রাজবাড়ী শহরের একটি দোকানের বারান্দা থেকে রুবেল সরদার (৪০) নামের এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ বুধবার সকাল আটটার দিকে শহরের পাবলিক হেলথ মোড়ের জামান স্টোর নামের একটি দোকানের বারান্দা থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে সদর থানার পুলিশ।

রুবেল সরদার শহরের দক্ষিণ ভবানীপুর এলাকার প্রয়াত আলম সরদারের ছেলে। তিনি ডাকাতির প্রস্তুতিসহ একাধিক মামলার আসামি ছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পরিবারের দাবি, রুবেলকে হত্যা করা হয়েছে। তাঁর শরীরে ধুলাবালু লেগে আছে। এটি স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। এর জবাবে পুলিশ বলেছে, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।

পুলিশ জানিয়েছে, ২০২৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে সদর উপজেলার খানখানাপুর রেলক্রসিং এলাকা থেকে ডাকাতির প্রস্তুতির সময় রুবেল সরদার ও তাঁর সহযোগী নাইম ইসলামকে গ্রেপ্তার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। সে সময় তাঁদের কাছ থেকে দুটি সুইচ গিয়ার ছোরা উদ্ধার করা হয়। ডাকাতির প্রস্তুতির ওই মামলায় জামিনে ছিলেন রুবেল সরদার। এ ছাড়া রুবেলের বিরুদ্ধে সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে আরও দুটি মামলা আছে।

রুবেলের ছোট ভাই জুয়েল সরদার বলেন, রুবেল পাবলিক হেলথ মোড়ে পান–সিগারেটের দোকান দিতেন। গত রোজার আগে দোকানটি বিক্রি করে দেওয়ায় বেকার ছিলেন। দাম্পত্য কলহের কারণে তাঁর স্ত্রী চার মাস ধরে তিন বছর বয়সী একমাত্র মেয়েকে নিয়ে শহরের আটাশ কলোনি এলাকায় বাবার বাড়িতে থাকছেন। গতকাল মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে তাঁকে তাঁর ঘরে দেখেছেন জুয়েল। এরপর কখন বাড়ি থেকে বের হয়েছেন, তা জানা নেই। আজ সকাল ছয়টার দিকে খবর পান পাবলিক হেলথ মোড়ে জামান স্টোরের সামনের বারান্দায় তাঁর ভাইয়ের মরদেহ পড়ে আছে।

জুয়েল সরদার বলেন, ‘আমার ভাইয়ের মরদেহ দেখে মনে হচ্ছে, এটি কোনো স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। তাঁর শরীরে ধুলাবালু লেগে আছে। পুলিশ মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে গেছে। স্বাভাবিক মৃত্যু হলে কোনো আপত্তি নেই। আর যদি তাঁকে হত্যা করা হয়, তাহলে আমরা এর বিচার চাই।’

রুবেলের স্ত্রী বন্যা বলেন, ‘গতকাল সন্ধ্যার পর রুবেল আমার বাবার বাড়ি গিয়ে মেয়েকে নিয়ে বাজার থেকে খাবার কিনে আমার কাছে দিয়ে চলে যান। এরপর সকাল সাতটার দিকে আমি খবর পাই, পাবলিক হেলথ মোড়ে তাঁর মরদেহ পড়ে আছে। এর আগে তিনি স্ট্রোক করেছিলেন। তবে আজ কী কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে, সঠিক বলতে পারছি না।’

জামান স্টোরের মালিক শাহিদুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, গতকাল সন্ধ্যা সাতটার দিকে ঝড়ের কারণে তাঁর ছেলে দোকান বন্ধ করে বাড়ি চলে যান। আজ সকাল সাতটার দিকে খবর পান, তাঁর দোকানের সামনে রুবেলের মরদেহ পড়ে আছে।

লাশ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠানোর কথা জানিয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান বলেন, রুবেল সরদারের বিরুদ্ধে ডাকাতির প্রস্তুতিসহ একাধিক মামলা আছে। পরিবারের অভিযোগে এ ঘটনায় অপমৃত্যুর মামলা নিয়ে মরদেহ মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ড ক ত র প রস ত ত ময়ন তদন ত র র ব ল সরদ র র মরদ হ শহর র

এছাড়াও পড়ুন:

টাঙ্গাইলে স্কুল ঢুকে প্রধান শিক্ষককে ‌‘জুতাপেটা’

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অশালীন আচরণের অভিযোগে টাঙ্গাইলের মধুপুরে একদল নারী অভিভাবক আব্দুল জব্বার নামে এক শিক্ষককে ‘জুতাপেটা’ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বুধবার (৩০ এপ্রিল) দুপুরে মধুপুরের আকাশী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে ঢুকে তারা ওই শিক্ষকের ওপর হামলা করেন। ভুক্তভোগী আব্দুল জব্বার ওই বিদ্যালয়েল প্রধান শিক্ষক।

অভিভাবকদের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক আব্দুল জব্বার স্কুলে ক্লাস করানোর সময় তাদের মেয়েদের শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করেছেন।

আরো পড়ুন:

নারায়ণগঞ্জে ৩০ স্কুলে চালু হলো ‌‘মিড ডে মিল’

এবার সিরাজগঞ্জে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ

অ‌ভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল জব্বার বলেন, “আমার মেয়েকে স্থানীয় এক যুবক উত্ত্যক্ত করতো। তাকে বিভিন্ন সময়ে বুঝানো হয়েছে। কথা না শুনায় তাকে শাসন করা হয়েছিল। সেই ছেলে ষড়যন্ত্র করে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। তদন্ত করলে সত্য ঘটনা বেরিয়ে আসবে।”

তিনি আরো বলেন, “আমি শিক্ষার্থীদেরকে সন্তানের মতো দেখি। সেভাবেই আদর-শাসন করি। তদন্ত করে সঠিক বিষয়টি বের করার জন্য ঊর্ধ্বতনদের আহ্বন জানাচ্ছি।”

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রধান শিক্ষক হিসেবে আকাশী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গত বছর এপ্রিল মাসে যোগ দেন আব্দুল জব্বার। বুধবার দুপুরে হঠাৎ করেই একদল নারী স্কুলে প্রবেশ করে তার কক্ষে যান। তারা আব্দুল জব্বারকে আক্রমণ করেন। এসময় সহকারী শিক্ষক সাজেদা বেগমসহ কয়েকজন প্রধান শিক্ষককে রক্ষার চেষ্টা করেন। ফলে শিক্ষকদের ওপর ক্ষিপ্ত হন হামলাকারীরা। পরে স্থানীয় কয়েকজন যুবক গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন। 

প্রধান শিক্ষকের ওপর হামলায় অংশ নেওয়া ঝুমা বেগম নামে এক অভিভাবক বলেন, “বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল জব্বার ক্লাস নেওয়ার সময় আমাদের মেয়ের শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিয়েছেন।” একই দাবি করেছেন সুমি বেগম নামে অপর এক নারী।

আকাশী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাজেদা বেগম বলেন, “আমরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই হামলাকারীরা অফিসে প্রবেশ করে হামলা করেন। একপর্যায়ে তারা জুতা দিয়ে পেটাতে থাকেন। আমরা অনেক কষ্টে প্রধান শিক্ষককে হামলাকারীদের হাত থেকে উদ্ধার করি।”

মধুপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রতিনিধি হিসেবে সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিফাত আনজুম পিয়া ঘটনাস্থলে যান। তিনি ওই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে অভিভাবকদের আশ্বস্ত করেন।

মধুপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি জেনে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম ও নাজমুল ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে ওই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।”

ঢাকা/কাওছার/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