সন্তান যে কতটা প্রিয় তা ভাবে ও ভাষায় প্রকাশ করার ক্ষমতা অধিকাংশ মানুষেরই থাকে না। সন্তান সব মা-বাবার জীবনে সবচেয়ে বড় সম্পদ। জন্মসূত্রে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর, গভীর, ভালোবাসা, স্নেহ, স্বার্থহীন, নির্ভেজাল এ সম্পর্ক তৈরি হয়।
ছোট্ট শিশু থেকে বেড়ে ওঠার সময়টায় মা-বাবার সঙ্গে সন্তানের সম্পর্ক আনন্দের, মজার, কষ্টের, দুঃখের, হাসির– মোট কথা ঘটনাবহুল ও স্মৃতিময়। মা-বাবা সন্তানের জন্য বহুমুখী সম্পর্ক পালন করেন। কখনও বন্ধু, শিক্ষক, সাহায্যকারী, সহমর্মী, অভিভাবক, ভ্রমণসঙ্গী হয়ে। এ যাত্রা মোটেও সহজ নয়। সামান্য কারণে সন্তানের সঙ্গে তৈরি হতে পারে দূরত্ব ও ভুল বোঝাবুঝি।
সন্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক ও বন্ধুত্ব বজায় রাখার জন্য মা-বাবার কী করা উচিত– জানতে চেয়েছিলাম সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের মনোচিকিৎসক বাপ্পা আজিজুলের কাছে। তিনি জানান, ‘প্যারেন্টিং বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোনো কোর্স বা ডিগ্রি নেই। প্যারেন্টিং শিশুর বয়স অনুসারে পরিবর্তিত হয়। মোটামুটি ৩টি বয়সে ভাগ করে মা-বাবার শিশুর সঙ্গে আচরণ ও ব্যবহারে ভিন্নতা আনা যেতে পারে।’
১.
২. ১৩-১৯ বছর বয়সীদের জন্য টিন প্যারেন্টিং।
৩. ২০ বছর থেকে শুরু করে ৩০-৩২ বছর পর্যন্ত অ্যাডাল্ট প্যারেন্টিং।
একেক বয়সী সন্তানের জন্য পিতামাতার ভূমিকা একেক রকম হয়। সন্তানকে আদর, সোহাগ, কোলে-পিঠে নেওয়া, চুমু, স্নেহ, চক্ষুশীতল করে গড়ার মূল বয়স ১০ বছর বয়স পর্যন্ত। তাই বলে আপনার যে বাচ্চার বয়স ১০ পেরিয়ে গেছে তার জন্য হতাশ হবেন না, তার সঙ্গে দূরত্ব বাড়াবেন না। এখনই পজিটিভ প্যারেন্টিং শুরু করুন। সব ঠিক হয়ে যাবে। সন্তান আপনাকে বন্ধু ভাববে। দূরত্ব যাবে ঘুচে। সাধারণত প্যারেন্টিং চার ধরনের–
ডিকটোরিয়াল বা একনায়কতন্ত্র: এমন ধরনের পিতামাতার ইচ্ছা পালন করতে হবে। সন্তান নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।
অথরিটিটিভ বা কর্তৃত্বশীল: এমন ধরনের মা-বাবা সন্তানের সঙ্গে বিভিন্ন চুক্তিতে আবদ্ধ হন। যেমন– তুমি যদি আমাদের কথা শোন তবে আমরা তোমাকে এ সুযোগ-সুবিধা দেব।
পারমিসিভ বা অনুমতিসূচক: এমন ক্ষেত্রে মা-বাবা সন্তানকে অবাধ স্বাধীনতা বা ছাড় দেন; যা ইচ্ছা করলেও খারাপ কিছু যাতে না করে সেই পরামর্শ দেওয়া থাকে।
ডেমোক্রেটিক বা গণতান্ত্রিক: এ পদ্ধতিতে পিতামাতা সন্তানের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। প্যারেন্টিংয়ের ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি এখন সারাবিশ্বে সমাদৃত হচ্ছে।
কিশোর-কিশোরীদের ওপর অতিরিক্ত ও অযাচিত শাসন চাপিয়ে দেবেন না। এ বয়স বুঝিয়ে বলার। যেসব মা-বাবা বাচ্চাদের লেখাপড়ার ফলাফল আশানুরূপ না হলে বকা দেন বা পড়াশোনাকেই সাফল্যের একমাত্র উপায় মনে করেন তাদের বলছি–
১. সন্তানকে অভয় দিন। আশ্বস্ত করুন; যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। এখন কানের কাছে বারবার একই কথা বলতে থাকলে হিতে বিপরীত হতে পারে। আপনার শীতল গলা, অকৃত্রিম ভালোবাসা, মানসিক সাপোর্ট তার আত্মপর্যালোচনার জন্য যথেষ্ট হবে।
২. সন্তানকে পর্যাপ্ত সময় দিন। সময় দেওয়া মানে সন্তানের পেছনে গোয়েন্দাগিরি করা নয়। সন্তানের বন্ধু হোন। ওর চোখে আদর্শ মা-বাবা হোন। মানসম্মত সময় দিন। সন্তানের সঙ্গে খেলুন। সৃজনশীল ও বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত থাকুন। ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে গল্প করুন।
