সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করার তাগিদ
Published: 30th, April 2025 GMT
প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনকে জাতীয় নির্বাচনের সময় ধরে সারা দেশে পুলিশকে এখন থেকে প্রস্তুতির তাগিদ দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার পুলিশ সপ্তাহের অনুষ্ঠানে এমন তাগিদ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে মাঠপর্যায়ের পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ও নিরপেক্ষ থাকার প্রতিও গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
পুলিশ সপ্তাহের তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের প্রথম দিন মঙ্গলবার বিভিন্ন ধাপের আলোচনায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রসঙ্গ এসেছে।
এদিন সকালে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে পুলিশ সপ্তাহ-২০২৫–এর উদ্বোধনকালে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রস্তুতির ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে পুলিশ সদস্যদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। মনে রাখবেন, কোনো ব্যক্তি যদি অন্যায় বা অনিয়মের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়, সেই ব্যক্তির দ্বারা ন্যায় প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। সুতরাং কারও দ্বারা ব্যবহৃত হবেন না।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) দিয়ে কাজ করাতে হিমশিম খাচ্ছেন বলেও উল্লেখ করেন এসপিদের কেউ কেউ। পছন্দের ব্যক্তিকে থানার ওসি করার জন্য রাজনৈতিক চাপের কথাও বলেছেন একাধিক কর্মকর্তা।উদ্বোধনসহ দিনের প্রথমার্ধের অনুষ্ঠান শেষে বেলা আড়াইটায় পুলিশ সুপার (এসপি) থেকে তদূর্ধ্ব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি কর্মশালা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কর্মশালায় বিভিন্ন জেলার এসপিরা কাজের অভিজ্ঞতা ও নানা চ্যালেঞ্জের কথা বলেন। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) দিয়ে কাজ করাতে হিমশিম খাচ্ছেন বলেও উল্লেখ করেন এসপিদের কেউ কেউ। পছন্দের ব্যক্তিকে থানার ওসি করার জন্য রাজনৈতিক চাপের কথাও বলেছেন একাধিক কর্মকর্তা।
চাপমুক্ত হয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন অন্তরায়ের কথা বলতে গিয়ে একাধিক কর্মকর্তা জানান, পেশাদারত্বের বাইরে গিয়ে মাঠপর্যায়ের পুলিশের অনেকের মধ্যে রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বাড়তি সখ্য তৈরির প্রবণতা রয়েছে। এতে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
পুলিশের বিভাগীয় হাসপাতালে জনবল বৃদ্ধি ও আধুনিক চিকিৎসাসরঞ্জাম সরবরাহ ও রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালকে মেডিকেল কলেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠার দাবি জানাবে পুলিশ।মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা রাজনৈতিক দলমুখী না হয়ে যেন পেশামুখী হন, সে জন্য করণীয় নিয়েও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। এ জন্য পুলিশ সপ্তাহের শেষ দিনের অনুষ্ঠানের কোনো এক পর্যায়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে কীভাবে যুক্ত করা যায়, তা নিয়েও ভাবছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
পুলিশ সপ্তাহের অনুষ্ঠানে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম তাঁর বক্তব্যে ও নির্দেশনায় সব স্তরের পুলিশ সদস্যদের পেশাদারত্ব ও সততার সঙ্গে কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশ যাতে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারে, সে জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে বলেছেন তিনি।
মানুষ আর দলীয় পুলিশ চায় নাপুলিশ সপ্তাহের প্রথম দিনের আলোচনায় স্বতন্ত্র পুলিশ কমিশন গঠনের দাবি উঠে এসেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে। এদিন সকালে প্রধান উপদেষ্টার সামনে মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের মধ্যে দুজন কথা বলার সুযোগ পেয়েছেন। এঁদের একজন পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো.
