অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন বলেছেন, “আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাগুলোর সব শর্ত মেনে বাংলাদেশ আর কোনো ঋণ নিতে চায় না। এছাড়া বাংলাদেশ এখন আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল নয়।”

মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) বিকেলে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত ও অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, “বাজেটে সাপোর্টের অর্থ ৫ বছরের মধ্যে ফেরত দিতে হয়। বাজেট সাপোর্টের প্রকল্প তো ২০ বছরের জন্য হয় না। আমরা সতর্ক আছি। আইএমএফ টাকা দিলেই আমরা নেব না। আমরা তো ঋণের বোঝা নিতে চাই না। আমি যদি ঋণ নিতে থাকি, টাকার বিনিময় হার কমে গেলে আমার যেখানে ৩ বিলিয়ন ডলার শোধ করার কথা, পরে ওটা ৫ বিলিয়ন ডলার হয়ে যাবে। তখন আমার ১৬০-১৮০ টাকা করে ডলার কিনতে হবে। আমরা এসব বিষয় চিন্তা-ভাবনা করছি।”

আরো পড়ুন:

এডিবির সেমিনার
দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়নে দক্ষতা ও কার্যকারিতার ওপর গুরুত্বারোপ

এপ্রিলের ২৬ দিনে রেমিট্যান্স এলো ২২৭ কোটি ডলার

নয় মাস ধরে আইএমএফর টাকা পাওয়া যাচ্ছে না-সাংবাদিকের এমন এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে আমরা একটা শক্ত পদক্ষেপ নেব।”

পদক্ষেপ আমরা নেব, নাকি তারা নেবে-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “না না, এটা আমরা নেব। ওদের চাকরি-বাকরি আছে তো। ইন্দোনেশিয়ায় টাকা দিতে না পেরে অনেকের চাকরি চলে গেছে। মালয়েশিয়াতে মাহাথির মোহাম্মদ শক্ত পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা যদি না নেই, দেখবেন ওখানে কয়জনের চাকরি যায়।”

তিনি বলেন, “সার্বিকভাবে এখন আমরা আর আইএমএফ নির্ভরশীল না। ওই দিন চলে গেছে। তবে বিশ্বব্যাংকের প্রকল্প ঋণ ওরা বলেছে কন্টিনিউ করবে।”

অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “আইএমএফের দুই একটা ইস্যু আছে যেটা মেজর না। কিছু শর্ত আছে যেগুলোর সবগুলো আমরা পরিপালন করতে চাই না। আমরা সেসব বিষয় নিয়ে তাদের সাথে আরগুমেন্ট করেছি। তারা বলেছে এ কর সেই কর, আমরা সে পথে হাঁটব না। বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতি অনেক ভালো। ডিসেম্বর থেকে এখন অনেক ভালো। দ্রুত রিফর্ম করেছে যেটা ভালো হয়েছে।”

তিনি বলেন, “আইএমএফ থেকে টাকা পয়সা না নিয়েই ফরেন এক্সচেঞ্জ মার্কেট ও রিজার্ভ স্থিতিশীল আছে। এই সরকার আসার পর কিন্তু আমরা আইএমএফ থেকে কোনো টাকা পাইনি। তাদের বলেছি তোমাদের টাকা ছাড়াই আমরা সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীল আনতে পেরেছি। এজন্য এখন তারা যে শর্ত চাপিয়ে দেবে সেটা বুঝতে পেরেছে। তারা বলেছে আমরা কন্টিনিউ করছি।”

তিনি আরো বলেন, “এছাড়া প্রজেক্ট সার্পোট অনেকগুলো আছে। বিশ্বব্যাংক, এডিবি পাইপলাইনে আছে। এআইবি থেকে ১ মিলিয়ন ডলার চেয়েছি। এনডিবি ও ইসলামি ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক থেকে সহায়তা চেয়েছি। ফলে প্রজেক্ট সার্পোটের ব্যাপারে তেমন কোনো সমস্যা দেখছি না। তবে বাজেট সার্পোটের বিষয়ে একটু আলোচনা চলছে।আইএমএফ এর অনেক শার্ত থাকে। তাই আমরা চিন্তা-ভাবনা করছি নিজেদের মতো করে বাজেট দিতে চেষ্টা করব।”

আইএমএফের কি শর্ত আছে এমন প্রশ্নের জবাবে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “তাদের শতের্র মধ্যে আমরা বলেছি এনবিআর সেপারেশন করব। ফরেন এক্সচেঞ্জ মার্কেটটাকে বলেছে সহজ করতে। আমরা বলেছি একেবারে ওপেন করব না।আমাদের স্টেবিলাইজেশন ফান্ডে ১ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার জন্য বলেছি। ওরা বলেছে ৫০০ মিলিয়ন ডলার দেবে। তবুও আমরা বলেছি চিন্তা-ভাবনা করে আমরা সিদ্ধান্ত দেব। সব মিলিয়ে কিন্তু দুঃখ করার কোনো কারণ নেই।”

আর এক প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “সার্বিকভাবে আমি বলব অনেকের ধারণা যে আমরা শুধু অর্থ আনতে গেছি। আসলে সেটা কিন্তু না। আমরা ডেফিনিটলি আইএমএফ এর সঙ্গে যে নেগোসিয়েশনটা চলছিল দুইটা টার্মস নিয়ে সেটা কন্টিনিউ করার জন্য। এছাড়া বিশ্বব্যাংক আছে তাদের সঙ্গেও কথা বলার জন্য গিয়েছি। আমি মনে করি আমাদের এবারের সফর সফল হয়েছে।”

