ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাংবাদিকের ওপর হামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন
Published: 29th, April 2025 GMT
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় অবৈধ মাটি ব্যবসা নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিক মাইনুদ্দিন রুবেলের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন হয়েছে। হামলার চার দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো কেউ গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বক্তারা। জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সামনে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ঢেউ’ এ মানববন্ধনের আয়োজন করে। এতে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, গণমাধ্যমকর্মী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বাহারুল ইসলাম মোল্লা, জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ মোশারফ হোসেন, প্রেসক্লাবের কার্যকরী সদস্য শাহাজাহান সাজু, খেলাঘরের সাধারণ সম্পাদক নিহার রঞ্জন সরকার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ইউনাইটেড কলেজের উদ্যোক্তা হারুন অর রশিদ ও শাহীন মৃধা, প্রথম আলোর বন্ধুসভার জেলা সভাপতি অভিজিৎ রায় ও সাধারণ সম্পাদক শাহাজান মিয়া এবং ঢেউয়ের সদস্য শাহাদাত হোসেন।
বক্তারা বলেন, যাঁরা সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত, তাঁদের কোনো দলীয় পরিচয় নেই। বাংলাদেশ সংবিধান প্রত্যেক নাগরিকের মতপ্রকাশের অধিকার দিয়েছে। একজন সাংবাদিক হিসেবে মাইনুদ্দিন রুবেল সেই অধিকার প্রয়োগ করেছেন। সাংবাদিকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে সত্য প্রকাশ থেকে বিরত রাখা যাবে না। হামলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে।
মাইনুদ্দিন রুবেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি। তাঁর বাড়ি বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের ভিটি দাউদপুর গ্রামে। তিনি ২০ বছর ধরে জেলা শহরের দক্ষিণ মৌড়াইলে বসবাস করছেন।
গত শুক্রবার সন্ধ্যা পৌনে আটটার দিকে বিজয়নগরের মির্জাপুর এলাকায় উপজেলা পরিষদের সামনে তাঁর ওপর হামলা হয়। এতে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা কাইয়ুম মিয়া এবং বহিষ্কৃত যুবদল নেতা ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান ওরফে লিটন মুন্সীসহ ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন রুবেল।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, মোখলেছুর ও কাইয়ুম দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে মাটি ব্যবসা করছেন। পুকুর ও কৃষিজমির মাটি কেটে তা ট্রাক্টরে করে অন্যত্র বিক্রি করছেন তাঁরা। স্থানীয় প্রশাসন এ বিষয়ে নীরব ভূমিকা পালন করছে।
এ বিষয়ে বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, ঘটনার পর থেকে আসামিরা পলাতক। তাঁদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব র হ মণব ড় য় ব জয়নগর উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
মানিকগঞ্জে জামানতের টাকা ফেরত না পেয়ে এনজিওর মালিকের বাড়িতে ভাঙচুর
মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলায় গ্রাহকদের জামানতের বিপুল অর্থ নিয়ে একটি এনজিওর (বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা) মালিক ও কর্মকর্তারা পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে ওই টাকা না পেয়ে বিক্ষুব্ধ গ্রাহকেরা এনজিওর মালিকের বাড়ির আসবাব ও জিনিসপত্র ভাঙচুর করেছেন।
