মধ্যরাত থেকে কাপ্তাই হ্রদে ৩ মাস মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা
Published: 30th, April 2025 GMT
কার্প জাতীয় মাছের বংশবিস্তার ও প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিতে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে ৩ মাসের জন্য মাছ ধরা, বাজারজাতকরণ এবং পরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) মধ্যরাত থেকে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। এর আগে, গত ১৬ এপ্রিল হ্রদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এ বছরের ১ মে থেকে আগামী ৩১ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে সব ধরনের মাছ আহরণ, বাজারজাতকরণ এবং পরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকবে।
বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) রাঙামাটি অঞ্চলের ব্যবস্থাপক কমান্ডার মো.
তিনি আরো বলেন, ‘‘মাছ আহরণ বন্ধ থাকাকালীন জেলেদের ২০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হবে। জেলায় সরকারি তালিকাভুক্ত প্রায় ২৬ হাজার ৮৬৬ জন জেলে রয়েছেন।’’
কাপ্তাই হ্রদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ বলেন, ‘‘নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সময়ে নৌ পুলিশের পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ টিম মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবে। এসময় বন্ধ থাকবে জেরার সব বরফকল। নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন হ্রদে কেউ মাছ ধরলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’’
ঢাকা/শংকর/রাজীব
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবস থ পর বহন
এছাড়াও পড়ুন:
সচিব নিয়োগে ‘মতামত’ প্রতিফলিত হয়নি, নাখোশ কর্মকর্তারা
রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা—এই দুই বিভাগে ভাগ হচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ-সংক্রান্ত অধ্যাদেশের খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে। তবে রাজস্ব নীতি বিভাগের সচিব পদে নিয়োগ নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে। তারা বলছেন, দুইটি বিভাগ করার বিষয়ে কর্মকর্তারা যে মতামত দিয়েছেন, তা খসড়ায় প্রতিফলিত হয়নি। বিশেষ করে রাজস্ব নীতি বিভাগে সচিব পদে নিয়োগের বিষয়ে মতামতকে উপেক্ষা করা হয়েছে।
রোববার বিসিএস (কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট) অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী মোস্তাফিজুর রহমান ও মহাসচিব একেএম নুরুল হুদা আজাদ সই করা বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়।
এতে বলা হয়, শনিবার এনবিআরের মাল্টিপারপাস হলে বিসিএস কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট অ্যাসোসিয়েশনের এক বিশেষ সাধারণ সভা (ইজিএম) অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অ্যাসোসিয়েশনের বিপুলসংখ্যক সদস্য এবং সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও রাজস্ব কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাকাএভ) প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় কর-জিডিপি উন্নয়নে রাজস্ব প্রশাসন সংস্কারের ভূমিকা ও করণীয় বিষয়ে আলোচনা করা হয়। এছাড়া গত ১৭ এপ্রিল উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদিত রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫ এর চূড়ান্ত খসড়া নিয়ে আলোচনা করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটি বলেছে, আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস—এই দুইটি অ্যাসোসিয়েশন রাজস্ব নীতি বিভাগে সচিব পদে নিয়োগে মতামত দিয়েছেন, ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিষয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মরত কর্মকর্তাদের থেকে’ রাজস্ব নীতি বিভাগের সচিব নিয়োগ হবে। কিন্তু খসড়ায় সেই মতামত প্রতিফলিত হয়নি। এতে মাঠ কর্মকর্তাদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশা তৈরি হয়েছে। রাজস্ব বিভাগে