স্বপ্নের পেছনে ছুটতে গিয়ে শৈশবে সংসার বুঝে গেছে বৈভব সূর্যবংশী। জমি তো মায়ের মতো। সারা বছর অন্ন জোগায়। বোধ-বুদ্ধি হতেই সেই জমি বিক্রির সাক্ষী সে। বাবার কাজ ছেড়ে দেওয়া, সংসারে অভাব নেমে আসা দেখেছে। ১৪ বছর বয়সে মাত্র ৩৫ বল খেলে আইপিএলে রেকর্ড গড়ে সেঞ্চুরির সময় বৈভবের চোখে হয়তো ভাসছিল, বাবার জায়গায় ভাইয়ের পরিবারের হাল ধরার দৃশ্য।
ম্যাচ জয়ের পর স্মৃতির সেই ঝাপি খুলে দিয়েছে বৈভব, ‘আমাদের সংসার খুব কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে গেছে। বাবা কাজ ছেড়ে দিলেন আমার অনুশীলনের জন্য। মা রাতে তিন ঘণ্টা ঘুমাতেন। রাতে উঠে আমাদের অনুশীলনে যাওয়ার জন্য খাবার প্রস্তুত করতে হতো তাকে। বাবার কাজ ভাই করতে শুরু করলেন। আমি আজ যা কিছু তাদের জন্য।’
বৈভবের প্রতিভা, পরিশ্রমের গল্প সবচেয়ে কম বয়সে আইপিএলের নিলামে জায়গা পাওয়ার ও ১ কোটি ১০ লাখ রুপিতে দল পাওয়ার পরই চাউর হয়েছিল। সবচেয়ে কম বয়সে আইপিএলে অভিষেক হয় তার। এরপর সবচেয়ে কম বয়সে আইপিএল ইতিহাসের দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরির মালিক বনে গেছে তরুণ এই বাঁ-হাতি ব্যাটার।
এই তরুণকে প্রস্তুত করেছেন বিহারের এক একাডেমির কোচ মানিশ ওঝা। মাজাঘষা করেছেন ভারতের ন্যাশনাল ক্রিকেট একাডেমি ও অনূধ্র্ব-১৯ দলের কোচ ভিভিএস লক্ষ্মণ। আর তাকে আত্মবিশ্বাস দিয়ে, সময় ও সুযোগ দিয়ে তারকা বানিয়ে দিয়েছেন রাহুল দ্রাবিড়। ছোট্ট বৈভবও যে শিখে গেছেন ক্যারিয়ার, ত্যাগ প্রত্যয়গুলো।
যার ব্যাখ্যা পাওয়া যায় মনোজ ওঝার কথায়, ‘খাসি ও মুরগির মাংস দেখলে সে পাগল হয়ে যায়। যতই দেন না কেন, সাবাড় করে দেবে। সে খেতও খুব মজা করে। যে কারণে ওর চেহারায় নাদুসনুদুস ভাবটা এখনো রয়ে গেছে। কিন্তু এখন সে খাসির মাংস খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে, ডাক্তারের নির্দেশ। পিজ্জা আর খায় না। ওইটুকু ছেলের জন্য এগুলো কঠিন। কিন্তু কারণটা সে বুঝতে শিখেছে।’
বৈভবকে আইপিএল নিলামের ঠিক আগে ট্রায়ালে ডেকেছিল রাজস্থান রয়েলস। রাহুল দ্রাবিড়ের কাছে তাকে পাঠিয়েছিলেন লক্ষ্মণ। তাকে অনূর্ধ্ব-১৯ দলেও ডেকেছিলেন লক্ষ্ণণ। সেখানে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৩৬ করে রান আউট হয়ে ড্রেসিংরুমে কেঁদেছিল বৈভব। লক্ষ্মণ তাকে বলেছিলেন, ‘আমরা শুধু রান দেখি না, দক্ষতা-প্রতিভাও দেখি।’
বৈভব আইপিএলে মাত্র ৩ ইনিংস খেলেছেন। অভিষেকেই প্রথম বলে ছক্কাসহ ঝড়ো ইনিংসে আগমণী বার্তা দেয়। এমন একজনকে এতো দেরিতে কেন খেলালেন ভারতের হয়ে টি-২০ বিশ্বকাপ জয়ী কোচ দ্রাবিড়। ব্যাখ্যায় রাজস্থান কোচ বলেন, ‘সে অনুশীলনে খুব ভালো করছিল। কিন্তু আমরা তাকে আইপিএলের পরিবেশ, চাপ, ম্যাচ পরিস্থিতির সঙ্গে পরিচিত করতে চাইছিলাম। সরাসরি তাকে আইপিএলের মতো দর্শকভরা মঞ্চে নামিয়ে দিলে হিতে বিপরীত হতে পারত। আমরা চাইনি সে ভয় পাক।’ বৈভব অবশ্য সেঞ্চুরি করেই বলেছে, ‘আমি ভয় পাই না।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
সম্পর্কের ৫০ বছর: বাংলাদেশে প্রথমবার চীনা ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী
বাংলাদেশ ও চীনের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ঢাকায় প্রথমবারের মতো শুরু হয়েছে চীনা ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টাশালী এক্সিবিশন হলে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় এই প্রদর্শনীর।
‘দ্য ল্যানটিং লিগ্যাসি’ প্রতিপাদ্যে সাত দিনব্যাপী এই প্রদর্শনী যৌথভাবে আয়োজন করেছে বাংলাদেশে চীনা দূতাবাস, বাংলাদেশ-চীন ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিলেন চীনা দূতাবাসের অ্যাটাশে সুন খ্যংনিং ও বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারের সাধারণ সম্পাদক এইচ এম জাহাঙ্গীর আলম রানা।
উদ্বোধনী বক্তৃতায় সুন খ্যংনিং বলেন, “আমরা এই বছর প্রথমবারের মতো চীনা ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনীর আয়োজন করেছি। তাড়াহুড়া করে এই আয়োজন করা হয়েছে, তাই সুন্দরভাবে আয়োজন করতে পারিনি। এর জন্য ক্ষমাপ্রার্থী; তবুও আশা করি, দর্শকরা চীনা ক্যালিগ্রাফির সৌন্দর্য উপভোগ করবেন।”
চীন-বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকীতে দুই দেশের সম্পর্ক আরো উচ্চ স্তরে পৌঁছাবে এবং গভীর হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
জাহাঙ্গীর আলম রানা বলেন, চীনা ক্যালিগ্রাফি তিন হাজার বছরের পুরোনো। তুলি, কালি, কলম ও কাগজ দিয়ে চীনা শিল্পীরা নান্দনিক ক্যালিগ্রাফি তৈরি করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে চীনা ক্যালিগ্রাফিভক্ত লিউ চেন, কো তাহাই, হু সংসহ বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউটের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/হাসান/রাসেল