ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আয় কতটা বাড়ল
Published: 30th, April 2025 GMT
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ মাসে বলেছেন, তাঁর শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে দিনে ২০০ কোটি মার্কিন ডলার রাজস্ব আয় করতে শুরু করেছে। বাস্তবতা হচ্ছে, এই সময়ে দৈনিক গড়ে ১৯ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার রাজস্ব আয় হয়েছে।
এটা ঠিক যে ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য আমদানি শুল্ক থেকে আয় কিছুটা বেড়েছে। তবে সেটা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আয় যেভাবে বাড়বে বলেছেন, তার ধারেকাছেও নেই। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য অধিদপ্তর ২৫ এপ্রিল শুক্রবার এ বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য প্রকাশ করেছে। ওই তথ্য অনুযায়ী, সেদিন যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক ও কিছু নির্দিষ্ট আবগারি কর থেকে ২৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার রাজস্ব আয় করেছে।
আর সেদিন পর্যন্ত এপ্রিলে শুল্ক থেকে মোট রাজস্ব আয় ১ হাজার ৬১০ কোটি ডলারের বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রে গত ১৭ জানুয়ারি শুল্ক থেকে রাজস্ব আয় ছিল ১২ কোটি ৮০ লাখ ডলার। পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে সেদিনই শুল্ক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দৈনিক রাজস্ব আয়ের সর্বশেষ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছিল।
সারা বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের যত বাণিজ্য অংশীদার রয়েছে, তাদের প্রায় সবার ওপরই পাল্টা শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়ে রেখেছেন ট্রাম্প। সবচেয়ে বেশি শুল্ক আরোপ করেছেন চীনের ওপর। দেশটির ওপর আগে থেকে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা ছিল। তার সঙ্গে বাড়তি আরও ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন।
আরও পড়ুনপাল্টা শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করলেন ট্রাম্প, এ সময় এই শুল্ক থাকছে ১০ শতাংশ০৯ এপ্রিল ২০২৫তবে ট্রাম্প চীন বাদে অন্য দেশগুলোর ওপর ২ এপ্রিল ঘোষণা করা শুল্কের বাস্তবায়ন আপাতত স্থগিত রেখেছেন। তার পরিবর্তে ৯ এপ্রিল তিনি যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা সব পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন।
এ ছাড়া মার্চে ট্রাম্প গাড়ি, ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম ও পটাশ আমদানিতে যে শুল্ক আরোপ করেছেন, সেটাও বহাল আছে। এসব শুল্কের কারণে এই খাত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রাজস্ব আয় বেড়েছে।
আরও পড়ুন১৮ ঘণ্টায় কী ঘটেছিল, যা ট্রাম্পকে শুল্কনীতি স্থগিত করতে বাধ্য করেছিল১০ এপ্রিল ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
মিরাজ বীরত্বে দারুণ প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখলো বাংলাদেশ