অনুষ্ঠানে এএসপি মো. আল আসাদ বলেন, সাবেক স্বৈরাচারী সরকার পুলিশকে দলীয় কর্মীর মতো ব্যবহার করেছে। যার ফলে জনগণের সঙ্গে পুলিশের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। পুলিশ বাহিনীকে দলীয় কর্মীর মতো ব্যবহারের সুযোগ বন্ধ করার সময় এখনই। জুলাই বিপ্লবের অংশীদারদের কেউই, এমনকি সাধারণ জনগণও আর দলীয় পুলিশ চান না, তারা নিরপেক্ষ ও নতুন বাংলাদেশের পুলিশ চান।
মো. আল আসাদ বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে পুলিশ সংস্কার কমিশনের কাছে একটি নিরপেক্ষ এবং প্রভাবমুক্ত ‘পুলিশ কমিশন’ গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। সংস্কার কমিশন এ বিষয়ে নীতিগতভাবে ঐকমত্য পোষণ করলেও আরও পর্যালোচনা প্রয়োজন বলে বিষয়টি উপেক্ষা করেছে। এ ছাড়া জাতীয় ঐকমত্য কমিশনেও পুলিশ–সংক্রান্ত কোনো বিষয় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। পুলিশকে সঠিক পথে পরিচালনার জন্য স্বতন্ত্র পুলিশ কমিশন গঠনের উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান এই কর্মকর্তা।
‘পুলিশ সপ্তাহ ২০২৫’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে পুলিশ সদস্যদের পদক প্রদান করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনসেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর মকর ত দ র ম ঠপর য য় র র অন ষ ঠ ন র জন ত ক পর য য় র ক জ কর র জন য প রস ত
এছাড়াও পড়ুন:
রাজধানীতে পরপর তিন দিনে তিন জনসমাবেশ
আগামীকাল বৃহস্পতিবার ১ মে থেকে শুরু হচ্ছে তিন দিনের সরকারি ছুটি। এই তিন দিনে রাজধানী ঢাকায় তিনটি দল ও সংগঠন পৃথক জনসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এসব কর্মসূচি ঘিরে ছুটির তিন দিনে রাজধানীতে ব্যাপক জনসমাগমের সম্ভাবনা রয়েছে।
১ মে বৃহস্পতিবার ঢাকার নয়াপল্টনে শ্রমিক সমাবেশ করবে বিএনপি। পরদিন ২ মে শুক্রবার আওয়ামী লীগের বিচারসহ বিভিন্ন দাবিতে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটকে সমাবেশ করবে। ৩ মে শনিবার নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিলসহ বিভিন্ন দাবিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করবে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।
ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষে আগামীকাল বেলা দুইটায় ঢাকার নয়াপল্টনে শ্রমিক সমাবেশ করবে বিএনপি। এতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রধান অতিথি থাকবেন। তিনি লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হবেন। এ ছাড়া বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা সমাবেশে বক্তব্য দেবেন। এই সমাবেশ আয়োজনে যুক্ত রয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের প্রধান উপদেষ্টা নজরুল ইসলাম খান ও শ্রমিক দলের প্রধান সমন্বয়ক শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। ঢাকা মহানগরের বাইরে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইলসহ আশপাশের জেলা থেকে বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা সমাবেশে অংশ নেবেন।
নজরুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি, সমাবেশটি অনেক বড় করার। আশা করি, আপনারা সেদিন উপস্থিত থাকলে দেখতে পাবেন।’
পরদিন শুক্রবার বেলা তিনটায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটকে সমাবেশ করবে গণ–অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের দল এনসিপি। দলটির ঢাকা মহানগর শাখার উদ্যোগে এই সমাবেশ হবে।
এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, এই কর্মসূচি থেকে গণহত্যার দায়ে ফ্যাসিস্ট দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার, এর রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করা এবং নিবন্ধন বাতিল করার দাবি জোরালোভাবে জানানো হবে। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের গত ১৫ বছরের শাসনামলে গুম-খুনের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি ২০১৩ সালের শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ড, জুলাই-আগস্ট গণহত্যা ও ২০২১ সালে নরেন্দ্র মোদির আগমনবিরোধী আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডের মতো বড় হত্যাকাণ্ডগুলোর বিচারও দাবি করা হবে।
