রাখাইনের রাজ্যের জন্য করিডর: যে হিসাব-নিকাশগুলো জরুরি
Published: 29th, April 2025 GMT
সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের নানা কাজকর্ম দেখে অনেকের মনে হতে পারে, তারা একা একা চলতে চাইছে। রাজনৈতিক সরকারগুলো অনেক সময় বিভিন্ন স্বার্থের কারণে অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে না জানিয়ে বা আলাপ-আলোচনা না করে কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। রাজনৈতিক সরকারগুলো মনে করে তাদের প্রতি জনসমর্থন আছে। ফলে যে সিদ্ধান্ত তারা গ্রহণ করবে, তার পক্ষে নিজ নিজ কর্মীদের মাঠে নামাতে পারবে এবং এই কর্মীদের জনগণ বলে চালিয়ে দেওয়া যাবে।
কিন্তু বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যারা একটি গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত হয়েছে, তারা কেন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সব বিষয়ে আলাপ করবে না। এমন না যে রাজনৈতিক দলগুলোর সব সময় এই সরকারের বিরোধিতা করছে। রাজনৈতিক দলগুলো অনেক বিষয়েই একমত হবে সরকারের সঙ্গে, আবার কিছু বিষয়ে হবে না, এটাই স্বাভাবিক। যদি দ্বিমতও পোষণ করে তারপরও ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত সরকারের। এ বিষয় সরকারের গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা প্রয়োজন।
সম্প্রতি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের জন্য মানবিক করিডর সুবিধা দেওয়াসংক্রান্ত সরকারের এককভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। বিশেষ করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করার দরকার ছিল।
কয়েক দিন ধরেই রাখাইনদের জন্য একটি মানবিক করিডর দেওয়ার কথা বলা হচ্ছিল। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে এই করিডরের জন্য আগেই অনুরোধ করা হয়েছে। জাতিসংঘ মনে করছে এখনই রাখাইনে মানবিক সহায়তা না পাঠাতে পারলে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। রাখাইনে মিয়ানমারের জান্তা শাসক ও আরাকান আর্মির মধ্যে চলমান যুদ্ধে মানবিক বিপর্যয় থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষার জন্য এই সহায়তা পাঠানো জরুরি। জাতিসংঘের এমন মতামতের পর আমাদের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারাও বিভিন্ন আলোচনায় করিডরের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন। এসব আলাপ-আলোচনার মধ্যেই সরকারের পক্ষ থেকে নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়টি প্রকাশ্যে এল।
রোববার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এতটুকু আপনাদের বলতে পারি, নীতিগতভাবে আমরা এতে সম্মত। কারণ, এটি একটি হিউম্যানিটেরিয়ান প্যাসেজ (মানবিক সহায়তা সরবরাহের পথ) একটা হবে। কিন্তু আমাদের কিছু শর্তাবলি রয়েছে, সেই বিস্তারিততে যাচ্ছি না। সেই শর্তাবলি যদি পালিত হয়, আমরা অবশ্যই জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সহযোগিতা করব।’
কিন্তু মানবিক বিষয়ের সঙ্গে সঙ্গে ভূরাজনৈতিক, সামরিক, নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের বিষয়গুলো আমাদের গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে হবে। রাখাইন পরিস্থিতি গভীরভাবে বিশ্লেষণ করতে চাইলে প্রথমেই আমাদের একটি প্রশ্ন করতে হবে। তা হচ্ছে, রাখাইনের ভবিষ্যৎ কোন দিতে যাচ্ছে এবং রাখাইনের যুদ্ধের পরিণতি শেষ পর্যন্ত কী হতে পারে। এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর কেউই এখন দিতে পারবে না। কিন্তু এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার ওপর নির্ভর করবে কে কি ধরনের কৌশল গ্রহণ ও প্রয়োগ করবে।