৩. সন্তানের সঙ্গে কথা বলুন। ওদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। তাহলে মা-বাবার সঙ্গে গ্যাপ (জেনারেশন গ্যাপ) কমে আসবে। কোনো বিষয়ে সমস্যা থাকলে সেটিও জানা যাবে। আপনার সন্তানের মনে সাহস ও আত্মবিশ্বাস তৈরি হবে। মন হালকা হবে। ইমোশন ভেন্টিলেশন হবে।
৪. সন্তানের লক্ষ্য নির্ধারণে সহযোগী হোন। নিজের সিদ্ধান্ত সন্তানের কাঁধে জোর করে চাপিয়ে দেবেন না। রেজাল্ট, সুযোগ, সক্ষমতা ইত্যাদি বিবেচনায় আনুন। সন্তানকে সুপরামর্শ দিন। তবে দিনশেষে নিজের জীবনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তাকে নিতে দিন।
৫. সন্তানের কাছে প্রত্যাশা কম করুন। ওদের আচরণে, ব্যবহারে বা লেখাপড়ার ফলাফলে হতাশ হবেন না। প্রত্যাশা কেবল চাপ তৈরি করে। এক সন্তানের সঙ্গে অন্যজনের বা অন্যদের সঙ্গে অযথা তুলনায় যাবেন না। v
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
নিউজ প্রকাশের জেরে জাবি সাংবাদিককে হুমকি, প্রতিবাদে মানববন্ধন
ছাত্রদলের অর্থ কেলেঙ্কারি নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করায় জাগোনিউজ২৪.কম এর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) প্রতিনিধি সৈকত ইসলামকে হুমকির প্রতিবাদে মানববন্ধন করা হয়েছে।
রবিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুর ১টায় শহীদ মিনার সংলগ্ন প্রধান সড়কে এ মানববন্ধন করেন জাবিতে কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা। এ সময় তারা কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের বিজ্ঞপ্তিতে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে অপেশাদার শব্দচয়নের প্রতিবাদ করেন।
এতে জাবি সাংবাদিক সমিতির সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মেহেদী মামুনের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুনের সঞ্চালনায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দসহ অনেকে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন।
আরো পড়ুন:
জাবিতে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের দাবিতে শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপি
জাবিতে অবিলম্বে নির্মাণ কাজ শুরুর দাবি
জাবি প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক জনকণ্ঠের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ওয়াজহাতুল ইসলাম বলেন, “গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে আমরা ছাত্র রাজনীতির মৌলিক সংস্কার এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিবেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম। কিন্তু আজ আমাদের এখানে দাঁড়াতে হচ্ছে একজন সাংবাদিককে হুমকির প্রতিবাদ জানাতে। কোনো সংবাদে ত্রুটি থাকলে সেটি সংশোধনের জন্য যথাযথ প্রতিবাদ জানানোর সুযোগ রয়েছে। কিন্তু তা না করে সংবাদপত্রের ওপর পেশিশক্তি প্রয়োগ করে প্রতিবেদন সরিয়ে ফেলা ফ্যাসিস্ট আচরণের বহিঃপ্রকাশ।”
তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের বিজ্ঞপ্তিতে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে যে অশোভন ও অবমাননাকর শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। একটি বড় রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের এমন অপেশাদার আচরণ হলে, সারাদেশে থাকা অন্যান্য নেতাকর্মীদের আচরণ কেমন হবে তা নিয়ে আমরা শঙ্কা প্রকাশ করছি। তাই প্রতিবাদ জানিয়ে বলছি, ছাত্রদল তাদের বক্তব্যের ভাষা সংশোধন এবং দলের অপকর্মের সঠিক তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার আহ্বায়ক আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, “গত ১৫ বছর এ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বৈরাচারের মদদপুষ্ট প্রশাসনের বিরুদ্ধে সাংবাদিকরা তাদের কলম চালিয়ে গেছে। আপনারা যারা নব্য ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠছেন, আপনাদের ভয়-ভীতি তাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না। জাগো নিউজে সংবাদ প্রকাশের পর ছাত্রদল যে ধরনের কর্মকাণ্ড চালিয়েছে, এটা স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি হস্তক্ষেপ।”
তিনি বলেন, “ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ যে বিবৃতি দিয়েছে তা অন্যান্য ইউনিটগুলোকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে আরো উদ্বুদ্ধ করবে। তার সংবাদ প্রকাশের কোনো ধরনের ভুল থাকলে তার জন্য আইনি প্রক্রিয়ায় না গিয়ে তাকে নানাভাবে চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করা হয়। আপনারা যদি ৫ আগস্টের পূর্ববর্তী রাজনীতি ফিরিয়ে আনতে চান, তাহলে আপনাদের বিরুদ্ধেও শিক্ষার্থীরা রুখে দাঁড়াবে।”
গণ-অভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, “আমাদের ভাই সাংবাদিক সৈকত ইসলাম ছাত্রদলের ভ্যাকসিন কর্মসূচি নিয়ে যে দুর্নীতি হয়েছিল, সে বিষয়ে অত্যন্ত নিরপেক্ষভাবে একটি বস্তুনিষ্ঠ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেছিল। সেই প্রতিবেদন প্রকাশের পর তাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”
তিনি বলেন, “আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, সৈকত শুধু একা নয়। আমরা হাজার হাজার সৈকত এখনো বেঁচে আছি। যেকোনো পরিস্থিতিতে আমরা সৈকতের পাশে আছি। শুধু সৈকত নয়, সব সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা সবসময়ই তাদের পাশে আছি।”
গত ২৪ এপ্রিল জাগোনিউজ২৪.কম-এ ‘আওয়ামী এমপিকে পুনর্বাসন: ভাগ বাটোয়ারার দ্বন্দ্বে জাবিতে ছাত্রদলের ভ্যাকসিন কর্মসূচি স্থগিত’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে জাবিতে ভ্যাকসিন কর্মসূচি স্থগিতের কারণ হিসেবে অর্থ বণ্টন নিয়ে শাখা ছাত্রদলের একজন যুগ্ম-আহ্বায়ক, আহ্বায়ক, সদস্য সচিব ও কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের মধ্যকার দ্বন্দ্ব এবং অনুদানের আড়ালে সাবেক এক আওয়ামী লীগ এমপিকে পুনর্বাসন চেষ্টার বিষয় উঠে আসে।
প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর থেকে সাব্বির আহমেদ নামে সময়ের আলোর জনৈক স্টাফ রিপোর্টার জাগোনিউজ২৪.কম এর জাবি প্রতিবেদক সৈকত ইসলামকে নানাভাবে জেরা করেন ও হুমকি দেন। পরে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে পত্রিকা অফিসে চাপ প্রয়োগ করে প্রতিবেদন সরিয়ে নেওয়া হয় ও রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের পক্ষ থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে অপেশাদার শব্দচয়ন করা হয়।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ, জাবি প্রেসক্লাব, সাংবাদিক সমিতিসহ দেশের ক্যাম্পাস সাংবাদিক সংগঠনগুলো নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।
ঢাকা/আহসান/মেহেদী