তিন সাংবাদিকের চাকরিচ্যুতির ঘটনায় আমাদের সংশ্লিষ্টতা নেই: ফারুকী
Published: 30th, April 2025 GMT
সংবাদ সম্মেলনে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে প্রশ্ন করা এবং তার সঙ্গে সাংবাদিকদের বাহাস ঘিরে তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় সরকারের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করেছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) রাতে ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে এ কথা বলেন তিনি।
ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, “ম্যাস মার্ডার ডিনায়ালের একটা সুক্ষ্ম চেষ্টা থেকে কালকের প্রেস কনফারেন্সে যে কথাগুলা বলেছেন তিন জন সাংবাদিক, সেই কথাগুলা জুলাই দেখেছে এমন যেকোনো সেনসেটিভ মানুষকেই আহত করতে পারে। যে মা তার সম্তান হারিয়েছে মাত্র আট মাস আগে, যে সম্তান খুনির গুলিতে আহত হয়েছে, যে বোন-যে ভাই শহীদ হওয়ার হাত থেকে বেঁচে এসেছে, তাদের বুকে শেলের মতো বিঁধেছে সাংবাদিক তিন জনের কথা।”
জুলাইকে নাই করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, “ঘটনা থেকে মাত্র আট মাস দুরে দাঁড়িয়ে আমরা, খুনির বিচার হয় নাই এখনো। পশ্চিমে বিচার হওয়ার পরেও এখনো হলোকাস্ট ডিনায়াল মানুষের বুকে লাগে। আর কালকে যখন প্রশ্ন করা হলো, একজন খুনিকে খুনি বলা যাবে কিনা- এই প্রশ্ন জনতার জুলাইকেই বেমালুম নাই করে দেয়ার একটা চেষ্টা হিসাবেই দেখেছে সবাই।”
“প্রেস কনফারেন্সে তাদের কথাগুলা আমাকে বিস্মিত করলেও ধৈর্য নিয়ে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করেছি। তারপর মানুষ তাদের ক্ষোভ জানিয়েছে। এবং আজকে সন্ধ্যায় জানলাম চ্যানেলগুলা তাদের চাকরীচ্যুত করেছে। প্রত্যেক চ্যানেলেরই নিজস্ব এডিটোরিয়াল পলিসি থাকে। তারা সেই পলিসির আলোকে কী সিদ্ধান্ত নেবে সেটা তাদের ব্যাপার। তারপরও অনলাইনে কাউকে কাউকে একটা কথা বলার চেষ্টা করতে দেখছি যে আমাকে প্রশ্ন করায় চাকরী গেছে তাদের।হাস্যকর কথা। বিষয়টা যে আমি না, বিষয়টা যে জুলাই এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পলিসির ব্যাপার- এটাও তারা বুঝতে পারছে না।”
সংস্কৃতি উপদেষ্টা বলেন, “সবার উদ্দেশ্যে ফর দ্য রেকর্ড বলে রাখছি, তাদের চাকরীর ব্যাপারে আমাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনো রকম সংশ্লিষ্টতা নাই। এই বিষয়ে সংশয় থাকলে ওই চ্যানেলগুলার সঙ্গে যোগাযোগ করলেই সবাই সত্য জানতে পারবেন। অনুমানে দুইয়ে দুইয়ে চার না মেলানোই ভালো।”
কান চলচ্চিত্র উৎসবের ৭৮তম আসরে ‘আলী’ নামে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের যাওয়া উপলক্ষে ২৮ এপ্রিল সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিলেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি এবং ওই চলচ্চিত্রের কলাকুশলীদের বক্তব্যের পর প্রশ্নোত্তর পর্বে নানা বিষয়ে জানতে চান সাংবাদিকরা।
সেখানে সাংবাদিকদের থেকে প্রশ্ন আসে মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন করে আয়োজিত বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রার ইউনেস্কো স্বীকৃতি, শোভাযাত্রায় শেখ হাসিনার মুখাকৃতির আদলে মুখোশ এবং জুলাই-অগাস্ট অভ্যুত্থানের নিহতের সংখ্যা নিয়ে।
