২৯ বছর ধরে বন্ধ কার্প পোনা উৎপাদন, ২০ বছর গলদা
Published: 29th, April 2025 GMT
নড়াইলের একমাত্র মৎস্য প্রজনন ও উৎপাদন কেন্দ্রটি কার্প জাতীয় পোনা উৎপাদনে সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৮৫-৮৬ সালে রাষ্ট্রীয় স্বর্ণপদক লাভ করে। ১৯৯৬ সালে কেন্দ্রটিতে রেণু উৎপাদন চলে। এরপর আর কার্প জাতীয় পোনার উৎপাদনে যেতে পারেনি। ২০০৪ সালে একটি প্রকল্পের অধীনে গলদা চিংড়ির রেণু পোনা উৎপাদন শুরু হয়। পরপর দুই বছর উৎপাদনও হয়েছিল। তাও বন্ধ হয়ে যায়। এভাবে সম্ভাবনা সত্ত্বেও নদী-বিল-খাল ও ঘের সমৃদ্ধ জেলার মাছ চাষিদের কাজে আসছে না কেন্দ্রটি।
শহরের ভাদুলিডাঙ্গা এলাকায় ১৯৬৪ সালে ৯ একর ৭৫ শতাংশ জায়গায় আটটি বড় পুকুর নিয়ে নড়াইল মৎস্য খামারের কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৮২ সালে একমাত্র মৎস্য প্রজনন কেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়েছিল। বর্তমানে ছয়টি পদের মধ্যে রেণু উৎপাদন সহকারী, গলদা উৎপাদন বিশেষজ্ঞ, পাম্পচালক ও নৈশপ্রহরী নেই। খামার ব্যবস্থাপক ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী থাকলেও বসে বসে বেতন নেন।
কেন্দ্রের খামার ব্যবস্থাপক মো.
২০০৪ সালে ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে পোনা উৎপাদন ব্যবস্থাকে উন্নত করতে খামারের আটটি পুকুর সংস্কার ও যন্ত্রপাতি কেনা হয়। একটি প্রকল্পের আওতায় একই বছর গলদা চিংড়ি রেণু পোনা উৎপাদন শুরু হয়েছিল। সেবার ৪০ হাজার এবং পরের বছর ২ লাখ রেণু উৎপাদন হয়। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় পরের বছর থেকে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। কালিয়ার চাঁচুড়ী এলাকার মৎস্যচাষি আশরাফুল ইসলামের ভাষ্য, ‘আমরা বিভিন্ন এলাকা থেকে পোনা সংগ্রহ করি। সব সময় ভালো হয় না এবং আনতেও প্রচুর ব্যয় হয়। সরকারি হ্যাচারির পোনা পাওয়া গেলে নির্ভেজাল ও দামে কম হতো।’
সরেজমিন কেন্দ্রটি অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে। জানা গেছে, যন্ত্রপাতি ও পাম্প মেশিন আগেই চুরি হয়ে গেছে। বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র অযত্নে মরিচা ধরেছে। পুকুর পানিশূন্য। শুষ্ক মৌসুমে (নভেম্বর-জুন) পানি থাকে না।
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, কেন্দ্রটি বখাটেদের আড্ডার স্থলে পরিণত হয়েছে। কুড়িগ্রাম এলাকার মিথুন ঘোষের ভাষ্য, তিন পাশের প্রাচীরের নিচ দিয়ে বখাটেরা ভেতরে প্রবেশ করে আড্ডা দেয়। অনৈতিক কাজ হয় বলেও শুনেছেন তারা।
মৎস্য অফিস থেকে জানা গেছে, জেলায় প্রায় পাঁচ কোটি সাদা ও গলদার রেণু পোনার চাহিদা রয়েছে। নড়াইলে ১০ হাজার ৪২৫টি পুকুর এবং ৫ হাজার ৩৯১টি চিংড়ি ঘেরসহ ১৫ হাজার ৮১৬টি ঘের-পুকুর আছে। চিংড়ি ২ হাজার ৩০০ হেক্টর এবং পুকুর ও ধানক্ষেত মিলিয়ে ১ হাজার ৮৪৪ হেক্টরে মাছ চাষ হয়। প্রাকৃতিকভাবে সাতটি নদী, ২৩৮টি খাল, বিল, প্লাবন ভূমি, জলাশয় ও বরোপিটেও চাষ হচ্ছে। এসব উৎস থেকে সাদা, দেশি এবং চিংড়ি মাছের উৎপাদন হয় ২১ হাজার ৮০৮ টন। জেলায় মাছের চাহিদা রয়েছে ১৬ হাজার ৬৬০ টন। এ চাহিদা মিটিয়ে ৫ হাজার ১৪৮ টন মাছ ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়।
