আনিসুল-সালমান-মামুন রিমান্ডে, নতুন মামলায় গ্রেপ্তার আতিক
Published: 30th, April 2025 GMT
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পৃথক হত্যা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, পুলিশের সাবেক আইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামসহ পাঁচ জনকে নতুন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো.
মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা তাদের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড এবং গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন। আদালত আসামিদের উপস্থিতিতে রিমান্ড ও গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে শুনানির জন্য ২৯ এপ্রিল ধার্য করেন। এদিন শুনানিকালে তাদের আদালতে হাজির করা হয়। প্রথমে রিমান্ডের বিষয়ে শুনানি হয়।
ভাটারা থানার মনির হোসেন হত্যা মামলায় সালমান এফ রহমানের পাঁচ দিন, বাড্ডা থানার আব্দুল জব্বার হত্যা মামলায় আনিসুল হকের তিন দিন এবং যাত্রাবাড়ীতে মো. রাসেল হত্যা মামলায় চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের পক্ষে তার আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে শুনানি করেন। সালমান এফ রহমান এবং আনিসুল হকের পক্ষে আইনজীবীরা শুনানি করেননি।
শুনানি শেষে আদালত সালমান এফ রহমানের তিন দিন, আনিসুর হকের দুই দিন এবং চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের তিন দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন আদালত।
এদিকে, আদালত সূত্রে জানা গেছে, কদমতলী থানার এক মামলায় চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, আনিসুল হক, সালমান এফ রহমানকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
যাত্রাবাড়ী থানার চার মামলায় সালমান এফ রহমানকে, একই থানার ছয় মামলায় আনিসুল হককর, যাত্রাবাড়ী থানার পাঁচ মামলায় মামুনকে, বাড্ডা থানার এক মামলায় আতিকুল ইসলাম ও নিয়াজ মোর্শেদ ওরফে নিয়াজ মাহমুদকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তবে নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারকে আদালতে হাজির করা হলেও তদন্তকারী কর্মকর্তা উপস্থিত না হওয়ায় তার বিষয়ে শুনানি হয়নি।
এর আগেও কয়েক দফা তাদের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ। গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে আওয়ামী লীগ ও শরিক দলের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার হচ্ছেন।
ঢাকা/এম/ইভা
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন একটি ‘জবাবদিহিহীন জায়গা’
সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে আইনজীবীদের এক মতবিনিময় সভায়। এই প্রশাসন জবাবদিহিহীন একটি জায়গা বলেও অভিযোগ তোলা হয়েছে। এর পাশাপাশি বলা হয়েছে, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা হওয়ার পর প্রায় তিন মাস হতে চললেও ছোটখাটো সংস্কার প্রস্তাবও বাস্তবায়ন করা হয়নি। অথচ আইন ও সংবিধান সংশোধন ছাড়াই অনেক সংস্কারকাজ প্রশাসনিক পদক্ষেপের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
‘বিচারব্যবস্থা সংস্কার ও জরুরি করণীয়: প্রসঙ্গ সুপ্রিম কোর্ট’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভা গতকাল রোববার বিকেলে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। এই সভার আয়োজক বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)।
