দুই বছর ধরে ঝুলছে যুবলীগ নেতা জামাল হত্যা মামলার তদন্ত
Published: 30th, April 2025 GMT
কুমিল্লায় যুবলীগ নেতা জামাল হোসেন হত্যার তদন্ত দুই বছর ধরে ঝুলছে। ২০২৩ সালের ৩০ এপ্রিল রাতে দাউদকান্দি উপজেলার গৌরিপুর পশ্চিম বাজারে তাঁকে গুলি করে হত্যা করে বোরকা পরা ৩ সন্ত্রাসী।
তিতাস উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জামাল হোসেন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার সব আসামিই জামিনে মুক্ত। গত বছরের জুলাই মাসে জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) বোরকা পরা তিন শুটারসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেয়। এতে আপত্তি জানিয়ে আদালতে আবেদন করেন জামালের স্ত্রী পপি আক্তার। পরে অধিকতর তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
মামলার বাদী পপি আক্তারের অভিযোগ, জামাল পরিকল্পিত হত্যার শিকার। তাঁকে হত্যার আগে আসামিদের একাধিক বৈঠক হয়। কিন্তু ডিবির চার্জশিটে প্রভাবশালী আসামিদের নাম রাখা হয়নি। তাঁর দাবি, হত্যার নেপথ্যে থাকা ব্যক্তিরাও আওয়ামী লীগের রাজনীতি করত। আসামিদের রক্ষা করতে তদবিরও করেছে আওয়ামী লীগের নেতারা। তিনি বলেন, ‘আমি নারী হয়ে একাই ৪ নাবালক সন্তান নিয়ে স্বামী হত্যার বিচারের জন্য দুই বছর ধরে লড়ছি। মামলায় গ্রেপ্তার ভাইস চেয়ারম্যান সোহেল শিকদার, শুটার দেলুসহ সব আসামিই জামিনে বেরিয়ে গেছে। শুটার কালা মনির ও আরিফ ধরাছোঁয়ার বাইরে।’ পিবিআই সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে জড়িত সবার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে বলেও জানান তিনি।
ডিবির ওসি রাজেস বড়ুয়ার দেওয়া চার্জশিটে থাকা আসামিরা হলো– তিতাস উপজেলার জিয়ারকান্দি গ্রামের শুটার আকাশ প্রকাশ আরিফ, কালা মনির ও দাউদকান্দির চরচারুয়া গ্রামের দেলোয়ার হোসেন ওরফে দেলু, জিয়ারকান্দি গ্রামের সুজন মিয়া, ইসমাইল, মো.
অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় তিতাস উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সোহেল শিকদার, জিয়ারকান্দি গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা বাদল রিয়াজ, একই গ্রামের আতিকুর রহমান শাকিল, দেবিদ্বারের নবীয়াবাদ গ্রামের যুবলীগ নেতা মো. মাসুদ ও ছাত্রলীগ নেতা মাজহারুল ইসলাম সৈকত।
বাদীর আইনজীবী মাসুদ সালাউদ্দিন বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর গ্রেপ্তার অনেক আসামি রিমান্ডে ও আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে হত্যার পরিকল্পনা, অস্ত্র সরবরাহ ও হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে অনেক তথ্য দেয়। কিন্তু ডিবির চার্জশিটে তার প্রতিফলন ঘটেনি। মামলাটি এখন তদন্ত করছে পিবিআই। এখন যেহেতু রাজনৈতিক চাপ নেই, তাই পিবিআই নেপথ্যে থাকা সবাইকে আইনের আওতায় আনবে বলে আশা তাঁর।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই কুমিল্লার পরিদর্শক মফজল হোসেন খান জানান, মামলার অনেক আসামি এখন দেশের বাইরে। পরিকল্পনা করেই শুটার ভাড়া করে জামালকে গুলি করে হত্যা করে। তদন্ত শেষ পর্যায়ে। আগামি দুই মাসের মধ্যে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হবে।
