পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরে মামলা মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) বিকালে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চিলারং ইউনিয়নে গণসংযোগকালে তিনি এ আহ্বান জানান। 

বিএনপির মহাসচিব এসময় শেখ হাসিনার শাসন আমলে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর চালানো নির্যাতনের কথা তুলে ধরেন। গুম, খুন, ভিত্তিহীন মামলা, লুটপাট, টাকা পাচার, বাক স্বাধীনতা হরণ ও ভোট চুরিসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি। 

আরো পড়ুন:

জুলাই গণহত্যা: শেখ হাসিনাসহ ৪০৮ জনের বিরুদ্ধে আরেক মামলা

হাসিনা-রেহানাসহ ২২ জনের গ্রেপ্তার-সংক্রান্ত প্রতিবেদন ১২ মে

শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‍“আমাদের নেতাকর্মীদের গুম করা হয়েছে। লাখ লাখ নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে, তাদের ঘরে থাকতে দেননি আপনি। আমরা তো কোথাও পালিয়ে যাইনি। আদালতে মিথ্যা মামলা আইনের মাধ্যমে ফেইস (মোকাবিলা) করেছি। উকিল ধরে জামিন নিয়েছি। আপনি (শেখ হাসিনা) পালিয়ে আছেন কেন? আপনিও মামলা লড়েন। আপনি দেশে এসে দাড়ান না দেখি।”

জনগণের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, “আপনারা অনেকে মনে করেন শেখ হাসিনা আবারো দেশে ফিরে আসবেন। তিনি তো ১৫ বছর দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার বাবা শেখ মুজিবুর রহমান একজন বিখ্যাত মানুষ ছিলেন। তার তো দেশ থেকে পালানোর কথা ছিল না। তিনি পালালেন কেন? কারণ তিনি একজন ডাইনি ছিলেন। জনগণের ওপর এমন নির্যাতন করেছেন যে তিনি পালাতে বাধ্য হয়েছেন। জনগণ যদি সেদিন তাকে পেত তাহলে ছিঁড়ে খেত।” 

তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের বলেন, “হাসিনা দেশে ফিরে রাজনীতি করলে আমাদের কিছু করতে হবে না, জনগণই তাকে দেখে নেবে।” 

মির্জা ফখরুল বলেন, “বিএনপির নেতাকর্মীরা যেন আওয়ামী লীগের মতো অন্যায় না করে। এতে মানুষ ভালোবাসবে না। দলের কোনো নেতাকর্মীরা অন্যায় করলে যেন জেলার নেতারা তাদের শক্ত হাতে দমন করেন, তারা যেন অন্যায়কারীদের পুলিশের হাতে তুলে দেন। তাই অপকর্ম বন্ধ করুন, না হলে আওয়ামী লীগের মতো অবস্থা হবে।” 

ঢাকা/মঈনুদ্দীন/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম র জ ফখর ল ইসল ম আলমগ র ব এনপ আওয় ম ল গ ন ত কর ম ব এনপ ফখর ল

এছাড়াও পড়ুন:

পুনর্বহালের দাবি জানালেন অপসারিত কাউন্সিলররা

অন্তর্বর্তী সরকার দেশের বিভিন্ন সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় নিয়োগ দেওয়া প্রশাসকদের এক নোটিশে অপসারণ করলেও তাঁরা সবাই নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে করেননি। অপর দিকে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হলেও স্বপদে বহাল আছেন।

বাংলাদেশ সিটি ও পৌর কাউন্সিলর অ্যাসোসিয়েশন আজ রোববার জাতীয় প্রেসক্লাব অডিটরিয়ামে কাউন্সিলর সমাবেশের আয়োজন করে। সেখানে বক্তারা এসব অভিযোগ করেন। এ সময় বিভিন্ন সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার অপসারিত কাউন্সিলররা সরকারের কাছে তাঁদের স্বপদে পুনর্বহালের দাবি জানান।

গত ২৬ সেপ্টেম্বর দেশের ১২টি সিটি করপোরেশন ও ৩২৩টি পৌরসভার সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরদের অপসারণ করে দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। পরে কাউন্সিলরদের স্থলে প্রশাসক নিয়োগ দেয় সরকার।

এই প্রশাসকদের বিষয়ে বক্তারা বলেন, দেশের বিভিন্ন সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় নিয়োগ দেওয়া প্রশাসকদের সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। অন্তর্বর্তী সরকারের নিয়োগ দেওয়া এসব প্রশাসক আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সহযোগী ছিলেন। জনপ্রতিনিধিদের অপসারণ করে সরকার সাধারণ মানুষদের বঞ্চিত করছে।

সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ ও স্বপদে পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে কাউন্সিলররা এই সমাবেশের আয়োজন করেন।

সমাবেশে ঝিনাইদহের একটি পৌরসভার সংরক্ষিত ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর বুলবুলি ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছি। কিন্তু এখন সেবা দিতে পারছি না। পৌরসভার যেসব কর্মকর্তাদের প্রশাসক পদে বসানো হয়েছে। তাঁরা মাসে এক দিন অফিসে আসেন। অথচ তাঁরাই ফ্যাসিবাদী সরকারের সহযোগী ছিলেন।’ তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে আমার স্বামী-সন্তান সবাই মামলা হামলার শিকার হয়েছিল। আওয়ামী–সমর্থিত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নির্বাচন করতে গিয়ে তারা বাড়িতে ঘুমাতেও পারত না।’

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আশরাফুল হাসান বাচ্চু বলেন, ‘১৫ বছর ধরে আমরা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। অথচ সব কাউন্সিলরকে এক পাল্লায় নিয়ে অপসারণ করা হলো। যাঁরা অভিযুক্ত ছিলেন, আইনি পক্রিয়ায় তাঁদের অপসারণ করলে আমাদের কোনো আপত্তি ছিল না।’

এই সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর জানান, তিনি ২০১৩ সালের ২৬ অক্টোবর ১৮–দলীয় ঐক্যজোটের ব্যানারে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে হরতাল পালন করতে গিয়ে র‍্যাবের গুলিতে গুরুতর আহত হয়েছিলেন। রাজশাহীর কনস্টেবল সিদ্ধার্থ হত্যা মামলায় এখনো আসামি হিসেবে আছেন বলেও জানান তিনি।

সমাবেশে অংশ নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আলী নাছের খান বলেন, ‘কলমের খোঁচায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অপসারণ দুঃখজনক। এটার সঙ্গে আমলারা জড়িত। প্রশাসক হয়ে তাঁরা এখন রাতারাতি কোটিপতি হয়ে যাচ্ছেন।’

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অর্থ দিয়ে ভোট কেনাবেচার অভিযোগ তুলে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি বলেন, দ্রুত সময়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন করে সাধারণ জনগণের ভোগান্তি লাঘব করতে হবে। পাশাপাশি ছাত্রজনতার আন্দোলনে হামলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার করতে হবে।

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, হয় স্থানীয় সরকার নির্বাচন দিতে হবে, অন্যথায় ফ্যাসিবাদবিরোধী কাউন্সিলরদের স্বপদে পুনর্বহাল করতে হবে। প্রয়োজনে গণভোটের আয়োজন করে জনগণের মতামত জানতে হবে।

নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের অপসারণের কারণে প্রান্তিক জনগণ ভোগান্তিতে রয়েছেন উল্লেখ করে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, যাচাই-বাছাই করে তাঁদের স্বপদে পুনর্বহাল করা উচিত। এ সিদ্ধান্তের জন্য সাত থেকে আট মাস সময় ব্যয় করার কোনো যৌক্তিকতা নেই।

সমাবেশে ফ্যাসিবাদবিরোধী কাউন্সিলরদের দুই সপ্তাহের মধ্যে স্বপদে পুনর্বহালের সময় বেঁধে দেন বাংলাদেশ সিটি ও পৌর কাউন্সিলর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘ন্যথায় আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজধানীতে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করতে বাধ্য হব।’

বাংলাদেশ সিটি ও পৌর কাউন্সিলর অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়ার সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পৌর কাউন্সিল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আকন, দেশের বিভিন্ন সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার কাউন্সিলররা।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার দুই শতাধিক সাবেক কাউন্সিলর।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাখাইনে ‘মানবিক করিডর’ দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত স্থগিতের দাবি রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের
  • ট্রাম্প কানাডাকে ‘ভেঙে ফেলতে’ চেয়েছিলেন
  • পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা
  • মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পুলিশের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান
  • হামদর্দের গাজার জনগণের প্রতি মানবিক সহায়তা
  • প্রশাসক নিয়োগের বিরুদ্ধে রিট, ইউনিয়ন পরিষদটিতে চার মাস ধরে সব সেবা বন্ধ
  • সংসদে সংরক্ষিত আসন, না তৃণমূল রাজনীতিতে অংশগ্রহণের সুযোগ?
  • স্বচ্ছতার জন্য ডিএনসিসির প্রকল্পের তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে:
  • পুনর্বহালের দাবি জানালেন অপসারিত কাউন্সিলররা