পাল্টাপাল্টি কথায় প্রশ্নোত্তরের এই পর্ব অনেকটা বাহাসে পরিণত হয়। শুরুতে বসে উত্তর দিলেও এক পর্যায়ে দাঁড়িয়েও কথা বলেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা।
সংবাদ সম্মেলনের প্রশ্ন ঘিরে ওই তিন টেলিভিশন সাংবাদিকের ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তাদের ছবিসহ পোস্ট করা হয় ‘জুলাই রেভ্যুলেশনারি অ্যালায়েন্স-জেআরএ’ নামে একটি ফেইসবুক পেইজে।
এর মধ্যে দীপ্ত টিভির সংবাদ কার্যক্রম বন্ধ এবং তিন সাংবাদিকে বরখাস্ত বা অব্যাহতি দেওয়ার খবর আসে। জেআরএ এর ফেইসবুক পেইজেও বরখাস্ত বা অব্যাহতির চিঠি প্রকাশ করা হয়।
পরে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সচিবালয়ে এক মতবিনিময় সভায় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, এক সাংবাদিক গণহত্যার পক্ষ নিয়ে প্রশ্ন করার প্রেক্ষিতে দীপ্ত টিভির সংবাদ কার্যক্রম তারা নিজেরাই বন্ধ করে দিয়েছে, সরকার এখানে কিছু বলেনি, কাউকে কলও দেওয়া হয়নি।
ওই ঘটনার জেরে দীপ্ত টিভির সিনিয়র ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট মিজানুর রহমানকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বিশেষ প্রতিনিধি ফজলে রাব্বীকে বরখাস্ত করার কারণ হিসেবে সংস্কৃতি উপদেষ্টার ব্রিফিং নিয়ে করা অভিযোগের কথা এটিএন বাংলা কর্তৃপক্ষ বললেও বরখাস্তের চিঠিতে অতীতে ‘অফিস শৃঙ্খলা পরিপন্থি’ কাজের উদাহরণ টানা হয়েছে।
এছাড়া, চ্যানেল আই অনলাইনের ফেইসবুক পেইজে এক পোস্টে সংস্কৃতি উপদেষ্টার সংবাদ সম্মেলনে ‘পেশাদারিত্ব প্রদর্শন না করার অভিযোগের’ তদন্ত এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক অর্থাৎ জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রফিকুল বাসারকে অব্যাহতি দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে।
ঢাকা/ইভা
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বরখ স ত উপদ ষ ট সব ক প
এছাড়াও পড়ুন:
শিক্ষকের স্কেলের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত চোখ, ৮ মাস ধরে শিশুটির চিকিৎসায় পরিবারের ছোটাছুটি
‘ছেলেরে সাজায়-গোছায় স্কুলে দিয়ে আসছিলাম। এক ঘণ্টা পরই স্কুল থেকে ফোন করে বলে, এখুনি আসেন। দৌড়ায় স্কুলে গিয়ে দেখি, চারদিকে নিস্তব্ধ। স্কুল ছুটি দিয়ে দিছে। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। একজন এসে বলল, রোহান চোখে ব্যথা পাইছে, প্রিন্সিপালের রুমে। সেখানে গিয়ে দেখি, আমার ছেলের চোখে ব্যান্ডেজ করে শোয়ায় রাখছে।’
২৮ এপ্রিল কুমিল্লার তিতাস উপজেলার নিজ বাড়িতে বসে এ কথাগুলো বলছিলেন ফারহান ইসলাম রোহানের (৭) মা মায়া আক্তার। প্রথম আলোর সঙ্গে কথাগুলো বলার সময় তাঁর চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছিল।
মায়া আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর স্কুলশিক্ষকের স্কেলের আঘাতে তাঁর ছেলের ডান চোখ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চিকিৎসার জন্য আট মাস ধরে ছেলেকে নিয়ে ছোটাছুটি করছেন তাঁরা। ছেলের চোখে দুবার অস্ত্রোপচার হয়েছে। চিকিৎসকেরা বলেছেন, আঘাতে তার ডান চোখের দৃষ্টিশক্তি চলে গেছে।