তাই বাংলাদেশের প্রথম কৌশল হবে, রাখাইনের যেকোনো ধরনের পরিণতি থেকে আমরা কী ধরনের সুবিধা আদায় করে নিতে পারব, তার হদিস করা। এরই সঙ্গে আমাদের ঝুঁকির বিষয়গুলোও বিবেচনা করতে হবে। রাখাইন পরিস্থিতির সঙ্গে রোহিঙ্গাদের ভিটেমাটি ছাড়া হয়ে বাংলাদেশে দলে দলে প্রবেশের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। মিয়ানমার জান্তার হাত থেকে আরাকান আর্মি রাখাইনের প্রায় ৯০ শতাংশ এলাকা দখলে নিলেও রোহিঙ্গাদের উচ্ছেদ করা বন্ধ হয়নি। তাই রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসাও বন্ধ হয়নি। ফলে বোঝাই যাচ্ছে মিয়ানমারের শাসকগোষ্ঠীর পাশাপাশি আরাকান আর্মির মধ্যেও রোহিঙ্গা বিদ্বেষ রয়েছে। এ কারণে রাখাইনদের জন্য মানবিক করিডর দেওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের পথ খুঁজতে পারে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ তৃতীয় পক্ষকে যুক্ত করতে পারে। এটা হবে বাংলাদেশের আলোচনা শুরু করার প্রথম শর্ত।
রোহিঙ্গা ইস্যু ছাড়াও এই মানবিক করিডর প্রদানের সঙ্গে আঞ্চলিক রাজনীতি, আমাদের নিজস্ব নিরাপত্তা, আর্থিক ও সামরিক বিষয়াদি জড়িত। রাখাইনকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নানা ধরনের মেরুকরণের সূচনা হতে পারে। তাই বিষয়টি আমাদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কৌশল সাজাতে হবে।
আগেই বলেছি রাখাইনের পরিণতি শেষ পর্যন্ত কী হতে পারে। এখানে দুটি সম্ভাবনাই আছে। এক, রাখাইন মিয়ানমার থেকে পৃথক হয়ে স্বাধীন দেশ বা বিশেষ ব্যবস্থায় পরিচালিত একটি ভূখণ্ডে পরিণত হতে পারে। অথবা মিয়ানমারের জান্তা সরকার রাখাইন পুরোপুরি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিবে সামরিক অভিযানের মাধ্যমে বা আলোচনার ভিত্তিতে।
প্রথম সম্ভাবনাকে ধরে যদি আলোচনা করি তবে আমাদের করিডর প্রদান এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। এ অবস্থায় রাখাইনে নতুন রাষ্ট্রের সৃষ্টি বা নতুন ব্যবস্থার উদ্ভব ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে গ্রহণ করবে, তা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। প্রথমত রাখাইনে রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক পরিবর্তন ভারতের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকির কারণ হবে। ভারত মিয়ানমারে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ হারাবে। ভারতের পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলো বাংলাদেশকে এড়িয়ে সরাসরি বঙ্গোপসাগরের প্রবেশের সুযোগ হারাবে। তখন অনেক ঘুরে ইয়াঙ্গুন হয়ে সমুদ্রে প্রবেশ করতে হবে। এর পাশাপাশি কুকি-চিনদের যুদ্ধের প্রভাব ভারতের পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। তাই ভারত চাইবে না মিয়ানমারে এমন কিছু হোক, যাতে তার রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা বিঘ্নিত হতে পারে।
মিয়ানমার নিয়ে চীনের অবস্থান খুবই ধোঁয়াশাচ্ছন্ন। কখন জান্তা সরকারকে সমর্থন দেয়, কখন কোনো বিদ্রোহীদের সহায়তা করে বলা মুশকিল। এর কারণ হচ্ছে চীনের কুমনিং থেকে বঙ্গোপসাগর হয়ে ভারত মহাসাগরে প্রবেশের একটি রুট হচ্ছে রাখাইনের বন্দরগুলো। তাদের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের একটি অংশ হচ্ছে মিয়ানমারের রাখাইনের বন্দর। তাই মিয়ানমার হাতছাড়া হয়ে গেলে রাখাইন নিয়ে চীনকে নতুন করে কূটনীতি শুরু করতে হবে। কুমনিং থেকে রাখাইন হয়ে ভারত মহাসাগরে প্রবেশ করে নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা চীনের জন্য কঠিন হয়ে যাবে।
এখানে আরেকটি পক্ষ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র ২০২২ সালে বার্মা অ্যাক্ট পাস করেছে। বার্মা অ্যাক্টে মোটাদাগে সাতটি ভাগ আছে। বার্মা অ্যাক্টে মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রদানের বিষয়টি ছাড়াও জাতিসংঘের অধিকতর উদ্যোগের কথা বলা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, মিয়ানমারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে উদ্যোগ গ্রহণে সহায়তা করতে হবে।
