নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে বাধা মাধ্যমিকে সংযুক্ত প্রাথমিক শাখা
Published: 30th, April 2025 GMT
আমরা মাধ্যমিক পর্যায়ে কর্মরত শিক্ষক এবং শিক্ষক নেতৃত্ব অত্যন্ত উদ্বেগ এবং উৎকণ্ঠার সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, অতি সাম্প্রতিককালে মাধ্যমিকের নতুন কারিকুলাম নিয়ে এই সেক্টরের বাইরের অংশীজন অতিমাত্রায় তৎপরতা দেখাচ্ছেন, যা বিজ্ঞান এবং যুক্তিসঙ্গত নয় বলে মনে করি।
বাংলাদেশ কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি নতুন কারিকুলাম নিয়ে গোলটেবিল বৈঠক করেছেন! আবার আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের (শিক্ষা ক্যাডারের জনৈক প্রভাবশালী কর্মকর্তা) পরামর্শ মোতাবেক নতুন কারিকুলামের সফল বাস্তবায়নের জন্য নাকি ডাবল শিফট বিদ্যালয়সমূহ বন্ধের ব্যাপারে তাড়াহুড়ো করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক উইং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে যাচ্ছেন মর্মে সংবাদ প্রকাশ পাচ্ছে; যা আমাদেরকে উদ্বিগ্ন করে!
আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, ডাবল শিফট স্কুল আজকে চালু হয়নি এবং এই স্কুলসমূহে প্রতি শিফটের জন্য আলাদা শিক্ষক প্যাটার্নও রয়েছে এবং সেখানে প্যাটার্ন অনুযায়ী আলাদা শিক্ষকগণ কর্মরত রয়েছেন। সুতরাং হুট করে সিদ্ধান্ত না নিয়ে এ বিষয়ে ফিল্ড সংশ্লিষ্ট শিক্ষক, শিক্ষাবিদ এবং শিক্ষা কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ব্যাপক আলোচনা পর্যালোচনা এমনকি প্রয়োজনে গবেষণা করার পর তার ফলের উপর নির্ভর করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি।
উল্লেখ্য, রাজধানী ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরে এবং ৬৪ জেলা শহরের দুইটি করে সরকারি স্কুলের পাশাপাশি স্বনামধন্য বেশ কিছু বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহে ডাবল শিফট চালু আছে। ডাবল শিফট বিদ্যালয়ের ২টি শিফটের জন্য প্যাটার্ন অনুযায়ী আলাদা আলাদা শিক্ষক কর্মরত থাকলেও সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহের সাথে সংযুক্ত প্রাথমিক শ্রেণি সমূহের জন্য আলাদা কোনো শিক্ষক নেই!
নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে মাধ্যমিক শিক্ষকদের দিয়ে প্রাথমিকের ক্লাস নেওয়ানো কি যৌক্তিক হবে? আশাকরি ২০২৭ সালে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নের যে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, সেই পরিকল্পনার সঙ্গে পর্যায়ক্রমে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহ থেকে সংযুক্ত প্রাথমিক শাখা বিযুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
তাছাড়া, একজন শিক্ষক প্রস্তুতিসহ ক্লাস নিতে গেলে বিরতিহীন ছয়টি বা সাতটি ক্লাস নিলে তা কি ফলপ্রসূ ক্লাস হবে? সঙ্গত কারণে মাধ্যমিক থেকে প্রাথমিকের শ্রেণিসমূহ ডিটাস্ট করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিচালিত পার্শ্ববর্তী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে সংযুক্ত করা জরুরি বলে মনে করি। এ বিষয়ে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এ অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে নির্দেশনাও দেওয়া রয়েছে।
একই সঙ্গে, নতুন কারিকুলাম বিষয়ে হোক বা শিক্ষা বিষয়ক যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয় হোক, এই ফিল্ডের অভিজ্ঞ এবং নিবেদিত প্রাণ শিক্ষক এবং শিক্ষাবিদদের যুক্ত করা এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়াটা খুবই জরুরি বলে মনে করি। অন্যথায় জাতি সুদূরপ্রসারী ক্ষতির মধ্যে পড়তে পারে! যা আমাদের কারো কাম্য হতে পারে না! মনে রাখতে হবে সবার আগে দেশ এবং দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সঠিক ভাবে গড়ে তোলা! তা না হলে দেশের জনগণ জনসম্পদের পরিবর্তে অদূর ভবিষ্যতে দেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াতে পারে!