এ ছাড়া জামানতের টাকার দাবিতে তাঁরা মানববন্ধন করেছেন। আজ রোববার সকালে উপজেলার জামশা ইউনিয়নের উত্তর জামশা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০১ সালে দক্ষিণ জামশা গ্রামে ‘গ্রাম মানবিক উন্নয়ন ক্ষুদ্র সমবায় সমিতি’ নামে একটি এনজিও প্রতিষ্ঠা করা হয়। স্থানীয় জামশা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুজ্জামান, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক আমজাদ হোসেন, ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সভাপতি মানিক মিয়া উজ্জ্বল ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা মো. হাবিবুল্লাহ যৌথভাবে এনজিও প্রতিষ্ঠা করেন।
ভুক্তভোগী গ্রাহক ও স্থানীয় সূত্র জানায়, অধিক মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে এনজিওর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষের কাছ থেকে জামানত সংগ্রহ করেন। এনজিওটি উপজেলার জামশা, জামির্ত্তা, চারিগ্রাম, বলধারা, তালেবপুর ও জয়মন্টপ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের সহস্রাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা জামানত সংগ্রহ করে। জামানতের মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও গ্রাহকদের টাকা না দিয়ে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়। এ নিয়ে টাকা পাওয়ার দাবিতে মানববন্ধন ও পরে এনজিওর মালিক আওয়ামী লীগের নেতা আমজাদ হোসেনের বাড়িতে আসবাব ও জিনিসপত্র ভাঙচুর করেন বিক্ষুব্ধ গ্রাহকেরা।
আজ সকাল ১০টার দিকে উত্তর জামশা এলাকায় আমজাদ হোসেনের বাড়ির কাছে কয়েক শ গ্রাহক জামানতের টাকা পাওয়ার দাবিতে মানববন্ধন করেন। এরপর বিক্ষুব্ধ গ্রাহকেরা আমজাদের বাড়িতে আলমারি, শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র ভাঙচুর করেন।
উত্তর জামশা গ্রামের গৃহবধূ ফাতেমা আক্তার (৩৪) কিডনি রোগের চিকিৎসার জন্য ১০ লাখ টাকা জামানত হিসেবে ওই এনজিওতে জমা রাখেন। তিন বছর পার হলেও তিনি কোনো টাকা পাননি। ফাতেমা বলেন, ‘আমার সহায়–সম্বল যা আছিল, তা বিক্রি করে ওই এনজিওতে রাখছিলাম। টাকা ফেরত পাওনের জন্য এনজিওর লোকদের পায়ে পর্যন্ত ধরেছি, কোনো টাকা দ্যায় নাই। পোলাপান নিয়্যা কীভাবে আমার দিন যায়, রাত পোহায়, আমি জানি আর আল্লাহ জানে।’
চারিগ্রাম এলাকার বাসিন্দা সাবিনা বেগমের (৪৫) স্বামী ও ছেলে দুজনই প্রবাসী। ২০১৮ সালে তিন বছরের জন্য এনজিওটিতে জামানত হিসেবে ১০ লাখ টাকা রাখেন। কয়েক মাস লভ্যাংশ দিলেও তা দেওয়া বন্ধ করা হয়। পরে জামানতের টাকা ফেরত চাইলে নানাভাবে হয়রানি করে আসছে সংস্থাটি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে এনজিওর মালিকেরা আত্মগোপনে চলে যান। অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত কাউকেই এলাকায় পাওয়া যায়নি। তাঁদের মুঠোফোন নম্বরও বন্ধ পাওয়া যায়। তবে এনজিওটির পরিচালক গাজী কামরুজ্জামানের স্ত্রী মৌসুমী আক্তার বলেন, টাকাপয়সার জন্য বাড়িতে প্রতিনিয়তই লোকজন আসেন। তাঁর স্বামী তাঁকে জানিয়েছেন, গ্রাহকদের জামানতের টাকা বিভিন্ন কাজে বিনিয়োগ করা হয়েছে। তিন থেকে চার বছরের ভেতর গ্রাহকের সব টাকা ফেরত দেওয়া সম্ভব হবে বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে জেলা সমবায় কর্মকর্তা ফারহানা ফেরদৌসী বলেন, কোনো সমবায় সমিতি গ্রাহকের কাছ থেকে জামানত সংগ্রহ করতে পারবে না। সমিতির নিবন্ধন থাকলে সদস্যদের মধ্যে ক্ষুদ্রঋণের কার্যক্রম পরিচালিত করতে পারবে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা অভিযোগ করলে ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।