অভিজ্ঞদের থেকে চেয়ারম্যান (সচিব পদমর্যাদা) নিয়োগ না করে বাইরে থেকে চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হলে যে উদ্দেশ্যে এনবিআর দুই ভাগ হচ্ছে, তা ব্যাহত হবে। তাই অধ্যাদেশ জারির আগেই তা সংশোধন করতে হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শনিবারের সভায় কর-জিডিপির অনুপাতের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নে অতিমূল্যায়িত জিডিপি, রাজস্ব প্রশাসনের শীর্ষ পদের রাজস্ব নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে বাস্তব অভিজ্ঞতার অভাব এবং কর-রাজস্ব আহরণে এ অঞ্চলের মধ্যে সর্বনিম্ন বিনিয়োগকে অন্যতম বাধা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। রাজস্ব আহরণে বিনিয়োগের সঙ্গে কর-জিডিপি অনুপাতের সরাসরি সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে এর উন্নয়নে অগ্রাধিকারভিত্তিক গুরুত্ব দেওয়ার অনুরোধ করা হয়।
রাজস্ব নীতি থেকে রাজস্ব বাস্তবায়ন আলাদা করাকে স্বাগত জানিয়েছে বিসিএস কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট অ্যাসোসিয়েশন। তবে অ্যাসোসিয়েশন মনে করে রাজস্ব সংস্কার কেবল আলাদা করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা সমীচীন নয়। বরং তা টেকসই করতে রাজস্ব ব্যবস্থার সামগ্রিক শক্তিশালীকরণ, যথাযথ বিনিয়োগ ও উন্নয়নের বিষয়টিও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সরকার পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট রাজস্ব সংস্কারবিষয়ক পরামর্শক কমিটি গঠন করে। বিসিএস কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট অ্যাসোসিয়েশন এবং বিসিএস (কর) অ্যাসোসিয়েশন যৌথভাবে দুইবার তাদের মতামত তুলে ধরেছে। গত ১৩ এপ্রিল দুই সংগঠন সেই মতামত পুনর্ব্যক্ত করে যৌথভাবে অর্থ উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে।
কিন্তু ১৭ এপ্রিল উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদিত রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশের খসড়ায় পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দুই সংগঠনের মতামত প্রতিফলিত হয়নি। এর পরিপ্রেক্ষিতে অ্যাসোসিয়েশন সাতটি পর্যবেক্ষণ ও মতামত তুল ধরেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিসিএস (কর) অ্যাসোসিয়েশন ও বিসিএস কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট অ্যাসোসিয়েশন ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিষয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মরত কর্মকর্তাদের থেকে’ রাজস্ব নীতি বিভাগের সচিব নিয়োগের মতামত দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অধ্যাদেশের খসড়ার অনুচ্ছেদ ৪(৩) এ ‘উপযুক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন যে কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে’ রাজস্ব নীতি বিভাগের সচিব বা সিনিয়র সচিব নিযুক্ত করার বিধান রাখা হয়েছে। এতে রাজস্ব নীতি প্রণয়নে বিসিএস (কর) ও বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তাদের দীর্ঘদিনের প্রত্যক্ষভাবে কাজ করার অভিজ্ঞতাকে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।
প্রসঙ্গত, রাজস্ব নীতি বিভাগ গঠনের মূল লক্ষ্য হলো- নীতি ও ব্যবস্থাপনা পৃথককরণের মাধ্যমে পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি ও বিশেষায়িত বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে যুগোপযোগী, আধুনিক ও ব্যবসাবান্ধব রাজস্ব নীতি প্রণয়ন। রাজস্ব নীতি প্রণয়নে কর রাজস্ব আহরণের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের থেকে রাজস্ব নীতি বিভাগের শীর্ষ পদে পদায়ন করা হলে রাজস্ব বিভাগকে আলাদা করার মূল উদ্দেশ্য অর্জনে সহায়ক হবে।
