মামলা থেকে ইরেশ জাকেরসহ ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ নাম প্রত্যাহারের আহ্বান এইচআরএফবির
Published: 29th, April 2025 GMT
জুলাই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উদ্দেশ্যমূলক মামলা হচ্ছে দাবি করে এসব ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও উদ্বেগ জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি)। পাশাপাশি এসব মামলায় অভিনেতা ইরেশ জাকেরসহ যাঁদের ইচ্ছাকৃত বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আসামি করা হয়েছে, তদন্ত করে সেসব নাম বাদ দিতে আহ্বান জানিয়েছে জোটটি।
২০টি মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনের জোট এইচআরএফবি আজ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এ কথা বলে।
বিবৃতিতে এসব মামলায় কেউ যেন হয়রানির শিকার না হন, সে জন্য সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানানো হয়। একই সঙ্গে আইনের অপব্যবহারকারীদের ব্যাপারে জরুরি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গুলিতে বিএনপির কর্মী মাহফুজ আলমকে (শ্রাবণ) হত্যার অভিযোগে অভিনেতা ইরেশ জাকেরসহ পেশাদার সাংবাদিকদের আসামি করে মিরপুর থানায় দায়ের হওয়া মামলার বিষয়টি উল্লেখ করে এইচআরএফবি বলে, এ মৃত্যুর ঘটনায় সাধারণ নাগরিকদের সম্পৃক্ত করে মামলা করা হয়েছে। এর ফলে ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে।
বিবৃতিতে বলা হয়, জুলাই-আগস্টের গণ-আন্দোলনে হতাহতের বিচার চেয়ে দেশজুড়ে ঢালাওভাবে যেসব মামলা হচ্ছে, এতে ভুক্তভোগীর পরিবার সঠিক বিচার পাবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা থেকে যায়। গণহারে আসামি করায় মামলার তদন্ত ও বিচার বিঘ্নিত হওয়া এবং তদন্ত প্রতিবেদন দিতে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তাঁরা।
কোনো প্রমাণ ছাড়া কারও বিরুদ্ধে হত্যার মতো গুরুতর অভিযোগে মামলা হওয়ার ঘটনা নিশ্চিতভাবেই নিপীড়নমূলক এবং অগ্রহণযোগ্য বলে বিবৃতিতে বলা হয়। বলা হয়, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও হয়রানিমূলক অভিযোগ ঢালাওভাবে আমলে নেওয়ার ফলে মামলা, গ্রেপ্তার ও জামিন বাণিজ্যের বিকাশ ঘটছে এবং প্রকৃত অপরাধীদের বিচার বিঘ্নিত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে, তেমনি সার্বিকভাবে ন্যায়বিচারবিরোধী দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রমূলক অপপ্রচারের সুযোগও উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন হামিদা হোসেন, সুলতানা কামাল, জেড আই খান পান্না, সারা হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান, ফওজিয়া মোসলেম, শামসুল হুদা, খুশী কবির, সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।
নিরপরাধ ব্যক্তিকে আসামি করায় আসকের উদ্বেগ
অন্য এক বিবৃতিতে নিরপরাধ ব্যক্তিকে আসামি করায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। বিবৃতিতে আসক জানায়, সম্প্রতি একটি মামলায় অভিনেতা ইরেশ জাকেরসহ অন্তত ২৫ জন সাংবাদিককে অন্তর্ভুক্তি করে হত্যা মামলা হয়েছে। এ ধরনের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা করে নিরীহ মানুষদের হয়রানির ঘটনা অগ্রহণযোগ্য। বিগত সরকারের সময় বিভিন্ন সময়ে ‘গায়েবি’ মামলার ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল । বর্তমান সরকারের সময়েও ‘গায়েবি’ মামলা ফিরে এসেছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
বিবৃতিতে আসক বলছে, তারা মনে করে, ঘটনার সঙ্গে ন্যূনতম সম্পর্ক নেই, এমনকি বিদেশে অবস্থানকালীন ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় এজাহারভুক্ত এবং গণমাধ্যমকর্মী যাঁরা আসামি হয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন, অনতিবিলম্বে তদন্ত সাপেক্ষে এ ধরনের হয়রানিমূলক মামলা থেকে তাঁদের নাম বাদ দিতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হয়র ন র ঘটন ঘটন য় তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
উদ্দেশ্যমূলক মামলা তদন্ত সাপেক্ষে প্রত্যাহার দাবি
ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে গত বছরের জুলাই ও আগস্টে আধিপত্য এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি অনেককে জড়ানো হয়েছে, যাদেরকে কারো কারো রাজনৈতিক বা ব্যবসায়িক প্রতিপক্ষ মনে হয়, বা যাদের সঙ্গে কারো কারো ব্যক্তিগত অন্তরঙ্গতা আছে। একইসঙ্গে জুলাই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত তদন্ত ও বিচার এবং পাশাপাশি যারা এইভাবে আইনের অপব্যবহার করছে তাদের ব্যাপারে জরুরি তদন্ত এবং ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো ২৩ বিশিষ্টজন স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি অভিনেতা এবং এশিয়াটিক গ্রুপের একজন পরিচালক ইরেশ জাকেরসহ পেশাদার সাংবাদিকদের অন্তর্ভুক্ত করে আওয়ামী লীগ দলীয় নেতৃবৃন্দ ও কর্মীদের সঙ্গে ৪০৮ জনকে আসামি করে ঢাকার মিরপুর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাটি দায়ের করেছেন জনৈক মোস্তাফিজুর রহমান, যার ছোট ভাই মাহফুজ আলম শ্রাবন (২১) গত বছর ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনে সরকার পতনের চূড়ান্ত মুহূর্তে ঢাকার মিরপুর এলাকায় গুলি বর্ষণে নিহত হয়েছেন। নিহত তরুণ বিএনপির কর্মী বলে বাদী মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন। বাদীর ভাই মাহফুজ আলম শ্রাবন ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানে জীবন উৎসর্গ করা তরুণদের একজন। নিহত তরুণের মৃত্যুর ঘটনায় সাধারণ নাগরিকদের সম্পৃক্ত করে মামলা দায়ের হওয়ায় ন্যায়বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা কিংবা সংকট সৃষ্টি হতে পারে। জুলাই-আগস্টের গণআন্দোলনে হতাহতের বিচার চেয়ে দেশজুড়ে যেসব মামলা হচ্ছে, এতে করে ভুক্তভোগীর পরিবার সঠিক বিচার পাবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা থেকে যায়।
বিবৃতিতে বিশিষ্টজন বলেন, গণহারে আসামি করায় মামলার তদন্ত ও বিচার বিঘ্নিত হওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে। তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দিতেও দীর্ঘসূত্রিতা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিবে বলে ধারণা করা যায়। এ পরিস্থিতিতে এটি স্পষ্ট যে, হয়রানি করার জন্য এ ধরণের মামলা দায়ের করা হচ্ছে, যার প্রভাব অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। কাজেই, এ ধরণের মামলা গ্রহণে সর্বোচ্চ সতর্কতা বজায় রাখার এবং ইরেশ জাকেরসহ অন্যান্য পেশাজীবী অরাজনৈতিক ব্যক্তিসহ সাধারণ নাগরিকদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত উদ্দেশ্যমূলক সৃজিত মামলাগুলো তদন্ত সাপেক্ষে অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার করা হোক।
এইচআরএফবি মনে করে, নিহত তরুণ শ্রাবনের হত্যাকাণ্ডে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা জরুরি এবং একই সাথে এ ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিরা যেন দায়মুক্তি না পায় সেজন্য প্রয়োজনীয় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছে। পাশাপাশি, উদ্দেশ্যমূলক সৃজিত মামলায় কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয়, সেজন্য সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়। দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে ইরেশ জাকের এবং অন্যান্য যাদের নাম ইচ্ছাকৃতভাবে বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে যোগ করা হয়েছে, তাদের নাম যেন বাদ দিতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেয়।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীরা হলেন- এইচআরএফবির ড. হামিদা হোসেন, অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, রাজা দেবাশীষ রায়, অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের শাহীন আনাম, নাগরিক উদ্যোগের জাকির হোসেন, সারা হোসেন, স্টেপসের রঞ্জন কর্মকার, বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সালেহ আহমেদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সঞ্জীব দ্রং, টিআইবি'র ড. ইফতেখারুজ্জামান, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ডা. ফওজিয়া মোসলেম, এএলআরডি'র শামসুল হুদা, নিজরা করি'র খুশী কবির, এএসএফ'র সরদার জাহাঙ্গীর হোসেন, বিডিইআরএম'র শিপন কুমার রবিদাস, বিলস এর সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ, ফেয়ারের দেওয়ান জামান, কাপেং ফাউন্ডেশনের পল্লব চাকমা, কর্মজীবনী নারীর রোকেয়া রফিক বেবী, নারীপক্ষের গীতা দাস, ন্যাডপোর আবদুস সাত্তার দুলাল, ওমেন উইথ ডিজাবিলিটিজ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের আশরাফুন্নাহার মিষ্টি।