নোয়াখালীর হাতিয়ায় ডাকাত তকমা দিয়ে দু’জনকে পিটিয়ে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় দেশীয় অস্ত্র। ছবি তুলে ও ভিডিও করে ছেড়ে দেওয়া হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। উত্তেজিত জনতা তাদের ঘিরে রাখে। যদিও অনেকেই জানতেন না, ঘটনাটি সাজানো। খবর পেয়ে নৌবাহিনীর একটি দল আহত দু’জনকে উদ্ধার করে। সোমবার রাতে উপজেলার জাহাজমারা ইউনিয়নের আমতলী বাজারে এ ঘটনা ঘটে। রাতেই তাদের হাতিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়। 

উদ্ধার দু’জন হলেন জাহাজমারা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড চরহেয়ার এলাকার মজিবুল হকের ছেলে আরিফ হোসেন এবং একই ইউনিয়নের মোল্লাবাজার এলাকার মো.

আশরাফের ছেলে মো. আসিফ। এদের মধ্যে আরিফ পেশায় রিকশাচালক। 

স্থানীয়রা জানান, জাহাজমারা আমতলী বাজারের পশ্চিম পাশে রাস্তার চর দখল নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছে। এক পক্ষের নেতৃত্ব দেন জহির চেরাং, অন্য পক্ষের নেতৃত্ব দেন কাউসার। কাউসারপক্ষ অনেক দিন থেকে চরটির দখল নিয়ে আছে। ঘটনার দিন সোমবার বিকেলে জহির চেরাংয়ের লোকজন চরটির দখল নেওয়ার জন্য সংঘবদ্ধ হয়। পরে প্রতিপক্ষের ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে গেলেও দু’জনকে ধরে তারা বাজারে নিয়ে আসে। পরে ওই দু’জনকে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে পরিকল্পিতভাবে ডাকাত নাটক সাজানো হয়। 

ছবি তুলে ও ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ায় সেখানে উৎসুক জনতা ভিড় করে। খবর পেয়ে নৌবাহিনীর একটি দল অবরুদ্ধ দু’জনকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। পরে নৌবাহিনী ও পুলিশের দুটি গোয়েন্দা দলের তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসে। 

আসিফের বাবা আশরাফ জানান, তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি পর্যন্ত নেই। অথচ তাঁকে ডাকাত বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তাঁর ছেলে নিরপরাধ দাবি করেন তিনি। 

আমতলী বাজার বণিক সমিতির সভাপতি মো. লিটন জানান, চরের আধিপত্য নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় দু’জনকে আটক করা হয়। পরে নৌবাহিনী এসে তাদের নিয়ে যায়। তারা ডাকাতির সঙ্গে জড়িত কিনা, তাঁর জানা নেই। 

হাতিয়া থানার ওসি একেএম আজমল হুদা বলেন, উদ্ধার দু’জনের বিরুদ্ধে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত থাকার যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, তার কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

‘হারাদিন থাইক্যাও নাতিরে ডাক্তার দেহাতে পারি নাই’

‘মোর ৩ বছরের নাতিডার হারা গা (শরীর) খাউজায়। আইছিলাম হাসপাতালে ডাক্তার দেহাইতে। হারাদিন খাড়াইয়া থাইক্যাও ডাক্তার দেহাইতে পারি নাই। এহন চইল্যা যাই’– আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন কাঁঠালিয়া গ্রামের আছিয়া বেগম।
কোমর আর হাঁটুর ব্যথার চিকিৎসার জন্য এসেছেন ঘোপখালী গ্রামের ষাটোর্ধ্ব আশ্রাব আলী। ব্যথায় কাতরাতে কাতরাতে তিনি বলেন, ‘ডাক্তার তো দেহাইতে পারি নাই। হারাদিন খাড়াইয়া থাইক্যা আরও কোমর ব্যথা বাড়াইছি। এহন বাড়ি যাইয়া আল্লাডে কমু ক্যা মোগো গরিব বানাইছো।’
আমতলী পৌরসভার বাসুগী গ্রামের গৃহবধূ রুবিনা আক্তার এসেছেন জ্বর ও সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত ১৩ দিন বয়সী সন্তান ইছাকে নিয়ে। দু’দিন ঘুরেও ডাক্তার দেখাতে পারেননি। 
আমতলী উপজেলা হাসপাতালের এ রকম চিত্র প্রতিদিনের। আড়াই লাখ মানুষের জন্য এ হাসপাতালটিতে রোগী আছে; কিন্তু প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও নার্স নেই। অপারেশন থিয়েটার (ওটি) আছে, অবেদনবিদ ও শল্যচিকিৎসক নেই। চিকিৎসাসেবায় এই নেই আর নেই দিয়ে চলছে হাসপাতালটি। 
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. চিন্ময় হাওলাদার জানান, চিকিৎসক সংকট থাকায় জরুরি বিভাগ ওয়ার্ডসহ নানা দিক সামলাতে হচ্ছে। স্যাকমো, মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের সহায়তা নিতে হচ্ছে। সংকটের কথা জানিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে চাহিদাপত্র দেওয়া হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ৫০ শয্যার হাসপাতালে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ ৩১টি পদের মধ্যে দু’জন চিকিৎসক রয়েছেন। এ হাসপাতাল ছাড়াও উপজেলা সদর ও কুকুয়া ইউনিয়নের আজিমপুর বাজারে একটি হাসপাতাল রয়েছে। আঠারগাছিয়া ইউনিয়নের গাজীপুর বাজারে ও গুলিশাখালী ইউনিয়নের গুলিশাখালী বাজারে একটি করে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও হলদিয়া ইউনিয়নের সেনের হাটে একটি ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে। এসব হাসপাতালে চিকিৎসক সংকটের কারণে চিকিৎসাসেবা বন্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে।
জরুরি বিভাগে চিকিৎসক রোকনুজ্জামান বলেন, প্রতিদিন শত শত রোগী সামলাতে হিমশিম অবস্থা। রোগীদের কটু কথাও শুনতে হয় তাদের।
চিকিৎসক ছাড়াও এ হাসপাতালে প্রধান সহকারী, ক্যাশিয়ার ও অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিকের একটি পদ, পরিসংখ্যানবিদ, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ল্যাব, ডেন্টাল ও ফিজিওথেরাপিস্টের একটি করে পদ শূন্য রয়েছে। চারজন উপসহকারী মেডিকেল অফিসার, চারজন কার্ডিওগ্রাফার, একজন স্টোরকিপার, তিনজন স্বাস্থ্য পরিদর্শক, সাতজন সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক, ২৬ জন স্বাস্থ্য সহকারী, একজন ড্রাইভার, একজন জুনিয়র মেকানিকের পদ শূন্য রয়েছে। ওয়ার্ডবয়, আয়া, মালি, বাবুর্চি, নিরাপত্তা প্রহরী এবং পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ ৮৮ পদের মধ্যে ৫২টি পদে জনবল নেই। চতুর্থ শ্রেণির ৩৪টি পদের মধ্যে ১৬টি পদ শূন্য। দীর্ঘদিন ধরে এসব পদ খালি থাকায় হাসপাতাল পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ রাখা যাচ্ছে না।
বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. মো. আবুল ফাত্তাহ বলেন, আমতলী হাসপাতালে চিকিৎসক সংকটের কথা স্বাস্থ্য মহাপরিচালককে জানানো হয়েছে। 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘হারাদিন থাইক্যাও নাতিরে ডাক্তার দেহাতে পারি নাই’