এর আগে ২০২৩ সালের ৩০ এপ্রিল রাতে দাউদকান্দি উপজেলার গৌরিপুর পশ্চিম বাজারে বোরকা পরা তিন সন্ত্রাসীর গুলিতে নিহত হন যুবলীগ নেতা জামাল হোসেন। এ ঘটনায় তাঁর স্ত্রী পপি আক্তার ৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পরিচয় ৭-৮ জনের বিরুদ্ধে দাউদকান্দি থানায় মামলা করেন। হত্যাকাণ্ডের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই গাড়িচালক সুমন হোসেনকে গ্রেপ্তার করলে রহস্যের জট খুলতে থাকে। পরে র্যাব ও পুলিশের অভিযানে ৬ মে ঢাকার রায়েরবাগ থেকে মামলার ৪ নম্বর আসামি সোহেল শিকদার ও মিরপুর থেকে ৩ নম্বর আসামি মো. ইসমাইল, চট্টগ্রাম থেকে ৭ নম্বর আসামি শাহ আলম ওরফে পা কাটা আলম এবং ৯ মে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে দেলোয়ার হোসেন দেলু গ্রেপ্তার হয়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন হত হত য য বল গ ন ত দ উদক ন দ উপজ ল র র তদন ত প ব আই
এছাড়াও পড়ুন:
এবার হাজার কোটি টাকার মুনাফার ক্লাবে সিটি ব্যাংক
ব্র্যাক ব্যাংকের পর দেশীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মধ্যে এবার হাজার কোটি টাকা মুনাফার মাইলফলক ছুঁয়েছে সিটি ব্যাংক। ব্যাংকটি গত বছর শেষে সমন্বিত মুনাফা করেছে ১ হাজার ১৪ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে ব্যাংকটির সমন্বিত মুনাফার পরিমাণ ছিল ৬৩৮ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকটির মুনাফা ৩৭৬ কোটি টাকা বা ৫৯ শতাংশ বেড়েছে।
সিটি ব্যাংকের আজ মঙ্গলবার পরিচালনা পর্ষদের সভায় গত বছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়। একই সভায় গত বছরের জন্য লভ্যাংশেরও ঘোষণা দেওয়া হয়। ব্যাংকটি গত বছরের জন্য ২৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। যার মধ্যে সাড়ে ১২ শতাংশ নগদ ও সাড়ে ১২ শতাংশ বোনাস। আজ পরিচালনা পর্ষদের সভা শেষে ব্যাংকটির মুনাফা ও লভ্যাংশের এই তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত বছর শেষে সিটি ব্যাংকের একক মুনাফা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮৫ কোটি টাকা। তবে ব্যাংকটির সহযোগী প্রতিষ্ঠানের লোকসানের কারণে বছর শেষে সমন্বিত মুনাফা কমে ১ হাজার ১৪ কোটি টাকায় নেমেছে। সহযোগী প্রতিষ্ঠানের লোকসানের পরও সিটি ব্যাংকের মুনাফা প্রথমবারের মতো হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। ব্যাংক খাতে এখন পর্যন্ত এটিই দেশীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মুনাফা। এর আগে গত সোমবার ব্র্যাক ব্যাংক গত বছর শেষে রেকর্ড ১ হাজার ৪৩২ কোটি টাকার সমন্বিত মুনাফার ঘোষণা দেয়। ব্যাংক খাতে ব্র্যাক ব্যাংকই প্রথম ব্যাংক হিসেবে হাজার কোটি টাকার মাইলফলক অতিক্রম করেছে। ব্র্যাক ব্যাংকের সেই ঘোষণার পরদিনই দ্বিতীয় ব্যাংক হিসেবে সিটি ব্যাংক মুনাফায় হাজার কোটি টাকার মাইলফলক ছাড়িয়ে যাওয়ার তথ্য জানায়।
ব্র্যাক ও সিটি ব্যাংক দুটিই বেসরকারি খাতের দেশীয় মালিকানাধীন শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই দুটি ব্যাংকই শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত। তালিকাভুক্তির শর্ত অনুযায়ী, গত বছর শেষে মুনাফার এই তথ্য প্রকাশ করেছে। সেই সঙ্গে লভ্যাংশেরও ঘোষণা দেওয়া হয়।
