জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, সরকার রাজস্ব আয় না বাড়িয়ে এবং বেশি ঋণের মাধ্যমে বেশি ব্যয় করে ‘গণি মিয়ার’ মতো সমস্যায় পড়তে চায় না। অবশ্যই আমাদের ব্যয়ের সঙ্গে আয়ের সামঞ্জস্য থাকতে হবে।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) কার্যালয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সামষ্টিক অর্থনীতির অংশীদারত্ব ও রাজস্ব পদক্ষেপ নিয়ে যৌথভাবে এ সেমিনার আয়োজন করে ইআরএফ এবং ফরেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি বা এফআইসিসিআই।

ইআরএফ–এর সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের সঞ্চালনায় সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ। ফরেন চেম্বারের পক্ষে বক্তব্য দেন সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক টি আই এম নুরুল কবির। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার।

অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, ‘আমরা যদি বেশি পরিমাণ ঋণ করি, আমাদের খরচ যদি বড় করি এবং সেই খরচ যদি “গণি মিয়ার” মতো ঋণ করে হয়, তাহলে “গণি মিয়া” যে রকম সমস্যায় পড়বে, বাংলাদেশ রাষ্ট্র নামক “গণি মিয়া’ও একই সমস্যায় পড়বে।’

আবদুর রহমান খান বলেন, ‘অবশ্যই আমাদের ব্যয়ের সঙ্গে আয়ের সামঞ্জস্য থাকতে হবে। যাতে করে আমরা আমাদের ঋণের বোঝা না বাড়াই এবং পরবর্তী প্রজন্মের ওপরও ঋণের এ বোঝা না বাড়ে।’

‘গণি মিয়া’ বাংলাদেশে খুব সাধারণ ও পরিচিত একটি নাম, যা অধিকাংশ সময় রূপক বা উপমা হিসেবে ব্যবহার হয়। ‘গণি মিয়া’ নামটি সাধারণত একজন দরিদ্র কৃষকের প্রতীক, যিনি সীমিত আয়ের মধ্যেও যদি অতিরিক্ত খরচ করেন এবং ধারদেনা করে সেই খরচ চালান।

অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, ‘এবারের বাজেটের আকার যেন যথাসম্ভব বাস্তবসম্মত হয়, খুব উচ্চাভিলাষী না হয়—প্রধান উপদেষ্টা ও অর্থ উপদেষ্টা সে নির্দেশনা দিয়েছেন। এ কারণে আমরা বাজেটে ব্যয় কমিয়ে এবং আয় বাড়িয়ে কীভাবে এ আয়-ব্যয়ের দূরত্ব কমাতে পারি, সে চেষ্টা করছি।’

সেমিনারে পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ বলেন, জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধি নিয়ে আমাদের মধ্যে যে মুগ্ধতা রয়েছে, সেটি আপাতত বাদ দিতে হবে। আপাতত ৩-৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়েও যদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো সামাল দেওয়া যায়, সেটি বড় বিষয় হবে। সে ক্ষেত্রে জিডিপির প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমে গেলে দুঃখ পাওয়ার কিছু নেই।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সমস য য় আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

কর অব্যাহতির রাস্তা সামনে কঠিন হবে

কর অব্যাহতির বিষয়ে নীতি প্রণয়ন করা হবে জানিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেছেন, ব্যবসায়ীরা শুধু করছাড় চাচ্ছেন। তবে সামনে কর অব্যাহতির রাস্তা কঠিন হয়ে যাবে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) অডিটোরিয়ামে ‘সামষ্টিক অর্থনীতির দৃষ্টিভঙ্গি এবং রাজস্ব ব্যবস্থা’ শীর্ষক সেমিনারে এমন মন্তব্য করেন তিনি। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. মাসরুর রিয়াজ।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, অর্থ উপদেষ্টা নির্দেশনা দিয়েছেন কর অব্যাহতি বিষয়ে নীতি তৈরি করতে। সেই নীতি আইনে প্রতিফলিত হবে। এ ক্ষেত্রে এনবিআরের প্রস্তাব হলো, সরকার কিংবা এনবিআর কোনো কর অব্যাহতি দিতে পারবে না। এ ক্ষমতা যাবে সংসদের হাতে। এর মানে হলো— কারও সঙ্গে একটু ভালো সম্পর্ক হলে অথবা বোঝাতে সক্ষম হলে কর অব্যাহতি পেয়ে যাবে– এমনটা থাকছে না। কর অব্যাহতির রাস্তা সামনের দিনে কঠিন হয়ে যাবে। এই ধরনের নীতি প্রণয়নের দিকে যাচ্ছে সরকার। 
তিনি বলেন, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে এতদিন ব্যাপক কর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে এর দরকারও ছিল। এখন নতুন করে ভাবতে হবে। রাজস্ব আয়ের চেয়ে ব্যয় অনেক বেশি। দেশের চাহিদা মেটানোর মতো রাজস্ব আয় হচ্ছে না। রাজস্ব কম কেন– সেই প্রশ্নও তুলছে জনগণ। এসব জায়গায় আরেকটু সচেতন হলে আগামী বাজেটের আকার কিছুটা ছোট হতে পারে। 
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, রাজস্ব আয়ের মধ্যে পরোক্ষ করের পরিমাণ অনেক বেশি, যা সভ্য দেশের লক্ষণ নয়। প্রত্যক্ষ কর আদায় বাড়াতে হবে। যে পরিমাণ কর আদায় করার কথা ছিল, তা হচ্ছে না। করযোগ্য সবার থেকে কর আদায় করতে না পারার কারণে করজাল সংকুচিত। কর আদায় বাড়ানোর বিষয়ে নতুন করে ভাবা হচ্ছে। 
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, একদিকে আয় বাড়ানো, অন্যদিকে নীতি-সহায়তা দেওয়ার মধ্যে ভারসাম্য আনা বড় চ্যালেঞ্জ। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো সুশাসনের ঘাটতি। যার যে কাজ করা দরকার, তিনি তা করছেন না। ফলে পদে পদে ভোগান্তি হচ্ছে। সে জন্য আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা জরুরি। এ বিষয়ে কাজ চলছে। 
তিনি বলেন, অর্থনীতির খারাপ সময়েও রাজস্ব আদায় আগের চেয়ে বাড়ছে। এপ্রিলে প্রবৃদ্ধি আরও ভালো হবে। যারা কর দিচ্ছেন না, তাদের নোটিশ করা হচ্ছে। আগামী বছর থেকে কোম্পানির কর রিটার্ন অনলাইনে দাখিলের নিয়ম করা হবে। 
মাসরুর রিয়াজ বলেন, রমজানের আগে নিত্যপণ্যে করছাড়, পর্যাপ্ত আমদানি এবং সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় খাদ্য মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। গত জুলাইয়ের আগ পর্যন্ত টাকা ছাপিয়ে যেভাবে ব্যাংকে তারল্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে, এখন তা কমে আসছে। টাকা পাচার কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডলার বিক্রি কমেছে। এর ফলে রিজার্ভ ইতিবাচক। তিনি বলেন, যারা ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে কর অব্যাহতি পেয়ে আসছেন, তাদের বিষয়ে এনবিআরকে নতুন করে ভাবা দরকার। 
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নির্বাহী পরিচালক নুরুল কবীর। ইআরএফ প্রেসিডেন্ট দৌলত আক্তার মালা সভাপতিত্ব করেন। সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সঞ্চালনা করেন। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কর অব্যাহতির রাস্তা সামনে কঠিন হবে