জেলায় রেণু সংগ্রহের ব্যবস্থা না থাকায় মৎস্য সমিতির প্রায় ১৩ হাজার সদস্যকে বাইরে থেকে চড়া মূল্যে পোনা কিনতে হয় বলে জানান জেলা ফিশ কালচার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম আকরাম শাহীদ চুন্নু। তিনি বলেন, সরকারি হ্যাচারিটি চালু হলে মৎস্যচাষিরা উপকৃত হবেন।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এইচ এম বদরুজ্জামান বলেন, কেন্দ্রে জনবলের ঘাটতি রয়েছে। পদগুলোয় নিয়োগ দিতে বারবার কর্তৃপক্ষকে জানালেও সুরাহা হয়নি। বরাদ্দ পাওয়া গেলে পুকুর সংস্কার করা হবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সাহাবিরা যেভাবে মহানবী (সা.)-কে মানতেন
নবীজি(সা.) র আনুগত্য প্রদর্শনে সাহাবিগণ অনন্য সব দৃষ্টান্ত পেশ করেছেন। প্রথমত তাঁর আনুগত্য মানে আল্লাহর আদেশ পালন। দ্বিতীয়ত তাদের অন্তরে নবীজির প্রতি যে ভালোবাসা ছিল, সেই ভালোবাসার আহ্বানে তারা সাড়া দিয়েছেন। মানুষ তার সহজে মানে, যাকে সে ভালোবাসে। আমরা মাত্র তিনটি উদাহরণ উপস্থাপন করছি।
১. জুমার দিন মসজিদের মিম্বরে উঠে নবীজি (সা.) বললেন, ‘বসো তোমরা।’ আবদুলাহ ইবনে মাসউদ (রা.) শোনামাত্র মসজিদের দরজায় বসে গেলেন। তিনি ‘বসো’ শব্দটি শুনে নিজেকে আর এক পা এগোনোর অনুমতি দেননি; যেখানে ছিলেন, সেখানেই বসে গেলেন। নবীজি তাকে দেখলেন যে, তিনি দরজার মুখে বসে গেছেন। বললেন, ‘আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ, এগিয়ে এসো।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১,০৯১)
২. আবু আবদুর রহমান ফাহরি (রা.) বলেন, নবীজির (সা.) সঙ্গে আমি হোনাইনের যুদ্ধে উপস্থিত ছিলাম। গ্রীষ্মের দিনে আমরা প্রচণ্ড রোদের মধ্য দিয়ে চলছিলাম। একসময় সকলে গাছের ছায়ায় বসলাম। সূর্য হেলে পড়লে আমার বর্মটি পরলাম এবং ঘোড়ায় চড়ে নবীজির কাছে এলাম। তিনি তার তাঁবুতে ছিলেন। তাকে সালাম দিয়ে বললাম, আল্লাহর রাসুল, ‘আমাদের যাওয়ার সময় হয়েছে কি?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ।’ এরপর তিনি ‘বেলাল’ বলে ডাক দিলেন। বেলাল (রা.) সামুরা গাছের নীচ থেকে ছুটে এলেন। তার ছায়া দেখে মনে হচ্ছিল যেন পাখির ছায়া। তিনি বললেন, ‘আমি হাজির।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৫,২৩৩)
‘
পাখির ছায়া’ বলার কারণ হলো, নবীজির আওয়াজ শোনামাত্র বেলাল (রা.) এত দ্রুত এসেছেন, যেন তার দু’পা মাটিতে ছিল না, ছায়া দেখে মনে হচ্ছিল পাখির ছায়া।
৩. উসাইদ ইবনে জহির (রা.) বলেন, রাফে ইবনে খাদিজ (রা.) আমাদের কাছে এসে বললেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) তোমাদের একটি বিষয় নিষেধ করেছেন, যা তোমাদের জন্য উপকারী। তবে মনে রেখো, আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য করা আরও বেশি উপকারী। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস: ৩,৮৯৭)
অর্থাৎ, আল্লাহর রাসুল যা বলেছেন, তাতে বাহ্যিক দৃষ্টিতে উপকারী বিষয় গ্রহণে নিষেধ করেছেন বোঝা গেলেও তাতে দ্বিধায় পড়েননি সাহাবিরা। বরং বুঝে নিয়েছেন যে, নিশ্চয় রাসুলের কথা মেনে নিলে আল্লাহ এর চেয়ে বেশি উপকার দেবেন।