অনেক সংস্কারে রাজনৈতিক দলগুলোর বোঝাপড়া আছে জানিয়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, ‘যেহেতু রাজনৈতিক দলগুলোর জনপরিসরে কমিন্টমেন্ট আছে, জনগণের কাছে অঙ্গীকার আছে। সে কারণে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার পরিচয় দিতে পারলে আগামী জুনের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বোঝাপড়া তৈরি হবে। নূন্যতম জাতীয় ঐকমত্যের প্রশ্নে সবাই একমত হবে। এটিই হবে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের রাজনৈতিক অর্জন।’

মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপের সূচনা বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। সাইফুল হকের নেতৃত্বে দলটির ১০ সদস্যের প্রতিনিধ দল সংলাপে অংশ নেয়।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা পুরানো জামানায় ফিরতে চাই না। যে ব্যবস্থায় একটা দলকে চূড়ান্ত কর্তৃত্ববাদী দলে পরিণত করে। দলের নেতৃত্বকে চূড়ান্ত ফ্যাসিবাদী দুঃশাসককে পরিণত করে।’

তিনি বলেন, ‘এবারকার ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থানের ম্যান্ডেট হচ্ছে সেই জামানা থেকে পার হয়ে একটি গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় শুরু করব, মানুষের ভোট ও গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করব। ১৬ বছর ধরে মানুষ যে নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে, এবারকার সংস্কার ও নির্বাচন একসঙ্গে বিবেচনা করে বাংলাদেশ সামনের দিকে এগিয় যাবে।’

জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও ১৬ বছরের ‘ফ্যাসিবাদ’ বিরোধী লড়াইয়ের কথা তুলে ধরে সাইফুল হক বলেন, ‘আন্দোলনের মাধ্যমে মানুষের বিশাল প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। তা যেন হতাশায় পরিণত না হয়, দুঃস্বপ্নে পরিণত না হয়, আমরা সে লক্ষ্যে সবাই কাজ করছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা এমন একটি সংবিধান দেখতে চাই যেখানে মানুষের রাজনৈতিক, ধর্মীয়, সামাজিক, মতাদর্শ ও সাংস্কৃতিক বিশ্বাসের কারণে রাষ্ট্র নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করবে না। রাষ্ট্রের কাছে প্রতিটি নাগরিকের সাংবিধানিক ও নাগরিক অধিকার নিশ্চিত হবে।’

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা এমন একটা সংবিধান ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা দেখতে চাই, যেখানে কোনো ব্যক্তি বা দল ইচ্ছা করলে ক্ষমতাকে যা কিছু করবার লাইসেন্স মনে করবে না। ক্ষমতার স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও জনগণের মুখোমুখি হওয়ার সাংবিধানিক এবং আইনগত গ্যারান্টি নিশ্চিত দেখতে চাই।’

তিনি বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের যেহেতু কোনো রাজনৈতিক এজেন্ডা নেই, বিশেষ কোনো পক্ষপাতিত্ব নেই, তাই গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার পথে জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর গণতান্ত্রিক আকাঙ্খা পূরণে তারা সঞ্চালক হিসবে ভূমিকা পালন করবে। আমরা কোথায় দাঁড়াব? যেখানে নূন্যতম জাতীয় ঐক্যের জায়গা সেখানে। এটা নিয়ে বেশি টানাটানি না করি। বেশি টানতে গেলে অনেক সময় দঁড়ি ছিড়ে যায়। সে কাজটা না করি।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ ত য় ঐকমত য গণত ন ত র ক

এছাড়াও পড়ুন:

বাহাত্তরের সংবিধানে মুক্তিযুদ্ধের ঐক্যের ভিত্তিকে অস্বীকার করা হয়েছে: জোনায়েদ সাকি 

মুজিবনগর সরকারের ঘোষিত অঙ্গীকার সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, ১৯৭১ সালের মধ্য দিয়ে প্রথম সংবিধানে আমরা যে একটা ঐক্যের ভিত্তি তৈরি করলাম তাকেই একভাবে অস্বীকার করা হয়েছে। সেটা এমনকি সংবিধানে স্থান পায়নি।

