বাঁশের ‘সিলিং গ্রাম’ চাঁদপুরের ছটাকি
Published: 30th, April 2025 GMT
মেঘনার পারে ছোট্ট ছটাকি গ্রাম। প্রায় সারা বছরই সেখানকার লোকজন থাকে নদীভাঙনের আতঙ্কে। নদীর স্রোতের সঙ্গেই তাঁদের ওঠাবসা, বেঁচে থাকার লড়াই, বসবাস। গ্রামটির অধিকাংশ লোকই পেশায় কৃষি ও মৎস্যজীবী। তবে গ্রামের শতাধিক লোক এখন আঁকড়ে আছে বাপ-দাদার পুরোনো একটি পেশা।
টিনের ঘরের জন্য বাঁশের তৈরি রংবেরঙের সিলিং (ছাউনি) বানিয়ে সেগুলো বিক্রি করে জীবিকা চালাচ্ছেন তাঁরা। তাঁদের তৈরি ওই ছাউনি যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়ও। ৮০ বছর ধরে বাঁশের এই বুননশিল্পকর্ম তৈরি ও বিক্রি করে টিকে আছে পরিবারগুলো।
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল ইউনিয়নে মেঘনা নদীর তীরে ওই ছটাকি গ্রামের অবস্থান। মুলি বাঁশ দিয়ে গ্রামবাসীর তৈরি ঘরের ছাউনি স্থানীয়ভাবে বেশ জনপ্রিয় ও সমাদৃত। এ কারণে স্থানীয় লোকজনের কাছে গ্রামটি ‘সিলিং গ্রাম’ নামেও পরিচিত। ঘরের সিলিংকে এলাকার লোকজন ‘কাড়’ হিসেবে চেনে।
সোমবার দুপুরে ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার বাজারের পাশে কিছুটা খোলা জায়গায় বাঁশ দিয়ে টিনের ঘরের সিলিং বানানোর কাজ চলছে। ১৫ থেকে ২০ জন কারিগর (শ্রমিক) বড়, ছোট ও মাঝারি আকারের ওই সিলিং বানাতে ব্যস্ত। কেউ মুলি বাঁশ সাজিয়ে রাখছেন, কেউ বাঁশ বেঁধে রং লাগাচ্ছেন। প্রবীণ দু-একজন বাসিন্দা চেয়ারে বসে ওই শিল্পকর্মের বুনন তদারক করছেন এবং কারিগরদের পরামর্শ দিচ্ছেন। তাঁদের পাশে থাকা বেশ কিছু লোক জটলা পাকিয়ে ওই শিল্পকর্ম দেখছেন। মুলি ও নলি বাঁশ, সুতা, সুতলি, গুনা, তারকাটা, দা, শাবল, রঙের পট, হাতুড়ি, করাতসহ সিলিং তৈরির নানা উপকরণ ব্যবহৃত হচ্ছে সেখানে। বুননশিল্প তৈরির এ মহাযজ্ঞে গোটা এলাকাই সরগরম।
কথা হয় সেখানকার বেশ কয়েকজন কারিগরের সঙ্গে। ওই গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা আবদুল মালেক প্রধান বলেন, প্রায় ৮০ বছর ধরে তাঁর গ্রামে মুলি বাঁশ দিয়ে টিনের ঘরের সিলিং বানানো ও বিক্রির কাজ চলছে। তিনি নিজেও প্রায় ৫০ বছর ধরে এ পেশায় যুক্ত। তাঁর পরিবারের আরও চারজন এখন এ কাজ করছেন। পৈতৃক এ পেশা টিকিয়ে রাখতে লড়াই করে যাচ্ছেন তাঁরা।
ওই গ্রামের খলিলুর রহমান, আবদুর রহমানসহ অন্তত পাঁচজন কারিগর বলেন, পাহাড়ি এলাকা থেকে মুলি ও নলি বাঁশ কিনে এনে বাঁশের সিলিং তৈরি করেন। মাঝারি আকারের একটি সিলিং বানাতে খরচ পড়ে ৩৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা। বিক্রি হয় ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকায়। বড় আকারের একটি সিলিং বানাতে খরচ পড়ে ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা। বিক্রি হয় ৭০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা। মুলি বাঁশের সিলিং টিনের ঘরকে ঠান্ডা রাখে। এ জন্য স্থানীয়দের কাছে সারা বছরই এগুলোর ভালো চাহিদা থাকে। চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়েও সেগুলো বিক্রি করেন। একেকটি সিলিং বানাতে ১০ থেকে ১৫ দিন লাগে। তৈরি সিলিং বিক্রি করে যা আয় হয়, তা দিয়েই সংসারের খরচ চলে। তাঁদের গ্রামের শতাধিক মানুষ পুরোনো এ পেশায় যুক্ত। এ কাজ করে তাঁদের সংসারে সচ্ছলতাও এসেছে। কারও কাছে হাত না পেতে তাঁরা স্বাবলম্বী।
ষাটনল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ফেরদাউস আলমের ভাষ্য, তাঁর ইউনিয়নে দীর্ঘদিন ধরে এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পকর্ম তৈরি হচ্ছে। এতে তিনি গর্বিত। পুরোনো এ পেশার মানোন্নয়নে তিনি সহযোগিতা ও সহায়তা করবেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, লোকজ ঐতিহ্য ও বাঁশের শিল্পকর্ম বাঁচিয়ে রাখতে ওই গ্রামের লোকেরা যেভাবে আন্তরিকভাবে কাজ করছেন, তা প্রশংসার দাবি রাখে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের যত দূর সম্ভব সহায়তা দেওয়া হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ ল পকর ম ট ন র ঘর ওই গ র ম