সভায় বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানিম হোসেইন শাওন বলেন, গত ৩১ জানুয়ারি সংস্কার প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর তিন মাস হতে চলল। এই সময়ে অভিজ্ঞতা খুব আশাপ্রদ নয়। কারণ, ছোটখাটো উদ্যোগগুলোর বাস্তবায়নও এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, প্রতিবেদনের মধ্যে অনেক কিছু খুব ছোটখাটো প্রশাসনিক পদক্ষেপের মাধ্যমে ঠিক করা সম্ভব এবং খুব কম সময়ের মধ্যে এগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব। এগুলোর জন্য সংবিধান সংশোধন করা, নির্বাচিত সরকারের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। কিছু অংশীজনের সদিচ্ছা থাকলে খুব সহজেই এসব কাজ করা সম্ভব।
সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসন সবচেয়ে বেশি অস্বচ্ছ এবং জবাবদিহিহীন একটা জায়গা বলেও
অভিযোগ করেন আইনজীবী তানিম হোসেইন। তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসন কতটা অস্বচ্ছ, সেটার একটা লক্ষণ হলো বেঞ্চ পুনর্গঠন।
কীভাবে বেঞ্চ পুনর্গঠন হয়, জানা যায় না। এই মুহূর্তে সুপ্রিম কোর্টে কজলিস্টে (কার্যতালিকা) কয়েকজন জজের (বিচারকের) বেঞ্চ নেই কেন, সেই প্রশ্নও তোলেন তিনি।
তানিম হোসেইন বলেন, সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অনেকে মনে করেন, তাঁরা প্রশিক্ষণের ঊর্ধ্বে। তাঁরা অপমানিত বোধ করেন যদি বলা হয়, প্রশিক্ষণ নিতে হবে। এ রকম কিছু প্রস্তাব সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে আছে।
মতবিনিময় সভার সঞ্চালক ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন। তিনি বলেন, খুব সাধারণ বিষয়গুলোও সমাধান করা যাচ্ছে না। অনেক কিছুর জন্য হয়তো আইনি সংস্কারের প্রয়োজন নেই। অতীতে দেখা গেছে, এ ধরনের সংস্কারপ্রক্রিয়ায় আইনজীবীরাই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তাঁরাই পরিবর্তন চান না। একধরনের চর্চায় অভ্যস্ত হয়ে আছেন। এখন আরেকটা নতুন সুযোগ এসেছে পরিবর্তন আনা যাবে কি না, তা নিয়ে একত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এবং কাজ করার।
সংস্কার কমিশন সুচিন্তিত ও সুনির্দিষ্টভাবে সুপারিশ করেছে উল্লেখ করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রাশনা ইমাম বলেন, সুপারিশের মধ্যে অনেকগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে, যদি বাস্তবায়ন করা যায়। যদি বার ও বেঞ্চের সৎ ইচ্ছা থাকে, তাহলে অনেকগুলো সমস্যা সমাধানের দিকে দ্রুত এগিয়ে যাওয়া যাবে। দুর্ভাগ্যজনক হলো সব সময় হয়তো সেই সদিচ্ছা থাকে না।
বিভিন্ন আইন ও অধ্যাদেশ সংশোধনের বিষয়ে রাশনা ইমাম বলেন, তড়িঘড়ি করে সংশোধন করলে হবে না। সংশোধনগুলো করার আগে সব অংশীজনের সঙ্গে পর্যাপ্ত আলোচনার মাধ্যমে সংশোধন করা উচিত। না হলে বাস্তবায়নে নানামুখী সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।
সুপ্রিম কোর্টের চর্চা ও পদ্ধতির অধঃপতন ঘটেছে বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুস। দুর্নীতি আর চুরির একটা সীমা থাকা দরকার—এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, এটা (আদালত অঙ্গন) দুর্নীতির একটা আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এর মূল কারণ হচ্ছে এখানে অব্যবস্থাপনাকে ব্যবস্থাপনা করে ফেলা হয়েছে। সিস্টেম (ব্যবস্থা) পরিবর্তন করে দুর্নীতি এখনই শেষ করা সম্ভব। এমন সিস্টেম আনতে হবে, যেন কর্মকর্তা–কর্মচারীরা ঘুষ খাওয়ার সুযোগ না পান, ঘুষ নিতে চাইলেও যাতে নিতে না পারেন।
ই-জুডিশিয়ারি ও ভার্চ্যুয়াল কোর্ট প্রসারের ক্ষেত্রে মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির সদস্যসচিব এ এম জামিউল হক।
সভায় বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কাজী জাহেদ ইকবাল, মো. মোশাররফ হোসেন, এস হাসানুল বান্না প্রমুখ।