বাসে হামলার প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
Published: 30th, April 2025 GMT
রাজধানীর উত্তরার আজমপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ক্ষণিকা বাস এবং শিক্ষার্থীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন করা হয়েছে।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) সাড়ে ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এ কর্মসূচি পালন করেন ঢাবির ১৭টি বাস রুটে চলাচলকারী শিক্ষার্থীরা। এতে বাস রুট কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকগণও উপস্থিত ছিলেন।
তরঙ্গ বাস রুটের সভাপতি রাফিন বলেন, “বাস রুট ভিত্তিক চলাচলকারী শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। আগে থেকেই ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থানকারী শিক্ষার্থীরা নানা ভোগান্তির শিকার হয়ে আসছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। পরিবহন খাতে বাজেট বাড়িয়ে আরো উন্নত করার প্রয়োজন রয়েছে।”
আরো পড়ুন:
ঢাবির বাসে হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৫
১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে হতাহতদের স্মরণে ঢাবিতে দোয়া মাহফিল
তিনি বলেন, “কিশোরগ্যাংগুলোকে সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। পরিকল্পিতভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করা হচ্ছে। ক্ষণিকা বাসে হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে এবং বাসে চলাচলকারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয় প্রশাসন তৎপরতা না দেখালে আমরা উত্তরায় লং মার্চ করব।”
ক্ষণিকা বাস রুটের সভাপতি ফারজানা মুন্নি বলেন, “বাসে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার পরই আমি প্রক্টর স্যারকে জানায়। তিনি আমাদের সহযোগিতা করেছেন। ক্ষণিকা বাস কমিটির পক্ষ থেকে আমরা উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা করেছি। আমাদের জানানো হয়েছে, ইতোমধ্যে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া এখনো চলমান। আমরা এ ঘটনার সুস্থ বিচারের দাবি জানাচ্ছি।”
ঢাবি শিক্ষার্থী উমামা ফাতেমা বলেন, “গতকাল (মঙ্গলবার) ঢাবির ক্ষণিকা বাসে স্কুলের বাচ্চা ও কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা হামলা করে। গত ৫ আগস্টের পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিতর্ক করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ঢাবির বাসে হামলা করাটা যৌক্তিক, এটা প্রচার করা হচ্ছে কিছু কন্টেন্ট ক্রিয়েটরের কন্টেন্টের ওপর ভিত্তি করে। এ ঘটনা ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। বিষয়টি নিয়ে আমাদের সতর্ক থাকা জরুরি।”
তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ এ কিশোর গ্যাংগুলোকে পেলে-পুষে বড় করেছে। এদের এখন কোনো অভিভাবক নেই। ফলে এরা দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। ক্ষণিকা বাসে হামলার ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে।”
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
গণঅভ্যুত্থানে শহীদ রিজভীর ভাইকে কুপিয়ে জখম, গ্রেপ্তার ৩
নোয়াখালী জেলায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ মাহমুদুল হাসান রিজভীর ছোট ভাই স্কুলছাত্র শাহরিয়ার হাসান রিমনকে (১৬) এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে আহতের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। রবিবার (২৮ এপ্রিল) রাতে সুধারাম মডেল থানায় রিমনের মা বাদী হয়ে দায়ের করেন। পুলিশ এ ঘটনায় তিন কিশোরকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম ও ছবি প্রকাশ করেনি।
এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে রিমনের স্কুলের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেছে।