এছাড়াও পড়ুন:
বাঁশের ‘সিলিং গ্রাম’ চাঁদপুরের ছটাকি
মেঘনার পারে ছোট্ট ছটাকি গ্রাম। প্রায় সারা বছরই সেখানকার লোকজন থাকে নদীভাঙনের আতঙ্কে। নদীর স্রোতের সঙ্গেই তাঁদের ওঠাবসা, বেঁচে থাকার লড়াই, বসবাস। গ্রামটির অধিকাংশ লোকই পেশায় কৃষি ও মৎস্যজীবী। তবে গ্রামের শতাধিক লোক এখন আঁকড়ে আছে বাপ-দাদার পুরোনো একটি পেশা।
টিনের ঘরের জন্য বাঁশের তৈরি রংবেরঙের সিলিং (ছাউনি) বানিয়ে সেগুলো বিক্রি করে জীবিকা চালাচ্ছেন তাঁরা। তাঁদের তৈরি ওই ছাউনি যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়ও। ৮০ বছর ধরে বাঁশের এই বুননশিল্পকর্ম তৈরি ও বিক্রি করে টিকে আছে পরিবারগুলো।
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল ইউনিয়নে মেঘনা নদীর তীরে ওই ছটাকি গ্রামের অবস্থান। মুলি বাঁশ দিয়ে গ্রামবাসীর তৈরি ঘরের ছাউনি স্থানীয়ভাবে বেশ জনপ্রিয় ও সমাদৃত। এ কারণে স্থানীয় লোকজনের কাছে গ্রামটি ‘সিলিং গ্রাম’ নামেও পরিচিত। ঘরের সিলিংকে এলাকার লোকজন ‘কাড়’ হিসেবে চেনে।
সোমবার দুপুরে ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার বাজারের পাশে কিছুটা খোলা জায়গায় বাঁশ দিয়ে টিনের ঘরের সিলিং বানানোর কাজ চলছে। ১৫ থেকে ২০ জন কারিগর (শ্রমিক) বড়, ছোট ও মাঝারি আকারের ওই সিলিং বানাতে ব্যস্ত। কেউ মুলি বাঁশ সাজিয়ে রাখছেন, কেউ বাঁশ বেঁধে রং লাগাচ্ছেন। প্রবীণ দু-একজন বাসিন্দা চেয়ারে বসে ওই শিল্পকর্মের বুনন তদারক করছেন এবং কারিগরদের পরামর্শ দিচ্ছেন। তাঁদের পাশে থাকা বেশ কিছু লোক জটলা পাকিয়ে ওই শিল্পকর্ম দেখছেন। মুলি ও নলি বাঁশ, সুতা, সুতলি, গুনা, তারকাটা, দা, শাবল, রঙের পট, হাতুড়ি, করাতসহ সিলিং তৈরির নানা উপকরণ ব্যবহৃত হচ্ছে সেখানে। বুননশিল্প তৈরির এ মহাযজ্ঞে গোটা এলাকাই সরগরম।
কথা হয় সেখানকার বেশ কয়েকজন কারিগরের সঙ্গে। ওই গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা আবদুল মালেক প্রধান বলেন, প্রায় ৮০ বছর ধরে তাঁর গ্রামে মুলি বাঁশ দিয়ে টিনের ঘরের সিলিং বানানো ও বিক্রির কাজ চলছে। তিনি নিজেও প্রায় ৫০ বছর ধরে এ পেশায় যুক্ত। তাঁর পরিবারের আরও চারজন এখন এ কাজ করছেন। পৈতৃক এ পেশা টিকিয়ে রাখতে লড়াই করে যাচ্ছেন তাঁরা।
ওই গ্রামের খলিলুর রহমান, আবদুর রহমানসহ অন্তত পাঁচজন কারিগর বলেন, পাহাড়ি এলাকা থেকে মুলি ও নলি বাঁশ কিনে এনে বাঁশের সিলিং তৈরি করেন। মাঝারি আকারের একটি সিলিং বানাতে খরচ পড়ে ৩৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা। বিক্রি হয় ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকায়। বড় আকারের একটি সিলিং বানাতে খরচ পড়ে ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা। বিক্রি হয় ৭০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা। মুলি বাঁশের সিলিং টিনের ঘরকে ঠান্ডা রাখে। এ জন্য স্থানীয়দের কাছে সারা বছরই এগুলোর ভালো চাহিদা থাকে। চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়েও সেগুলো বিক্রি করেন। একেকটি সিলিং বানাতে ১০ থেকে ১৫ দিন লাগে। তৈরি সিলিং বিক্রি করে যা আয় হয়, তা দিয়েই সংসারের খরচ চলে। তাঁদের গ্রামের শতাধিক মানুষ পুরোনো এ পেশায় যুক্ত। এ কাজ করে তাঁদের সংসারে সচ্ছলতাও এসেছে। কারও কাছে হাত না পেতে তাঁরা স্বাবলম্বী।
ষাটনল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ফেরদাউস আলমের ভাষ্য, তাঁর ইউনিয়নে দীর্ঘদিন ধরে এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পকর্ম তৈরি হচ্ছে। এতে তিনি গর্বিত। পুরোনো এ পেশার মানোন্নয়নে তিনি সহযোগিতা ও সহায়তা করবেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, লোকজ ঐতিহ্য ও বাঁশের শিল্পকর্ম বাঁচিয়ে রাখতে ওই গ্রামের লোকেরা যেভাবে আন্তরিকভাবে কাজ করছেন, তা প্রশংসার দাবি রাখে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের যত দূর সম্ভব সহায়তা দেওয়া হবে।