আমরা দীর্ঘদিন ধরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের অধীন বিরাট সংখ্যক মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দেখভাল তথা তদারকি যথার্থভাবে হচ্ছে না বলে বিভিন্নভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আসছি। ২০১০-এর জাতীয় শিক্ষানীতি এবং সম্প্রতি জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ মোতাবেক মাধ্যমিকের জন্য একটি স্বতন্ত্র অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা ছাড়া এই বিরাট সেক্টর পরিচালনা করা খুবই কঠিন এবং অসম্ভব বলে মনে করি। একই ভাবে উচ্চশিক্ষার জন্য আলাদা অধিদপ্তর হলে উচ্চশিক্ষায় গবেষণার যেমন সুযোগ বাড়বে তেমনি মাধ্যমিক শিক্ষায়ও গতি সঞ্চার হবে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
লেখক: শিক্ষক, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়
মুখপত্র, স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বাস্তবায়ন জাতীয় কমিটি
ঢাকা/তারা
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর নত ন ক র ক ল ম ব আম দ র র জন য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ঈশ্বরগঞ্জের সাবেক ওসি-এসআইয়ের বিরুদ্ধে মামলা, জুডিশিয়াল তদন্তের নির্দেশ
প্রধান আসামির নাম না দিয়ে মামলা নথিভুক্ত করায় ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ থানার সাবেক ওসি ও এসআইয়ের বিরুদ্ধে করা মামলাটি জুডিশিয়াল তদন্তের আদেশ দিয়েছেন বিচারক।
রবিবার (২৭ এপ্রিল) বিকেলে ময়মনসিংহ চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৪ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক একেএম ছিফাতুল্লাহ এ আদেশ দেন। আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. আজহারুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত ১৭ এপ্রিল আদালতে মামলার আবেদন করেন গিয়াস উদ্দিন নাামে এক ব্যক্তি। ওইদিনই বিচারক একেএম ছিফাতুল্লাহ আবেদনটি আমলে নেওয়ায় রেজিস্ট্রার খাতায় মামলা (২৭৭/২৫) হিসেবে নথিবদ্ধ করা হয়।
আসামিরা হলেন- তৎকালীন ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান, তিনি পদোন্নতি পেয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হয়েছেন। বর্তমানে তিনি ঢাকায় কর্মরত রয়েছেন। সাবেক এসআই মো. মাজহারুল ইসলাম পদোন্নতি পেয়ে পরিদর্শক (ওসি) হয়েছেন বলে জানা গেছে। তিনি কোথায় কর্মরত তা জানা যায়নি।
আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. আজহারুল ইসলাম বলেন, “মামলাটি তদন্ত করবেন ময়মনসিংহ চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৭ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক মো. ইকবাল হোসাইন। কতদিন তদন্ত চলবে তা বিচারকের ওপর নির্ভর করবে।”
মামলা সূত্রে জানা যায়, গিয়াস উদ্দিনের পরিবারের সঙ্গে প্রতিবেশী নজরুল ইসলামের পরিবারের পূর্ব বিরোধ ছিল। ২০১০ সালের ২৭ নভেম্বর দুই পক্ষের কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে মারামারির ঘটনা ঘটে। এসময় প্রতিপক্ষের লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে শফিকুল ইসলামের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থান কুপিয়ে জখম করে। পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সেখান থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফেরার কিছুদিন পর আবারো অসুস্থ হয়ে পড়েন শফিকুল। পরে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। সেখানে ১০ দিন চিকিৎসা শেষে আবারও বাসায় নিয়ে আসা হয়। বাসায় কয়েক বছর স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা চলছিল তার। ২০১৫ সালে গুরুতর অসুস্থ হলে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় শফিকুলকে। কয়েকদিন চিকিৎসা শেষে বসায় নিয়ে আসার পরদিন (একই বছরের ২ জানুয়ারি) মারা যান শফিকুল ইসলাম।
এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই গিয়াস উদ্দিন বাদী হয়ে থানায় মামলা করতে গেলে ঈশ্বরগঞ্জ থানার তৎকালীন ওসি মো. মিজানুর রহমান মামলা নেননি। এমতাবস্থায় ২০১০ সালের ৭ ডিসেম্বর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নালিশি অভিযোগ দায়ের করা হয়।
ওই দিনই অভিযোগ থানায় এজাহার হিসেবে নথিবদ্ধ করতে থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন বিচারক। ওসি মো. মিজানুর রহমান এজাহার হিসেবে নথিবদ্ধ না করে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মাজরুল ইসলামের মাধ্যমে বাদী গিয়াস উদ্দিনকে জানান মামলাটি থানায় এসেছে। আপনার (বাদীর) টিপসই লাগবে। বাদী সরল মনে ওসি ও এসআইয়ের কথা বিশ্বাস করে টিপসই দেন।
পরবর্তীতে আদালত থেকে বাদী মামলার কপি তুলে দেখেন, অন্য একটি মামলা লিখে বাদীর স্বাক্ষর নেওয়া, যে মামলাটি এজহার হিসেবে নথিবদ্ধ করেন তাতে বাদীর নালিশি মামলার ১ নম্বর আসামি নজরুল ইসলামের নাম বাদ দিয়ে বাদীর ভাতিজা মো. আবদুর রশিদের নাম লিখে রাখা হয়েছে।