২১ এপ্রিল থেকে দলগতভাবে আওয়ামী লীগের বিচার, দলটির নিবন্ধন বাতিল ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানায় বিক্ষোভ, সমাবেশ ও মশালমিছিলের মতো কর্মসূচি করছে এনসিপি। শুক্রবারের সমাবেশে ১০ থেকে ১৫ হাজার মানুষের জমায়েত হতে পারে বলে জানান এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব জয়নাল আবেদীন শিশির।
এনসিপির সমাবেশের পরদিন শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশের দিকে অনেকের দৃষ্টি। এক মাস ধরে সংগঠনটি সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সংগঠনটি আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে, ‘নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের কোরআন-সুন্নাহবিরোধী প্রতিবেদনসহ কমিশন বাতিল, সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্বহাল, ফ্যাসিবাদের আমলে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও শাপলা চত্বরে সংঘটিত গণহত্যাসহ সব হত্যার বিচার এবং ফিলিস্তিন ও ভারতে মুসলিম গণহত্যা ও নিপীড়ন বন্ধের’ দাবিতে এই মহাসমাবেশ ডাকা হয়েছে। এ উপলক্ষে গতকাল সকালে খিলগাঁও জামিয়া ইসলামিয়া মাখজানুল উলুম মাদ্রাসায় মহাসমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির সভা হয়।
হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় সংগঠনের কেন্দ্রীয়, মহানগর ও আঞ্চলিক কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন। পরে বেলা ১১টায় মহাসমাবেশের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে নেতারা সংবাদ সম্মেলন করেন।
হেফাজতে ইসলামের দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন, এই মহাসমাবেশে তাঁদের মুখ্য দাবি হবে মূলত চারটি। এর মধ্যে প্রধান দাবি হচ্ছে, অনতিবিলম্বে হেফাজত নেতাদের নামে থাকা সব মামলা প্রত্যাহার। কারণ, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার এই মামলাগুলোকে পুঁজি করে হেফাজতকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছে। ভবিষ্যতে যে সরকার আসবে, তারাও একই কাজ করতে পারে। তাই মামলা প্রত্যাহার হচ্ছে তাঁদের মুখ্য দাবি। সংগঠনটির হিসাবমতে, সারা দেশে হেফাজত নেতাদের নামে প্রায় ৩০০টি মামলা রয়েছে।
এ ছাড়া ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হত্যাকাণ্ড, ২০২১ সালের মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফর ঘিরে হত্যাকাণ্ড, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার। এরপর যথাক্রমে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিল, সংবিধানের প্রস্তাবনায় আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্বহাল করা, ফিলিস্তিন ও ভারতে মুসলিম গণহত্যা ও নিপীড়ন বন্ধের দাবিগুলো থাকবে।
উল্লেখ্য, এক যুগ আগে ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে যৌথ বাহিনীর রক্তক্ষয়ী অভিযানের ঘটনা ঘটে।
আগামী ৫ মে সোমবার সরকারি কর্মদিবস। সপ্তাহের মাঝখানে রাজধানীতে সমাবেশ করলে বড় ধরনের জনদুর্ভোগে সৃষ্টি হয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সে জন্য হেফাজতে ইসলাম ছুটির দিনে মহাসমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ছাড়া হেফাজত ৫ মে বিশেষ দিবস হিসেবে পালন করে না। এ ধরনের দিবস পালন ইসলামের নীতিবিরোধী। তাই সবকিছু বিবেচনা করে ৩ মে মহাসমাবেশ করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সংগঠনের নেতাদের নামে থাকা অতীতের মামলা-মোকদ্দমাগুলো প্রত্যাহারে সরকারের ওপর চাপ তৈরি, একই সঙ্গে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক প্রভাব দৃষ্টিগ্রাহ্য করারও একটি লক্ষ্য রয়েছে।