“কারণ আমি তো বিশ্বব্যাংক, এআইবি, আইওএম, আইএমএফ, আইএফসি, ওপেক ফান্ডসহ ইউএসএর বড় একটা ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল, এছাড়া ইউএস সরকারের এনার্জি বিভাগ, স্টেট বিভাগ, লেবার, কৃষি খাত এবং ট্রেজারি বিভাগের সাথে কথা বলেছি। সবাই কিন্তু আমাদের সাথে আন্তরিকভাবে গ্রহণ করেছে ও কথা বলেছেন।”

তিনি বলেন, “এ বছর বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীরা বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের পিছনে না ঘুরে বরং তারা ইউএস প্রেসিডেন্ট ও অফিসের লোকজনের কাছে যাচ্ছে। তারা সবাই বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের থেকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে।”

অর্থের সংস্থানের জন্য তিনটা চুক্তিতে স্বাক্ষর হয়েছে জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “ওপেক ফান্ডের সাথে ১০০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি হয়েছে। তারা বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ করবে। আর আইএফসির সাথে কথা হয়েছে তারাও ৫০০ মিলিয়ন ডলার বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ করবে।”

ঢাকা/হাসনাত/সাইফ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আইএমএফ র র জন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

আইএমএফের ঋণের কিস্তি না পেলে ক্ষতি হবে না

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ এখন দেশের অর্থনীতির জন্য খুব বেশি প্রয়োজনীয় নয়। তাদের ঋণের কিস্তি না পাওয়া গেলেও কোনো ক্ষতি হবে না। দেশের অর্থনীতি যেমন আছে, তেমনই চলবে। 

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে স্থানীয় সময় গত শুক্রবার আইএমএফের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর বাংলাদেশ মিশনের প্রেস মিনিস্টার গোলাম মর্তুজাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। গতকাল শনিবার সকালে গোলাম মর্তুজা গভর্নরের সাক্ষাৎকারের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার করেছেন। আহসান মনসুর জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের লক্ষ্য নিজস্ব আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার স্বাধীনভাবে বাস্তবায়ন করা।

চলতি মাসে ঢাকায় আইএমএফ প্রতিনিধি দলের সফরে ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির ১৩০ কোটি ডলার ছাড়ের বিষয়ে কোনো সুরাহা হয়নি। মুদ্রার বিনিময় হার অধিকতর নমনীয় করা ও কর আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাদের সমঝোতা হয়নি। বর্তমানে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন সভায় অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরসহ সরকারের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

সাক্ষাৎকারে আহসান মনসুর বলেন, বাংলাদেশে চলমান সংস্কার নিয়ে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি নিয়ে বিশ্বে একটা ঝড় বইছে। এর প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতিতে এবং বাংলাদেশে কতুটুক পড়বে, তা নিয়ে পর্যালোচনা চলছে। এ জন্য আইএমএফও কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে। এসব কারণে তাদের সঙ্গে সমাধানের গন্তব্যে এখনও যাওয়া সম্ভব হয়নি। কিছু জায়গায় তাদের আরও কাজ করতে হবে। তাদের সঙ্গে দরকষাকষি বা নীতি আলোচনা চলছে। কিস্তি পাওয়া গেলে ভালো। না পেলেও কোনো ক্ষতি হবে না। তাদের সঙ্গে এখনও ঐকমত্য পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। পৌঁছাতে না পারলে খুব একটা অসুবিধা হবে, তাও নয়। বাংলাদেশের অবস্থা ভঙ্গুর নয়। যদি ঋণ না হয়, বাংলাদেশের অর্থনীতি যেভাবে চলছে, সেভাবেই চলবে।

কোন ইস্যুতে মতপার্থক্য জানতে চাইলে গভর্নর বলেন, ‘কর রাজস্বের বিষয়ে এখন আর সমস্যা নেই। তবে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার। বিনিময় হার ইস্যুতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। বাজার স্থিতিশীল। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডলার বিক্রি করা লাগছে না। বাজারে হস্তক্ষেপও করা হচ্ছে না। এখন অহেতুক বাজার অস্থিতিশীল করা ঠিক হবে না। এ ক্ষেত্রেই আমরা দোটানায় রয়েছি।’

তিনি বলেন, আমাদের কাছে যেসব শর্ত গ্রহণযোগ্য হবে, সেসব শর্তের ভিত্তিতে ঋণ নেব। আমরা তো শ্রীলঙ্কা বা পাকিস্তান হয়ে যাইনি যে ঋণ নিতেই হবে। ছয় মাস আগে অবস্থা কিছুটা খারাপ থাকলেও এখন ঋণ নিতেই হবে, এমন অবস্থায় নেই। 

আইএমএফ ঋণ থেকে সরে গেলে অন্য দাতা সংস্থা অর্থায়নে সমস্যা হয় কিনা– জানতে চাইলে গভর্নর বলেন, প্রকল্প ঋণের ক্ষেত্রে সমস্যা হয় না। বাজেট সহায়তার জন্য আইএমএফের প্রত্যয়ন প্রয়োজন হয়। তবে বাজেট সহায়তা আর না নেওয়ার চেষ্টা করা উচিত। কারণ, প্রকল্প ঋণ বিনিয়োগের মাধ্যমে সামাজিক ও আর্থিক রিটার্ন পাওয়া গেলেও বাজেট সহায়তায় তা পাওয়া যায় না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আইএমএফ কিস্তি না দিলে নিজেদের মতো করে বাজেট করব: অর্থ উপদেষ্টা
  • সব শর্ত মেনে আইএমএফের ঋণ নেওয়া হবে না: অর্থ উপদেষ্টা
  • ট্রাম্প–ঝড়ের পরও বিশ্বব্যবস্থা টিকে আছে, স্বস্তি নীতিপ্রণেতাদের
  • আইএমএফের ঋণের কিস্তি না পেলে ক্ষতি হবে না