৩৬ বছর পর মায়ের খুনি বাবার মুখোমুখি ছেলে
Published: 29th, April 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইওতে ১৯৮৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর দিবাগত রাত সোয়া তিনটার দিকে তীব্র চিৎকার আর দুবার ভারী কিছু পড়ার শব্দে ছোট্ট কোলিয়ারের ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। ১১ বছরের কোলিয়ার তার শোবার ঘরের দরজার বাইরে পায়ের আওয়াজ পেয়ে ভয়ে কম্বল মুড়ি দেয়। পরদিন সকালে সে ঘুম থেকে উঠে মাকে খুঁজতে থাকে। তখন তার বাবা জানান, মা ছুটিতে বেড়াতে গেছেন।
কথাটা মোটেও বিশ্বাস হয়নি কোলিয়ারের। এক দিন পরই নতুন বছরের প্রথম দিন। ছুটির এই মৌসুমে মা তাকে কিছু না জানিয়ে কখনো কোথাও চলে যাবেন না। তার ওপর সপ্তাহ কয়েক আগেই তার মা তাকে নিজের বন্ধুদের ফোন নম্বর দিয়ে বলেছিলেন, যদি সে কোনো দিন হঠাৎ করে জানতে পারে মা বাড়িতে নেই, বেড়াতে গেছে, তবে যেন মায়ের বন্ধুদের সে কথা জানায়।
কোলিয়ার মায়ের দেওয়া ফোন নম্বর বাবার চোখের আড়ালে লুকিয়ে রেখেছিল। কোলিয়ারের বাবা জন ফ্রান্সিস বয়েল জুনিয়র একজন চিকিৎসক। তিনি রোগী দেখতে মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন বাড়িতে যেতেন। কোলিয়ারও মাঝেমধ্যে রোগী দেখতে যাওয়ার সময় বাবার সঙ্গী হতো। সে সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসকেরা রোগীদের বাড়িতে গিয়ে রোগী দেখতেন।
এক তরুণী রোগীর সঙ্গে বাবার অতিরিক্ত ঘনিষ্ঠতা দেখে ছোট্ট কোলিয়ারের সন্দেহ হয়েছিল। বাবা ওই তরুণীর হাতে হাত রেখে হাঁটেন, জড়িয়ে ধরেন, চুমু খান। একদিন ওই তরুণীর হাতে মায়ের বড় হীরার আংটি দেখে কোলিয়ারের সন্দেহ হয়। ছোট্ট কোলিয়ার মাকে সবকিছু জানিয়ে দেয়। তখন থেকেই শুরু হয় মা–বাবার ঝগড়া।
একসময় কোলিয়ারের মা বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেন। কিন্তু ভরণপোষণের খরচ, সন্তানেরা কার হেফাজতে থাকবে—এসব নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর প্রায়ই তুমুল বিবাদ হতো।
কোলিয়ারের একটি বোন ছিল। তার মা–বাবা চীন থেকে মেয়েটিকে দত্তক নিয়েছিলেন।
মা হঠাৎ করে হারিয়ে যাওয়ায় কোলিয়ারের মনে সন্দেহ হয় এবং সে বাবার নজর এড়িয়ে মায়ের এক বন্ধুকে ফোন করে সব জানায়। মায়ের বন্ধু ওই নারী কোলিয়ারকে পুলিশের জরুরি নম্বরে ফোন করতে বলে।
কোলিয়ার পুলিশে ফোন করলে পুলিশ তার মা নোরিন বয়েলের নিখোঁজ হওয়া নিয়ে তদন্ত শুরু করে। বাবাকে না জানিয়ে তদন্তকারী দলকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয় কোলিয়ার। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ জন বয়েলের কেনা নতুন একটি বাড়ির বেজমেন্টের তলা খুঁড়ে নোরিনের মৃতদেহ উদ্ধার করে। জন বয়েলের নতুন বাড়িটি তাঁর আগের বাড়ি থেকে ১৭৫ মাইল দূরে ছিল।
জন বয়েলের বিরুদ্ধে স্ত্রী খুনের অভিযোগে বিচার শুরু হয়, যে মামলায় মূল সাক্ষী ছেলে কোলিয়ার। পাঁচ মাস পর আদালত জন বয়েলকে দোষী সাব্যস্ত করে সর্বনিম্ন ২০ বছর থেকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন।
তিন দশকের বেশি সময় আগে ঘটা এই ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। সম্প্রতি নতুন একটি পডকাস্ট ‘ফাইন্ডিং মমস কিলার’ প্রকাশ পেয়েছে। ওই পডকাস্টে কীভাবে কোলিয়ার তদন্ত কর্মকর্তাদের তার মায়ের খুনিকে খুঁজে বের করতে পথ দেখিয়েছিল, তার বিস্তারিত উঠে আসে।
জন বয়েলের বয়স এখন ৮১ বছর। এ বছরের আগস্টে তাঁর তৃতীয় প্যারোল শুনানি। এবার তিনি কারাগার থেকে ছাড়া পেতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। মায়ের খুনি বাবার সম্ভাব্য মুক্তির খবরে ছেলে কোলিয়ার নতুন এক মানসিক লড়াইয়ের মধ্যে পড়েছেন।
কোলিয়ারের বয়স এখন ৪৭। তিনি নামের শেষে বাবার বয়েল পদবি ব্যবহার করেন না; বরং তিনি তাঁর দত্তক মা–বাবার পদবি ল্যানড্রি ব্যবহার করেন।
কোলিয়ার বলেন, ‘এমন নয় যে বাবাকে আমার শত্রু মনে হয়.
