কর্ণাটকে ক্রিকেট খেলার সময় বচসা, যুবককে পিটিয়ে হত্যা
Published: 30th, April 2025 GMT
পাড়ার গলিতে ক্রিকেট খেলার সময় এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কর্ণাটকের ম্যাঙ্গালুরু জেলার কুডুপু এলাকার ভাত্রা কাল্লুর্তি মন্দিরের কাছে রোববার ঘটনাটি ঘটেছে। খেলার সময় ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ স্লোগান দেওয়ায় তাঁকে গণপিটুনি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে ঠিক কী ঘটেছিল, কারা কারা এর সঙ্গে জড়িত ছিল সে ব্যাপারটি এখনও পরিষ্কার নয় বলে জানিয়েছে কর্ণাটক রাজ্য সরকার। ঘটনাটির তদন্ত শুরু করেছে স্থানীয় পুলিশ। এরই মধ্যে ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, ওইদিন বিকেল তিনটার দিকে সেখানে ক্রিকেট ম্যাচ চলছিল। টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছিল ১০টি দলের শতাধিক খেলোয়াড়। খেলার সময় দুই ব্যক্তির মধ্যে বচসা হয়। হঠাৎ করেই ওই ঘটনায় আরও একাধিক ব্যক্তি জড়িয়ে পড়েন। একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে অনেকেই তখন লাঠিসোঁটা নিয়ে তার ওপর চড়াও হয়, পেছন থেকে অনেকে লাথিও মারেন। নিহত ওই ব্যক্তি কেরলের বাসিন্দা, তিনি শ্রমিকের কাজ করতেন। তবে এখনও পুলিশের পক্ষ থেকে তার পরিচয় নিশ্চিত করা হয়নি।
বিকেল ৩টার দিকে ওই ঘটনা ঘটলেও সাড়ে পাঁচটা নাগাদ ঘটনাস্থল থেকে ওই ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধারের পর বিষয়টি জানতে পারে স্থানীয় পুলিশ। এই ঘটনায় কুলশেখর চৌকির বাসিন্দা দীপক কুমার নামে এক ব্যক্তি কিছু ছবি ও ভিডিওসহ থানায় লিখিত অভিযোগ জানানোর পরই নড়েচড়ে বসে ম্যাঙ্গালুরু গ্রামীণ পুলিশ। অভিযোগ পেয়েই একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা হয়েছে।
রাতেই ওয়েনলক জেলা হাসপাতালের পক্ষে যে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট সামনে আসে তাতে জানা যায়, ভুক্তভোগী ব্যক্তিকে অনবরতভাবে আঘাতের কারণে তার শরীরের ভেতরে প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ হয়। ওই ব্যক্তির পিঠ, নিতম্ব ও যৌনাঙ্গে কাঠের টুকরো দিয়ে আঘাতের চিহ্ন নথিভুক্ত করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা।
এই ঘটনায় ম্যাঙ্গালুরুর পুলিশ কমিশনার অনুপম আগরওয়াল জানান, ‘এটি অত্যন্ত নিষ্ঠুর ও নজিরবিহীন ঘটনা। ওই ব্যক্তির শরীরের আঘাত যথেষ্ট ভয়ঙ্কর। সময়মতো চিকিৎসা না পাওয়ার কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে।’
পুলিশ কমিশনার জানান, এখন পর্যন্ত ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা সকলেই কুডুপু, নির্মারগা, ভামঞ্জুর ও আশপাশের এলাকার বাসিন্দা। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান এই ঘটনার পেছনে ২৫ জন জড়িত। গণপিটুনিতে মৃত্যুর ধারায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এই মামলার সাজা হিসেবে দোষীদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড কিংবা ফাঁসিও হতে পারে।
এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কর্ণাটকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জি পরমেশ্বরা। রাজ্যের মানুষকে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ঠিক কী ঘটেছিল, কারা কারা এর সঙ্গে জড়িত ছিল সে ব্যাপারে আমরা এখনও পরিষ্কার নয়। এখনই কোনো নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের মানুষের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তোলা ঠিক নয়।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গণপ ট ন হত য এই ঘটন ঘটন য
এছাড়াও পড়ুন:
মানুষ মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার ভালো সমাধান
বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং উদাহরণ সৃষ্টিকারী নির্বাচন উপহার দেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, নির্বাচনের আগে সংস্কারের তালিকা ছোট হলে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন এবং তালিকা বড় হলে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনপ্রত্যাশা এখনও তুঙ্গে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণ মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার এখনও তাদের জন্য ভালো সমাধান।
কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরায় এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। ‘মুহাম্মদ ইউনূস: রিয়েল রিফর্ম অর জাস্ট আ নিউ রুলিং ক্লাস ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে সাক্ষাৎকারটি গতকাল রোববার আলজাজিরার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে জুলাই বিপ্লব, সাবেক স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়া, সাবেক সরকারের দুর্নীতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি।
আলজাজিরার উপস্থাপক ড. ইউনূসকে প্রশ্ন করেন, এটা কি বলা ঠিক যে, শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের ‘মধুচন্দ্রিমা’ এখন সম্ভবত শেষ হয়েছে? কিছু বেশ বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যেগুলোর সুনির্দিষ্ট জবাব আপনাকে দিতে হবে। কারণ, পুরোনো ক্ষমতাধরদের প্রভাব রয়েছে, অনেকে রাজনৈতিক শূন্যতাকে কাজে লাগাতে চাইতে পারে।
জবাবে ড. ইউনূস বলেন, মধুচন্দ্রিমা শেষ হোক বা না হোক, বাংলাদেশের মানুষ মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার এখনও তাদের জন্য ভালো সমাধান। তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে সরাসরি চলে যেতে এখনও বলছে না। বরং একটা ভালো নির্বাচন উপহার দিতে সরকারই নির্বাচন আয়োজনের দিকে যাচ্ছে। জনগণ তাড়াতাড়ি ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা এখনও বলছে না।
লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর সমাধান কি বাংলাদেশ একা করতে পারবে? জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থা ও জাতিসংঘের সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে কাজ করছি। তারা যাতে নিরাপদে বাড়ি ফিরে যেতে পারে, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে কিছু বোঝাপড়া যাতে তৈরি হয়।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হবে কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, এ প্রশ্নের জবাবের একটি অংশ আওয়ামী লীগকেই নির্ধারণ করতে হবে। দলটি আগে নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে– তারা নির্বাচনে যোগ দেবে কিনা। তারা এখনও কিছু ঘোষণা করেনি। তা ছাড়া নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশন কী প্রতিক্রিয়া দেয়, সেটাসহ নানা বিষয় সামনে আসতে পারে।
তাহলে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের ওপর ছেড়ে দিচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি তা নয়। অন্যান্য রাজনৈতিক দল আছে, যারা বলতে পারে যে, এই আইনের অধীনে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।
সাক্ষাৎকারে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে ড. ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের প্রসঙ্গ ওঠে। ড. ইউনূস জানান, তিনি বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে মোদির সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। সেখানে শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে বলেছিলেন তিনি। জবাবে মোদি বলেছিলেন, এটা তাঁর জন্য সম্ভব নয়। শেখ হাসিনা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে কিছু বললে, সেটি তিনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না।
যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, একসঙ্গে কাজ করার নীতি নিয়ে আগাতে চাই। আমরা একসঙ্গেই পারস্পরিক সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ নিতে চাই।