শিশুটির বাবা রবিউল ইসলাম, তিনি ওমানপ্রবাসী। রবিউল-মায়া দম্পতির সন্তান ফারহান ঘটনার সময় উপজেলার বাতাকান্দি এলাকার সেবা মাল্টিমিডিয়া স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত। এই তথ্য জানিয়ে মায়া বলেন, স্কুলটির সহকারী শিক্ষক রাহাতুল ইসলাম সৌরভ (২৫) ফারহানের দিকে স্কেল ছুড়ে মেরেছিলেন।
মায়া তাঁর তিন সন্তান নিয়ে স্বামীর পৈতৃক বাড়ি কুমিল্লার তিতাস উপজেলার বলরামপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ আকালিয়া গ্রামে থাকেন। ফারহানের যমজ বোন রয়েছে। এই বোন মাদ্রাসায় পড়ে। আর বড় বোন দশম শ্রেণির ছাত্রী।
ঘটনার বিষয়ে ফারহানের চাচা মোফাজ্জল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা জানতে পেরেছেন, শিক্ষক রাহাতুল ক্লাসে মুঠোফোনে কথা বলছিলেন। ফারহানসহ ক্লাসের শিশুশিক্ষার্থীরা হইচই করলে শিক্ষক প্রচণ্ড রেগে যান। তিনি প্রথমে স্কেল দিয়ে ফারহানের পিঠে বাড়ি দেন। এতে স্কেল ভেঙে যায়। শিক্ষক নিজের জায়গায় ফিরে যাওয়ার পরও হইচই বন্ধ হচ্ছিল না। তখন তিনি আরও রেগে যান। শিক্ষক ভাঙা স্কেলটি ফারহানের দিকে ছুড়ে মারেন। স্কেলটি ফারহানের ডান চোখে গিয়ে লাগে।
এ ঘটনায় গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর শিক্ষক রাহাতুলের বিরুদ্ধে তিতাস থানায় অভিযোগ করেন ফারহানের মা। অভিযোগে গুরুতর আঘাত করে চোখ নষ্ট করার কথা বলা হয়। অভিযোগটি মামলা হিসেবে লিপিবদ্ধ করেছে তিতাস থানার পুলিশ। দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ৩২৬ ধারায় করা এই মামলায় সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি রহিত করা-সংক্রান্ত নীতিমালা ২০১১’ জারি রয়েছে। এই নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসরণে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাগাদাও দিয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের চড়-থাপ্পড় দেওয়া, চুল টানা, কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখা, ‘নিল ডাউন’ করে রাখা, দেয়ালের দিকে মুখ করে দাঁড় করিয়ে রাখা, স্কেল বা বেত দিয়ে মারার মতো শারীরিক শাস্তি দেওয়ার ঘটনা ঘটে। আর ক্লাসের বাইরে দাঁড় করিয়ে সবার সামনে হাস্যাস্পদ করাসহ নানান মানসিক শাস্তি তো হরহামেশাই চলে।
রাজধানীর পুরান ঢাকার একটি ঐতিহ্যবাহী স্কুলে শিশুসন্তানেরা পড়ে জানিয়ে এক মা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর সন্তানেরা প্রায়ই অভিযোগ করে যে শিক্ষক বকা দেন। তারা একদিন স্কুলেও যেতে চাইছিল না। তিনি শিক্ষকের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে চেয়েছিলেন, কিন্তু শিক্ষক উল্টো ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান।
রাজধানীর খ্যাতনামা একটি স্কুলে মেয়েরা চুল ঠিকভাবে বেঁধে না গেলে বড় ক্লাসের শিক্ষার্থীদের দিয়ে মাথায় তেল ঢেলে দেওয়ার ‘রেওয়াজ’ আছে বলে অভিযোগ করেন আরেক অভিভাবক। অন্যদিকে মাদ্রাসার শিক্ষকেরা শাসনের নামে ছাত্রদের ভয়াবহভাবে মারধর করছেন—এমন ভিডিও প্রায়ই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হতে দেখা যায়।