এখন জাতিসংঘের বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে মানবিক করিডর সৃষ্টির প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রের বার্মা অ্যাক্টের দুটি ধারার সঙ্গে মিলে যায়। তার মানে বোঝাই যাচ্ছে এই মানবিক করিডরের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন থাকবে। কারণ, এমন একটি মানবিক সহায়তা বা অধিকতর উদ্যোগের কথা যুক্তরাষ্ট্র অনেক আগেই বলে রেখেছে।
এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরেই ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে একটি নিজস্ব বলয় তৈরির চেষ্টা করছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে এ ক্ষেত্রে তারা ভারতকে সঙ্গে নিয়ে এমন একটি বলয় সৃষ্টি করছে চাইছে, যেখানে ভারতের গুরুত্ব কম থাকবে। কারণ, বর্তমান পরিস্থিতিকে ভারতের পক্ষে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতা করা সম্ভব নয়। ফলে মিয়ানমার ইস্যুতে ভারত খুব বেশি কথাবার্তা বলতে পারছে না। কৌশলগতভাবে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে রাখাইনের জন্য একটি করিডর সৃষ্টি করা ভারতের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু ভারত প্রকাশ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এ বিষয়ে দ্বন্দ্বে জড়াবে না। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এই অঞ্চলে প্রভাব সৃষ্টির প্রচেষ্টাকে চীন কীভাবে বিবেচনা ও মোকাবিলা করবে, তা আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে।
এবার দ্বিতীয় সম্ভাবনা নিয়ে বলি। যদি শেষ পর্যন্ত রাখাইন পরিস্থিতি শান্ত হয়ে যায়, রাখাইন আর্মি পিছু হটে তবে মিয়ানমারের জান্তা সরকার আমাদের করিডর প্রদানের বিষয়টি নিয়ে পরবর্তী সময় কী ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে, সেটাও আমাদের চিন্তা ও পরিকল্পনার মধ্যে রাখতে হবে।
রাখাইনে দুই ধরনের পরিণতির কথা বিবেচনা করেই আমাদের কৌশলগত পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। এই পরিকল্পনার সঙ্গে আমাদের অর্থনৈতিক ও সামরিক স্বার্থও জড়িত আছে এবং মনে রাখতে হবে মিয়ানমারে দীর্ঘ সময় জান্তা শাসকের উপস্থিতি, রাখাইন, চিন প্রদেশের যুদ্ধ, সবকিছু মিলিয়ে সেখানে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। এর অবসান হতে পারে হুট করে। আবার দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ, আলাপ-আলোচনা, সমঝোতার মাধ্যমেও হতে পারে। মিয়ানমারের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাই সুনির্দিষ্ট মন্তব্য করা মুশকিল ও ঝুঁকিপূর্ণ একটি বিষয়।
এই ধরনের একটি স্পর্শকাতর, জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা সরকারের উচিত ছিল। প্রয়োজনে আলাপ-আলোচনার বিষয় কৌশলগত কারণে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো গোপন রাখতে পারত। আমার ধারণা, সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করলে তারা হয়তো মানবিক করিডরের বিরোধিতা করত না। বরং তারা দেশের জন্য কিছু সুবিধাজনক কৌশল আলোচনার টেবিলে তুলে ধরতে পারত।
বাংলাদেশ এমন এক পরিস্থিতির মধ্যে আছে যে তাকে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ভারতকে হাতে রাখতে হবে রাখাইন ইস্যুতে। ভারতকে খুব বেশি গুরুত্ব না দিলেও যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ককে রাখাইন ইস্যুতে ভারসাম্যের মধ্যে আনতে হবে। তাই এ বিষয়ে সরকার এককভাবে সিদ্ধান্ত না নিয়ে রাজনৈতিক শক্তিকে এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত করলেই ভালো করত।
এ লেখা প্রকাশের আগ মুহুর্তে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের একটি বক্তব্য সামনে এল। সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, ‘আমরা স্পষ্টভাবে জানাতে চাই যে সরকার তথাকথিত “মানবিক করিডর” নিয়ে জাতিসংঘ বা অন্য কোনো সংস্থার সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি।’
