ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট বিগত সরকারের পতনের পর গণঅভ্যুত্থানে হতাহত ব্যক্তিদের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেক মামলা দায়ের হয়েছে। এসবের মধ্যে বেশকিছু মামলায় সমন্বয়হীনতা বা অসামঞ্জস্যতার অভিযোগ উঠেছে। মামলায় আসামি গ্রেপ্তারের নামে হয়রানির অভিযোগও করেছেন কেউ কেউ। নিরপরাধ ব্যক্তিকে আসামি করাসহ সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও উদ্ভূত পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।

আসকের সিনিয়র সমন্বয়কারী আবু আহমেদ ফয়জুল কবিরের সই করা সংবাদ বিবৃতিতে এই উদ্বেগ প্রকাশের কথা জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ছাত্র-জনতা হত্যার ঘটনায় মামলা করার অধিকার সাধারণ মানুষের রয়েছে। তবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এসব মামলায় কাউকে ফাঁসানো বা হয়রানির উদ্দেশ্যে আসামি করা হলে, তা মানবাধিকারের পরিপন্থী।’

এতে বলা হয়, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই ছাত্রদের ন্যায়সঙ্গত দাবি এবং তাদের নেতৃবৃন্দকে গোয়েন্দা হেফাজতে আটক রাখার ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও বরেণ্য মানবাধিকার কর্মী জেড আই খান পান্না আদালতে আইনগত পদক্ষেপ নেন; অথচ তাকেও একটি হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি করা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ৪ আগস্ট রাজধানীর জিগাতলা এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আব্দুল মোতালিব। এ ঘটনায় মোতালিবের বাবা আব্দুল মতিন মামলা দায়ের করেন, একই ঘটনায় মো.

মাছুম বিল্লাহ নামের এক ব্যক্তিও মামলা দায়ের করেছেন। বাদীর সঙ্গে ভিকটিম পরিবারের কোন পূর্ব পরিচয় নেই বলে নিহতের বাবা দাবি করেছেন, যা গণমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে।’

আসক বিবৃতিতে বলে, ‘‘সম্প্রতি একটি মামলায় অভিনেতা ইরেশ জাকেরসহ অন্তত ২৫ জন সাংবাদিককে অন্তর্ভূক্তি করে হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। নাগরিকদের অধিকার রক্ষা করাই আইনের উদ্দেশ্য। কিন্তু এ ধরনের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা কখনো কখনো আইনকে ব্যবহার করে নিরীহ মানুষদের হয়রানির ঘটনা অগ্রহণযোগ্য। বিগত সরকারের সময় বিভিন্ন সময়ে ‘গায়েবী’ মামলার ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল। বর্তমান সরকারের সময়েও ‘গায়েবি মামলা’ ফিরে এসেছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। কেননা ঘটনাস্থলে কখনোই উপস্থিত ছিলেন না এমন ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। আশ্চর্যজনকভাবে বেশ কিছু মামলার এজাহার ও আসামি একই।’’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘জুলাই আগস্টের ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডসহ প্রতিটি অপরাধের বিচার করা আমাদের জাতীয় কর্তব্য। কিন্তু এসব হত্যাকাণ্ড নিয়ে যেভাবে ঢালাও মামলা হচ্ছে, তা অগ্রহণযোগ্য। হত্যা মামলার বিচার হয় সুষ্ঠু তদন্ত, সাক্ষ্য প্রমাণ ও আলামতের ভিত্তিতে। অথচ অনেক মামলায় আসামি করা হয়েছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে অথবা ভিন্ন উদ্দেশ্যে। কেননা মামলায় এমন অনেক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে, যার সঙ্গে ঘটনার ন্যূনতম সম্পর্ক নেই।’

আসকের সিনিয়র সমন্বয়কারী আবু আহমেদ ফয়জুল কবিরের সই করা সংবাদ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) মনে করে, ঘটনার সঙ্গে ন্যূনতম সম্পর্ক নেই, এমনকি বিদেশে অবস্থানকালীন সময়ের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় এজাহারভুক্ত এবং গণমাধ্যমকর্মী যারা আসামি হয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন, অনতিবিলম্বে তদন্তসাপেক্ষে এ ধরনের হয়রানিমূলক মামলা থেকে তাদের নাম বাদ দিতে হবে।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আসক হয়র ন র সরক র র র ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাবির ৪০ শতাংশ শিক্ষক আন্তর্জাতিক মানের: উপাচার্য

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) আন্তর্জাতিক মানের ৪০ শতাংশ শিক্ষক রয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান।

তিনি বলেছেন, “বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে জাতীয় দায় ও দায়িত্ব নিয়ে চলতে হয়। আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তারপরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা-গবেষণার ক্ষেত্রে দেশ-বিদেশে ভালো অবস্থান ধরে রেখেছে। আমাদের আন্তর্জাতিক মানের ৪০ শতাংশ শিক্ষক রয়েছেন। যদিও আমরা শিক্ষকদের গবেষণার জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ দিতে পারি না। প্রয়োজনীয় সমর্থন পেলে বাকিরাও নিজেদের আন্তর্জাতিক মানে গড়ে তুলতে পারবেন।”

মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) ঢাবির নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনের সম্মেলন কক্ষে ‘সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি রিচার্স পার্টনারশিপ ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আরো পড়ুন:

ঢাবি উপাচার্যের সঙ্গে সিঙ্গাপুর হাইকমিশনের সাক্ষাৎ

উত্তরায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে হামলা, আহত ৫

তিনি বলেন, “জাপান আমাদের পরীক্ষিত বন্ধু। এই বন্ধুত্ব রাজনীতির ঊর্ধ্বে। প্রকল্পটি সমাজে সরাসরি প্রভাব ফেলবে। মানুষ উপকৃত হবে। এই ধরনের প্রকল্পকে দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই করতে চাই আমরা। এক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সব ধরনের সহায়তা করতে প্রস্তুত রয়েছে।”

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে উপাচার্য বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দিন শেষে সামাজিক প্রতিষ্ঠান। আমাদের সমাজের জন্য কাজ করতে হয়। নিজেদের এখন দেশ ও সমাজের জন্য গড়ে তুলতে হবে। এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক সুযোগ রয়েছে। সেগুলোকে কাজে লাগাতে হবে।”

মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও প্রকল্পের বাংলাদেশ অংশের প্রধান গবেষক (পিআই) ড. আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা। বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাপানের এহিম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও প্রকল্পের জাপান অংশের প্রধান গবেষক (পিআই) ড. কোজো ওতানাবি।

জাপান সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি এজেন্সি (জেএসটি) ও জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় পানির গুণগত মান তদারকি এবং বিশুদ্ধকরণ টেকনোলজি নিয়ে শীঘ্রই একটি প্রকল্প শুরু হতে যাচ্ছে। সেটিকে সামনে রেখে এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়।

এই প্রকল্পের মেয়াদ পাঁচ বছর। প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ইয়েনের (জাপানি মুদ্রা) প্রকল্পটি ২০২৬ সালের এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে ২০৩১ সালের মার্চ পর্যন্ত চলবে। ২০২৫ সালের মে মাস থেকে ২০২৬ সালের মার্চ পর্যন্ত প্রকল্পটি প্রবেশনারি পিরিয়ড হিসেবে থাকবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাপানের এহিম বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে বাংলাদেশের পরিবেশ অধিদপ্তর, জাপানের সিজুকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইয়ামাগাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল এনভায়রনমেন্টাল স্ট্র্যাটেজিস প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