের নিচে কখনো কখনো মার্তিনেজের সামর্থ্য ছাড়িয়ে গেছে বাজপাখির ক্ষিপ্রতাকেও। বিশেষ করে পেনাল্টি শুটআউটে পোস্টের নিচে মার্তিনেজ রীতিমতো তুলনাহীন।
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ এবং টানা দুবার কোপা আমেরিকা জয়ের অন্যতম নায়কও মার্তিনেজ। শুধু আর্জেন্টিনার হয়েই নয়, অ্যাস্টন ভিলাকেও অসংখ্য ম্যাচে একাই উদ্ধার করেছেন এই গোলরক্ষক। এমন পারফরম্যান্সের স্বীকৃতিস্বরূপ পরপর দুবার ব্যালন ডি’অরের সেরা গোলরক্ষকের লেভ ইয়েশিন ট্রফিও উঠেছে মেসির এই প্রিয় সতীর্থের হাতে।
সব ভালো কিছুই অবশ্য কখনো না কখনো শেষ হয়। মার্তিনেজের সেই ভালো সময়টা কি শেষ হতে চলল কি না, সেই প্রশ্নও এখন উঠেছে। সাম্প্রতিক সময়ে অ্যাস্টন ভিলার হয়ে করা কিছু ভুলের পরই মূলত মার্তিনেজের ছন্দ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, যা বিশ্বকাপের ১৩ মাস আগে নতুন করে দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের জন্যও।
আরও পড়ুনমার্তিনেজ আর্জেন্টিনার ‘নায়ক’, ভিলার কি ‘খলনায়ক’২৩ এপ্রিল ২০২৫মার্তিনেজ শুধু নিজের গোলকিপিং দক্ষতার কারণেই নয়, নিজের দৃঢ় ও হার না–মানা মানসিকতার কারণেও ভক্ত–সমর্থকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। একইভাবে যেসব আচরণের জন্য ভক্তদের কাছে তিনি জনপ্রিয়, একই আচরণ তাঁকে অজনপ্রিয় করেছে প্রতিপক্ষ সমর্থকদের মধ্যে। তবে ব্যক্তি মার্তিনেজ যেমনই হোক, পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো সুযোগই দেননি এই গোলরক্ষক।
তবে সেই সময়টা বোধ হয় পেছনে ফেলে এসেছেন মার্তিনেজ। সাম্প্রতিক সময়ের করা কিছু ভুল সেই ইঙ্গিতই বারবার দিচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, চ্যাম্পিয়নস লিগ কোয়ার্টার ফাইনালের ফিরতি লেগে পিএসজির বিপক্ষে তাঁর পারফরম্যান্সের কথা।
সেদিন পিএসজির ফরোয়ার্ড ব্রাডলি বারকোলার ক্রস খুব বাজেভাবে ঠেকান মার্তিনেজ। বলটি নিজের নিয়ন্ত্রণেও রাখতে পারেননি। যার ফলে আশরাফ হাকিমির পায়ে চলে যায় বল এবং মার্তিনেজের এই ভুল কাজে লাগিয়ে পিএসজির হয়ে গোল করেন হাকিমি।
এরপর ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে ম্যাচে করা ভুলটি তো আরও বাজে। সেদিন ম্যাচের শুরুতে বের্নার্দো সিলভার গোল এগিয়ে দেয় সিটিকে। কিন্তু সেই গোল খাওয়ার পুরো দায় মার্তিনেজরই। যেভাবে সেদিন মার্তিনেজ গোল হজম করেছেন, তা বেশ দৃষ্টিকটু।
ম্যাচের ৭ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে বল নিয়ে ভিলার বক্সে ঢুকে পড়েন সিটি তারকা ওমর মারমোশ।
এরপর মারমোশের ক্রস ভিলার লেফটব্যাক লুকাস দিনিয়ের পায়ে লেগে চলে আসে বক্সের মধ্যে ফাঁকা জায়গায়। এমন সুযোগ কাজে লাগাতে ছুটে এসে শট নেন সিলভা। শটে যে অনেক জোর ছিল, তা–ও নয় এবং মার্তিনেজও ছিলেন বলের লাইনে। যাঁর নাম ‘বাজপাখি’, তাঁর জন্য এই গোল বাঁচানো নৈমিত্তিক কাজ হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু মার্তিনেজ পারেননি সেই শট ঠেকাতে। তাঁর হাতে লেগেই বল ঢুকে যায় ভেতরে।
তবে এই দুটি উদাহরণই শুধু নয়, সাম্প্রতিক সময়ে আরও একাধিক ম্যাচে বাঁচানোর সুযোগ থাকার পরও পারেননি মার্তিনেজ। এর মধ্যে কিছু হয়তো ক্ষেত্রে হয়তো তাঁর সরাসরি ভুল ছিল না। কিন্তু বিশ্বসেরা স্বীকৃতি পাওয়া যেকোনো গোলরক্ষকের এ ধরনের গোল সহজেই বাঁচানো উচিত ছিল।