রোববার জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপে এসব কথা বলেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তাঁর নেতৃত্ব দলটির ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ গ্রহণ করে।

জোনায়েদ সাকি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ঘোষিত অঙ্গীকার সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা প্রতিটি নাগরিকের জন্য। তাকে আমরা অবলম্বনের চেষ্টা করেছি। কিন্তু ১৯৭২ সাল থেকে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জাতি যে প্রতিশ্রুতি তৈরি করেছিল, যে প্রতিশ্রুতি একটি ঐক্য তৈরি করেছিল, কিন্তু সে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দেশ পরিগঠিত হয়নি, পরিচালিত হয়নি। 

দেশের পরিগঠনে সংবিধান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সংবিধানে আমরা লক্ষ্য করেছি যে ১৯৭১ সালের মধ্য দিয়ে প্রথম সংবিধান কিংবা আমরা যে একটা ঐক্যের ভিত্তি তৈরি করলাম তাকেই একভাবে অস্বীকার করা হয়েছে। সেটা এমনকি সংবিধানে স্থান পায়নি।

জনগণ রিপাবলিকের কেন্দ্রবিন্দু মন্তব্য করে তিনি বলেন, জনগণের হাতেই একটা রিপাবলিকের ক্ষমতা ন্যস্ত থাকে। সে দিক থেকে জনগণকে নিয়েই যদি রাষ্ট্র পরিগঠিত না হয়। জনগণকেই অংশগ্রহণ করানো কেবল নয়, জনগণকেই প্রাধান্যের জায়গায় রাখা, এটা যখন দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মতৎপরতার মধ্যে না থাকে, তখন ধীরে ধীরে এমন এক ধরনের ক্ষমতার সম্পর্ক তৈরি হয়। যারা রাষ্ট্রপরিচালার জায়গায় ধীরে ধীরে শাসক হতে থাকে, এক ধরনের অধিপতি রূপ নেয় এবং এটাই থেকে কর্তৃতবাদ, ফ্যাসিবাদ, স্বৈরতন্ত্র জন্ম নিয়ে থাকে। 

১৯৭২ সাল থেকে রাষ্ট্র পরিগঠন একদল লুটেরার হাতে বন্দি হয়েছিল দাবি করে জোনায়েদ সাকি বলেন, সেই লুটপাটের শাসনকে জায়েজ করার জন্য জনগণের মধ্যে নানা বিভাজন তৈরির চেষ্টা আমরা দেখেছি। যেখানে জনগণের ঐক্য তৈরি করা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কাজ। জনগণের মধ্যে নানান পার্থক্য থাকবে, দ্বন্দ্ব   থাকবে সেগুলো কি মীমাংসা কারা এটা হচ্ছে রাষ্ট্রের কাজ। 

জনসম্মতি ছাড়া দেশে ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার চেষ্টা হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, তারা প্রত্যেকেই রাষ্ট্রকে ব্যবহার করেছে। রাষ্ট্রের ক্ষমতা কাঠামোটাকে ব্যবহার করেছে। এ রাষ্ট্রের ক্ষমতা কাঠামো যেহেতু স্বৈরতান্ত্রিক শুরু থেকেই। সমস্ত ক্ষমতায় একজন ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত করা হয়েছে। কোন জবাবদিহিতার জায়গা রাখা হয়নি। ফলাফল হিসেবে আমরা দেখতে পেয়েছি যে, যারা এই ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করতে চেয়েছে তারাই রাষ্ট্রটাকে যতরকম ভাবে ব্যবহার করা সম্ভব ব্যবহার করেছে। রাষ্ট্রযন্ত্রকে শেষ পর্যন্ত প্রায় পকেটে ঢুকিয়ে ফেলে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ একটি ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র পরিণত করেছিল। 

