পুঁজিবাজারে আস্থা ফেরাতে একগুচ্ছ পদক্ষেপ নেবে বিএসইসি
Published: 30th, April 2025 GMT
শেয়ার সূচকের নিয়মিত পতনের মূল কারণ খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সেই সঙ্গে যেসব শেয়ারের অস্বাভাবিক বিক্রির চাপ দেখা যাচ্ছে, বাজার তদারকির মাধ্যমে সেসব শেয়ার চিহ্নিত করা হবে বলেও জানিয়েছে তারা।
দেশের পুঁজিবাজারে সাম্প্রতিক নিম্নমুখী প্রবণতার পরিপ্রেক্ষিতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। গতকাল মঙ্গলবার এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। সভায় পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে তাৎক্ষণিক কিছু কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী। এ ছাড়া সভায় বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক, বিএসইসির কমিশনার মু.
সভার সিদ্ধান্ত হয়, বিনিয়োগকারীদের জ্ঞান ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় টক শো ও বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। পাশাপাশি বিআইসিএম ও বিএএসএম পুঁজিবাজার-বিষয়ক শিক্ষণীয় ভিডিও তৈরি করবে। ফেসবুক ও ইউটিউবের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে পুঁজিবাজার সম্পর্কে ইতিবাচক বার্তা প্রচার ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সচেতন করা হবে।
প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির শেয়ার পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রমালিকানাধীন লাভজনক কোম্পানির শেয়ার অফলোড করা, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তিতে উৎসাহিত করা এবং টেক্সটাইল ও ওষুধ খাতের দেশী লাভজনক কোম্পানিগুলোর শেয়ার পুঁজিবাজারে নিয়ে আসা হবে।
যেসব কোম্পানি এখনো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি, তাদের তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত করার জন্য আকর্ষণীয় করছাড় দেওয়া হবে। পাশাপাশি ব্যাংকিং খাত থেকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের সুযোগ সীমিত করা এবং পুঁজিবাজারকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের প্রধান উৎস হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়, পুঁজিবাজারের উন্নয়নের স্বার্থে দেশের আর্থিক খাতের অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো হবে। সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা হবে। এ ছাড়া আসন্ন জাতীয় বাজেটে বিনিয়োগকারীদের জন্য করছাড়ের সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করা হবে। এর মধ্যে লভ্যাংশ আয়ের ওপর করছাড় এবং পুঁজিবাজারের বিনিয়োগের ওপর বিশেষ করছাড়ের সুবিধা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পদক ষ প ব এসইস করছ ড়
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে চীনা বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার আহ্বান
চীনের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার জন্য ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) ডিএসইর কৌশলগত অংশীদার চীনের শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে এ আহ্বান জানান তিনি। বিএসইসি ভবনে এ বৈঠকে বিএসইসির কমিশনার মো. আলী আকবর ও ফারজানা লালারুখ, ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আবুল কালাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
চীনের শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল ও ডিএসইর পরিচালক ওয়াং হাইয়ের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে ছিলেন শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জের আইটি বিভাগের সিনিয়র ম্যানেজার লিন লিন ঝেং চাও, লিগ্যাল অ্যাফেয়ার্স বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার জিয়ান ই এবং ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার হাও লিংইউ।
বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বলেছেন, শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ ও চীনের প্রতিনিধিদের শুধু ডিএসইর কৌশলগত অংশীদার বা শেয়ারহোল্ডার হিসেবে নয়, আমরা বন্ধু হিসেবে বিবেচনা করি। এই সম্পর্ককে আমরা বিশেষ গুরুত্বের সাথে মূল্যায়ন করি। বাংলাদেশ ও চীনের পারস্পরিক সহযোগিতায় অনেক কিছু অর্জন সম্ভব।
তিনি ডিএসই ও শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জের প্রতিনিধিদলের পারস্পরিক বোঝাপড়ার প্রশংসা করেন। সেই সঙ্গে ডিএসই ও শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জের মধ্যে কম্প্রিহেনসিভ গ্যাপ অ্যানালাইসিসের পরামর্শ দেন।
বিএসইসি চেয়ারম্যান আইটি ইনফ্রাস্ট্রাকচার, রিস্ক ম্যানেজমেন্ট, অংশীজনদের সঙ্গে সম্পর্ক ও সমন্বয় রক্ষা এবং প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্টের ক্ষেত্রে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ জানান। চীনের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার জন্য তিনি ডিএসই ও শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জকে অনুরোধ জানান।
চীনের শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ, সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ ও চীনের নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের অনেক কিছু শেখার আছে বলে উল্লেখ করেন বিএসইসির চেয়ারম্যান। বাংলাদেশের পুঁজিবাজার উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সকল ধরনের সহযোগিতা করতে বিএসইসি প্রস্তুত আছে বলেও জানান তিনি।
শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল ও ডিএসইর পরিচালক ওয়াং হাই বলেন, কোভিড-পরবর্তী সময়ে পাঁচ বছর পর আমরা বাংলাদেশে এসেছি এবং এর মাধ্যমে বিগত কিছু সময়ের যোগাযোগের গ্যাপ পূরণ হবে বলে আশা করছি। বাংলাদেশে চীনের জন্য ভালো পরিবেশ রয়েছে এবং পুঁজিবাজার ও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে দুই দেশের টিম ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে।
তিনি বিএসইসির পথনির্দেশনা ও সহযোগিতা প্রার্থনা করেন। বৈঠকে আলোচিত বিষয়গুলোতে যথাসম্ভব সহযোগিতার আশ্বাস দেন শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল। ক্রস বর্ডার রোড শো’র বিষয়ে ডিএসই উদ্যোগ গ্রহণ করলে শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ প্রয়োজনীয় সহায়তা করবে বলে জানান তিনি।
ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বৈঠকে পুঁজিবাজার ও ডিএসইর উন্নয়নের ক্ষেত্রে শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও রোডম্যাপের বিষয়ে আলোচনা করেন।
বৈঠকে ডিএসইর পক্ষ থেকে ভি-নেক্সট প্ল্যাটফর্ম ও চীনের বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে ক্রস বর্ডার রোড শোসহ পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ ও সহায়তার অনুরোধ জানানো হয়। এছাড়াও বৈঠকে পুঁজিবাজারের বিভিন্ন দিক এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়।
ঢাকা/এনটি/রফিক