সমন্বিত আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সিটি ব্যাংক গত বছর ঋণের সুদ বাবদ আয় করেছে ৪ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে ব্যাংকটির সুদ বাবদ আয় ছিল ৩ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকটির ঋণের সুদ বাবদ আয় ১ হাজার ১১৮ কোটি টাকা বা ৩৩ শতাংশ বেড়েছে। ঋণের সুদ আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি আমানতের সুদ বাবদ ব্যয়ও বেড়েছে ব্যাংকটির। সে ক্ষেত্রে ঋণের সুদ বাবদ আয়ের চেয়ে আমানতের সুদ বাবদ ব্যয় বেড়েছে বেশি। গত বছর সিটি ব্যাংক আমানতের সুদ বাবদ খরচ করেছে ৩ হাজার ৫৬ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে যার পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৭৯৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে আমানতের সুদ ব্যয় বেড়েছে ১ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা বা ৭০ শতাংশ।
আমানতের সুদ ব্যয় বৃদ্ধির পরও ব্যাংকটি রেকর্ড মুনাফা করেছে। কারণ, ব্যাংকটির বিনিয়োগ থেকে আয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। গত বছর শেষে সরকারি ট্রেজারি বিল বন্ডসহ অন্যান্য খাতের বিনিয়োগ থেকে সিটি ব্যাংক আয় করেছে ১ হাজার ৬৯১ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে যার পরিমাণ ছিল ৪৯১ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে এই খাত থেকে সিটি ব্যাংকের আয় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা বা প্রায় ২৫০ শতাংশ বেড়েছে। এ ছাড়া কমিশন, এক্সচেঞ্জ ও ব্রোকারেজ মাশুল বাবদ আয়ও ১০০ কোটি টাকার বেশি বেড়েছে। গত বছর এই খাত থেকে সিটি ব্যাংক আয় করেছে ৮৬৯ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে যার পরিমাণ ছিল ৭৩৩ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে এই খাত থেকে ব্যাংকটির আয় ১৩৬ কোটি টাকা বেড়েছে। যার ফলে বছর শেষে হাজার কোটি টাকা মুনাফা ছাড়িয়েছে ব্যাংকটির।
সিটি ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, গত বছর ব্যাংকটির আমানত বেড়েছে ১২ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা, যা আগের বছরের চেয়ে ৩১ শতাংশ বেশি। একইভাবে ঋণ বেড়েছে ৪ হাজার ৮৩১ কোটি টাকা বা ১২ শতাংশ। গত বছর সিটি ব্যাংক সরকারি বিল-বন্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদি সিকিউরিটিজে ১২ হাজার ৪৮৮ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে, যা আগের বছরের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি। ২০২৩ সালে সরকারি বিভিন্ন সিকিউরিটিজে সিটি ব্যাংকের বিনিয়োগ ছিল ৬ হাজার ১৫০ কোটি টাকা।
রেকর্ড মুনাফার বিষয়ে জানতে চাইলে সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘মানুষ আমাদের ওপর আস্থা রেখে আমানত রেখেছে। গত বছর আমাদের আয়-ব্যয়ের অনুপাত ৬০ শতাংশ থেকে কমে ৪২ শতাংশে নেমে এসেছে। ফলে মুনাফায় বড় উল্লম্ফন ঘটেছে। আমরা কর্মীদের বেতন বাবদ ৩০০ কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়েছি, যা কর্মীদের উৎসাহিত করেছে। আমাদের পরিচালনা পর্ষদ সৎ ও মেধাবী। এ ছাড়া আমাদের ব্যাংকের সুশাসন ঈর্ষণীয় পর্যায়ের। এসব কারণে গত বছর শেষে আমরা হাজার কোটি টাকার বেশি রেকর্ড মুনাফা করতে পেরেছি।’