পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার গতকাল মঙ্গলবার সিনেটে বলেছেন, পাকিস্তান প্রথমে ভারতে আক্রমণ করবে না। তবে কোনো আঘাত এলে তার জবাব দেবে। তিনি বলেন, পেহেলগামে হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের অভিযোগ মোকাবিলায় পাকিস্তান যে কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিয়েছে, তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জানানো হয়েছে।

সিনেট অধিবেশনে পিপিপির সদস্য সৈয়দ মাসরুর আহসান পিটিআইয়ের প্রধান ইমরান খানকে সর্বদলীয় বৈঠকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানানোর পক্ষে সমর্থন দেন, যা পিটিআইয়ের পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হয়েছিল। পিটিআইয়ের আউন আব্বাস বলেন, নওয়াজ শরিফ, আসিফ আলী জারদারি ও ইমরান খান—এই তিন নেতার সম্মিলিত উপস্থিতি দেশে ঐক্যের বার্তা দেবে।

পিপিপির মাসরুর আহসান বলেন, সরকারকে নমনীয়তা দেখাতে হবে এবং বিরোধীদের কথা শুনতে হবে। উভয় পক্ষেরই অহংকার ত্যাগ করতে হবে।

এর আগে তিনজন সিনেটর—আল্লামা নাসির আব্বাস, গুরদীপ সিং ও দোস্ত মোহাম্মদ পিটিআই নেতা ইমরান খানের মুক্তির দাবি জানান।

তবে পিএমএল-এনের সিনেটর নাসির বাট বলেন, ইমরান খানকে আইনি লড়াই চালিয়ে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে হবে। তবেই তিনি মুক্তি পেতে পারেন।

পিটিআইয়ের সিনেটর সাইফুল্লাহ আবারও সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পেহেলগামে হামলার বিষয়ে নীরবতা নিয়ে সমালোচনা করেন এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বকে শক্ত প্রতিক্রিয়া জানানোর আহ্বান জানান।

সিনেটে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বলেন, পাকিস্তান ভারতকে উপযুক্ত জবাব দেবে, তবে প্রথমে হামলা করবে না। তিনি আরও বলেন, পেহেলগামে হামলার পর পাকিস্তান কূটনৈতিকভাবে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, চীন, যুক্তরাজ্য, তুরস্ক, আজারবাইজান, কুয়েত, বাহরাইন ও হাঙ্গেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।

ইসহাক দার বলেন, কাতারের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও সরাসরি কথা বলেছেন তিনি। পেহেলগামের ঘটনায় চীন ও তুরস্কের অবস্থানের প্রশংসা করেন ইসহাক দার।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তাদের পুরো পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেছি—ভারতের মনোভাব, ইতিহাস ও এর সম্ভাব্য উদ্দেশ্য কী হতে পারে, তা তুলে ধরেছি। গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী ভারত কিছু ধরনের উত্তেজনা তৈরি করতে পারে।’
ইসহাক দার ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার কথা উল্লেখ করেন। ওই হামলায় ভারতের ৪০ জন আধা সামরিক সদস্য নিহত হয়েছিলেন। ওই ঘটনার জন্য পাকিস্তানভিত্তিক একটি গোষ্ঠীকে দায়ী করা হয়েছিল। সেই ঘটনার পর ভারত সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে।

ইসহাক দার বলেন, ভারত দুই বছর ধরে সিন্ধু পানি বণ্টন চুক্তি বদলাতে চাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমার মতো অনেকেরই সন্দেহ—এই নাটক (পেহেলগাম হামলা) সেই চুক্তি স্থগিতের অজুহাত হতে পারে।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, পাকিস্তান এ হামলার সঙ্গে যুক্ত নয় এবং প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ স্বাধীন তদন্তের প্রস্তাব দিয়েছেন। যেহেতু পাকিস্তান আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জানে, তারা এ হামলার সঙ্গে জড়িত নয়।

ইসহাক দার সতর্ক করে দেন, পাকিস্তানের পানিতে ভারতের কোনো হস্তক্ষেপ বরদাশত করা হবে না। এটিকে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল বলে গণ্য করা হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পরর ষ ট রমন ত র প ট আইয় র ইমর ন খ ন ইসহ ক দ র

এছাড়াও পড়ুন:

ক্যাম্পাসে বিনা মূল্যে রাউটার ও ৫০০ টাকায় ১৫ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট দেবে বিটিসিএল, পাবেন যেভাবে

সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৫০০ টাকায় ১৫ এমবিপিএস (মেগাবিট পার সেকেন্ড) ইন্টারনেট দেবে; সঙ্গে বিনা মূল্যে রাউটার দেবে তারা।

প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব গতকাল মঙ্গলবার নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে বিটিসিএলের ইন্টারনেট–সেবার বিষয়ে একটি পোস্ট দেন।

