তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম বলেছেন, সাংবাদিকদের জন্য সুরক্ষা আইনের পাশাপাশি সাংবাদিকতার দায়িত্ব ও নৈতিকতা বিষয়ে আইন হওয়া প্রয়োজন। কোনো সাংবাদিক দায়িত্বশীল ও পেশাদার না হলে তিনি আইনি সুরক্ষা পেতে পারেন না।

মঙ্গলবার তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘ফ্যাসিবাদের পনেরো বছরে গণমাধ্যমের বাস্তবতা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তথ্য উপদেষ্টা এ কথা বলেন। মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।

বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে গণমাধ্যমের ভূমিকার সমালোচনা করেন তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তিনি বলেন, ওই সময় অনেক সাংবাদিক ভয়ে নয়, বরং লোভে পড়ে ফ্যাসিবাদী সরকারের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন। তাঁরা সাংবাদিকতার চেয়ে শেখ পরিবারের ভাবমূর্তি রক্ষায় অনেক বেশি তৎপর ছিলেন। ফ্যাসিবাদী সরকারের দালালি করে অনেক সাংবাদিক বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। সাংবাদিকদের আদর্শিক পরিবর্তন প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, দীর্ঘদিন ফ্যাসিবাদের মধ্যে থাকার ফলে অনেক সাংবাদিকের মধ্যে একধরনের সেলফ-সেন্সরশিপ (স্ব–আরোপিত নিয়ন্ত্রণ) কাজ করছে। এ অবস্থা দ্রুত পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন।

সমাজে গণমাধ্যমের প্রভাবের কথা উল্লেখ করে মাহফুজ আলম বলেন, সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের অনেক সতর্ক থাকা প্রয়োজন। অসত্য সংবাদ প্রকাশের ফলে অনেকের জীবন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি বলেন, গণমাধ্যমে বিদ্যমান সংকট সমাধানে সরকার কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক ঐকমত্য ছাড়া গণমাধ্যমের উন্নয়ন সম্ভব নয়। তিনি গণমাধ্যমে ইতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টিতে কাজ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানান।

মতবিনিময় সভায় গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ বলেন, এখন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরকারের পক্ষ থেকে টেলিফোন করে চাপ দেওয়া হচ্ছে না। এটি গণমাধ্যমের জন্য ইতিবাচক দিক। সাংবাদিকতার অপব্যবহারকে ‘দুর্বৃত্তায়ন’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, সাংবাদিকতার অপব্যবহার অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। তিনি গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।

মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ–আল মামুন। মূল প্রবন্ধে তিনি বিগত সরকারের আমলে গণমাধ্যমের অপেশাদার আচরণের চিত্র তুলে ধরেন। ‘শিকারি সাংবাদিকতার’ সমালোচনা করে তিনি বলেন, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সময় শিকারি সাংবাদিকতার মাধ্যমে মানুষকে অপরাধী বানিয়ে শাস্তি দেওয়া হতো। এক ধরনের ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করাই ছিল শিকারি সাংবাদিকতার মূল উদ্দেশ্য। গত ১৫ বছর সরকার কীভাবে গণমাধ্যমকে প্রভাবিত করেছে, সে বিষয়েও মূল প্রবন্ধে আলোকপাত করা হয়।

মতবিনিময় সভায় অংশ নিয়ে সাংবাদিকেরা ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর নিপীড়নের চিত্র তুলে ধরেন। তাঁরা গণমাধ্যমকে স্বাধীন ও শক্তিশালী করতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন।

মতবিনিময় সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ, বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আবদুল্লাহ, তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো.

কাউসার আহাম্মদ, প্রধান তথ্য অফিসার মো. নিজামূল কবীরসহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের সাংবাদিক এবং সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব দ কত র উপদ ষ ট সরক র র অন ক স ক জ কর র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

ইমরান খানকে মুক্তি দিয়ে সর্বদলীয় বৈঠকের দাবি পিটিআইয়ের

জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কার্যত চরমে পৌঁছেছে। এমন অবস্থায় কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে প্রধান বিরোধী দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। একই সঙ্গে ইমরানকে রেখে সর্বদলীয় বৈঠক আয়োজনের দাবিও করেছে দলটি।

মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যম ডন বলছে, পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলার পর পাকিস্তান-ভারত উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় বিরোধী দল পিটিআই তাদের দলনেতা ইমরান খানের মুক্তির দাবি জানিয়েছে, যাতে তিনি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় অংশ নিতে পারেন। সোমবার পাকিস্তানের সিনেটে পিটিআই এই দাবি জানায়। একই সঙ্গে দলটি অবিলম্বে একটি সর্বদলীয় সম্মেলন (মাল্টি-পার্টি কনফারেন্স) আয়োজনের আহ্বানও জানিয়েছে, যেখানে ইমরান খানের উপস্থিতি নিশ্চিত করার দাবিও করা হয়েছে।

সিনেটে পিটিআইয়ের পার্লামেন্টারি নেতা সিনেটর আলি জাফর বলেন, রাজনৈতিক মতপার্থক্য একপাশে রেখে এখন দেশের স্বার্থে ঐক্য জরুরি। বর্তমান পরিস্থিতিতে সর্বদলীয় বৈঠকই একমাত্র সঠিক পদক্ষেপ। ইমরান যদি এমন বৈঠকে অংশ নিতে পারেন, তাহলে তা বিশ্বকে একটি স্পষ্ট বার্তা দেবে, পাকিস্তান ঐক্যবদ্ধ, আর এতে দেশের অবস্থান আরও শক্তিশালী হবে।

আলি জাফর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারকে ‘নাৎসি মানসিকতার’ সঙ্গে তুলনা করে বলেন, ভারত মিথ্যা অভিযোগে পাকিস্তানকে দোষারোপ করছে। অথচ পাকিস্তান নিজেই সন্ত্রাসবাদের শিকার।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