এমন প্রেক্ষাপটে আজ ৩০ এপ্রিল পালিত হচ্ছে শিশুদের শারীরিক শাস্তি বিলোপের আন্তর্জাতিক দিবস। শিশুদের প্রতি সব ধরনের নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলাই দিবসটির লক্ষ্য।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) বাংলাদেশ পরিচালিত মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে ২০১৯ অনুসারে, জরিপের সময়ের মাসখানেক আগে ২ থেকে ১৪ বছর বয়সী প্রায় ৮৯ শতাংশ শিশু পরিবারের সদস্যদের হাতে শারীরিক শাস্তির শিকার হয়েছে। ৩০ শতাংশের শাস্তি গুরুতর ছিল। মা ও শিশুর লালন–পালনকারীদের মধ্যে ৩৫ শতাংশ মনে করেন, শিশুদের শারীরিক শাস্তি দেওয়ার দরকার আছে। জরিপে ৭০ হাজারের বেশি শিশু এবং সাড়ে ৫৩ হাজারের বেশি মা ও শিশু লালন–পালনকারী অংশ নিয়েছিলেন।
‘পুতের ভবিষ্যৎ-স্বপ্ন সব গেল’
ছেলে ফারহানের ঘটনা শুনে বাবা রবিউল দেশে এসেছিলেন। তিন মাস তিনি দেশে থেকে ছেলের চিকিৎসার জন্য ছোটাছুটি করেন।
শিশুদের পেটানো হয়—এমন স্কুলে কেন ছেলেকে ভর্তি করেছিলেন, এ নিয়ে এখন আফসোস মা মায়া আক্তারের। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার পুতের এত বড় ক্ষতি কইরা দিল। আমার পুতেরে শেষ কইরা ফালাইল। পুতের ভবিষ্যৎ, স্বপ্ন সব গেল।’
কথাগুলো বলতে গিয়ে কান্না থামাতে পারছিলেন না মায়া আক্তার। ছেলের চিকিৎসা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বড় আশা নিয়ে ভারত গেছিলাম। ডাক্তাররা বলছে, এই চোখ আর ভালো হবে না।’
পরিবারটি বলছে, ঘটনার পর এলাকার একজন চিকিৎসকের কাছে ফারহানকে নিয়ে গিয়েছিল স্কুল কর্তৃপক্ষ। ওই চিকিৎসক শিশুর অবস্থা ভালো না জানিয়ে ঢাকা নিয়ে যেতে বলেন। এরপর তাঁরা প্রথমে কুমিল্লায়, পরে ঢাকার ইস্পাহানী ইসলামিয়া চক্ষু ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল নিয়ে যান। সেখানে অস্ত্রোপচার হয়। পরে ঢাকার আরও দুটি হাসপাতালসহ চট্টগ্রামে তার চিকিৎসা করানো হয়। ভারতের হায়দরাবাদ ও চেন্নাইয়ের দুটি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারসহ দেড় মাস চিকিৎসা শেষে গত ফেব্রুয়ারিতে ফারহানকে নিয়ে দেশে ফেরেন মা। এখন দেশে চিকিৎসক দেখাচ্ছেন।
ফারহানের চিকিৎসার পেছনে এখন পর্যন্ত ১৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে বলে জানায় পরিবারটি। ফারহানকে গত ফেব্রুয়ারি মাসে উপজেলার দক্ষিণ আকালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়েছে। কিন্তু সে এখন এক চোখে কিছু দেখছে না। পড়তে গেলে তার মাথাব্যথা করে। তাই চিকিৎসকেরা তাকে পড়াশোনায় চাপ না দিতে বলেছেন।
ফারহানের মা মায়া আক্তার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এখন পর্যন্ত আসামি গ্রেপ্তার হলো না। তিনি এই ঘটনার বিচার চান।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তিতাস থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. কাউছার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আসামি পলাতক। আমরা তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি।’
