দেশের উচ্চশিক্ষা খাতে টেকসই উন্নয়ন ও স্মার্ট রূপান্তরের নতুন দিগন্ত উন্মোচনের লক্ষ্যে গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (গোবিপ্রবি) এবং গ্রিনটেক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।

সম্প্রতি উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর এবং ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক লুৎফর রহমান নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) বিকালে গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের উপ-পরিচালক মো.

মাহবুবুল আলম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন, দ্রুত নগরায়ন ও প্রাযুক্তিক পরিবর্তনের যুগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য টেকসই ও স্মার্ট অবকাঠামো গড়ে তোলা সময়ের দাবি। গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সেই বৈশ্বিক উদ্যোগের সঙ্গে নিজেকে সংযুক্ত করতে অগ্রগামী হয়েছে। এ যাত্রায় পরিবেশ, জলবায়ু ও টেকসই উন্নয়নে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন গ্রিনটেক ফাউন্ডেশন ফ্যাসিলিটেটিং পার্টনার হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে থাকবে। চুক্তির আওতায় ক্যাম্পাসের অবকাঠামো, সেবা ও জীবনধারাকে এমনভাবে রূপান্তর করা হবে, যাতে এটি আন্তর্জাতিক মানের সবুজ ও স্মার্ট ক্যাম্পাস হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে টেকসই অবকাঠামো ও জলবায়ু সহনশীল শিক্ষাঙ্গন গড়ে তোলার জন্য সম্প্রতি গ্রিনটেক ফাউন্ডেশনের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠকে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ‘টেকসই গ্রিন অ্যান্ড ক্লিন ক্যাম্পাস’ মডেলটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজিএস) অর্জনে অবদান রাখার জাতীয় প্রকল্প প্রস্তাবের বিষয়েও আলোচনা হয়। গোবিপ্রবিতে এই পাইলট প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন পুরো দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য রোল মডেল হিসেবে কাজ করবে।

প্রথম পর্যায়ে গোবিপ্রবির অগ্রাধিকার পাওয়া ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে জলাশয় ব্যবস্থাপনা ও মাছ চাষ সম্প্রসারণ, ক্যাম্পাস গ্রিনিং ও বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম, সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন সুবিধা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট, মিউনিসিপ্যাল বর্জ্য থেকে শক্তি উৎপাদন প্রকল্প, স্মার্ট গাড়ি পার্কিং ও যানবাহন ব্যবস্থাপনা, শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণমূলক ক্লাব গঠন, স্মার্ট ক্লাসরুম ও স্মার্ট আইডি কার্ড, ক্যাম্পাস এনার্জি অডিট এবং দক্ষতা বৃদ্ধি, শিক্ষাবৃত্তি ও মাইক্রো-এডুকেশন লোন সুবিধা, একীভূত শিক্ষার্থী সেবা কেন্দ্র, চাকরি মেলা ও ইন্টার্নশিপ সমন্বয়, ইন্ডোর স্পোর্টস কমপ্লেক্স, জিম ও ক্যাফে নির্মাণ প্রভৃতি।

গ্রিনটেক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ প্রকল্পের কারিগরি সহায়তা, তহবিল সংগ্রহ, অংশীদার সমন্বয় এবং বাস্তবায়ন পরিচালনায় নেতৃত্ব দেবে। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী, সিএসআর অংশীদার ও সামাজিক ব্যবসা সংগঠনগুলোকেও যুক্ত করা হবে। গ্রিনটেক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে, যাতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত মডেলের সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে দেশের সব পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রসারণ করা যায়।

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর বলেন, “আমরা আমাদের ক্যাম্পাসকে কেবল একাডেমিক সাফল্যের নয়, বরং টেকসই উন্নয়ন ও পরিবেশ সচেতনতার একটি কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এই অংশীদারিত্ব সেই লক্ষ্য পূরণে আমাদের এগিয়ে নেবে। এই চুক্তি কেবল আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নয়, বরং বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্যও অনুকরণীয় মডেল হতে যাচ্ছে।”

গ্রিনটেক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক লুৎফর রহমান বলেন, “এটি একটি প্রকল্প নয়; এটি বাংলাদেশের ভবিষ্যত পরিকল্পনা। আমরা চাই দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় হোক প্রযুক্তিনির্ভর, জলবায়ু সহনশীল ও পরিবেশবান্ধব।”

ঢাকা/বাদল/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ল র জন য গ ব প রব প রকল প ব যবস জলব য়

এছাড়াও পড়ুন:

সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করার তাগিদ

প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনকে জাতীয় নির্বাচনের সময় ধরে সারা দেশে পুলিশকে এখন থেকে প্রস্তুতির তাগিদ দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার পুলিশ সপ্তাহের অনুষ্ঠানে এমন তাগিদ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে মাঠপর্যায়ের পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ও নিরপেক্ষ থাকার প্রতিও গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