সেখানে বিটিসিএলের নতুন প্যাকেজটি তুলে ধরেন বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ও হোস্টেলে শিক্ষার্থীদের ব্যবহারের জন্য বিশেষ প্যাকেজ দেবে বিটিসিএল।

জিপন নামে বিটিসিএলের প্যাকেজের আওতায় ক্যাম্পাস–১৫ নামের একটি ইন্টারনেট প্যাকেজ চালু করা হচ্ছে। এতে ১৫ এমবিপিএস গতিতে মাসিক ৫০০ টাকায় ক্যাম্পাসে ইন্টারনেট দেওয়া হবে। সেবাটি শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য হবে।

বিটিসিএল টেলিফোন সেবা পরিচালনাকারী সরকারি সংস্থা। ২০০৮ সালের আগে এটি বাংলাদেশ টেলিগ্রাফ অ্যান্ড টেলিফোন বোর্ড (বিটিটিবি) নামে পরিচিত ছিল। পরে একটি কোম্পানিতে পরিণত করা হয়, নাম হয় বিটিসিএল।

বিটিসিএল এখন টেলিফোন, ইন্টারনেট, ডোমেইন, ব্যান্ডউইডথ সঞ্চালন ইত্যাদি সেবা দেয়। অবশ্য তাদের ইন্টারনেট–সেবার গ্রাহক অনেক কম। বেসরকারি ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বা আইএসপিদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে বিটিসিএল।

জিপন ইন্টারনেট প্যাকেজের আওতায় তারা ১ লাখ ১৩ হাজার ১৭৬ গ্রাহককে সেবা দেয়।

নতুন প্যাকেজ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিটিসিএলের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নেটওয়ার্ক থাকা সাপেক্ষে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য বিটিসিএল ৫০০ টাকায় ১৫ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট দেবে। তাদের সেবা পেতে টেলিসেবা অ্যাপ বা মাইবিটিসিএল সাইটে গিয়ে নিবন্ধন (রেজিস্ট্রেশন) করে প্রয়োজনীয় নথিপত্র দিতে হবে। সাধারণত তিন দিনের মধ্যেই সংযোগ দেওয়া হয়।

সংযোগ দেওয়ার পর কোনো সমস্যা দেখা দিলে, সে ক্ষেত্রে তাদের হটলাইন ১৬৪০২ নম্বরে অথবা অ্যাপের মাধ্যমে অভিযোগ জানাতে হয়। ২৪ ঘণ্টা সেবা পাওয়ার বিষয়টি তাদের জনবল ও সক্ষমতার ওপর নির্ভর করে।

বিটিসিএল টেলিফোন লাইন ও আইএসপিদের মতো তারের মাধ্যমে ইন্টারনেট–সেবা দেয়। গ্রাহক চাইলে দুভাবেই ইন্টারনেট সংযোগ নিতে পারবেন।

বিটিসিএল জানায়, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকেই তারা ৫০০ টাকায় ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট–সেবা দিয়ে আসছে। ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য বলছে, ///////////১৫ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট দিতে তারা নিত ১৫ টাকা। ২০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট–সেবার মূল্য ১ হাজার ৫০ টাকা।////////////

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব ফেসবুক পোস্টে জানান, ইন্টারনেট ও টেলিফোনের সংযোগ নিলে মাসিক চার্জের সঙ্গে অতিরিক্ত ১০০ টাকা যোগ হবে। টেলিফোন কল চার্জের ক্ষেত্রে বিটিসিএলের ‘অফিশিয়াল চার্জ’ প্রযোজ্য হবে। এই সেবা শুধু প্রিপেইড সেবা হিসেবে পাওয়া যাবে এবং অফার সীমিত সময়ের জন্য। এলাকাভিত্তিক সংযোগ ফি প্রযোজ্য।

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব ফেসবুক পোস্টে বিটিসিএলের আরও সেবার ব্যাপারে জানান। তিনি বলেন, বিটিসিএল তাদের ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) শ্রেণিতে কেনা ব্যান্ডউইডথের অতিরিক্ত ৪৫ শতাংশ বেনাপোলে ও ৪০ শতাংশ প্রণোদনা হিসেবে সারা দেশে দেবে।

আইএসপি শ্রেণিতে অতিরিক্ত ৪০ শতাংশ, সরকারি বা করপোরেট শ্রেণিতে ইন্টারনেট গ্রাহকদের অতিরিক্ত ৪০ শতাংশ, শিক্ষা শ্রেণিতে অতিরিক্ত ৪০ শতাংশ ও ডেটা সেন্টার শ্রেণিতে অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ ব্যান্ডউইডথ প্রণোদনা হিসেবে দেবে বিটিসিএল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