রাজনীতি হিন্দু–মুসলমানকে মাঝেমধ্যে আলাদা করে দেয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ওই বিভাজনের রাজনীতি পরিহার করতে হবে। আজ বুধবার দুপুরে ঠাকুরগাঁও পৌর শহরের কালীবাড়ি মন্দিরের শনিদেব মন্দিরের ফলক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘১৯৭১ সালে যখন স্বাধীনতা যুদ্ধ করি, তখন একবারের জন্য ভাবিনি কে হিন্দু, কে মুসলমান, কে খ্রিষ্টান। সবাই একসঙ্গে লড়াই করেছি। আপনাদের প্রতি অন্তরের টান এখনো আছে। আপনাদের কখনোই আলাদা করে দেখার চেষ্টা করিনি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের রাজনীতি মাঝেমধ্যে আমাদের আলাদা করে দেয়। সেই রাজনীতি আমাদের পরিহার করতে হবে।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ; এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। এখনো মনে করি, আমি আপনাদেরই একজন। তবে আমার একটা অভিযোগ আছে। কালীবাড়ি মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুভাষ চন্দ্র মল্লিককে উদ্দেশ করে বলেন, আমাকে কিছুদিন ওরা দূরে সরিয়ে রেখেছেন। রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হওয়া তো পাপ নয়, যে যাঁর মতো রাজনীতি করবেন। ভিন্ন রাজনীতি করার কারণে আমাকে দূরে ঠেলে রাখতে হবে, এটা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারি না। এটা বাস্তবতা, কোনো অভিযোগ করছি না। এ কারণেই বলছি যে আমি খোলামেলা মনের মানুষ।’

অতীত দিনের কথা স্মরণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আশ্রমপাড়ায় দুর্গাপূজার আয়োজন হতো, ঘোষপাড়ার হিন্দুরা আশ্রমপাড়ায় এসে পূজা করতেন। ওখানে নাটক হতো। সেই নাটকে আমি নিয়মিত অংশ নিতাম। এই পরিবেশ আজ আর নেই। এখন আর নিজের লোকেরাও ডাকেন না। এই জায়গা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। আমরা বেরিয়ে আসার একটা সুযোগ পেয়েছি। নতুন একটা বাংলাদেশ তৈরি হচ্ছে। আসুন, এই নতুন বাংলাদেশটাকে আমরা আমাদের মতো করে তৈরি করি।’

হিন্দু সম্প্রদায়ের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আস্থা রাখবেন। আমরা আপনাদের সঙ্গে ছিলাম, আছি এবং থাকব। আমরা মনে করি, আপনাদের বিপদ মানে, আমার বিপদ। আপনাদের শান্তি মানে, আমার শান্তি। আপনাদের সুখ মানে, আমার সুখ। কখনো বিভাজনের রাজনীতি আমরা করিনি।’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের চরণ ‘চারি দিকে দেখো চাহি হৃদয় প্রসারি, ক্ষুদ্র দুঃখ সব তুচ্ছ মানি’ উদ্ধৃত করে তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের হৃদয়টাকে প্রসারিত করতে হবে। চারদিকে তাকিয়ে দেখতে হবে এবং ভালোবাসতে হবে মানুষকে। সেই ভালোবাসা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এ কাজটা যদি করতে না পারি, তাহলে আজ আমরা যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারব না।’

এখনো ষড়যন্ত্র চলছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রতি মুহূর্তে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আপনাদের মাথা খারাপ করে দিচ্ছে। এই ফেসবুক ও সোশ্যাল মিডিয়া আপনাদের মাথা খারাপ করে দিচ্ছে। সেখানে এমন সব কথা বলে–লেখে, আবার কিছু কিছু মানুষ এমনভাবে উসকানি দেয়, যে সবাই বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। আমি কিন্তু ফেসবুক দেখি না। কারণ, আমি জানি, তারা সমাজকে অস্থির করার চেষ্টা করছে। আমাদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে।’ দেশকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সমস্যা তো থাকবেই। সেই সমস্যা আমাদেরই উত্তরণ ঘটাতে হবে। আপনারা বুকে একটু জোর আনেন। আমরা আগের মতো সেই সম্পর্ক আবার তৈরি করি। আমরা সবাই মিলে একটা চমৎকার সমাজ গড়ে তুলি, যেখানে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান কোনো ভেদাভেদ থাকবে না।’

