ভারতের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করতে চায় চীনের কোম্পানিগুলো
Published: 29th, April 2025 GMT
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতির জেরে চীনের ব্যবসা–বাণিজ্যের ক্ষতি হচ্ছে। সব দেশই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, কিন্তু সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চীন। সেই তুলনায় চীনের প্রতিবেশী ও প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ভারতের ওপর শুল্ক অনেকটাই কম। চীনের ওপর শুল্ক যেখানে ১৪৫ শতাংশ, সেখানে ভারতের পণ্যে শুল্ক মাত্র ২৬ শতাংশ। এ বাস্তবতায় নতুন এক সমীকরণ তৈরি হয়েছে।
এই বাস্তবতায় চীনের ব্যবসায়ীরা ভারতের রপ্তানিকারকদের দ্বারস্থ হয়েছেন। লক্ষ্য হলো, চীনের তৈরি পণ্য ভারতীয় কোম্পানির মাধ্যমে মার্কিন মুলুকে পাঠানো। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে গ্রাহক ধরে রাখতে মরিয়া চীনা কোম্পানিগুলোর ভরসা এখন ভারত।
চীনের গুয়াংজু শহরে চলছে বিশ্বের বৃহত্তম বাণিজ্য মেলা ক্যান্টন ফেয়ার। ২৭ এপ্রিল এই মেলার দ্বিতীয় পর্ব শেষ হয়েছে। আগামী ৫ মে থেকে এর তৃতীয় পর্যায় শুরু হবে। ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশনের ডিরেক্টর জেনারেল অজয় সহায় জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানির জন্য অনেক চীনা কোম্পানি ভারতীয় কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করেছে ওই মেলায়। এর বদলে ভারতীয় কোম্পানিগুলোকে কমিশনও দিতে রাজি চীনা কোম্পানিগুলো। অজয় জানিয়েছেন, হ্যান্ড টুলস, ইলেকট্রনিকস ও হোম অ্যাপ্লায়েন্সের মতো খাত থেকেই এসব অনুরোধ বেশি আসছে।
চীন থেকে এখন যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো অধিকাংশ পণ্যেই শুল্ক আরোপিত হবে ১৪৫ শতাংশের বেশি। ভারতের পণ্যেও ২৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। কিন্তু ৯০ দিনের স্থগিতাদেশের জন্য এখন ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে শুল্ক লাগবে ১০ শতাংশ। এই সুযোগ কাজে লাগাতে চাইছে চীনের কোম্পানিগুলো। তবে শুধু চীনা কোম্পানি নয়, চীনে কর্মরত বিভিন্ন মার্কিন কোম্পানিও একই পন্থা অবলম্বন করছে।
ভারতের জলন্ধরের কোম্পানি ওইকেই টুলস বিভিন্ন ধরনের হ্যামার, কোল্ড স্ট্যাম্প মেশিনের মতো টুলস তৈরি করে। ওই কোম্পানির সঙ্গে চীনে কারখানা থাকা মার্কিন কোম্পানি যোগাযোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানির। এ বিষয়ে কোম্পানিটির রপ্তানিবিষয়ক কর্মকর্তা সিদ্ধান্ত আগরওয়াল বলেছেন, ‘চার থেকে পাঁচটি কোম্পানি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।’ ভিক্টর ফর্জিংস নামের এক কোম্পানির কাছেও চীনা কোম্পানি থেকে একই ধরনের অনুরোধ এসেছে। ওই কোম্পানি ব্যবসা বৃদ্ধিতে এই সুযোগ কাজে লাগাতে চাইছে।
ভারতে চীনের বিনিয়োগে নানা ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। বিশেষ করে ২০২০ সালের সীমান্ত সংঘর্ষের পর এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। ফলে চীনের কোম্পানিগুলোর পক্ষে ভারতে কারখানা স্থাপন করা বা ভারতের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করা কঠিন। সে কারণে ক্যান্টন মেলায় চীনের কোম্পানিগুলোর অনুরোধ, তাদের পণ্য যেন চীনের ব্র্যান্ড বা ভারতীয় কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সহ–ব্র্যান্ডে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা হয়।
