ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বাঁধলে ক্ষতি হবে কার
Published: 29th, April 2025 GMT
গত বৃহস্পতিবার পাকিস্তান সরকারের মধ্যে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছিল।
প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সভাপতিত্বে জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠকে উপস্থিত সরকারি ও সামরিক কর্মকর্তাদের পরিশ্রান্ত, হতাশ ও ক্ষুব্ধ দেখাচ্ছিল। তাঁদের অস্বস্তির উৎস ছিল ভারত।
দুই দিন আগে ভারতশাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পাইনবন ও বরফে আচ্ছাদিত তৃণভূমি থেকে রক্তক্ষয়ী হামলার খবর আসে। একদল সশস্ত্র ব্যক্তি সেখানে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের ওপর গুলি চালায়। ২৬ জন নিহত হন, আহত হন আরও কয়েক ডজন।
ভারতের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো খুব দ্রুত এ হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের যোগসূত্র আছে বলে দাবি করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, আহত পর্যটকেরা মাটিতে লুটিয়ে কাতরাচ্ছে, তাঁদের পরিবারের সদস্যরা সাহায্যের জন্য আবেদন জানাচ্ছেন। সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা না থাকায় আহতদের উদ্ধার করতে হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয়।
আরও পড়ুনভারতের সেনাবাহিনী যুদ্ধের জন্য কতটা সক্ষম২৮ এপ্রিল ২০২৫আরও পড়ুনভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ লাগলে যুক্তরাষ্ট্র কী করবে২৭ এপ্রিল ২০২৫কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে বেসরকারি নাগরিকদের লক্ষ্য করে চালানো হামলার মধ্যে এটা সবচেয়ে বড়।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘এই জঘন্য হামলার পেছনে যারা জড়িত, তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে.
একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী যারা নিজেদের ‘কাশ্মীর রেজিস্ট্যান্স’ (মনে করা হয়, এই গোষ্ঠীটি লস্কর-ই-তৈয়বার সঙ্গে যুক্ত) বলে পরিচয় দেয়, তারা হামলার দায় স্বীকার করে।
কাশ্মীরের সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক এসপি বৈদ অভিযোগ করেন, ‘এটা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মাধ্যমে ঘটেছে।’ তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানের বিশেষ বাহিনী, ‘সন্ত্রাসবাদের ছদ্মবেশে এই হামলাগুলো চালানো হচ্ছে।’
ভারত সরকার খুব দ্রুত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ শাস্তিমূলক পদক্ষেপ ঘোষণা করে। এর মধ্যে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত, ভিসা বাতিল ও কূটনৈতিক সম্পর্ক অবনমন। পাকিস্তানের সঙ্গে প্রধান সীমান্ত বন্ধ করে দেয়। পাকিস্তান মঙ্গলবারের হামলায় তাদের কোনো ভূমিকা থাকার কথা অস্বীকার করেছে। ভারতের দাবিকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলেছে।
সর্বশেষ হামলাটি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের ভারত সফরের সময়। ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক বাড়াতে এবং চীনের বিরুদ্ধে প্রধান মিত্র হিসেবে ভারতকে সাধুবাদ জানানোর উদ্দেশ্য থেকেই তাঁর এ সফর। ঐতিহাসিকভাবে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার বৈরিতার লাগাম টেনে ধরার প্রধান কারিগর হিসেবে ভূমিকার রেখেছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু এবারে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বের কাছ থেকে ভারত পুরোপুরি সমর্থন পাবে বলে মনে হচ্ছে।সিন্ধুর পানিপ্রবাহে ওপর ভারতের অবরোধের ঘোষণা পাকিস্তানজুড়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে। কেননা এই নদীগুলোর পানির ওপরেই পাকিস্তানের বেশির ভাগ অংশের কৃষির উৎপাদন নির্ভর করে।
১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় সম্পাদিত হওয়া চুক্তিটি নানা সময়ের সামরিক সংঘাত ও কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার পরও অক্ষত ছিল। এটা স্থগিতের ঘোষণা অভূতপূর্ব। এটি পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশীর মধ্যে বিরাজমান ভঙ্গুর সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটি প্রধান এক বাঁকবদল।
নদীর পানিপ্রবাহে ভারত যদি কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করে, তবে সেটা পাকিস্তানের জন্য অপরিসীম অভিঘাত সৃষ্টি করবে। ফসলের কম ফলন ও কৃষি উৎপাদনের খরচ বাড়া—দুটি ঘটনায় ঘটবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বিজ্ঞানী পারভেজ হুদভয় মিডল ইস্ট আইয়ের কাছে, ভীষণ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘চুক্তি থেকে বের হয়ে আসা মানে যুদ্ধের আহ্বান জানানো। পারমাণবিক শক্তিধর দুটি দেশের মধ্যকার সেই যুদ্ধে কেউই জিততে পারবে না।’
বৃহস্পতিবার জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তান কঠোর ভাষায় পাল্টা পদক্ষেপ ঘোষণা করে। এর মধ্যে ভারতের সঙ্গে ভিসা ও বাণিজ্য বন্ধ, কূটনীতিকদের বহিষ্কার ও ভারতের বিমানের জন্য পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়।
