২০১০ সালের স্মৃতি ফিরিয়ে আনতে পারবে ইন্টার?
Published: 30th, April 2025 GMT
মার্চ পর্যন্ত রীতিমতো উড়ছিল ইন্টার মিলান। তবে এপ্রিলে এসেই ধীরে-ধীরে ছন্দ হারাতে থাকে ক্লাবটি। এই সময়ে সব ধরনের প্রতিযোগিতায় ৮ ম্যাচে মাত্র ২টি জয় পায় সিমিওনে ইনজাগির দলটি। ঘরের প্রতিপক্ষ এসি মিলানের বিপক্ষে ইতালিয়ান কাপের সেমিফাইনালে ৪-১ ব্যবধানে হেরে ট্রেবলের স্বপ্ন জলাঞ্জালি দিতে হয়েছে। শেষ ২ ম্যাচে হেরে সিরি ‘আ’ শিরোপার দৌড়ে প্রতিদ্বন্দ্বী নাপোলি থেকে পিছিয়ে গিয়েছে ৩ পয়েন্টে।
এমন অবস্থায় ইন্টার মিলান বুধবার (৩০ এপ্রিল) দিবাগত রাতে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালের প্রথম লেগে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে ৫ বারের চ্যাম্পিয়ন বার্সেলোনার বিপক্ষে। তবে আত্মবিশ্বাস তলানিতে থাকা নেরাজ্জুরিদের ম্যানেজার সিমিওনে আশা হারাচ্ছেন না। আজ রাতের হাই ভোল্টেজ ম্যাচের আগে তিনি দলকে ‘ভয় না পেয়ে’ মাঠে নামতে বলেছেন এবং আহ্বান জানিয়েছেন গত সপ্তাহের হতাশাজনক ফলাফল ভুলে যেতে।
আরো পড়ুন:
‘অস্ত্রাগারে’র দেয়াল ভেঙে ফাইনালের পথে পিএসজি
চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনাল পর্বের সময়সূচি
সবশেষ তিনটি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে হেরেছে ইন্টার। এরআগে ২০১৭ সালের হারের হ্যাটট্রিক দেখেছিল নেরাজ্জুরিরা। এক সপ্তাহ আগেও ট্রেবল জয়ের স্বপ্ন বিভোর দলটা আজ রাতে শিরোপাহীন থাকার শঙ্কা নিয়েই অলিম্পিক স্টেডিয়ামে বার্সার বিপক্ষে মাঠে নামবে।
ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে সিমিওনে বলেন, “গত সপ্তাহের সব কিছু ভুলে যাও। গত চার বছরে এই খেলোয়াড়রা অসাধারণ কিছু করেছে এবং এখনও করে যাচ্ছে। গত সপ্তাহ সেটা মুছে দিতে পারে না। এটা দুর্দান্ত এক মৌসুম। আমরা শেষ তিনটি ম্যাচ বিশ্লেষণ করেছি। আমাদের আরো ভালো করতে হবে। (গত সপ্তাহ পর্যন্ত) আমরা প্রতিটি ট্রফির জন্য লড়াইয়ে ছিলাম। অনেকে বলছিল যে সিরি আ’তে সেরা চারে থাকাটাও কঠিন হবে। আপনি কখনো আমাকে এই ছেলেদের বা এই গ্রুপের বিরুদ্ধে খারাপ কিছু বলতে শুনবেন না। তাদের জন্যই আমরা গত চার বছরে প্রত্যাশা ছাড়িয়ে গেছি।”
ইনজাগি ইন্টারের কোচ হিসেবে একবার সিরি ‘আ’ ও দুইবার কোপা ইতালিয়া জিতেছেন। চ্যাম্পিয়নস লিগ ২০২৩ সালের রানার্সআপ। এবার তাদের সামনে বার্সা। যারা লা লিগার শীর্ষে এবং এই সপ্তাহেই কোপা দেল রে জিতেছে। ইনজাগি বার্সার কোচ হানসি ফ্লিকের প্রশংসা পঞ্চমুখ, “আমরা সম্ভবত এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা দলের বিপক্ষে খেলছি। আমাদের টেকনিক্যালি খুব পরিষ্কার থাকতে হবে। ফ্লিক একজন দুর্দান্ত কোচ, যিনি অসাধারণভাবে আক্রমণাত্বক দল সাজিয়েছেন। তারা বল হারালেও দ্রুত ফেরত পায়। তাদের দুর্দান্ত ফরোয়ার্ড, মিডফিল্ডার খেলোয়াড় আছে।”
এই সপ্তাহে ইন্টার বার্সার বিপক্ষে খেলবে চোটাক্রান্ত ডিফেন্ডার বেঞ্জামিন পাভার্ডকে ছাড়াই। ফরোয়ার্ড মার্কুস থুরাম অনুশীলনে ফিরলেও ম্যাচে খেলার ফিটনেস নিয়ে শংসয় আছে। যদি তিনি ফিট থাকেন, তবে লওতারো মার্তিনেজের সঙ্গে আক্রমণে থাকবেন। তারা দু’জন মিলে এই মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৩৮টি গোল করেছেন।
ইউরোপ সেরার মুকুটের জন্য বার্সার অপেক্ষা দীর্ঘ ১০ বছরের। সবশেষ ২০১৪-১৫ মৌসুমে তারা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা ঘরে তুলেছিল। অন্যদিকে, ইতালিয়ান ইন্টারের অপেক্ষা আরও বেশি। তারা সর্বশেষ ইউরোপ সেরা হয়েছিল ২০০৯-১০ মৌসুমে। সেবার ফাইনালে উঠার পথে সেমিফাইনালে ইতিহাসের সেরা বার্সাকে হারিয়েছিল জোসে মোরিনহোর ইন্টার।