কোলিয়ার বলেন, তাঁর বাবা যে বয়সে তাঁর মাকে খুন করেছিলেন, এখন তাঁর সেই বয়স। তবে তিনি নিজের মধ্যে বাবার ছায়া দেখতে পান না বলেই মনে করেন।
বরং কোলিয়ার নিজেকে একজন সত্যিকারের ভালো ও দয়ালু ব্যক্তি মনে করেন। তিনি বলেন, ‘আমি কৃতজ্ঞ যে জীবনের ওই দুঃখগাথা আমার ভেতর থেকে এসব গুণ কেড়ে নিতে পারেনি।’
এখন কোলিয়ার দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় বসবাস করেন। সেখানে তিনি সৈকতে বেড়াতে যান, বন্ধুদের সঙ্গে পিকলবল খেলেন, বাবার ছায়ার নিচে চাপা না পড়ে বরং নিজের পছন্দের কাজ ছবি তোলা ও চলচ্চিত্র নির্মাণ করে যাচ্ছেন তিনি।
কোলিয়ার বলেন, তিনি নিজের মতো করে নিজের গল্প বলতে চান। তিনি নিজেকে ওই ছোট্ট বালক হিসেবে পরিচয় করাতে চান না, যে তার মায়ের খুনি বাবাকে কারাগারে পাঠিয়েছে। বরং তিনি নিজের জীবনের গল্পের মাধ্যমে অন্যদের বলতে চান, জীবনে ভয়ংকর কিছু ঘটে যাওয়ার পরও সব আশা শেষ হয়ে যায় না।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সন্ত্রাসীদের হাত থেকে তরুণকে বাঁচাতে গিয়ে গুলিতে নিহত যুবদল কর্মী
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় ইয়াছিন আরাফাত ওরফে শাকিল (২৮) নামের এক যুবদল কর্মীকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। আজ সোমবার রাত আনুমানিক পৌনে আটটার দিকে উপজেলার ছয়ানী ইউনিয়নের গঙ্গাবর বাজারে ওই ঘটনা ঘটে। সন্ত্রাসীরা এক তরুণকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় বাধা দিয়েছিলেন ইয়াছিন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সন্ত্রাসীরা তাঁকে গুলি করে। এ সময় সন্ত্রাসীদের হামলায় ইয়াছিনের ছোট ভাই মোজাম্মেল হোসেনও (২৫) আহত হয়েছেন। তাঁকে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ঘটনার পর এলাকাবাসী ধাওয়া করে হামলাকারীদের মধ্যে তিনজনকে ধরে ফেলেন। পরে তাদের পিটুনি দিয়ে আটকে রাখা হয়। খবর পেয়ে বেগমগঞ্জ থানার পুলিশ তাদের আহত অবস্থায় আটক করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর বলে জানা গেছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ইয়াছিনের চাচাতো ভাই আবদুল হাকিম প্রথম আলোকে বলেন, রাত আনুমানিক আটটার দিকে তিনি, ইয়াছিনসহ কয়েকজন গঙ্গাবর বাজারের একটি দোকানে বসে চা খাচ্ছিলেন। তখন একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় একদল সন্ত্রাসী সেখানে আসে। তারা মো. লাবিব নামের এক তরুণকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় ইয়াছিন এগিয়ে এসে প্রতিবাদ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সন্ত্রাসীদের একজন ইয়াছিনকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। একই সময় কাছে থাকা ইয়াছিনের ছোট ভাই মোজাম্মেল হক এগিয়ে গেলে তাঁর ওপরও হামলা চলায় দুর্বৃত্তরা।
আবদুল হাকিম জানান, ঘটনার পরপরই তাঁরা গুরুতর আহত অবস্থায় ইয়াছিনকে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ছাড়া একই ঘটনায় আহত মোজাম্মেলকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি জানান, দুর্বৃত্তরা কাছে থেকে ইয়াছিনের বুকে ও পেটে গুলি করেছে।
হাসপাতালে উপস্থিত গঙ্গাবর এলাকার বাসিন্দা ও যুবদল কর্মী খালিদ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, নিহত ইয়াছিন যুবদলের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তিনি আরেকজনকে দুর্বৃত্তদের হাত থেকে বাঁচাতে গিয়ে হামলার শিকার হন এবং গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। নিহত ইয়াছিন পেশায় থাই অ্যালুমিনিয়ামের মিস্ত্রি ছিলেন বলে জানান খালিদ।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) রাজীব আহমেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, রাত সোয়া আটটার দিকে গুলিতে নিহত ইয়াছিন আরাফাত নামের এক ব্যক্তিকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসেন কয়েকজন লোক। তাঁর বুকে গুলির দাগ দেখা গেছে। লাশ মর্গে আছে। একই ঘটনায় আহত এক ব্যক্তিকেও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জেলা পুলিশ সুপার মো. আবদুল্লা আল ফারুক দুর্বৃত্তদের গুলিতে একজন নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, একটি ছেলেকে তুলে নিতে এলে বাধা দেওয়ায় ওই যুবককে গুলি করা হয়। ওই ঘটনার পর স্থানীয় লোকজন দুর্বৃত্তদের তিনজনকে আটক করে গণপিটুনি দিয়েছে। পরে পুলিশ গিয়ে তাঁদের আহত অবস্থায় উদ্ধার করে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেছে। আহত ব্যক্তিদের একজনের অবস্থা গুরুতর।
পুলিশ সুপার জানান, গুলির ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্রটি দুর্বৃত্তরা ঘটনার পর পাশের একটি পুকুরে ফেলে দিয়েছে। পুকুর সেচ দিয়ে সেটি উদ্ধারের ব্যবস্থা করা হবে। তা ছাড়া এ ঘটনায় জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। এ বিষয়ে পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।