ট্রাম্পের শুল্কের জেরে সাময়িক কিছু সমস্যা হলেও ভারতের জন্য নতুন বেশ কিছু সুযোগ তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন মার্কিন কোম্পানি চীনের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে চাইছে। সে লক্ষ্যে চীনের কারখানায় উৎপাদন কমিয়ে ভারতে উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে তারা। অ্যাপলও এই পন্থা নিয়েছে। তবে এই সুযোগ ভারত ঠিক কতটা নিতে পারবে, তা নির্ভর করবে ভারতের সক্ষমতার ওপর, বিশ্লেষকেরা তেমনটাই মনে করছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
সুদানে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের ওপর হামলার ঘটনায় জাতিসংঘ মহাসচিবের তীব্র নিন্দা
সুদানে জাতিসংঘের এক ঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় ছয় শান্তিরক্ষী নিহত হয়েছেন। তাঁরা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘আমি সুদানের কাদুগলিতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর লজিস্টিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে নৃশংস ড্রোন হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীদের লক্ষ্য করে হামলা আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে।’
সুদানের কোরদোফান অঞ্চলের কাদুগলি শহরে অবস্থিত জাতিসংঘের ভবনটিতে গতকাল শনিবার এ হামলা হয়।
গুতেরেসের বিবৃতিতে বলা হয়, হামলায় আরও আট শান্তিরক্ষী আহত হয়েছেন। হতাহত ব্যক্তিদের সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। তাঁরা ইউএন ইন্টারিম সিকিউরিটি ফোর্স ফর আবেইয়ের (ইউএনআইএসএফএ) হয়ে দায়িত্বরত ছিলেন।
গুতেরেস বলেন, ‘দক্ষিণ কোরদোফানে আজ (শনিবার) শান্তিরক্ষীদের ওপর যে হামলা হয়েছে, তা অগ্রহণযোগ্য। এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।’
হামলায় নিহত শান্তিরক্ষীদের সবাই বাংলাদেশি। তাঁরা ইউএন ইন্টারিম সিকিউরিটি ফোর্স ফর আবেইয়ের (ইউএনআইএসএফএ) হয়ে দায়িত্বরত ছিলেন। হামলায় আরও আট শান্তিরক্ষী আহত হয়েছেন।সুদানের সেনাবাহিনী ওই হামলার দায় র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) নামে দেশটির আধা সামরিক বাহিনীর ওপর চাপিয়েছে।
সুদানে দুই বছরের বেশি সময় ধরে গৃহযুদ্ধ চলছে। দেশটির সেনাবাহিনী ও আরএসএফের মধ্যে এ লড়াই চলছে।
আরএসএফ তাৎক্ষণিকভাবে হামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
সুদানের সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, এ হামলা বিদ্রোহী মিলিশিয়া এবং এর পেছনে যাঁরা আছেন, তাঁদের ধ্বংসাত্মক কৌশলের স্পষ্ট প্রকাশ।
সুদান সেনাবাহিনী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও পোস্ট করেছে। ভিডিওতে একটি স্থান থেকে ঘন কালো ধোঁয়া আকাশে উঠতে দেখা যাচ্ছে। তারা বলেছে, এটি জাতিসংঘের স্থাপনা।
বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী হতাহত হওয়ার এ ঘটনায় গভীর শোক ও উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
দক্ষিণ কোরদোফানে আজ (শনিবার) শান্তিরক্ষীদের ওপর যে হামলা হয়েছে, তা অগ্রহণযোগ্য। এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।.আন্তোনিও গুতেরেস, জাতিসংঘ মহাসচিবযেখানে হামলা হয়েছে, সেই তেলসমৃদ্ধ অঞ্চল আবেই নিয়ে সুদান ও দক্ষিণ সুদানের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। ২০১১ সালে সুদান থেকে আলাদা হয়ে দক্ষিণ সুদান একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এর পর থেকে সেখানে জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশন মোতায়েন রয়েছে।
দুই দেশের সীমান্তে অবস্থিত আবেই বিশেষ প্রশাসনিক মর্যাদার অঞ্চল।
সুদানের আবেই অঞ্চলে একটি সড়কে দায়িত্ব পালন করছেন জাতিসংঘের একজন শান্তিরক্ষী