ম্যাচটি মাঠে গড়াবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। ইউরোপের দুই দেশ স্পেন ও পর্তুগালে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে সোমবার থেকে ভুগছিল জনজীবন। এই বিভ্রাটে বিমান চলাচল এবং গণপরিবহন বন্ধ হয়ে যায়। জরুরি অবস্থা ছাড়া হাসপাতালগুলোর অপারেশনও স্থগিত করতে হয়। এমন অবস্থায় বার্সা ও ইন্টারের মধ্যকার ম্যাচটি না হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছিল। তবে শেষ খবর অনুযায়ী, মঙ্গলবার থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। আপাতত স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশন কিংবা উয়েফার পক্ষ থেকে খেলা স্থগিতের কোনো বিবৃতি আসেনি।
আগামী মঙ্গলবার দ্বিতীয় লেগে সান সিরোতে বার্সেলোনাকে আতিথ্য দেবে ইন্টার। বিজয়ী দল ৩১ মে মিউনিখে ফাইনালে পিএসজি বা আর্সেনালের মুখোমুখি হবে।
ঢাকা/নাভিদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চ য ম প য়নস ল গ ইন ট র ম ল ন স ম ফ ইন ল ইন ট র
এছাড়াও পড়ুন:
শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে গিয়ে ‘আমরা জমিদার’ বলা সেই কর্মকর্তার পদোন্নতির আবেদন
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন ২০০৬ সালের জুলাইয়ে। তখন পদ ছিল নিম্নমান সহকারী, অর্থাৎ তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। এরপর পদোন্নতি পেয়ে ২০২২ সালে হন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা। এখন সহকারী রেজিস্ট্রার পদে পদোন্নতি পেতে আবেদন করেছেন তিনি।
পদোন্নতির জন্য আবেদন করা ওই ব্যক্তির নাম সিরাজুল ইসলাম। সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এলাকাবাসীর সংঘর্ষের ঘটনায় ‘বিতর্কিত’ মন্তব্য করে আলোচনায় আসেন তিনি। সিরাজুল ইসলাম চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী-বায়েজিদ আংশিক) আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী ছিলেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের পর তাঁর মনোনয়ন বাতিল করে জামায়াত।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, সিরাজুল ইসলাম হাটহাজারী উপজেলার জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা শাখার শুরা সদস্য। তিনি ১৯৯৪ সালে ডিপ্লোমা, ১৯৯৬ সালে স্নাতক (বিএ) আর ২০১৭ সালে স্নাতকোত্তর (এমএ) পাস করেন। তবে তিনি নিজেকে ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল ইসলাম নামে পরিচয় দিতেন। দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচির প্রচারপত্রেও তিনি এ নাম লিখতেন। আগামী বৃহস্পতিবার তাঁর পদোন্নতির সাক্ষাৎকার হওয়ার কথা রয়েছে। ওই সাক্ষাৎকারের পর তিনি সেকশন অফিসার (নবম গ্রেড) পদ থেকে সহকারী রেজিস্ট্রার (ষষ্ঠ গ্রেড) পদে পদোন্নতি পেতে পারেন। তবে এ পদোন্নতির বিষয়টি সিন্ডিকেট সভায় চূড়ান্ত হবে।
অবশ্য শুধু সিরাজুল ইসলাম নয়। তাঁর মতো আরও অন্তত ৫০ জন পদোন্নতির সাক্ষাৎকারে ডাক পেয়েছেন। ২০০৮ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পদোন্নতিতে বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার বলে অভিযোগ তাঁদের। এসব পদের মধ্যে রয়েছে নিম্নমান সহকারী থেকে উচ্চমান সহাকরী, উচ্চমান সহকারী থেকে সেকশন অফিসার ও সহকারী রেজিস্ট্রার থেকে ডেপুটি রেজিস্ট্রার। যদিও সিরাজুল ইসলাম ২০১০, ২০১৩ ও ২০২২ সালে মোট তিনবার পদোন্নতি পেয়েছেন।