সাকী বলেন, আমরা দেখেছি কিভাবে মানুষের বিভাজন তৈরি করে সামাজিক একটা ভয়ংকর সংকট তৈরি করা হয়েছে। এবং সর্বশেষ রাজনৈতিকভাবে তাদের শাসন টেকাতে গুম খুন মানুষের সমস্ত অধিকার হরণ এবং বিরোধী দলকে অবিশ্বাস্য নির্যাতন লাখ লাখ মামলা। সর্বশেষ জুলাই আগস্টের ভয়ঙ্কর নির্বিচার হত্যাকাণ্ড। 

তিনি বলেন, আমাদের দেশের মানুষ আগেও প্রাণ দিয়ে যেমন ভাষার অধিকার থেকে শুরু করে গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য লড়াই করেছে। ৭১ সালে লাখ লাখ মানুষের আত্মত্যাগের উপরে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জুলাই আগস্টে আমরা দেখেছি যখন মানুষের সমষ্টিগত স্বার্থ, জাতীয় স্বার্থ এবং মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয় তখন ব্যক্তির প্রাণ-জীবন তুচ্ছ হয়ে ওঠে। জীবন দিয়েই মানুষ তার সম্মান এবং মর্যাদা রক্ষা করে। এই ঐতিহাসিক সত্যকে বাংলাদেশের মানুষ আবার প্রতিষ্ঠিত করেছে। তাদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা জানানোর ভাষা খুঁজে পাওয়া মুশকিল। 

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে জানিয়ে জোনায়েদ সাকি বলেন, সেখানে সংস্কার ঐক্যমতের মধ্য দিয়ে অভ্যুত্থান হিসেবে হাজির হয়েছে। কাজের সেই সংস্কারের লক্ষ্যে বিভিন্ন কমিশন গঠন করা। যাতে করে প্রস্তাবগুলো সুশৃঙ্খলভাবে অংশীজনদের সামনে আসে, তারা সেগুলোতে মতামত দিতে পারেন। এবং মোটামুটি একটা ন্যূনতম ঐক্যমত তৈরি করা যায়। 

জুলাই সনদের বিষয়ে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, যতগুলো প্রস্তাব এসেছে, সেখানে অংশীজনদের ঐক্যমত যেটাতে তৈরি হবে সেটাই জাতীয় সনদ, একটা জুলাই সনদ আকারে হাজির হবে। যেসব বিষয়গুলোতে দ্বিমত আছে সেগুলো সমাধানের রাস্তা কি? সে পদ্ধতি নিয়ে ভেবেছি। আমরা মনে করি যে দ্বিমত নিয়ে জনগণের কাছে যেতে হবে। সেটা একটা নির্বাচনের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। জনগণ যে মতামতের উপর ভরসা রাখবেন, তাদের বিজয়ী করবেন, তারাই আসলে জনগণের মতামতের উপর রাষ্ট্রপরিচালনা করবেন। যতটু্কুতে আমরা ঐকমত্য হয়েছি, সেই ঐকমত্যের ভিত্তিতে যাতে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর ও নতুন বন্দোবস্ত যাওয়া সম্ভব হয়।  সেই জন্য ঐকমত্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সংস্কার ও নির্বাচন একই সঙ্গে চলতে পারে: বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি
  • রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য তৈরিতে আলোচনার সিদ্ধান্ত গণসংহতির
  • ড. ইউনূস অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র দেননি, আমাদের হাতে বিপ্লবের দলিল নেই: ফরহাদ মজহার
  • ড. ইউনূস গণঅভ্যুত্থানের ফসল, নেতা নন: ফরহাদ মজহার
  • ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে জেএসডির বৈঠক
  • ঐকমত্যের বাইরে সংস্কারের কোনো সুযোগ নেই: আমির খসরু
  • দ্বিমতের বিষয় নিয়ে জনগণের কাছে যেতে হবে: জোনায়েদ সাকি
  • বাহাত্তরের সংবিধানে মুক্তিযুদ্ধের ঐক্যের ভিত্তিকে অস্বীকার করা হয়েছে: জোনায়েদ সাকি 
  • আ.লীগ এ দেশে রাজনীতি করতে পারবে না: ভিপি নুর