তিনি বলেন, সরকার মনে করে, যদি জাতিসংঘের নেতৃত্বে রাখাইনে মানবিক সহায়তা পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়, তাহলে বাংলাদেশ লজিস্টিক সহায়তা দিতে প্রস্তুত থাকবে। সেই সহায়তার বিষয়ে বাংলাদেশ নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে। তবে রাখাইনে সহায়তা পাঠানোর বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্যের পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের এ বক্তব্য রাখাইন রাজ্যের জন্য করিডর নিয়ে আরও ধোঁয়াশা তৈরি করল কি? বিষয়টি নিয়ে আরও তর্ক–বিতর্ক বা আলোচনা–সমালোচনা চলবে নিশ্চয়ই। এর মধ্য দিয়ে আশা করি, এ বিষয়ে আমরা একটি যৌক্তিক অবস্থানে যেতে পারব।
ড.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন পর স থ ত র জন য ক আম দ র ক র খ ইন প র খ ইন র উপদ ষ ট সরক র র র ব ষয়ট ন আর ম প রব শ য র জন ধরন র গ রহণ র একট প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
জবির বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগে ৮ বছর ধরে একই চেয়ারম্যান
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে চলছে শিক্ষক সংকট ও প্রশাসনিক স্থবিরতা। এছাড়া গত ৮ বছর ধরে একই শিক্ষক বিভাগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. লাইসা আহমদ লিসা গত ৮ বছর ধরে বিভাগীয় চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন, যা ২০০৫ সালের বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ২৪(২) ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
আইন অনুযায়ী, বিভাগের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকদের মধ্য থেকে পালাক্রমে ৩ বছরের জন্য চেয়ারম্যান নিযুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। তবে দীর্ঘ সময় ধরে একই ব্যক্তির দায়িত্ব পালন করায় এর কার্যক্রম ও জবাবদিহিতা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে চালু হওয়া বিভাগটিতে বর্তমানে ছয়টি ব্যাচে প্রায় ১৭০ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। কিন্তু শিক্ষক রয়েছেন মাত্র নয়জন, এর মধ্যে তিনজন শিক্ষা ছুটিতে রয়েছে। ফলে মাত্র ছয়জন শিক্ষককে এই পুরো বিভাগ সামলাতে হচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা জানান, শিক্ষকদের বারবার শিক্ষা ছুটিতে যাওয়া পাঠদানের ধারাবাহিকতা ভেঙে দিচ্ছে এবং একাডেমিক সহায়তায় তারা বঞ্চিত হচ্ছেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিভাগে নেই সুনির্দিষ্ট ক্লাস রুটিন বা একাডেমিক গাইডলাইন। ফলে সেশনজট তীব্র হয়ে উঠেছে। যেখানে অন্যান্য বিভাগে ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যে স্নাতকোত্তরের শেষপ্রান্তে, সেখানে বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের শিক্ষার্থীরা এখনো স্নাতক সম্পন্ন করতে পারেনি। এমনকি ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থীদের মাস্টার্স এখনও চলছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, “বিভাগের সবচেয়ে বড় সমস্যা নেতৃত্বের অভাব। চেয়ারম্যান বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকায় সময় দিতে পারেন না। পক্ষপাতমূলক আচরণও চোখে পড়ার মতো।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. লাইসা আহমদ লিসা বলেন, “আপনি আমাদের বিভাগের অফিসে কথা বলুন। সেখান থেকে সব জানতে পারবেন।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, “সমস্যা সম্পর্কে আমরা জানি। শিক্ষক সংকট রয়েছে। তবে নিয়োগ দিতে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন প্রয়োজন। অনুমোদন পেলে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
অধ্যাপক ড. লাইসা আহমদ লিসা স্বাধীনতা শিক্ষক সমাজের সহ-সভাপতি এবং খ্যাতিমান রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী। তিনি ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক, আনন্দধ্বনীর সদস্য এবং জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মেলন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড (২০০৭) এবং বাংলা একাডেমির ‘রবীন্দ্র পুরস্কার’ (২০২৪) লাভ করেছেন।
ঢাকা/লিমন/মেহেদী