রাজস্ব নীতি বিভাগের মৌলিক পদগুলো বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) এবং বিসিএস (কর) ক্যাডার থেকে পূরণের প্রস্তাব করা হলেও খসড়ার অনুচ্ছেদ ৪(৪)-এ আয়কর, কাস্টমস, ভ্যাট, অর্থনীতি, ব্যবসায় প্রশাসন, গবেষণা, পরিসংখ্যান, প্রশাসন, অডিট, আইন সংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের থেকে পূরণের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। যেখানে নীতিসংক্রান্ত বিভিন্ন মৌলিক পদগুলোতে বর্তমানে দায়িত্বরত রাজস্ব আহরণ, ব্যবস্থাপনা ও নীতি প্রণয়নে বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদেরকে রাজস্ব নীতি বিভাগে সুনির্দিষ্টভাবে পদায়নের সুযোগ রাখা হয়নি। ফলে নীতিনির্ধারণী ও দায়িত্বশীল পর্যায়ে এই দুই ক্যাডারভুক্ত অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ প্রতিপাদ্য না হওয়ায় মাঠ অভিজ্ঞতা ও নীতির মধ্যে মারাত্মক ব্যবধান রয়ে যাবে; যা রাজস্ব সংস্কারের মূল লক্ষ্যকে ব্যাহত করবে। কর-রাজস্ব আহরণে নিয়োজিত কর্মকর্তারা দীর্ঘমেয়াদে ভ্যাট, আয়কর, কাস্টমস মূল্যায়ন, পণ্য শ্রেণিবিন্যাস, আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে কাজ করে দক্ষতা অর্জন করেন। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা গ্রহণ ও নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে এই অভিজ্ঞতা গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া দীর্ঘদিন কাজ করেও নীতিনির্ধারণী পদে সুনির্দিষ্টভাবে সুযোগ না থাকলে হতাশাজনিত কারণে কর্মস্পৃহা কমে যাবে। পক্ষান্তরে উপযুক্ত মর্যাদা দিলে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও প্রেরণার উন্নয়ন ঘটবে; যা সামগ্রিকভাবে রাজস্ব প্রশাসনকে বেগবান করবে।
অ্যাসোসিয়েশন বলছে, খসড়ার অনুচ্ছেদ ৯-এ রাজস্ব নীতি বিভাগে জনবল পদায়নের জন্য সুপারিশের লক্ষ্যে একটি কমিটির কথা উল্লেখ থাকলেও ধারা ৪(৪)-এ এমন কোনো কমিটির উল্লেখ নেই। এই কমিটির গঠন উল্লেখ করা প্রয়োজন। খসড়ার অনুচ্ছেদ ৫ এর দফা (চ)-এ রাজস্ব নীতি বিভাগের কার্যপরিধিতে ‘কর আইন প্রয়োগ ও কর আহরণ পরিস্থিতি পরিবীক্ষণ’ যুক্ত করা হয়েছে। এই পরিবীক্ষণের বিধান রাখায় নীতি বিভাগকে ব্যবস্থাপনা বিভাগের কার্যক্রম তদারকির সুযোগ থেকে যায়। এক বিভাগের কার্যক্রম সমমর্যাদাসম্পন্ন অন্য বিভাগের মাধ্যমে পরিবীক্ষণের বিধান রাখা হলে তা আইনের দৃষ্টিতে সাংঘর্ষিক। খসড়ার অনুচ্ছেদ ৭(৩)-এ ‘বিসিএস (কর) ও বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ক্যাডারের কর্মকর্তাদের থেকে রাজস্ব আহরণে ন্যূনতম ২০ বছরের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাকে পালাক্রমে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের সিনিয়র সচিব বা সচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পরিবর্তে রাজস্ব আহরণে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন সরকারি কর্মকর্তাকে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব বা সিনিয়র সচিব হিসেবে নিয়োগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। ফলে গুরুত্বপূর্ণ এই পদে কর-রাজস্ব আহরণের বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন নয়-এমন কর্মকর্তাদের প্রবেশাধিকার সৃষ্টি হতে পারে; যা কর-রাজস্ব আহরণে দীর্ঘদিনের অর্জিত বিশেষায়িত জ্ঞান ও দক্ষতাকে কাজে লাগানোর সুযোগ সীমিত করবে।
খসড়ার অনুচ্ছেদ ৭(৫)-এ রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রশাসনিক পদগুলোতে প্রশাসন ক্যাডার থেকে পদায়ন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অ্যাসোসিয়েশন বলছে, বর্তমানে এনবিআরের বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে বিসিএস (কর) ও বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তারা পদস্থ রয়েছেন; যা তাদের নির্ধারিত পদ। কিন্তু খসড়ায় প্রশাসনিক পদগুলোতে এই দু্ই খাতের ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তাদের থেকে পূরণের সুযোগ রাখা হয়নি। বিশেষায়িত দক্ষ জনবল সৃষ্টি, বিদ্যমান জনবলের ব্যবস্থাপনা, প্রশিক্ষণ এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্যারিয়ার প্লানিং ও পেশাগত স্বার্থরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রশাসনিক পদগুলোতে সংশ্লিষ্ট ক্যাডারভুক্ত জনবল দিয়ে পূরণ করা উচিত। এছাড়া রাজস্ব সংস্কার বিষয়ক পরামর্শক কমিটির প্রতিবেদনটি জনসমক্ষে প্রকাশ করার আহ্বান জানান তারা।