আহত শাহরিয়ার হাসান রিমন জেলা শহরের বসুন্ধরা কলোনি বাসিন্দা মো. জামাল উদ্দিন ও ফরিদা ইয়াছমিন দম্পত্তির ছেলে। সে স্থানীয় হরিনারায়ণপুর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
আরো পড়ুন:
কুমিল্লায় বজ্রপাতে ৪ জনের মৃত্যু
ধর্ষণের অভিযোগে গণপিটুনি, কারাগারে ইমামের মৃত্যু
বিদ্যালয় থেকে ফেরার পথে রোববার (২৮ এপ্রিল) বিকেলে কিশোর গ্যাং সদস্যরা শাহরিয়ার হাসান রিমনকে ধারালো ছুরি এলোপাতাড়ি আঘাত করে। এতে সে গুরুতর আহত হয়। পরে স্থানীয়রা তাকে নোয়াখালী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। তবে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়।
এ ঘটনায় রাতে আহত রিমনের মা ফরিদা ইয়াছমিন ২১ জনকে এজহারভুক্ত ও ১০-১২ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করেন। পুলিশ রাতেই অভিযান পরিচালনা করে তিন কিশোরকে গ্রেপ্তার করে।
রিমনের মা ফরিদা ইয়াছমিন জানান, রিমনের পিঠে, মাথায়সহ মোট ছয়টি ছুরির আঘাত করা হয়। তার অপারেশন ঢাকা মেডিকেল কলেজে করানো হয়েছে। বর্তমানে সেখানে চিকিৎসা চলছে। তার পিঠের আঘাতগুলো ফুসফুস পর্যন্ত চলে গেছে বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন।
তিনি আরো জানান, হামলাকারীরা ভেবেছিল রিমন মারা গেছে। যখন জানতে পারে সে বেঁচে আছে, তখন তারা ফের হামলা করতে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল পর্যন্ত যায়। রিমনের অপরাধ দুই দল কিশোরের মাঝে চলমান দ্বন্দ্ব মিমাংসা করে দেওয়া। একপক্ষ মানলেও অপরপক্ষ মিমাংসার বিষয়টি মন থেকে মানতে পারেনি। তারাই আমার ছেলের উপর হামলা করেছে।
রিমনের বাবা জামাল উদ্দিন বলেন, রিমনকে ধারালো ছুরি দিয়ে মোট ছয়টি আঘাত করা হয়েছে। নোয়াখালী জেনারেল হাসপতালে নেওয়া হলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তিনি রিমনের সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়েছেন।
ঢাকায় রিমনের সঙ্গে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা নাহিদা সুলতানা ইতু জানান, রাতেই রিমনের সিটিস্ক্যান করা হয়েছে। এরপর তার অপারেশন হয়েছে। চিকিৎসকরা বলেছেন, রিমনের পিঠের আঘাতগুলো গুরুতর। ছুরির আঘাত প্রায় ফুসফুস পর্যন্ত চলে এসেছে। তার সুস্থ হতে অনেক সময় লাগবে।
রবিবার (২৮ এপ্রিল) বিকেলে স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পথে জেলা শহরের বার্লিংটন মোড়ে একদল কিশোর রিমনকে ছুরিকাঘাত করে গুরুতর আহত করে।
স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নোয়াখালী পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের বার্লিংটন এলাকাটি কিশোর গ্যাংয়ের আখড়া। এই এলাকা দিয়ে প্রতিদিন সরকারি বালিকা বিদ্যালয়, হরিনারায়ণপুর স্কুল, সরকারি মহিলা কলেজসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীরা যাতায়াত করে। প্রতিদিন তাদের উত্ত্যক্ত করা হয়। কিন্তু ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করে না। প্রশাসনেরও নজরদারি নেই।
এদিকে, রিমনকে ছুরিকাঘাত করে আহত করার প্রতিবাদে তার স্কুলের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে স্কুলের সামনে প্রধান সড়কে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে রিমনের স্কুলের শিক্ষার্থী ছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মী, স্কুলের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বক্তারা অবিলম্বে রিমনের উপর যারা হামলা করেছেন, তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) আবু তৈয়ব মো. আরিফ হোসেন জানান, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলা দায়েরের পর সিসিটিভি ফুটেজ ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এজহারভুক্ত একজনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনায় আমাদের আরো অনুসন্ধান চলছে। সিসি ক্যামেরা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। অপরাধীদের খুব দ্রুতই আইনের আওতায় আনতে পারবেন বলে আশা করেন তিনি।
ঢাকা/সুজন/বকুল