এ সময় ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমীন, সহসভাপতি ওবায়দুল্লাহ মাসুদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, দপ্তর সম্পাদক মামুনুর রশিদ, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তারিক আদনান, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্ট ঠাকুরগাঁও জেলার সভাপতি মনোরঞ্জন সিং, সাধারণ সম্পাদক সত্যজিৎ কুমার কুণ্ডু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আপন দ র ব এনপ র ম সলম ন আম দ র র র জন র জন ত ফখর ল

এছাড়াও পড়ুন:

নবায়নযোগ্য শক্তির দাবিতে সোনারগাঁয়ে মানববন্ধন 

বাংলাদেশে শতভাগ নবায়নযোগ্য শক্তির লক্ষ্য অর্জনে নীতিমালা সংস্কারের দাবিতে অনুষ্ঠিত হলো এক জোরালো মানববন্ধন। এ সময় নীতিমালা সংস্কার, স্মার্ট গ্রিড বাস্তবায়ন ও “বিদ্যুৎ নেই, বিল নেই” নীতি কার্যকরের আহ্বান জানানো হয়।

বুধবার (৩০ এপ্রিল) নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের মোগরাপাড়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে আয়োজিত এ কর্মসূচির নেতৃত্ব দেয় পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটি (ESADS)। সহযোগিতায় ছিলো কোস্টাল লাইভলিহুড অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল অ্যাকশন নেটওয়ার্ক (CLEAN) এবং বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপ অন ইকোলজি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (BWGED)।

এদিনের কর্মসূচিতে পরিবেশকর্মী, সচেতন নাগরিক ও নীতিনির্ধারকদের অংশগ্রহণে গঠিত মানববন্ধনে ব্যানার ও বিভিন্ন স্লোগানের মাধ্যমে তুলে ধরা হয় নবায়নযোগ্য শক্তির পথে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলো। বক্তারা বলেন, “পুরনো অবকাঠামো, অনুমোদনের জটিলতা, বিনিয়োগ ঝুঁকি এবং নীতির দুর্বল বাস্তবায়ন নবায়নযোগ্য খাতের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করছে।”

এসময় বক্তারা ৬দফা দাবি পেশ করেন ১। একক সেবা কেন্দ্র (One Stop Service) চালু করে দ্রুত প্রকল্প অনুমোদনের ব্যবস্থা। ২। স্মার্ট গ্রিড ও নেট এনার্জি মিটারিং (NEM) বাস্তবায়নের মাধ্যমে গ্রিড আধুনিকীকরণ। ৩। বিদ্যুৎ বাজেটের ২০% নবায়নযোগ্য শক্তিতে বরাদ্দ। ৪। ব্যাংকিং খাতের ২৫% জ্বালানি অর্থায়ন নবায়নযোগ্য প্রকল্পে নির্ধারণ। ৫। আমদানি শুল্ক হ্রাস ও ট্যারিফ শর্ত বাতিল। ৬। “বিদ্যুৎ নেই, বিল নেই” নীতির কার্যকর বাস্তবায়ন।

পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটি (ESADS) এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন বলেন, “এই আন্দোলন নারায়ণগঞ্জের সবুজ ও ন্যায়ভিত্তিক ভবিষ্যতের প্রতীক। এটি কেবল প্রযুক্তিগত নয়, বরং জীবনমান, জলবায়ু সহনশীলতা এবং অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন।”

ফোরাম অন ইকোলজি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-এর প্রতিনিধি বলেন, “আমাদের মতো জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর জন্য নবায়নযোগ্য শক্তি শুধু বিকল্প নয়—এটি টিকে থাকার হাতিয়ার।”

মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটি (ESADS) এর মহাসচিব মীযানুর রহমান, সোনারগাঁ কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি মোঃ ফজলুল হক ভূইয়া, মনির হোসেন, সাংবাদিক মিমরাজ, মোক্তার হোসেন, জহিরুল ইসলাম জহির, ইমরান, মোঃ হামীম, মোঃ সিফাতসহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