পরাজয়ের গ্লানি থেকে গর্বের গাঁথায় ফেরার গল্প যখন লেখা হয়, সেখানে একজন নায়ক থাকেন। এইবার সেই নায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। সিলেটের লজ্জাজনক হার ভুলিয়ে দিয়ে চট্টগ্রামে দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশ যেন ঘুরে দাঁড়াল মেঘ ফুঁড়ে রোদ ওঠার মতো। অলরাউন্ড মিরাজের ব্যাটে-বলে দ্যুতি ছড়ানো আর তাইজুল ইসলামের ঘূর্ণিতে বিধ্বস্ত জিম্বাবুয়ে। ইনিংস ও ১০৬ রানের বিশাল জয়ে দুই ম্যাচের সিরিজ শেষ হলো ১-১ সমতায়।
প্রথম ইনিংসে জিম্বাবুয়েকে কোনো সুযোগই দেয়নি বাংলাদেশ। তাইজুল ও নাঈম ইসলামের নির্ভুল বোলিংয়ে মাত্র ২২৭ রানে গুটিয়ে যায় সফরকারীরা। এরপর ব্যাট হাতে পাল্টা জবাব দেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। সাদমান ইসলামের ধারাবাহিকতা আর মিরাজের সংগ্রামী সেঞ্চুরিতে দল পৌঁছে যায় ৪৪৪ রানে। নেয় ২১৭ রানের লিড।
সাদমান তুলে নেন দারুণ এক সেঞ্চুরি, কিন্তু ম্যাচের মূল চিত্রনাট্য লিখলেন মিরাজ। টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় শতকে তিনি ছিলেন নির্ভার, নিবেদিত এবং নিখুঁত। ১৪৩ বলের ইনিংসে ১১টি চার ও একটি ছক্কায় সাজানো তার ১০৪ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস শুধু দলীয় সংগ্রহে রানের সংযোজন ছিল না, ছিল প্রতিরোধ আর প্রতিশোধের প্রতীক।
আরো পড়ুন:
বাংলাদেশের বিপক্ষে দারুণ বোলিং করে মুজারাবানির ইতিহাস
ইনিংস ব্যবধানে জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে বদলা নিলো বাংলাদেশ
তাইজুলের সঙ্গে অষ্টম উইকেটে গড়েন ৬৩ রানের জুটি। এরপর তানজিম হাসান সাকিবের সঙ্গে নবম উইকেটে যোগ করেন আরও ৯৬ রান। তানজিম নিজেও খেলেন ৪১ রানের কার্যকর ইনিংস। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে মিরাজ যখন আউট হন, তখন স্কোরবোর্ডে বাংলাদেশ—৪৪৪।
প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলতে নামা জিম্বাবুয়ের মাসেকসা ১১৫ রান দিয়ে পাঁচ উইকেট নিয়ে রেখেছিলেন আলোচনার খোরাক।
দ্বিতীয় ইনিংসে জিম্বাবুয়ের ইনিংস যেন শুরুই হলো পতনের ধ্বনি বাজিয়ে। মাত্র ৮ রানেই পড়ল ২ উইকেট। তাইজুল প্রথমে বোল্ড করলেন ব্রিয়ান বেনেটকে। এরপর এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেললেন নিক ওয়েলচকে। স্কোর যখন ৬৯, তখন উইকেট ৫টি। এরপর নাম মাত্র প্রতিরোধ গড়ে বেন কুরান ও ক্রেইগ আরভিন। কুরান করেন সর্বোচ্চ ৪৬ রান, আরভিন ২৫। বাকিরা যেন শুধুই আনুষ্ঠানিকতা সারলেন। ১১১ রানে অলআউট হয়ে লজ্জার হার বরণ করে নেয় জিম্বাবুয়ে।
মিরাজ বল হাতেও রচনা করলেন অনন্য মহাকাব্য। ২১ ওভারে ৮ মেডেনসহ মাত্র ৩২ রানে শিকার ৫ উইকেট। এটি তার ক্যারিয়ারের ১৩তম পাঁচ উইকেট শিকার। তাকে দারুণ সহায়তা দেন তাইজুল, ৩টি উইকেট নেন ৪২ রানে। নাঈম ইসলামের ঝুলিতে যায় ১ উইকেট।
একই ম্যাচে সেঞ্চুরি ও ফাইফার, এমন কীর্তির সাক্ষী হওয়া সবসময় ঘটে না। মেহেদী হাসান মিরাজ সেই বিরল অর্জনের মালিক হয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন। শুধু এখানেই শেষ নয়, দুই টেস্টে মোট ১৫ উইকেট ও একটি দুর্দান্ত সেঞ্চুরির সুবাদে সিরিজ সেরার পুরস্কারও উঠেছে তার হাতেই।
চট্টগ্রামে এই জয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ শুধু সিরিজে সমতা ফেরায়নি, সিলেটের ক্ষতচিহ্নও কিছুটা মুছে দিয়েছে। মিরাজের ব্যাট-বলের বীরত্বে লেখা হলো এক প্রত্যাবর্তনের মহাকাব্য—যেখানে বাংলাদেশের ক্রিকেট আবারও প্রমাণ করেছে, তারা হার মানে না, হারিয়ে দিতে জানে।
ঢাকা/আমিনুল