পুলিশ সপ্তাহের তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের প্রথম দিন মঙ্গলবার বিভিন্ন ধাপের আলোচনায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রসঙ্গ এসেছে।

এদিন সকালে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে পুলিশ সপ্তাহ-২০২৫–এর উদ্বোধনকালে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রস্তুতির ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে পুলিশ সদস্যদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। মনে রাখবেন, কোনো ব্যক্তি যদি অন্যায় বা অনিয়মের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়, সেই ব্যক্তির দ্বারা ন্যায় প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। সুতরাং কারও দ্বারা ব্যবহৃত হবেন না।

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) দিয়ে কাজ করাতে হিমশিম খাচ্ছেন বলেও উল্লেখ করেন এসপিদের কেউ কেউ। পছন্দের ব্যক্তিকে থানার ওসি করার জন্য রাজনৈতিক চাপের কথাও বলেছেন একাধিক কর্মকর্তা।

উদ্বোধনসহ দিনের প্রথমার্ধের অনুষ্ঠান শেষে বেলা আড়াইটায় পুলিশ সুপার (এসপি) থেকে তদূর্ধ্ব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি কর্মশালা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কর্মশালায় বিভিন্ন জেলার এসপিরা কাজের অভিজ্ঞতা ও নানা চ্যালেঞ্জের কথা বলেন। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) দিয়ে কাজ করাতে হিমশিম খাচ্ছেন বলেও উল্লেখ করেন এসপিদের কেউ কেউ। পছন্দের ব্যক্তিকে থানার ওসি করার জন্য রাজনৈতিক চাপের কথাও বলেছেন একাধিক কর্মকর্তা।

চাপমুক্ত হয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন অন্তরায়ের কথা বলতে গিয়ে একাধিক কর্মকর্তা জানান, পেশাদারত্বের বাইরে গিয়ে মাঠপর্যায়ের পুলিশের অনেকের মধ্যে রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বাড়তি সখ্য তৈরির প্রবণতা রয়েছে। এতে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।

পুলিশের বিভাগীয় হাসপাতালে জনবল বৃদ্ধি ও আধুনিক চিকিৎসাসরঞ্জাম সরবরাহ ও রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালকে মেডিকেল কলেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠার দাবি জানাবে পুলিশ।

মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা রাজনৈতিক দলমুখী না হয়ে যেন পেশামুখী হন, সে জন্য করণীয় নিয়েও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। এ জন্য পুলিশ সপ্তাহের শেষ দিনের অনুষ্ঠানের কোনো এক পর্যায়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে কীভাবে যুক্ত করা যায়, তা নিয়েও ভাবছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

পুলিশ সপ্তাহের অনুষ্ঠানে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম তাঁর বক্তব্যে ও নির্দেশনায় সব স্তরের পুলিশ সদস্যদের পেশাদারত্ব ও সততার সঙ্গে কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশ যাতে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারে, সে জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে বলেছেন তিনি।

মানুষ আর দলীয় পুলিশ চায় না

পুলিশ সপ্তাহের প্রথম দিনের আলোচনায় স্বতন্ত্র পুলিশ কমিশন গঠনের দাবি উঠে এসেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে। এদিন সকালে প্রধান উপদেষ্টার সামনে মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের মধ্যে দুজন কথা বলার সুযোগ পেয়েছেন। এঁদের একজন পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. আল আসাদ। আরেকজন ঢাকা জেলা পুলিশের কনস্টেবল সামিয়া ইসলাম স্বর্ণা।

অনুষ্ঠানে এএসপি মো. আল আসাদ বলেন, সাবেক স্বৈরাচারী সরকার পুলিশকে দলীয় কর্মীর মতো ব্যবহার করেছে। যার ফলে জনগণের সঙ্গে পুলিশের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। পুলিশ বাহিনীকে দলীয় কর্মীর মতো ব্যবহারের সুযোগ বন্ধ করার সময় এখনই। জুলাই বিপ্লবের অংশীদারদের কেউই, এমনকি সাধারণ জনগণও আর দলীয় পুলিশ চান না, তারা নিরপেক্ষ ও নতুন বাংলাদেশের পুলিশ চান।

মো. আল আসাদ বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে পুলিশ সংস্কার কমিশনের কাছে একটি নিরপেক্ষ এবং প্রভাবমুক্ত ‘পুলিশ কমিশন’ গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। সংস্কার কমিশন এ বিষয়ে নীতিগতভাবে ঐকমত্য পোষণ করলেও আরও পর্যালোচনা প্রয়োজন বলে বিষয়টি উপেক্ষা করেছে। এ ছাড়া জাতীয় ঐকমত্য কমিশনেও পুলিশ–সংক্রান্ত কোনো বিষয় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। পুলিশকে সঠিক পথে পরিচালনার জন্য স্বতন্ত্র পুলিশ কমিশন গঠনের উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান এই কর্মকর্তা।

‘পুলিশ সপ্তাহ ২০২৫’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে পুলিশ সদস্যদের পদক প্রদান করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে

সম্পর্কিত নিবন্ধ