স্কুল কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকের পরিবার যা বলছে
স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা মো. শামীম সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা মিটমাটের জন্য বলেছিলাম। চিকিৎসা আমরা করাব বলেছিলাম। কিন্তু ফারহানের পরিবার কোনো আলোচনায় বসতে রাজি নন। তাঁরা বলেছেন, সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা করাবেন। তো চিকিৎসা করাক।’
এটা কি মিটমাট করার বিষয়—এই প্রশ্ন করলে শামীম সরকার বলেন, ‘ছেলেটার চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। সে ক্ষতি তো আর পূরণ করা সম্ভব নয়।’
স্কুলের শিক্ষকেরা এভাবে শিক্ষার্থীদের মারধর করেন কি না জানতে চাইলে শামীম সরকার বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মারধর করা সম্পূর্ণ নিষেধ। এরপরও ওই শিক্ষক কেন এই কাজ করলেন, জানি না। ঘটনার পর তাঁকে বরখাস্ত করা হয়েছে।’
শিক্ষক রাহাতুলের মুঠোফোনে কল করলে এক নারী ধরেন। তিনি নিজের নাম বলেন শিল্পী আক্তার। পরিচয় দেন রাহাতুলের মা বলে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ছেলে ইচ্ছা করে তো কাজটা করে নাই। বাচ্চারা চিল্লাচিল্লি করছিল, রাগের মাথায় স্কেল ছুড়ে মারছে।’
শিল্পী আক্তার জানান, রাহাতুল কুমিল্লার হোমনা ডিগ্রি কলেজের ডিগ্রি শেষ বর্ষের ছাত্র। ঘটনার ১০ মাস আগে রাহাতুল ওই স্কুলে চাকরি নিয়েছিলেন। রাহাতুলের বাবা মো. মোতাকাব্বির স্থানীয় একটি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক।
ফারহানের চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া প্রসঙ্গে শিল্পী আক্তার বলেন, ‘চিকিৎসার জন্য খরচ লাগলে দেব। আমরা চাই, ঘটনাটির একটি মীমাংসা হোক। কিন্তু ওই পরিবার (ফারহানের) কোনো আলোচনাতেই বসতে চায় না।’
‘কোনো শিক্ষার্থীকে আঘাত করতে পারেন না শিক্ষক’
বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্ম ‘দ্য গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ টু এন্ড অল করপোরাল পানিশমেন্ট অব চিলড্রেন (জিআই)’ শিশুদের শারীরিক শাস্তির বিরুদ্ধে ২০০১ সালে প্রচারাভিযান শুরু করে। ২০২০ সাল থেকে এই প্ল্যাটফর্ম ‘এন্ড করপোরাল পানিশমেন্ট’ নামে কাজ করে। এই প্ল্যাটফর্মের প্রতিবেদনে বাংলাদেশ নিয়ে ২০২৪ সালের হালনাগাদ তথ্যে বলা হয়, স্কুলে শারীরিক শাস্তির বিরুদ্ধে জারি হওয়া নীতিমালাকে আইনে রূপ দেওয়া দরকার। আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া বাংলাদেশে বাড়ি, দিবাযত্নকেন্দ্র, অভিযুক্তদের রাখার প্রতিষ্ঠানে (শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র) এখনো শারীরিক শাস্তি নিষিদ্ধ হয়নি।
তিতাস উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমাইয়া মমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফারহানের ঘটনাটির পর প্রশাসনের তরফ থেকে তদন্ত কমিটি করে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এটা কিন্ডারগার্টেন স্কুল বলে প্রশাসনের এখানে সরাসরি হস্তক্ষেপের সুযোগ কম। অভিযুক্ত শিক্ষক ও তাঁর পরিবারকে ডাকা হয়েছিল। শিক্ষক আসেননি। কোনো শিক্ষক কোনো শিক্ষার্থীকে আঘাত করতে পারেন না।’