পাকিস্তানের সাবেক কূটনীতিক আতা মুনিম শহীদ বলেছেন, ‘সম্পূর্ণভাবে নিজেদের দেশে তৈরি হওয়া বিদ্রোহীদের ব্যাপারে পাকিস্তানকে এই প্রথম দোষারোপ করল না ভারত। আমরা সব সময় সন্ত্রাসবাদের নিন্দা করি, যেহেতু আমরা এর ভুক্তভোগী।’
যদিও পাকিস্তান বিদ্রোহীদের সমর্থন দেয়, দীর্ঘদিন ধরে করে আসা ভারতের এ অভিযোগের কিছু বৈধতা আছে। কিন্তু নরেন্দ্র মোদির অতিডানপন্থী রাজনীতিও সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের গুরুত্বপূর্ণ একটি কারণ।
মোদির গত এক দশকের শাসনামলে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদী পদক্ষেপগুলোর কারণে ভারতীয় সমাজ মারাত্মকভাবে বিভাজিত হয়েছে। অতিডানপন্থী হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক কর্মীরা মুসলমানদের বিদেশি অনুপ্রবেশকারী বলে ঠাট্টা করেছে এবং ভারতীয় সমাজের সৌহার্দ্যের মূলে আঘাত করেছে।
সংখ্যালঘু মুসলমানদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি ভারতে এখন নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে কাশ্মীরের আধা স্বায়ত্তশাসিত মর্যাদা বাতিল করে কেন্দ্রীয় সরকারের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা হয়। কাশ্মীরের নেতাদের ও স্বাধীন আন্দোলনকারীদের কারাগারে পাঠানো হয় এবং কারফিউ জারি করা হয়।
পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদের জন্য দোষারোপ করা মোদির রাজনীতির একটি অন্যতম বিষয়ে পরিণত হয়েছে। পাকিস্তানি বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী সফলভাবে পাকিস্তানবিরোধী মনোভাবকে তার নির্বাচনী প্রচারণার হাতিয়ার করে তুলতে পেরেছেন।
২০১৯ সালে কাশ্মীরের পুলওয়ামায় নিরাপত্তাকর্মীদের ওপর ভয়াবহ হামলার প্রতিক্রিয়ায় ভারত পাকিস্তানে বিমান হামলা করেছিল। যুক্তরাষ্ট্র ও আরব দেশগুলোর মধ্যস্থতায় দুই পক্ষের মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধ বাঁধেনি। এর কয়েক বছর আগে, কাশ্মীরে ভারতের সেনাঘাঁটিতে হামলাকে কেন্দ্র করে আরেক দফা বৈরিতা তৈরি হয়েছিল।
সর্বশেষ হামলাটি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের ভারত সফরের সময়। ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক বাড়াতে এবং চীনের বিরুদ্ধে প্রধান মিত্র হিসেবে ভারতকে সাধুবাদ জানানোর উদ্দেশ্য থেকেই তাঁর এ সফর। ঐতিহাসিকভাবে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার বৈরিতার লাগাম টেনে ধরার প্রধান কারিগর হিসেবে ভূমিকার রেখেছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু এবারে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বের কাছ থেকে ভারত পুরোপুরি সমর্থন পাবে বলে মনে হচ্ছে।
বিচক্ষণতাকে অবশ্যই জিততে হবে। দুই দেশেই বিপুলসংখ্যক গরিব মানুষ বাস করে। যুদ্ধ বেধে গেলে তাদের নিজেদের রক্ষা করার মতো সম্বল সামান্যই আছে।
বি জে সাদিক ব্রিটিশ-পাকিস্তানি লেখক, সাংবাদিক ও কবি
মিডলইস্ট আই থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক টন ত ক র জন য ন প রব র জন ত সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সম্পর্কের ৫০ বছর: বাংলাদেশে প্রথমবার চীনা ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী
বাংলাদেশ ও চীনের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ঢাকায় প্রথমবারের মতো শুরু হয়েছে চীনা ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টাশালী এক্সিবিশন হলে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় এই প্রদর্শনীর।
‘দ্য ল্যানটিং লিগ্যাসি’ প্রতিপাদ্যে সাত দিনব্যাপী এই প্রদর্শনী যৌথভাবে আয়োজন করেছে বাংলাদেশে চীনা দূতাবাস, বাংলাদেশ-চীন ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিলেন চীনা দূতাবাসের অ্যাটাশে সুন খ্যংনিং ও বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারের সাধারণ সম্পাদক এইচ এম জাহাঙ্গীর আলম রানা।
উদ্বোধনী বক্তৃতায় সুন খ্যংনিং বলেন, “আমরা এই বছর প্রথমবারের মতো চীনা ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনীর আয়োজন করেছি। তাড়াহুড়া করে এই আয়োজন করা হয়েছে, তাই সুন্দরভাবে আয়োজন করতে পারিনি। এর জন্য ক্ষমাপ্রার্থী; তবুও আশা করি, দর্শকরা চীনা ক্যালিগ্রাফির সৌন্দর্য উপভোগ করবেন।”
চীন-বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকীতে দুই দেশের সম্পর্ক আরো উচ্চ স্তরে পৌঁছাবে এবং গভীর হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
জাহাঙ্গীর আলম রানা বলেন, চীনা ক্যালিগ্রাফি তিন হাজার বছরের পুরোনো। তুলি, কালি, কলম ও কাগজ দিয়ে চীনা শিল্পীরা নান্দনিক ক্যালিগ্রাফি তৈরি করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে চীনা ক্যালিগ্রাফিভক্ত লিউ চেন, কো তাহাই, হু সংসহ বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউটের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/হাসান/রাসেল