এর আগে চলতি বছরের ৩০ ও ৩১ আগস্ট চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় এলাকাবাসীর সংঘর্ষ হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য, তৎকালীন প্রক্টরসহ দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। এ সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে ৫ সেপ্টেম্বর স্থানীয় এলাকাবাসীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের একটি অংশের মতবিনিময় সভা হয়। এ সভায় সিরাজুল ইসলামের দেওয়া বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের পৈতৃক সম্পত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। আমরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও পার্শ্ববর্তী এলাকার মালিক। আমরা জমিদার, জমিদারের ওপর কেউ হস্তক্ষেপ করবে, এটা আমরা মেনে নেব না।’
সিরাজুল ইসলামের এ বক্তব্য ছড়িয়ে পড়ার পর শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হন। ওই দিন রাতেই গোলচত্বর, ছাত্রদের আবাসিক এ এফ রহমান হল ও শহীদ ফরহাদ হোসেন হলের সামনে বিক্ষোভ করেন তাঁরা। এ প্রতিক্রিয়ার পর তাঁর প্রার্থিতা বাতিল করে জামায়াতে ইসলামী। পাশাপাশি তাঁকে উপজেলা আমিরের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। প্রথম আলোতে সংবাদ প্রকাশের সূত্র ধরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও তাঁকে শোকজ করে।
নথিপত্রে দেখা যায়, চলতি বছর ২৬ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৬৪তম সিন্ডিকেট সভায় বৈষম্যর শিকার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের তালিকা যাচাই-বাছাই করতে কমিটি হয়। এ কমিটি ৫ নভেম্বর উপাচার্যের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সভায় কে কে পদোন্নতি পেতে পারেন, তা চূড়ান্ত করে। মূলত তাঁদের পদোন্নতির সাক্ষাৎকারে ডাকা হয়েছে। আজ রোববার ও আগামীকাল সোমবার এ সাক্ষাৎকার হওয়ার কথা ছিল। তবে সাক্ষাৎকারের তারিখ পিছিয়ে বুধবার ও বৃহস্পতিবার করা হয়।
জানতে চাইলে সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিনি পদোন্নতিতে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। পাঁচবার সাক্ষাৎকার দিয়ে ষষ্ঠবারে তিনি পদোন্নতি পেয়েছিলেন। এ কারণে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতির আবেদন করেছেন। নিয়ম মেনেই তিনি সাক্ষাৎকার দেবেন। তিনি সংঘর্ষের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শোকজের জবাব দিয়েছেন। তাঁর দল থেকেও ওই ঘটনার পর তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন‘আমরা জমিদার, জমিদারের ওপর হস্তক্ষেপ মেনে নেব না,’ বললেন জামায়াত নেতা০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫যা বলছে প্রশাসনপদোন্নতির নথিতে দেখা যায়, সেকশন অফিসার থেকে সহকারী রেজিস্ট্রারে পদোন্নতিতে সিরাজুল ইসলামসহ চারজনের নাম রয়েছে। তাঁদের সাক্ষাৎকার নেবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার, সহ-উপাচার্য অধ্যাপক (একাডেমিক) মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক এনায়েত উল্যা পাটওয়ারী ও আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক মু. জাফর উল্লাহ তালুকদার।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সংঘর্ষের ঘটনায় সিরাজুল ইসলামের থেকে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছিল। তিনি সে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। পদোন্নতির সাক্ষাৎকারে ডাকা মানেই পদোন্নতি দেওয়া নয়। পদোন্নতির বিষয়ে কোনো তদবিরও নেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কারও তদবিরের তোয়াক্কা করে না।