আরও পড়ুনশাস্তি মেনে নিয়ে ক্ষমা চাইলেন আর্জেন্টিনার গোলকিপার মার্তিনেজ০১ অক্টোবর ২০২৪তেমনই একটি গোল মার্তিনেজ হজম করেছিলেন নিউক্যাসলের বিপক্ষে অ্যাস্টন ভিলার ৪–১ গোলে জেতা ম্যাচে। সেদিন ১৮ মিনিটে ফাবিয়ান শরের গোলে সমতায় ফেরায় নিউক্যাসল। হার্ভে বার্নসের ক্রসে শর যখন হেড করছিলেন, তখন বলের লাইনেই ছিলেন মার্তিনেজ। কিন্তু ক্লোজ রেঞ্জের সেই শটটি শরীর এলিয়ে দিয়েও রুখতে পারেননি মার্তিনেজ।
একইভাবে উল্লেখ করা যায় ক্রিস্টাল প্যালেসের বিপক্ষে ওয়েম্বলিতে এফএ কাপ সেমিফাইনাল হজম করা গোলের কথা। সেদিন ৩১ মিনিটে প্যালেসের হয়ে প্রথম গোলটি করেন এবেরেচি এজে। অসাধারণ গোল ছিল, কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু লক্ষ করলে দেখা যাবে মার্তিনেজ একেবারেই মনোযোগী ছিলেন না, ছিলেন না নিজের যথাযথ পজিশনেও। এমনকি শটের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখানোর ক্ষেত্রেও দেরি করেছেন। যার ফলাফল হচ্ছে প্রথম গোলটি। এই গোলের পেছনে মার্তিনেজের দায় দেখেছেন ফুটবল–বিশ্লেষক ইয়ান রাইটও।
এমিলিয়ানো মার্তিনেজ হতাশায় মুখ ঢাকছেন.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আর জ ন ট ন র প র নন এই গ ল র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
১৭ মাস পর দেশের মাটিতে টেস্ট জয় বাংলাদেশের
প্রায় দেড় বছর পর দেশের মাটিতে টেস্ট জয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ। চট্টগ্রামে দ্বিতীয় টেস্টে জিম্বাবুয়েকে ইনিংস ও ১০৬ রানে হারিয়ে সিরিজ ১-১ সমতায় শেষ করল টাইগাররা। ঘরের মাঠে ১৭ মাস ও টানা ছয়টি টেস্টে জয়বিহীন থাকার হতাশা ভুলিয়ে দিল এই দুর্দান্ত সাফল্য।
বাংলাদেশের জয়ে সবচেয়ে বড় অবদান মেহেদী হাসান মিরাজের। প্রথম ইনিংসে ব্যাট হাতে তুলে নেন সেঞ্চুরি, এরপর বল হাতে দ্বিতীয় ইনিংসে শিকার করেন ৫ উইকেট। টেস্ট ক্রিকেটে এটি তার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা পারফরম্যান্স। মিরাজ ছাড়াও ৯ উইকেট শিকার করে ম্যাচে বড় অবদান রাখেন তাইজুল ইসলাম, আর ওপেনার সাদমান ইসলামও তুলে নেন দারুণ এক সেঞ্চুরি।
প্রথম ইনিংসে জিম্বাবুয়ে করে ২২৭ রান। জবাবে টাইগাররা তোলে ৪৪৪ রান, পায় ২১৭ রানের লিড। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ১১১ রানে গুটিয়ে যায় সফরকারীরা। ফলে মাত্র তিন দিনেই টেস্ট জয়ের উৎসবে মাতে স্বাগতিকরা।
বল হাতে টাইগারদের শুরুটা এনে দেন তাইজুল ইসলাম। ইনিংসের সপ্তম ওভারে ব্রায়ান বেনেটকে ফেরান স্লিপে সাদমানের হাতে ক্যাচ করিয়ে। একই ওভারে এলবিডব্লিউ করেন নিক ওয়েলচকে, রিভিউ নিয়ে পান উইকেটটি। এরপর উইলিয়ামসকেও বিদায় করেন অফ স্পিনার নাঈম ইসলাম, দ্বিতীয় স্লিপে সাদমানের হাতেই ধরা পড়েন এই অভিজ্ঞ ব্যাটার।
চতুর্থ উইকেটে আরভিন-কারেন জুটি কিছুটা প্রতিরোধ গড়লেও, মিরাজ এসে ভেঙে দেন সেই জুটি। এক ওভারেই ফেরান আরভিন ও মাদেভারেকে। এরপর তাফাদওয়া সিগা, মাসাকাদজা ও কারেনকে ফিরিয়ে ইনিংসে নিজের ফাইফার পূর্ণ করেন মিরাজ। তৃতীয় বাংলাদেশি হিসেবে এক টেস্টে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েন তিনি, সাকিব আল হাসান ও সোহাগ গাজীর পাশে নাম লেখান।
শেষ দিকে আবার বল হাতে ফিরে রিচার্ড এনগারাভাকে ফেরান তাইজুল। এরপর রানআউটের মাধ্যমে শেষ হয় জিম্বাবুয়ের ইনিংস। এই জয়ে শুধু সিরিজে সমতায়ই ফিরেনি বাংলাদেশ, বরং দেশের মাটিতে দীর্ঘ দিনের টেস্ট জয়ের অপেক্ষাও ঘুচিয়েছে।